![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চিকিৎসা বিজ্ঞান ( medical science) সম্পর্কে ন্যূনতম ধারনা আছে এমন কেউ সন্তান জন্মকালীন নরমাল ডেলিভারি এবং সিজার- দুই পদ্ধতিকেই বিশ্বাস করতে বাধ্য। ডাক্তারের কাছে কেউ গেলেই বয়স, শারীরিক অবস্থা, ও অন্যান্য রিস্ক ফ্যাক্টর বিচার না করেই যেমন সিজারিয়ানের পরামর্শ দেয়া ঠিক না, তেমন মা অথবা বাচ্চার অনেকটা নিশ্চিত বিপদ হবে এটা জেনে নরমান ডেলিভারির জন্যে অপেক্ষাও করতে বলাটাও অজ্ঞতা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে দু'টি পদ্ধতিরই গুরুত্ব রয়েছে। প্রয়োজনের আলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেখানে রিস্ক ছাড়াই নরমালেই সম্ভব সেখানে অন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া ডাক্তারের অসৎ উদ্দেশ্যকেই প্রমান করে। ডাক্তারের কাছে রোগী আসা মাত্র যাচাই-বাছাই না করেই পেট কাটতে বলে দেয়াটা চরম পরিমানে অন্যায়।
আবার টাকা বাঁচানো কিংবা সামান্য রক্তের ভয়ে, বিপদ হতে পারে তা জেনেও নরমার ডেলিভারির অপেক্ষায় থাকাও অমানবিক।
আজকে আমার লিখার বিষয় মোটেও কোনো ডাক্তার নয়!! আমাদের সমাজে ইসলাম যারা একদমই মানেন না তারাও আজকের বিষয় না।বরং যারা ইসলাম মানার চেষ্টা করেন, কিন্তু ইসলামের একটা অংশকেই পূূ্র্ণাঙ্গ ইসলাম মনে করেন তাদেরকে নিয়েই আমার আজকের লেখা।
আমাদের মধ্যেই একদল তৈরি হয়ে গেছে যাদের চিন্তা, চেতনায়, ধ্যান ধারনায় শুধু জিহাদ আর জেহাদ। অন্য একজন দ্বীনি ভাইয়ের সাথে সামান্য মতাপার্থক্য হলেই তাকে কতল করাটা ফরজ মনে করেন। ইসলামে চুরির দায়ে হাত কাটার বিধান আছে- এটিকেই ওনারা সবার সামনে প্রতিষ্ঠা করতে চান। ভাল কথা। কিন্তু ইসলাম যে হাতকাটার আগে সবার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিখিয়েছে, সেই ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। বাচ্চাকে আদর না করে শুধু শাসন করলে সেই বাচ্চা কখনোই মানুষ হয় না। যেখানে বর্তমান মুসলিম সমাজের বেশিরভাগ নামাজের গুরুত্বই বুঝে না, তাদেরকে শুধু জেহাদের ওয়াজ করে কি করে সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন হবে? যেখানের মুসলিমরা কুরআনই বুঝে না, সেখানে তাদের কিতাল শিখিয়ে কি লাভ? এটি সত্য যে একটা আবেগতাড়িত অংশকে কাজে লাগিয়ে সাময়িক কোনো সফলতা কিংবা সামান্য বিপ্লবের দেখা আপনারা পেয়েও যেতে পারেন। তবে মানুষের মন জয়কে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে শুধু অস্ত্র দিয়ে যে বিপ্লব হবে, সেটি চেঙ্গিস খানের বিপ্লবের মতই অমানবিক হবে,কখনোই সেটি পূর্বঘটিত ইসলামি বিপ্লবের মত হবে না।
কুরআনে জিহাদের আয়াত নাজিলের পর প্রিয়নবী হযরত (স ইসলামের শত্রুদের সাথে দুই ভাবে জিহাদ করেছেন-
১. ইসলাম বিরোধী কুফ্ফারদের সাথে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে।
২. ইসলাম বিরোধী, অথচ নামে মুসলিম, তাদের সকল ইসলাম বিরোধী তৎপরতাকে সুকৌশলে ব্যর্থ করে দিয়ে।
বর্তমান সময়ে নামে মুসলিমরাই আমাদের ইসলামের বেশি ক্ষতি করছে। তার মানে এই নয় তাদের কয়েকজনকে হত্যা করলেই সবকিছু বদলে যাবে। প্রশাসন, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষাব্যাবস্থা ইত্যাদি পরিবর্তনের কথা চিন্তা না করেই, গুপ্ত হত্যা কিংবা বোমাবাজী করে শুধু মানুষকে আতংকিত করে কিভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন তা আমার বোধগম্য নয়।
এবার আসা যাক আরেক অংশের দিকে, উনারা রোগী মরে গেলেও অপারেশনের কথা মাথায়ও আনেন না। আমি বুঝি না আসলে কি কারনে তারা এমনটা করেন? কি রক্তের ভয়ে না সম্পদ তথা অর্থের ভয়ে।আমার মনে হয় উনারা সর্বোচ্চ গ্রামের অশিক্ষিত দাই মা অথবা প্রশিক্ষীত নার্সের ভূমিকার বাইরে কিছুই করার ক্ষমতা রাখেন না, সার্জনের ভূমিকাতো অনেক দূর! চিকিৎসা সেবায় যেমন দাই মা অথবা নার্সের ভূমিকা রয়েছে, তেমন সার্জনকেও বাদ দেয়া যাবে না।
আমি বলছি না ইসলামে দাওয়াত তথা তবলিগের গুরুত্ব কম। অবশ্যই দাওয়াতি কাজ ধনী গরীব, সুস্থ্য - অসুস্থ সব মুসলিমের উপরই ফরয। কিন্তু এটিও মনে রাখতে হবে শুধু তবলীগ করেই যদি ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব হতো তাহলে পরাক্রমশালী আল্লাহ কখনোই তাঁর প্রিয় বন্ধ রাসূল (স এর কাধে যুদ্ধে (২৩ টি) সেনাপতির দায়িত্ব চাপিয়ে দিতেন না!
এবার আসা যাক মূল কথায় - একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম হিসেবে কিংবা একজন ইসলামি আন্দোলনের কর্মী হিসেবে বিশ্বাস করি তবলিগ ( দাওয়াত) ও জিহাদ দুটিই ঈমানের অপরিহার্য দাবী। যারা এ দুটির কোন একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে নিয়েই থাকতে চায় তারা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত। সামগ্রিক শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গিতেই দাওয়াত ও জিহাদের সীমা পরিসীমা নির্ধারন করা উচিৎ আবেগ দিয়ে নয়।।
একটা বার্তা সবার কাছে পৌছে যাওয়া উচিত- জিহাদ মানেই বিপ্লব নয় ! বিপ্লবের প্যাটার্ন অনেক প্রশস্ত।
©somewhere in net ltd.