নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার বয়স বাড়ে, আমি বাড়ি না

মোহাম্মদ তৌফিকুর রহমান

মোহাম্মদ তৌফিকুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমর্পণ

০৬ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৩০

বিআরটিসির দোতলার জানালার পাশের সিটটা পেয়ে হাফ ছেড়ে বাচলো নীলা। রাত বাজে আটটা। বিকেলে মাস্টার্স এর ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে ঢোকার পর মাত্র বেরোল ও। সাইকোলজির স্টুডেন্ট নীলা। সামনেই ফাইনাল।

বিকেল থেকেই আকাশ থমথমে। বৃষ্টি হবে হবে করেও হচ্ছে না। বিজলি চমকাচ্ছে থেমেথেমে। কে যেন বলেছিল যত গর্জে তত বর্ষে না। নীলা চাচ্ছে আজ বৃষ্টি হোক। যত গর্জন তারচেয়ে বেশি বর্ষণ হোক। বহুদিন ভেজে না সে।

নীলার পাশের সিটে এক মধ্যবয়ষ্ক লোক বসলো। হাতে অফিসের ব্যাগ। নিশ্চয় ওভারটাইম খেঁটে বাড়ি ফিরছে। কিছু মানুষের চেহারা দেখলে মনে হয় জগতের সকল কিছুর উপর তারা বিরক্ত, এদের জীবনে যেন কোনো আনন্দ নেই, এই লোকটার চেহারা দেখে ঠিক সেরকমই মনে হচ্ছে। নীলা নিশ্চিত বৃষ্টি নামলেই এই লোক গোমড়া মুখে বলবে জানালা বন্ধ করতে। আচ্ছা আজ ওর পাশে অন্য কেউ বসলে কি খুব ক্ষতি হত? জানালা খুলেই রাখতো।

ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেঞ্জার চেক করতে লাগলো ও। শুরুতেই আবীরের মেসেজ, "Got confirmation from Harvard"

আবীর নীলার ছোটবেলার বন্ধু। ফিজিক্স এর স্টুডেন্ট। স্টুডেন্ট এর চেয়ে বিজ্ঞানী বলা ভালো। তুখোড় ছাত্র আবীর রেকর্ড মার্ক্স পেয়ে মাস্টার্স কম্পলিট করে ডিপার্টমেন্ট এই লেকচারার হিসেবে যোগ দেয়ার অফার পেয়েছে, আবার হার্ভার্ড এর স্কলারশিপ ও পেয়ে গেলো। আবীর এর স্বপ্ন নতুন নতুন আবিষ্কার করা। রিসার্চ এসিস্টেন্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুর স্বপ্নে বিভোর সে।

হঠাৎ বৃষ্টির ঝাপটা এসে লাগলো মুখে। নীলার কাছে বৃষ্টি হল ব্যাটারি রিচার্জের মতো। জীবনের বহু দুঃসময়ে এই বৃষ্টির ছোঁয়াতেই সে নতুন করে বেঁচে থাকার কারণ খুঁজে পেয়েছে। প্রতিবার ভিজেই তার মনে হয়েছে নতুন করে আবার জন্ম হলো। জীবনটা আবার শুরু করা যায়। মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় একটা আনন্দ হলো নিজের ইচ্ছায় বৃষ্টিতে ভেজা। আর কিছু না পাই অন্তত প্রাণখুলে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য হলেও বেঁচে থাকা যায়।

'জানালা লাগান' ভোঁতা স্বরে বলে উঠলো পাশের যাত্রী। জানালা লাগিয়ে লোকটার দিকে তাকালো নীলা। মধ্যবয়ষ্ক চাকরিজীবী শ্রেণির এই এক সমস্যা। এদের জীবনে শখ আহ্লাদ বলে কিছু নেই। জীবনকে এরা একটা নির্দিষ্ট গন্ডিতে আবদ্ধ করে ফেলেছে। অদৃশ্য এই ছকের বাইরে যাবার সাধ্য এদের নেই। They are too much of a realist. এদের জীবনে কল্পনার কোন স্থান নেই। অথচ জীবন আহবান করছে আমাকে গ্রহণ কর নিজের মতো। রাতের আকাশে কেউ শুধু চাঁদ তারা খুঁজে পায় আবার কেউ এক স্বপ্নময় জগৎ খুঁজে পায়। Life is as you see it, as you take it.

পাশের লোকের দিকে তাকিয়ে নীলার হঠাৎ স্টেমসেল এর কথা মনে পড়লো। গত বইমেলায় আবীর নীলাকে স্টেমসেলের উপর লেখা একটা বই কিনে দিয়েছিল। আজকাল নাকি স্টেমসেল দিয়ে যেকোনো অংগ বানানো যায়। আচ্ছা স্টেমসেল দিয়ে মানুষের মন তৈরী করা যায় না? বিশুদ্ধ আনন্দপূর্ণ মন। যে মন পাখির মত উড়ে বেড়াবে? ঝড়ের রাতে বিদ্যুৎচমকের ফাঁকে যে পাখি ডানা ঝাপটাবে? আবীরকে জিজ্ঞেস করা দরকার।

বৃষ্টির ঝাপটা বাড়তে লাগলো। জানালার কাচে বৃষ্টির ফোটা অদ্ভুত সব নকশা তৈরী করছে। কিন্তু কোনো নকশাই কাচের বুকে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারছে না। নতুন ফোটা এসে মুছে দিচ্ছে আগের নকশা, গড়ে তুলছে নতুন আল্পনা। আবার সেই আল্পনা ভেঙে কাচ বেয়ে নেমে যাচ্ছে জলের ধারা। নীলার হঠাৎ মনে হলো তার জীবনটা এই কাচের মতোই। আর তার কষ্টগুলো বৃষ্টির মতো। তার জীবনেও একের পর এক আঘাত এভাবে জায়গা করে নিয়েছে। তবুও জীবন বদলায়নি। জীবন বয়ে চলেছে জীবনের নিয়মে। নকশাগুলো বিভিন্ন ধরনের হলেও নকশা ভেঙে বয়ে যাওয়া জলের ধারা সব প্রায় একই রকম। সব কষ্টের শেষটাও অনেকটা একই রকমেরই হয়। সব কষ্টের শেষ হয় দীর্ঘশ্বাস এ।

এখন মুষলধারে বৃষ্টি। বাস দাঁড়াতেই নেমে পড়লো নীলা। ছুটে গেল খোলা মাঠে। আজ সে ভিজবে। এই শ্রাবণের হাতে আজ সপে দিবে নিজেকে। হে মহাজীবন, ধুয়ে নাও আমায়, সাজিয়ে নাও নতুন করে। কাল থেকে আবার না হয় কলুষিত হবো, আজ আমায় শুদ্ধ করো।

আকাশের দিকে তাকালো নীলা। বিদ্যুৎ চমক চিড়ে যাচ্ছে আকাশের বুক। কোথায় সে নাম না জানা পাখি? যে পাখি চুম্বকের মতো শুষে নেয় মানুষের সব কষ্ট। নীলার চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে তাকে। কিন্তু আকাশে শুধুই অন্ধকার। হঠাৎ দমকা হাওয়ার সাথে বিদ্যুতের চমক আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে গেল। সেই বিদ্যুতের ফাঁকে নীলার আচমকা মনে হলো সে তার নাম না জানা সাদা পাখির ডানা দেখতে পেল এক পলকের জন্য। ওই তো সেই পাখি। ঝড়ের রাতে যে উড়ে বেড়ায়, যার ঘরে ফেরার তাড়া নেই। এই পাখিই তো হতে চেয়েছিল সে। এইতো জীবন। শুদ্ধ করো আমায়।। হে মহাজীবন।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.