![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নীলক্ষেতসহ দেশের অন্যান্য সব বইয়ের বাজার গুলোতে আমেরিকান লেখক ডেল কার্ণেগীর "হতাশ হবার কোন কারণ নেই" নামক বইয়ের বিক্রয় হঠাৎ করে বহুগুণ বেড়ে গেছে। ক্রেতারা সব উপচে পড়ছে দোকানগুলোতে। অধিকাংশ দোকানগুলোর সংগ্রহ শেষ হয়ে গেছে। বিশ্বকাপে (অ)প্রিয় দলগুলোর পরাজয় এর অন্যতম কারণ কিনা, তা খতিয়ে দেখছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বিভিন্ন প্রকাশনীগুলো আসন্ন ফাইনাল খেলাকে কেন্দ্র করে নিজেদের পকেটভারী করার জন্য এবং ক্রেতা চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে এখুনি বহুসংখ্যক বই ছাপা শুরু করেছে।
প্রকাশ প্রকাশনীর মালিক প্রকাশ ভাই প্রকাশ করলেন নতুন একটি দিক, "ভাই মজার বিষয়টা খেয়াল করে দেখছেন। বই হল আমাদের বন্ধু। সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ উপহার হল বই। আনন্দের সময় আমরা যেমন বই উপহার দেই, সেভাবে কিন্তু খেলার সময় সান্ত্বনা জানোর জন্য বা হালকা পাতলা খোঁচা মারার জন্যওবই উপহার দিতে পারে। এক্ষেত্রে "হতাশ হবার কোন কারণ নেই" বইটা একদম আদর্শ। অবশ্য “তুমিও পারবে”নামে একটা বই আছে। কিন্তু ওটার কাটতি কম"।
ক্রেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেল তাদের স্বতঃস্ফূর্ত বই কেনার কথা এবংউদ্দেশ্য। মনসুর নামক এক তরুণ বললেন, “ভাই ফ্রেন্ড আছে একটা, ব্রাজিল নিয়ে অনেক লাফাইছিল। এখন পুরা চুপ। ওকে দেয়ার জন্যই কিনলাম। কঠিন মজা হবে, তাই না হায়াদার।“ হায়দার উনার সাথেই এসেছে এবং তার হাতেও একই বই। এক জনকেই দেয়ার জন্য কিনছেন কিনা সেটা জিজ্ঞাসা করলে উনি বলেন “আরেহ নাহ! ধুর! আমিতো কিনলাম মনসুরের (প্রথমজন) জন্য। আর্জেন্টিনা নিয়ে চিল্লাফাল্লা করতেছে ফাইনালে বুঝবো ঠেলা। এক কপি অগ্রিম নিয়া নিলাম।”
[এহ! আইসে...জার্মানি ৪ টা গোল খাবে...][তোদের এক মেসিছাড়া কে আছে...][আমার জন্য বই না কিনে তোর জন্য কেন...।][খেলা বুঝস][...][...] এরকম আরো অনেক কথার মাধ্যমে উনাদের দুই জনের মাঝে আলোচনা প্রথমে মৃদু কথা কাটাকাটি থেকে হুঙ্কার পর্যন্ত গড়ালে ঘটনাস্থল থেকে বিদায় নিয়ে পাশের গলিতে ঢুকলে দেখা হয় উঠতি বয়সী এক আপুর। নাম জিজ্ঞাসা করলে উনি বলেন রূপসী (নাম বলল নাকি উনার রূপের কথা বলল বোঝা যায়নি)। উনি শোনালেন অন্য এক কাহিনী। “আমার বাবুটানা অনেক কষ্ট পাইছে ফ্রান্স হারার পর। ওর মন খারাপ দেখে না আমারকিছুই ভালো লাগেনা।...আরে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? ওও!!! আমার বাচ্চা মনেকরেছেন। আরে না না, আমার বিয়ে হয়নি। আমার বয়ফ্রেন্ড মজনুর কথা বলছিলাম। একহিসাবে ভালোই হইছে। শুধু বলতো ফ্রান্সের মেয়ে গুলো সুন্দর। হারছে ভালই হইছে। ওরজন্যই কিনলাম। যাতে শকটা কাটিয়ে আমার দিকে একটি নজর দেয়। বলেন তো ও খুশি হবে না? কিউট না?“
পাশের দোকান থেকে দুই বন্ধু গলায় গলায় গান গেতে গেতে হেঁটে যাচ্ছে এবং তাদের হাতেও বই। তাদের ভাষ্য “আমরা দুই বন্ধু। একদম ভাই ভাই (পাশের জন সুর তুলছে: হুম একদম, একদম!)। আমরা একজন সাপোর্ট করি আর্জেন্টিনা, আরেকজন জার্মানি। দুইজনের টাকা দিয়াই বাজী হিসাবে বইটা নিলাম। জ্বলাবেও আবার রিকভারিতেও কাজে লাগবে। ইনোভেটিভ আইডিয়া। Think smart boss!!!”
এরপর দেখা হল এক বিধ্বস্ত যুবকের সাথে। উনি শুনালেন উনার দুঃখের কথা- “ভাই আর বইলেন না, গার্লফ্রেন্ড নিয়া কঠিন প্যাড়ায় আছি। ব্রাজিল হারছে পরথেকে সেই প্যানপ্যান-ঘ্যানঘ্যান করতাছে। কান্দাকাটিতো আছেই। তার উপড়ে আরো কাহিনীআছে। তার নাকি প্রথম পছন্দ ব্রাজিল, দ্বিতীয় পছন্দ আর্জেন্টিনা আর তৃতীয় পছন্দজার্মানি। সদ্য পাওয়া কষ্টের সাথে আগাম বেদনা জোড়া লাগাইয়া ভাই আমার অবস্থা কেরোসিন। বইটা ওকেই দিব নাকি নিজে পড়ব বুঝতেছিনা।“
হঠাৎ করে দমকল বাহিনীর সাইরেনের আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। সবাই যার যার মত দৌড়ে মার্কেট থেকে বেড়িয়ে আসে। কিন্তু একি! দমকল বাহিনীর পরিবর্তে আসছে দাঙ্গাপুলিশ । লাঠি চার্জ করছে। অনুসন্ধান করে জানা গেল প্রথম যে দুই বন্ধুর সাথে কথা হয়েছিল তাদের তর্কাতর্কিতে আশেপাশের দোকানদার ও কাস্টমাররা যোগদান করাতে সেটা তর্কে আঁটকে না থেকে মারামারিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এর পর মারামারি থেকে মহা-মারামারি। অতঃপর মহামারি।
বিশ্বকাপের এমন প্রভাব দেখে যারপরনাই হতাশ হয়ে হেঁটে হেঁটে ফিরছিলাম। তখনি মনে পড়লো “আরে, হতাশ হবার তো কোন কারণ নেই”। এক দৌড়ে চলে গেলাম চিপার এক দোকানে। কিনে নিলাম বইটা আমিও। আহ! হতাশার সাথে যুদ্ধে ৫০% জিতে গেছি। ইয়াহু বলে চিৎকার দিতেই সামনে দেখি এক বিশাল চশমা-ওয়ালা ভাই সাহেব উদাস নয়নে হেঁটে চলছেন, কাঁধে ঝোলা নিয়ে আপন মনে। ।
নীলক্ষেত কি বই কিনতে এসেছিল কিনা জিজ্ঞাসা করতে উনি একটু উৎসাহিত বোধকরে বললেন, “ভায়া, আমি বই পাগল মানুষ। বই-ইতো কিনব। বই থাকলে আমি আশেপাশের সব কিছু ভুলে যাই (যেমন উনি ভুলেই গেছে এখন গরম কাল, সোয়েটার পরে আছে এখনও। মনে হয় খুব মোটা একটা বই ধরছিল শীতকালে, শেষ হইছে আজকে সকালে)। আমি অবাক নয়নে অনুধাবন করলাম আজকালকার ছেলেমেয়েরা হতাশায় ভুগছে। কি কারণে হতাশা হয় সেটা জানার জন্য একটা বই খুজছিলাম। দোকানে গিয়ে বলতে ডেলকার্নেগী স্যারের একটা বই ধরিয়ে দিল। কিন্তু আমি আরও অবাক হলাম, আসলে যারপরনাই অবাক হলাম যখন দোকানদার আমাকে জিজ্ঞাসা করল আমি কোন দেশ? কয়টা খাইছি? বইয়ের সাথে দেশ আর খাবারের সম্পর্ক কি কিছুতেই মেলাতে পারছিনা। আপনি কি বলতে পারবেন”
“জানতে চেয়ে হতাশ হবেন না” বলেই দিলাম দৌড় ।
©somewhere in net ltd.