নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পদসঞ্চার

তুষার আহাসান

ফেসবুকে পদসঞ্চার নামে দুটি গ্রুপ চালাই। সম্পাদক পদসঞ্চার পত্রিকা ও ব্লগজিন।

তুষার আহাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প॥ বাজারহাট,ঘরপাহারা এবং এক চশমাচোখো মেয়ে

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৮

একা থাকার কিছু জ্বালা আছে। একা রাঁধি,একা খাই,কেউ কিছু বলার নাই। তবুও লোকে অনেক কিছু বলে।
--এই যে ভাইটি,বাজার যাচ্ছো?
--জী,হ্যাঁ।
--আমার জন্য পাঁচশো পালংশাক এনো।
--ঠিক আছে আনবো।
--একটু দাঁড়াও,পয়সাটা দিই।
দাঁড়ালাম।পাড়ার বৌদি পাঁচটা একটাকার কয়েন আমার হাতে গুঁজে দিলেন।

বাজারহাটের ভিড় কাটিয়ে বাসায় যখন ফিরছি,শীতেও গা ঘামছে।পেটে সতেরোটা ইঁদুর।সবাই খামচাচ্ছে।এরপর রান্না করব কখন আর খাবই-বা কখন?এই জন্যই বলে,পাপ এবং পাপী পেট কা সওয়াল।

ভাবলাম পাড়ার বৌদির শাক এনে দিয়েছি,তিনি যদি একবেলার দাওয়াত দেন,বেঁচে যাই।

বৌদি দাওয়াত দিলো একটু ঘুরিয়ে,শাক তো বেশ তাজা দেখছি,কত নিলো?
--ছ’টাকা।
--ওমা,তাহলে তো তুমি একটাকা পাবে।দাঁড়াও আনছি।
--না,না,আনতে হবে না,ওটা একদিন আপনার হাতের চা খেয়ে শোধ করব।
--সে-ই ভাল,ছুটির দিনে তোমার দাদা থাকবে,এসো যেন,ওইরে আমার বোধহয় ডালটা পুড়ে গেল।বলে বৌদি ছুটল নিজের কিচেনের দিকে। আমি হাঁটলাম বাসার রাস্তায়।
বৌদি জানে,ছুটির দিন গুলোতে আমার ছুটোছুটি বেশি।টিউশন,ইন্টারভিউ আরো কত ব্যস্ততা।

একদিন একটা ইন্টারভিউ দিতে বেরিয়েছি,হঠাৎ পিছু ডাক,ভাইটি শোন।

ইনিও এক পাড়াতুতো বৌদি।চেহারার মত গলার স্বরেও আদুরে-আদুরে ভাব।
বললাম—হ্যাঁ,বলুন।
--কোথায় যাচ্ছো?
--ইন্টারভিউ দিতে।
--ইন্টারভিউ,ইন্টারভিউ দিয়ে কি চাকরী হয় পাগলা,চাকরী হয় পকেটের জোরে।
--দাদার বুঝি তাই হয়েছে?
--তাছাড়া আবার কি,আমার বাবা টাকা দিয়েছিল বলেই তো তোমার দাদা অফিসারি করে বেড়াচ্ছে।
--বেশ,তাহলে আপনার মত একজনকে খুঁজে দিন।
--আরে পাত্রী তো আমার বোনই আছে,আমার চেয়েও সুন্দর কিন্তু তোমার সাথে হবে না। আমার মা না, খুব জাতপাত মানে।
--বেশ,গল্প শেষ,এবার তাহলে আমি যাই?
--যাবে,তার আগে আমার একটা কাজ করে দাও না।
--কি কাজ?
--আমার ছেলেটাকে একটু দুধ খাওয়াও না।
--দুধ,আপনি থাকতে আমি?
--কেন,তোমার দাদা তো খাওয়াই।
--দাদা তো শুনছি ঘুষ-ঘাস খাই,তাই হয়তো পারে।
--এই পাগলা,কি আবোল-তাবোল বকছো,ছেলেটাকে কোলে নিয়ে ঘুরে-ঘুরে বোতলের দুধ খাওয়ানো খুব কঠিন কাজ বুঝি?
কড়া গলায় বলল বটে তবে মুখে-চোখে হাসির পায়রা ডানা ঝাপটাচ্ছে।আঁচলে মুখ মোছার বাহানায় হাসি মুছে বৌদি আবার আদুরে গলায় বলল,যাও না গো,ছেলেটাকে একটু দুধ খাইয়ে আনো।
--কিন্তু আমার যে ইন্টারভিউ,ট্রেন লেট না করলে,গেল সব।
--উ-মা তুমি ট্রেনে যাবে,আমার খোকন তো ট্রেনে চড়লে সব কিছু ভুলে যায়।সঙ্গে নিয়ে যাও না গো।
--ছেলে কোলে ইন্টারভিউ?
--হ্যাঁ,ইন্টারভিউ,জানো তো খোকন আমার খুব পয়মন্ত,ও যখন পেটে এল,তখন থেকেই তো তোমার দাদার রমরমা।
--আপনি ওকে ছেড়ে থাকতে পারবেন?
--একটু মনখারাপ হবে হয়তো,তবে পার্লার থেকে ফিরতে আমার সন্ধে হয়ে যাবে,জানো তো আজ পার্লারে ফাইনাল সিটিং। খুব গুরুত্বপুর্ণ।এটা কমপ্লিট হলেই আমি বিউটি কনটেস্টে নাম লেখাতে পারব।ছেলে কোলে কি বিউটি হওয়া যায়,বলো?
--না,না,কি আর বলবো,দিন, দুধ,বোতল ,ছেলে দিন,কোলে নিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে আসি।

সন্ধ্যেবেলা আমার ফোনে রোজ কারো না কারো মিসকল আসে।যতটা পারি রিংব্যাক করি।আলাপচারিতা পড়াশোনার বারোটা বাজিয়ে দেয়।মিসকলের সব সুন্দরীই যে মিস,তা নয়।পাড়ার এক কাকী আছেন,অবসর প্রাপ্ত শিক্ষিকা।তাকে আবার বৌদি না বললে খুব গোঁসা করেন।তাঁর নাকি আমারই চেহারার দেওর ছিল।বেঁচে থাকলে বাড়িঘর,জমানো টাকা সবই নাকি তাকেই দিতেন।আমাকে দেখেই তার কথা ভীষণ-রকম মনে পড়ে যায়,তাই বৌদি বলতে বলেন।

বৌদির মিসকল দেখলেই আত্মারাম খাঁচাছাড়া।মিছিমিছি যে বলবো,ব্যস্ত আছি তার উপায় নাই।পাশেই বাড়ি।জানালা দিয়ে আমার সব গতিবিধি লক্ষ্য করেন।

বৌদির মিসকল মানে আমাকে নিজের ঘরবাড়ির দরজা বন্ধ করে ওনার কাছে যেতে হবে।একের পর এক শুনতে হবে হাজারবার শোনা তার বাপের বাড়ির গল্প।ঘন্টা খানেক গল্পের পর বলবেন,এই-রে,তোমাকে চা খাওয়াবো ভেবেছিলাম,গল্পতে গল্পতে ভুলে গেছি।
--ঠিক আছে আমিই আপনাকে তৈরি করে খাওয়াচ্ছি।
চিনিছাড়া-চা আমি রপ্ত করে ফেলেছি এই বৌদির সৌজন্যে।অর্থ এবং শরীর দুটোরই অপচয় হয় না।

বৌদির ছেলে-মেয়ে এই শহরেই থাকে।মাঝেসাজে দেখা করে যায়। আমাকে বলে--তোমার ভরসায় মাকে এখানে রাখি,তুমি যেন লক্ষ্য রেখো ভাইটি।

বলতে ইচ্ছে করে আপনার মা-ই আমাকে সবসময় লক্ষ্য রাখে।বললাম না।কারণ আমিও তাঁকে লক্ষ্য রাখি। কতদিন মাঝরাতে উঠে দেখেছি,বৌদির ঘরে আলো জ্বলছে,পালঙ্কের উপর গহনার বাক্স নিয়ে বসে আছেন তিনি।একের পর এক গহনা পরছেন।আয়নায় নিজেকে দেখছেন।ফের তুলে রাখছেন বাক্সে।
কোনদিন-বা দেখি,থরে-থরে টাকার বান্ডিল সাজানো তার সামনে।সব একশ,পাঁচশো আর হাজার টাকার নোট।এক-একটা বান্ডিল গুনছেন,ডাইরির পাতায় লিখে রাখছেন।বিচিত্র।

আমার মাঝে-মাঝে ভয় হয়,যদি কোনদিন চুরি হয়,পাড়ার যা লোক সব,আমাকেই পুলিশে দেবে।আমি ছাড়া তো তার কাছে কেউ যায় না।

অনেক ভেবেচিন্তে দু-তিনটে ভাড়াটিয়া খুঁজে দিয়েছিলাম তার নিচের তলার জন্যে।সবাই একে-একে জবাব দিয়ে গেছে। শেষ যে গেল সে একজন অবিবাহিত শিক্ষিকা।বৌদির বাড়ি থেকে সোজা আমার বাড়ি।বলল,বাড়িওলির চোখ ভাল নয় বুঝলেন,আপনি ওর থেকে সাবধানে থাকবেন।চোখ তো নয়,যেন শকুনের হাঁ।
একটু থেমে শিক্ষিকা বলল—আপনার একটা ঘর,আমাকে ভাড়া দেবেন?
বললাম—ফাঁকা থাকলে দিতাম।তবে কি জানেন,কলেজের কয়েকটা ছেলে মেস করে থাকবে বলে অ্যডভান্স দিয়ে গেছে।
--যা দিয়েছে তার ডবল টাকা আমি দেব,ফেরত দেন।
--না,না, কথা যখন দিয়েছি তখন তা আর ফেরত কেন,ঠিক আছে আপনার ঘর আমি খুঁজে দিচ্ছি।

ডাঁহা মিথ্যে কথা। আমি ঘরভাড়া খুঁজতে যাচ্ছি না।আমি যাচ্ছি চাকরীতে জয়েন করতে।ততদিন আমার বাড়িতে থাকবে সে।পাহারা দেবে।আমি থাকছি না তাই পাড়ার কারো কিছু বলার সুযোগ থাকছে না।

চাকরী তে জয়েন করার পরপরই আমি ফেরার প্রস্ততি নিয়েছি।ওর জন্যে চিরস্থায়ী ঘরের সন্ধান দেব।বাবা আমার জন্যে এই বাড়িটাই রেখে গেছেন শুধু।সেটার সাথে আমারও না হয় দেখাশোনা করবে।আমি নিশ্চিত, ও আপত্তি করবে না।

--

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১৬

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
গল্প রচে যাচ্ছেন একটার পর একটা। পড়ার ইচ্ছে থাকলেও পাঠকের হাতে সময় অভাব :(

২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৭

তুষার আহাসান বলেছেন: না,না,এতরাতে আর পড়তে বলব না।আমিও এবার ঘুমোতে যাব। এখন কদিন খুব টেনশনে আছি একটা বিষয়ে,তাই একটার পর একটা গল্প লিখে যাচ্ছি ,নিজের অবুঝ মনকে বোঝাতে।
@ অন্ধবিন্দু ভাই।

৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১৪

কল্লোল পথিক বলেছেন: বেশ লিখেছেন খুব ভাল লেগেছে।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০১

তুষার আহাসান বলেছেন: ধন্যবাদ পথিক ভাই,ভাল থাকবেন সবসময়।

৪| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হা হা হা| আপনার ভাগ্যে তো দেখি বিবাহিতের প্রেমের বন্যা বয়ে যাচ্ছে| রসাল লেখা| মজা করে পড়লাম

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৩

তুষার আহাসান বলেছেন: আরে না,না,এটা শুধু গল্প,ব্যক্তি গত জীবনে টেনশনে আছি,তাই ,এসব লিখে চলেছি।
ধন্যবাদ আরণ্যক ভাই,ভাল থাকবেন সবসময়।

৫| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:১৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: বৌদিময় জীবন। খ্রাপ্না!

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৫

তুষার আহাসান বলেছেন: আরে না,না,এটা শুধু গল্প,ব্যক্তি গত জীবনে টেনশনে আছি,তাই ,এসব লিখে চলেছি।
ধন্যবাদ হামা ভাই,আপনার ভাবীকে এখন খুব মিস করছি,
ভাল থাকবেন সবসময়।

৬| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:১৯

দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: অতিচমৎকার

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৬

তুষার আহাসান বলেছেন: আরে না,না,এটা শুধু গল্প,ব্যক্তি গত জীবনে টেনশনে আছি,তাই ,এসব লিখে চলেছি।
ধন্যবাদ কাজল ভাই,ভাল থাকবেন সবসময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.