![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জামাত-শিবিরের অনলাইনভিত্তিক মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা দিনকে দিন বেড়েই চলছে। তারা সরাসরি বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে চরম মানহানিকর তথ্য ও ছবি প্রচার করছে। এমনকি এসব প্রোপাগাণ্ডা সোল এজেন্টদের মাধ্যমে ব্যাপকহারে প্রচার করছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ১৫ আগস্টের ইতিহাসসহ বলতে গেলে বাঙালীর পুরো ইতিহাসই এরা বদলে দিতে চাইছে।
এটা তাদের বহু পুরনো কৌশল। ১৯৭১ সাল থেকেই তারা মিথ্যের বেসাতি গড়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার তালে থেকেছে। ৭৫ পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলার মীরজাফর জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ মদদে রাজাকাররা যখন থেকে এদেশে পুনর্বাসনের টিকিট পেয়েছে তখন থেকেই তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বদলে দেয়ার কাজ খুব সুচারুরূপে শুরু করেছে। প্রথমেই তারা এদেশের বুদ্ধিজীবীদের অর্থের বিনিময়ে কিনে নিয়েছে যাতে করে ইতিহাস বিকৃত করে প্রচার করলে বুদ্ধিজীবীদের নিকট থেকে কোন প্রতিবাদ না আসে।
তারপর থেকে শুরু হয়েছে রুট লেভেলে গিযে ধর্মের মোড়কে মিথ্যের পরিবেশনা।
আমরা যারা জিয়ার আমলে বা তার পরে জন্মেছি তারা যেই পটভূমিতে বেড়ে উঠেছি সেটা তো য়ার অস্বীকার করতে পারবো না। বাংলা বইয়ের বীরশ্রেষ্টর গল্প ছাড়া আমাদের জীবনের কোথাও মুক্তিযুদ্ধের অস্তিত্ব ছিলো না। আশপাশের সবার মুখে শোনা যেত গন্ডগোলের বছর। ক্লসের ইতিহাস বইতে আর টিভিতে শুনতাম হানাদার বাহিনী আর তার দোসর। স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবসে শুধু একটাই সিনেমা দেখাতো "জীবন থেকে নেয়া", কখোনো "আলোর মিছিল"। একটা মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগের পটভূমি, একটা অনেক পরের। আওয়ামী লিগ ক্ষমতায় আসার আগে কখনো ৭ মার্চের ভাষন শুনিনি। হানাদাররা যে পশ্চিম পাকিস্তান তথা পাকিস্তানী, আর তার দোসররা যে জামাত তা বুঝতে অনেক বড় হতে হয়েছে। এক বড় ভাইয়ের ব্যক্তিগত সংগ্রহে না থাকলে "একাত্তরের দিনগুলি" পড়তে স্কুল জীবন পার হয়ে যেত।
প্রোপাগান্ডা ছিলোঃ
* শেখ মুজিব ভারতের কাছে দেশ বিক্রির চুক্তিপত্র তৈরী করে ফেলেছিলো। চুক্তি সইয়ের আগের দিন তাকে দেশপ্রেমীকেরা হত্যা করে।
* ২৫ মার্চ শেখ মুজিব ইচ্ছা করে ধরা দেয় যেন সে নিজে আর পরিবার নিরাপদ থাকে।
* জিয়া শুধু স্বাধীনতার ঘোষকই না মুক্তিযুদ্ধ আসলে সেই পরিচালনা করেছে।
* নজরুল ইসলামের হিন্দু বউ তার কবিতা চুরি করে রবীন্দ্রনাথকে দেয়াতেই নজরুলের নোবেল ফস্কে রবীন্দ্রনাথ পেয়েছে। বাংলা বইয়ের কবি পরচিতি কিন্তু খুব কম ছাত্রছাত্রীই পড়তো। তা অনুধাবন যে কয়জন করার চেষ্টা করতো তা বোধহয় আংগুলে গুনে বলা যায়
* "ঘাদানিক" আসলে ভারতের দালাল চক্র। "ঘাদানিক" কি সেই ধারণাই তো অধিকাংশের ভিতর ছিলো না।
* জিয়ার খাল কাটা হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নতিকল্পে রাখা সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান
আর মনে পড়ছে না এখন। বড় শহরগুলোতে হয়তো ভিন্ন পরস্থিতি ছিলো কিন্তু মফস্বল শহর এবং গ্রামগুলোতে প্রোপাগান্ডাগুলোই বেশী চলতো। ইনকিলাব ছিলো সবচাইতে জনপ্রিয় পত্রিকা। চারিদিকে এন্টি-আওয়ামী হাওয়া।
৯১ তে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ৯৪/৯৫ এ গোলাম আজম বাংলাদেশে ফিরে গোটা দেশ সফর দেয়। স্কুলে স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা ফিতা নেড়ে স্লোগান দেয় "গোলাম আজমের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম"। এটা কিন্তু কাদের মোল্লার ভি দেখানোর চাইতেও অনেক বড় অপমান ছিলো। খানকীর ছেলে ভেবেছিলো আহঃ কি পেলাম। কিন্তু সেই প্রথম স্কুল কলেজের ছাত্র সমাজের বড় অংশ জনলো রাজাকার কি, এবং তাদের সর্দার কে ছিলো। এবং রাজাকারকে ঘৃণা করতেও শিখলো। তার পরেও মফস্বলে আওয়ামী বিরোধীতা কমেনি। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়তার কারণে জেতেনি, জিতেছে বিএনপির অজনপ্রিয়তার কারণে (আপনারা একথার বিরোধীতা করতে পারেন, কিন্তু আমাদের সে সময়কার বিশ্লেষন তাই ছিলো)
এবার আসি শিবির প্রসংগে। মফস্বলে শিবিরকে সে সময় জামাতের সাথে মেলানো হতো না। শিবির করা ছাত্ররা ছিলো মেধা ও ভাল ব্যবহারের দৃষ্টান্ত। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা জানতো শিবির কি চিজ, কিন্তু মফস্বলের স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদের কাছে তারা আদর্শ বড়ভাই। আর যেই ছেলেরা পড়াশুনার বদলে গুন্ডামীতেই নিজেদের ক্যারিয়ার দেখতো তারা জানতো শিবির করলে অস্ত্র পাওয়া যায়। হ্যাঁ রে ভাই ওরা স্কুল্লের এইট নাইনে পড়া ছেলেদের পাইপগান দিত, কলেজের ছেলেদের কাটা রাইফেল। বিশেষ টার্গেট বড়লোকদের বখাটে ছেলেরা। অন্যরা চিন্তা শুরু করারও আগে থেকে শিরির এতো রূট লেভেলে জাল বিস্তার শুরু করে।
সেখান থেকেই তো আজকের প্রজন্মের উঠে আসা। স্বাধীনতার পক্ষের তরুণপ্রজন্ম যত বলিষ্ঠ হয়েছে, এই শুওরের বাচ্চারা তার থেকেও নিজেদের মোটাতাজা করেছে। আপনার নিজের তাগিদে ব্লগে ফেসবুকে লিখেছেন, জামাত পয়সা খরচ করে লেখাচ্ছে।
ওদের একতা হলো ওদের শক্তি। আমার যতদূর মনে হয় ওদের এসব প্রোপাগাণ্ডা চালানোর জন্য ব্যাপক অর্থ প্রদান করা হয়। ফলে তারা দায়বদ্ধতা থেকে এসব প্রচার করে। বি টি আর সি কে রিপোর্ট করলে হয়তো তাদের পেজ (যার বর্তমান ফ্যান সংখ্যা ৬ লক্ষাধিক) বন্ধ করে দেয়া যাবে কিন্তু সেটার ফল ভালো হবে কীনা তা বিতর্কের বিষয়। কারণ তখন তারা বর্তমান ফ্যানদের সিমপ্যাথি নিয়ে অতি অল্প সময়ে পুনরায় একটি পেজ খুলে প্রোপাগাণ্ডা চালিয়ে যাবে। তাই আমরা যারা অনলাইনে সময় দেই তাদের উচিত বাঁশের কেল্লার থিউরি দিয়েই বাঁশের কেল্লাকে পরাভূত করা।
একটা মিথ্যাকে ১০০ বার বললে সেটা যদি সত্য হয় তাহলে একটা সত্যকে ১০০ বার বললে সেটা সুপ্রতিষ্ঠিত হতে বাধ্য।
এই মটোকে সামনে নিয়ে আমাদের এগিয়ে গেলে ওদের প্রোপাগাণ্ডার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস। আমুর পাঠককুলকে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ- ভেবে দেখুন মাত্র ৩৮ বছরে ওরা কতটা শক্তি অর্জন করলে আসাদুজ্জামান নূরের মতো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের উপর দিনে-দুপুরে চড়াও হওয়ার সাহস করতে পারে! শেখের বেটি একলা হাতে নিজের লোকবলের উপর মুহুর্মূহু আঘাতের পরও যখন যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি প্রদানে বিন্দুমাত্র পিছপা হচ্ছেন না সেখানে আপনার-আমার কি উচিত নয় তাঁর পাশে থেকে তাঁর হাতকে আরো শক্তিশালী করা??? আমরা কি পারি না জামাত-শিবিরের মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা যেনো সাধারণ জনতাকে বিভ্রান্ত না করতে পারে সে লক্ষ্যে সত্যকে আরো বেশি বেশি করে প্রচার করতে???
©somewhere in net ltd.