নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নেবুলা মোর্শেদ

মেঘ মুক্ত রাতের আকাশ দেখতে ভালবাসি,আর ভালবাসি ছবি তুলতে।

নেবুলা মোর্শেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমুদ্র ও আমাদের জীবন।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:১৫

পৃথিবীর তিন ভাগ পানি এবং এক ভাগ স্তল ভাগ।মহাকাশ থাকে অনুসদ্ধান করে এর প্রমান পাওয়া গেছে,আসলে এই পৃথিবী একটি জলময় গ্রহ।আর আমাদের ভূ-ভাগকে চারিদিক থেকে আছে সাগর ও মহাসাগর।এই সাগর ও মহসাগর বিষয়ের চর্চ্চাকেই বলা হয় সুমদ্র বিন্গান।

মানুষের সাথে সমুদ্রের ঘনিস্ঠতা বহু প্রাচীন।তবু ও এই সমুদ্র এখনো মানুষের কাছে অজানা রহস্যময়

এবং ভয়ন্কর।আমাদের জীবনের অনেক কিছুর উপরেই রয়েছে সমুদ্রের প্রতক্ষ্য এবং পরোক্ষ প্রভাব। পৃথিবীর আবহাওয়া মন্ডলের পরিচালক সমুদ্র,দৈনন্দিন জীবনের অনেক বস্তুর উৎস সমুদ্র।খাবার ছাড়াও জ্বালনী তেল,প্রাকৃতিক গ্যাস,কয়লা, ও আরো অনেক খনিজ দ্রব্য আহরনের কেন্দ্র বিন্দু সমুদ্র।

আর এই সমুদ্র তীরেই স্হাপিত হয়েছে পৃথিবীর অনেক বড় বড় শহর।

সমুদ্র বিজয়: প্রাচীন মিশরীয়রা প্রথম পরিকল্পিত সমুদ্র অভিযান চালিয়ে ছিল।পরবর্তীতে আরবেরা ব্যাবসা বানিজ্যের জন্য সমুদ্র পথে বহুদুর চলে যেত,এরা ছিল দক্ষ অনুসন্ধাকারী,বিভিন্ন

সমুদ্রদের স্রোত,বায়ু প্রবাহ,বৃস্টিপাত ও অন্যান্য বহু বিষয় সম্বন্ধে নির্ভূল তথ্য লিপিবদ্ধ করে রাখতো।পরবর্তীতে এইসব তথ্য বহু দেশের নাবিকদের খুব সাহায্যে করেছিল। নবম খ্রীঃ ইউরোপের ভাইকিংরা সমুদ্র বিজয়কে সুদৃঢ করেছিল।আর ফার্ডিনান্ড ম্যাগিলানের (1480-1521), দলটি প্রথম সমুদ্র পথে পৃথিবী প্রদক্ষিনকারী দল,মাএ তিন বছর ( 1519-1522) বারোটি জাহাজে করে এই দুঃসাহসিক অভিযান সম্পন্ন করে।ক্যাপ্টেন জেমস কুক (1728-1779), 1769 থেকে 1779 খ্রীঃ মধ্যে Voyage of the Endeavour ও Voyages of the Resolution জাহাজে করে তিনটি গুরত্বপূর্ন সুমদ্র অভিযানে ব্রিটিশ নৌবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।এবং প্রথম

অভিযানে তিনি অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ আবিস্কার করেছিলেন।এমনিভাবেই একের পর এক দুঃসাহসিক নাবিকগন সমুদ্র মন্হন করে এর অজনা সব তথ্য মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন।

তবে সঠিকভাবে সমুদ্র সম্পর্কিত জ্ঞানকে পূর্নবিন্যাস করে বৃটিশরা।মানুষ সাধারনত সমুদ্রের উপর এবং তীর সম্বন্ধে জানতো,কিন্তু এর নীচে যে আছে আর এক বিশাল অজানা জগত,মানুষের

কাছে ছিল তা অজানা।এই রহস্য উম্নোচন করে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ "চ্যালেন্জার" তবে

একে গবেষনা উপযোগী করার জন্য এই জাহাজ থেকে যুদ্ধের সমস্ত উপকরন খুলে ফেল হয়েছিল।

এবং 1872 খ্রীস্টাব্দের ডিসেম্ভর মাসে সমুদ্র অভিযানে নেমে পড়ে,তিন বছরে 1 লক্ষ কিঃমিঃ এর

ও বেশী পথ পাড়ি দেয় এবং 362 টি সমুদ্র স্টেশন তৈরী করে,সমুদ্রের বিভিন্ন তথ্য লিপিবদ্ধ করার জন্য।এই অভিযানের 50 খন্ডের সরকারী বিবরন তৈরী করতে 23 বছর সময় লাগে। এরপর জার্মানী মিটিওর অভিযান চালায়।দুই বছরে দিন,রাত,ঝতু,ও আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যাপক অনুসন্ধান চালায়,এবং এর জন্য সমুদ্রের গভীরে 70,000 বার শব্দ তরন্গ পাঠায়।।এবং এর ফলে এখান থেকেই জানা যায় সমুদ্রের তলদেশ এবড়ো থেবড়ো।

ভূ-বৈশিস্ট: সমুদ্রের তলদেশ 3টি প্রধান অংশে বিভক্ত 1.মহীসোপান,2.মহীঢাল,3.গভীর অন্চল

1.মহীসোপান : এই স্হান সাধারনত স্হলভাগ দ্বারা প্রভাবিত হয়,এবং বৃস্টি ও নদীর পানিতে বয়ে আনা পুস্টিকর খাদ্যে সমৃদ্ধ থাকে।এর সর্বাধিক গভীরতা 200 মিটার।

2.মহীঢাল :মহীসোপানের পর যে বিশাল অন্চল তাকে বলা হয় মহীঢাল।এই অন্চলটি খুব খাড়া

উদ্ভিদ ও প্রানী বেশী দেখা যায় না।পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে এই মহীঢাল গভীর খাদে মিশে গেছে,এই

খাদগুলির দৈর্ঘ বরাবর নিচু এবং গভীরতা 200 মিটার।

3.গভীরতর অন্চল : এই অন্চলটি সবচেয়ে বৈচিএময়,আছে সমভূমি,উচ্চভূমি,দ্বীপ,সমুদ্র পর্বত ও মধ্যসাগরীয় শৈলশিরা,এই গভীর অংশ ভূপৃস্ঠের অর্ধেক অংশ জুড়ে আছে।প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় 3/5 অংশ জুড়ে ছড়িয়ে আছে বিশাল সমভূমি আর পাহাড় গুলি আছে এসব সমভূমির কাছে।

কিছুকিছু পাহাড় এতই উচু যে পানির উপর এর মাথা দ্বীপের আকার নেয়।"বারমুডা রহিজ"এই

রকম একটি পাহাড়।আর মধ্য সাগরীয় শৈলশিরা এতই বিশাল যে হিমালয়ও এর কাছে তুচ্ছ মনে হবে,এগুলো 80,000 কিঃমিঃ এর ও বেশী দীর্ঘ।

সুমদ্রের পানি : এক ঘন কিঃমিঃ সুমদ্রের পানি বাস্প করলে 400 লক্ষ টন লবন পাওয়া যাবে।

সমুদ্রের পানিতে গড় লবনাক্ততা 3/5% ,এছাড়াও সমুদ্রের পানিতে প্রায় 100 অনান্য মৌল পদার্থ আছে,যদিও এর অনেক গুলির পরিমান খুব সামান্য।কাজেই এখন এক কথায় বলা যায়,

পৃথিবীর সবচেয়ে সহজলভ্য রাসায়নিক যৌগ হলো সমুদ্রের পানি।এছাড়াও সমুদ্রের পানিতে আছে নানা রকম গ্যাস,এর মধ্যে অক্সিজেন সবচেয়ে প্রয়জোনীয়,সমুদ্রের 1 ঘন কিঃমিঃ পানিতে অক্সিজেন আছে 368,105,500 টন।অন্য দুটি গ্যাস হলো নাইট্রোজেন ও কার্বনডাই-অক্সাইড

এই কার্বনডাই-অক্সাইড সমুদ্রের পানিতে খুব ঘন হয় না,কারন এটি উদ্ভিদের সালোক-সংশ্লেষন প্রক্রিয়ার জন্য ঘন হতে পারে না। সমুদ্রের এই গ্যাস বিভিন্ন রুপে থাকে-

1.দ্রবীভূত হিসাবে।

2.অল্প পরিমানে অভগ্ন কার্বনিক এসিড হিসাবে।

3.ভগ্ন কার্বনিক হিসাবে।

4.অল্প দ্রাব্য কার্বনেট হিসাবে ও

5.বেশী দ্রাব্য বাই কার্বনেট হিসাবে।

এক লিটার সমুদ্রের পানিতে সঠিক দ্রবনে কার্বনডাই-অক্সাইডের পরিমান 1 ঘন সেন্টিমিটারের 1 দশমাংশ। কিন্ত মুক্ত এবং যুক্ত এই দুই অবস্হায় এই গ্যাসের পরিমান 45-50 ঘন সেন্টিমিটার,

এই অবস্হায় মুক্ত অক্সিজেনের পরিমান 5-10 ঘন সেন্টিমিটার।এই অতিরিক্ত ক্ষারের দুই তৃতীয়াংশ বাই-কার্বনেট হিসাবে আছে,যা প্রয়োজনের সময় ভেন্গে গিয়ে উদ্ভিদকে কার্বনডাই-অক্সাইড যোগায়।

সমুদ্রের জীবন :সমুদ্রতল স্হল ভগের চেয়ে 3 গুন বড়,কাজেই এখানকার জীবনের প্রাচুর্য ও বৈচিএ্য ও স্হল ভাগের চেয়ে বেশী,যা এই অল্প পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব নয়।

প্রয়োজনীয় উৎস: সামুদ্রিক সম্পদকে তিন ভাগে করা যায়,

1.খাদ্য

2.সমুদ্রের পানি থেকে নিস্কাশন করা এমন রাসায়নিক বস্তু।

3.নানাবিধ রাসায়নিক ও মূল্যবান খনিজ যেগুলো সমুদ্র তলদেশ থেকে পুনরুদ্ধার করা যায়।

4.সমুদ্র থেকে উদ্ভূত শক্তি যা মানুষের কাজে লাগানো যায়।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যের অফুরন্ত ভান্ডার হলো সমুদ্র,যদি এই খাদ্য সম্পদকে সঠিক ভাবে ব্যাবহার করা যায় তাহলে,পৃথিবীর মানুষকে বড় কোন খাদ্য সমস্যায় পড়তে হবে না।

সমুদ্রের পানিতে 40 টি মৌল আছে যা নিস্কাশন করা সম্ভব,সোডিয়াম,সালফেট,ম্যাগনেসিয়াম ও এর যৌগ সমুদ্রের পানি থেকে নিস্কাশিত হয়।সোপান অন্চল কি পরিমান তেল আছে তা সম্পূর্ন জানা নেই।

ম্যান্গানিজ,লোহা,তামা,কোবাল্ট,নিকেল, ইত্যাদি ধাতু সমৃদ্ধ নুড়ি সমুদ্রের তলদেশে ছড়িয়ে আছে।

উন্নতদেশ গুলো এইসব উওলোন করছে।

সমদ্রের জোয়ার ভাটা ও ঢেউয়ের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশ জলবিদুৎ কেন্দ্র তৈরী

করে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করছে।এবং সমুদ্র তীর থেকে তাপকে শক্তিতে রুপান্তরিত করে বিদুৎ উৎপাদনের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কারখানা স্হাপন করছে,জানা যায় যে এই প্রক্রিয়ায়

তৈরী বিদুৎ সস্তা আর এই পদ্ধতিকে বলে (OTEC=Offshore Thermal Energy con

version)।

সাড়া পৃথিবীব্যাপী সমুদ্র নিয়ে এই যে পরিকল্পনা শুরু হয়েছে,তার থেকে আমাদের দেশ অনেক অনেক পিছেয়ে আছে,কারন হলো সরকারের সুস্ঠ পরিকল্পনার ও নীতিমালা অভাব।দুঃখের বিষয়

আমাদের অনেক বড় সমুদ্র সীমানা আছে কিন্ত আমরা এখন পর্যন্ত এর উপরে দাবী খাটাতে পারছি

না।আমরা এখনও আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি।তারপরেও যেটুকু এখন পর্যন্ত হাতে আছে সেটুকুর সম্পদকে রক্ষার নেই তেমন কোন আইন যদিও, বা কিছু কিছু ক্ষেেএ আইন যাও আছে নেই তার সঠিক প্রয়োগ,যার কারনে আজ উজাড় হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির এই সম্পদ।

জনসংখ্যা বাড়ছে কিন্ত কৃষিজমি বাড়ছে না বরং প্রতিদিনই কমছে,খাদ্য সংকট দৈনন্দিন জীবনের অংশ।সমুদ্রের এই সম্পদকে সঠিকভাবে রক্ষনাবেক্ষন ও ব্যাবহার করা যায় তবে কিছুটা হলেও এই

কস্ট লাগব হবে।

ছবি সৌজ্যন্যে:https://www.google.com/search?q=bay+of+benga

প্রথম ছবি 2829 km উপর থেকে 38° ক্যামেরা এ্যান্গেল করে তোলা Bay of Bengal এর ছবি।ছবিতে ইন্ডিয়াকে দেখা যাচ্ছে পূর্ব উপকুলে,এর বাদিকে শ্রীলন্কা কে দেখা যাচ্ছে বাদিকে

দ্বীপের সারিগুলি হলো আন্দামা নিকোবার আইল্যান্ড।

দ্বিতীয় ছবি ফার্ডিনান্ড ও তার জাহাজ,এবং তার প্রদক্ষিন পথের ম্যাপ।

তৃতীয় ছবি জেমস কুক ও তার জাহাজ এবং প্রদক্ষিন পথের ম্যাপ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.