![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্প: একটা নাম না জানা নদী,বাউল আর হারিয়ে যাওয়া বউ
বউ বলল—ওই নদীতে আমি কখনোই গোসল করব না।
আমি মনে-মনে বিরক্ত হই।হাসিমুখে বলি-কি চমৎকার নদী,এর পানিতে গোসল করলে,মন ভাল হয়ে যাবে দেখো।
বউ পায়ের আঙুলে ভেজা বালি মাটিতে দাগ কাটছে।সেই দাগ কিসের ছবি ফুটিয়ে তুলছে বোঝা মুশকিল।বউকেই বুঝতে পারলাম না আজ অব্দি,তা এতো মাটিতে আঁকা অবহেলার দাগ।
নুনফিকিরি পিকনিক স্পটের গল্প আগে শুনেছিলাম।কিন্তু এই নদীর কথা বলেনি তো কেউ।
ছোট্ট নদী।শীর্ণ ধারা।নদীটার নাম কি নুনফিকিরি।আঁজলা ভরে পানি তুললাম।মুখে দিলাম।নোনা নয় তো!তবে কি জায়গাটার নামই নুনফিকিরি,নদীটার কোন নাম নেই।
বউ বলল—বেশ আমি গোসল করব।কিন্তু একটা শর্ত আছে।
--কি শর্ত।
--তুমি চোখ বন্ধ করে থাকবে।
--আমি তো ভাবছিলাম,দুজনে একসঙ্গে গোসল করব।
--বেশ তাহলে তুমিই গোসল কর,আমি চললাম।
--না,না,তুমিই গোসল কর,আমি চোখ বন্ধ করে থাকি।
--প্রমিস।
--প্রমিস।
বউ নেমে গেল হাঁটুজলে।আমি চোখ বন্ধ করলাম।
শীতের দুপুর।রোদে বেশ তেজ।বন্ধ চোখে তাপ পড়ছে।কতক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকা যায়।চোখ খুললাম।বউ কই?শীতের রোদে ঝিলমিল করে হাসছে
নদী।বউ নাই।
অবাক কান্ড।সকালে দুজনে অফিসের গাড়িতে উঠেছি।পিকনিক স্পটে সহকর্মীদের
সাথে নাশতা করেছি।সবাই যখন রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত,বউ বলল—চলো না,দুজনে
ঘুরে আসি।
--বেশ চলো,নতুন জায়গা ঘুরেফিরে দেখতেও ভাল লাগবে।
দুজনে গল্প করতে-করতে চলে এসেছি নদীর কাছে।নাম না জানা নদীর কাছে এসে বউয়ের ভাব পরিবর্তন।হঠাৎ বলল--ওই নদীতে আমি কখনোই গোসল করব না।
গোসল যদিবা করতে নামল,উধাও হয়ে গেল কোথায়?
আচমকা আমার মনে একটা ভয়,নদীতে চোরাবালি নাই তো? চোরাবালি একটু একটু করে তলিয়ে দিয়েছে তার স্নান-সম্ভাবনা। না,তা হতেই পারে না।তেমন কিছু হলে বউ আমার চিৎকার করত।আমি চোখ বন্ধ করে থাকলেও কান খোলা ছিল।
আমিও নামলাম নদীর পানিতে।ঠান্ডা পানি।গা শিরশির করে।নদী পার হতে গিয়ে পাজামা ভিজে গেল।বউয়ের শাড়িও ভিজেছে।মাঝেমধ্যে ও এমন অদভুত আচরণ করে,আমার ভয় হয়।আমি কি পাগল হবো নাকিরে?
বউয়ের আচমকা উধাও হয়ে যাওয়া,তেমন কিছু নয় তো?
নদীর ওপারে ঝোপজঙ্গলের আড়ালে বাড়িঘর।বউ কোন ঝোপে লুকোয়নি তো?
এই ঝোপে চোখ রাখি,ওই ঝোপে চোখ রাখি,বউ কোথাও নাই।
একটা ঝোপের আড়ালে গেরুয়া বসনের একজনকে দেখলাম।নদীতে
নেমে বউয়ের গেরুয়া বসন হয়ে গেল নাকি। হাঁটলাম সেই ঝোপের দিকে।এক বাউল একতারা হাতে টুংটাং করছে।বললাম—আমার বউকে দেখেছেন।
--নিজের বউয়ের ভয়ে জঙ্গলে ছুটে আসি গলা সাধতে,পরের বউকে দেখতে যাব কেন বাবা?
--বউকে আবার ভয় কিসের,আপনি বাউল,আপনি শিল্পী,আপনার তো ভয় থাকার কথা নয়।
ঘোড়ার আন্ডা বাউল,আমি হলাম পাঁচু মুদি।ভোর থেকে দোকানদারি করি।যখন
ফাঁক পাই গলা সাধি।বউয়ের তাতে আপত্তি।আমার মত হেঁড়ে গলা নাকি জগতে
কারো নাই।শেষমেষ ভদ্রলোকের চুক্তি,গলা সাধতে পাব,একমাত্র জঙ্গলে।
মাঝবয়সী লোক তার বাউল হওয়ার শখ নাই,শুধু মাত্র গলা সাধার ইচ্ছায়
বাউল সেজে জঙ্গলে বসে আছে।আর আমি কিনা বউয়ের খোঁজে ইতিউতি
ছুটছি।হাঁটলাম আবার পিকনিক স্পটের দিকে।
পিকনিক স্পটে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে আছে সবাই।মেয়েরা রান্না করছে।কেউ তাস খেলছে।কেউ গল্প করছে।বউকে তো দেখছি না।
গাংগুলিদা বললেন—কি ব্যাপার,বউকে ফেলে পালিয়েছিলে কোথায়?
আমি অবাক।আমি তো পালাইনি।বউই তো পালিয়েছে।এর মধ্যে গাংগুলিদা টের পেয়ে গেল।অফিসে আমি তার ভুল শুধরেদিই,সে কি আমার ভুল ধরতে চাইছে জীবনে? আমতা-আমতা করে বললাম—কোথায় আবার পালাব,এই একটু নদীর কাছে গেছিলাম।
--নদী,ও নামে তোমার কোন গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি?
--ওই তো একটু দুরে আছে একটা,ওটার নাম গার্লফ্রেন্ড নাকি।
--ওহ,তাই বলো,আমরা ভাবলাম নতুন বউকে ছেড়ে এতক্ষণ,নিশ্চয় কোন পরকীয়া।বলে হো-হো করে হাসলেন গাংগুলিদা।মশকরা তার স্বভাব।
--ওই নদীতে চান করা যাবে তো?
--হুঁ-হুঁ খুব ভাল নদী,ঠান্ডা।
--আহা যেন কোন মেয়ের বিবরণ দিলে,খুব ভাল মেয়ে ঠান্ডা,রাতে উষ্ণ-প্রস্রবন
হয়ে যায়।
গাংগুলিদার রসিকতায় অন্য সহকরমীরা হেসেউঠল।আমার কেমন জানি রাগ হল।বললাম,যাদের ঘোড়া-খোঁড়া,মুখেই শুধু তুবড়ি ছোড়া।
গাংগুলিদা এবং তার বয়সী সহকর্মীরা থম মেরে গেলেও আমার বয়সীরা হো-হো করে হেসে উঠল।প্রসঙ্গ পালটাতে গাংগুলিদা বললেন—কই সব তোয়ালে টোয়ালে নিয়ে চল,ওখানে একটা নদী আছে,চল চান করে আসি।
সবই তো আছে,কিন্তু বউ কই?
পিকনিকে আসা মেয়ে-বউরা এদিক-সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।কেউ শুয়ে,কেউ বসে।কোথাও ঝোপ,কোথাও ঝাড়।সবসময়,সবদিকে তাকানো যায় না।একটা ঝোপে
মনে হল বউয়ের মত কেউ একজন।আজকালকার মেয়েরা বিউটি-পারলারে গিয়ে
এমন সব চুল-কাটা আর বাঁধার স্টাইল শিখেছে,দুর থেকে সবাইকে নিজের বউ মনে হয়।
কাছে গিয়ে দেখি,সত্যিই বউ। তার পাশে বসে থাকা মেয়েটি আমাদের পিকনিক টিমের কেউ নয়।সে ব্লাউজ খুলে তার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে।বউ তা মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখছে।
বুঝলাম বউ আমার সঙ্গে নদীতে গেছিল নাকি যায়নি সেটা বড় কথা নয়।সে উধাও হয়ে ওপারের বসতি থেকে মেয়েটিকে ধরে এনেছে এটাও বড় কিছু না।বড় কথা এটাই,আমি যেমন ওকে স্বপ্নের মাঝে ছোটাচ্ছি,সেও আমাকে ছোটাচ্ছে।একটা ছোট্ট
শিশু এসে আমাদের না হয় আর একটু ছোটাবে।
বউয়ের চোখে চোখ পড়ে গেল,সেখানে খুশির ঝিকিমিকি,যেমনটি দেখেছিলাম নদীর।
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৪
তুষার আহাসান বলেছেন: আমার ইদানিংকার গল্পে আপনার মন্তব্য প্রথম পাই,খুব লাল লাগে,শুভ কামনা পথিক ভাই।
২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৫০
বিদ্যুৎ বলেছেন: বেশ ভাল লাগল। ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য।
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৫:০৯
তুষার আহাসান বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ বিদ্যুৎ-ভাই,ভাল থাকবেন সবসময়।
৩| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:০৯
আ স রনি আহমেদ বলেছেন: বউ! ভাল গল্প
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১৩
তুষার আহাসান বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ রনি-ভাই,ভাল থাকবেন সবসময়।
৪| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫২
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: রস আছে লেখায়। খুব ভাল লাগল।
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৬
তুষার আহাসান বলেছেন: ধইনা পাতা লন প্রোফেসর,আপনাকে আমার ব্লগে দেখে ভাল লাগল।
ভাল থাকবেন।
৫| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৫০
ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: ভালোই লেগেছে ।
ভেবেছিলাম বউ মনে হয় হারিয়েই গেল।
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৫
তুষার আহাসান বলেছেন: আমিও তা-ই ভেবেছিলাম।
অশেষ ধন্যবাদ ভাল লাগা জানানোর জন্য।
ভাল থাকবেন।
৬| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১৩
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
আহ... বাঁচালেন
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২০
তুষার আহাসান বলেছেন: বই আর বউ দুটোকেই মারতে নাই,কি বলেন?
শুভ কামনা মইনুল ভাই।
৭| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৬
প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার রসালো লেখা। খুব ভাল লাগল। ধন্যবাদ
১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩২
তুষার আহাসান বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই,
কারো ভাল লাগা জানলে ভাল লাগে,নিজেকে ধন্য মনে করছি।
শুভ কামনা।
৮| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৭
অন্ধবিন্দু বলেছেন:
হাহ হাহ হাহ। দুর থেকে সবাইকে নিজের বউ মনে হয়!!!
জনাব আহসান,
রম্য গল্পটা কইলাম মজার হইছে। আপনি ছোট করে রম্য/কমেডি গল্প বেশি বেশি লেখেন। আর শিরোনামটাও চটুল টাইপের করেন। পা্বলিক খাইবো। বিনোদনের পাঠক কখনোই কমতি হয় না।
আপনার হাতে রসালো গল্প জমবো মনে হইতাছে।
১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২৯
তুষার আহাসান বলেছেন: হাসালেন ভাই,আমি তো একসময় শুধু জোকস-টাইপের পোস্ট দিতাম।
তখন কি ভিড়।
সিরিয়াস লেখাগুলো পড়তই না কেউ.
এতে আমার লেখার গভীরতা কমেছে।
তাই এখন শুধু হালকা চালের লেখা লিখছি।
ভাল থাকবেন।
৯| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪০
তুষার আহাসান বলেছেন: @ অন্ধবিন্দু ভাই
কাঁচেরঘর,চড়ুইপাখি এবং একটুকরো কাঁচ
পড়ার অনুরোধ রইল।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫১
কল্লোল পথিক বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন।
নিরন্তর শুভ কামনা রইল।