নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পদসঞ্চার

তুষার আহাসান

ফেসবুকে পদসঞ্চার নামে দুটি গ্রুপ চালাই। সম্পাদক পদসঞ্চার পত্রিকা ও ব্লগজিন।

তুষার আহাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বোয়াল-ভোগ

০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:৫৬



সুবলের বদহজম।ঢেউ-ঢেউ ঢেঁকুর উঠছে বিটকিরি গন্ধ নিয়ে,পেট যেন সাগর হয়ে আছে।
বোয়ালমাছের ঝোল দিয়ে ভাত।বউয়ের রান্না ভাল।আজ যেন সে টিভিতে দেখা গিন্নীর মত দেখনধারী রেঁধেছে।দেখেই চোখ জুড়িয়ে যায়।
এখন কোবরেজের কাছে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই।চুরি করা মাছ বলেই কি এমন বদহজম?

নীলু কোবরেজ চেম্বারে বসে ঝিমোন।খদ্দের নাই।যারা সব আসে ধারের কারবারী।চারিদিকে হাতুড়েদের ভিড়।
প্রচারের হাতুড়ি পাবলিকের মনে নামী দামী ওষুধের পেরেক গেঁধে দেয়।নীলুকবরেজের সাতপুরুষের আবিস্কার গাছগাছড়ার ওষুধের উপর ভরসা কমে গেছে সারা গঞ্জের।
--ঘুমোলেন নাকি কত্তা?
খদ্দেরের ডাকে বেড়ালের মত চোখ পিটপিট করলেন নীলু।বলতে গেলেন,আরে দূর ,ঘুম আর হয় কই।
সামলে নিয়ে ঢোঁক গিললেন।তিনি কিনা ‘ঘুমঘুমানি’র আবিস্কারক।
নামের জোরে ভালই কাটতি হয়েছিল সে বাজারে।
একতলা বাড়ি।টিপকল।বাথরুম।পায়খানা।ওষুধের কাটতি তখন রাতদিন।সাহস ভরে বাড়ির পাশের ধানজমি কাটিয়ে পুকুর শুরু
করেছেন।আধখোঁড়া পুকুরেই ডুবে গেল নামডাক।ঘুমঘুমানির চাহিদা ঘুমিয়ে গেল।অন্য কিছুরও খদ্দের নেই।

নীলু তখনও স্বপ্ন দেখতেন টলটলে জল হবে।ঢলঢলে ঢেউ।খলবল করবে মাছ।চারপাড়ে ওষধী গাছ হবে।হয়নি।

বাবুই পাখির মত স্বপ্ন বুনেছিলেন কোবরেজ।কার শাপে থামল কে জানে।আধকাটা পুকুরে জল জমে।জলজ আগাছা হৈ-হৈ করে।পাড়ে যে কত কি তার হিসেব নাই।
ডিসপেনসারী থেকে আটকাটা পুকুরের সব দেখা যায়।ভুলেও সেদিকে তাকান না নীলু।বদ-ছেলেরা সেখানে খোলামকুচি ছুঁড়ে ব্যাঙ-লাফানো খেলে।সত্যিকারের ব্যাঙ লাফায় কিনা খেয়াল করেননি।

সুবলের ডাকে নিজের ঘুমিয়ে পড়া স্বপ্নটাকে জাগালেন এভাবে,আর ঘুমে কথা বলো না সুবল,সকাল থকে যা পেশেন্টের ভিড়,ছোটমেয়ে ফোন করেছিল।
--কেন,তেনারও কি অনিদ্রা রোগ?
--বালাই-ষাট,তার কেন ব্যামো হবে,হয়েছে তার শাশুড়ির।আমার ঘুমঘুমানির তিনটে বড়ি খেয়ে কুপোকাত।টানা তিনদিন ঘুম।লেডি-কুম্ভকর্ণ একবারে।
বলতে-বলতে কাঠ-হাসি বাঁধানো দাঁতে ছড়ানোর চেষ্টা করলেন নীলু।
ভাবলেন,ডোজটা বেশী হয়ে গেল না তো?পরক্ষণেই নিশ্চিত হলেন,এরা মুখ্যুসুখ্যু মানুষ।কোবরেজের কাছে দশ টাকা বাকী আছে বলে একমাস এদিকে হাঁটেনি,এরা আবার ওভারডোজের বুঝবে কি।
সুবলের চোখেমুখে দশটাকা বাকীর ভয়,মুখে লোকদেখানো ভক্তি।সব খেয়াল করছেন নীলু।তবু না দেখার ভান করছেন।ধানকাটার সময় মুনিশ নেবেন।বাকী পয়সা কাটিয়ে মজুরী দেবেন।সহজ হিসেব।

ঝড়াং-ঝড়াং শব্দে ঘুরে চলা ফ্যানের দিকে তাকিয়ে উদাসী স্বরে বললেন—এমন ওষুধ আবিস্কার করেছি সুবল,খেতে হয় না,ডিসপেনশারীর গন্ধেই ঝিমুনি আসে।
--হেঁ-হেঁ কত্তা,আপনি হলেন গিয়ে আপনার পিতাপুরুষদের মত মহাপুরুষ।তবে গনজের লোক আপনাকে চিনল না,সবাই আপনার কাছে বাকী করে তারপর ধনা হাতুড়ের কাছে ছোটে।
--দাঁত থাকতে কেউ দাঁতের মর্ম বোঝে না সুল।আমি যখন থাকবো না,তখন এই ওষুধ গুলোর কদর দেখবে।টিভিতেও খবর হবে।বলে সত্যিকারের দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন নীলু।
--বুজবে কত্তা বুজবে,ধনার বাপ তো ছেল কামার,তিন-তিনবার অন-মেট্টিক ছোঁড়া, কোন সাহসে যে ডাক্তার হল!বলতে গিয়ে ঢোঁক গিলল সুবল।ধনার কাছে তার দুশো টাকা বাকী।রোজ তাগদা দেয়।গলা নামিয়ে বলল—চোরাই ওষুধের করাবার করে বলেই তো অত রমরমা।
--তাই নাকি? কোবরেজের ডান চোখ নাচছে,চোরাই ওষুধের কথা থানার বাবুরা জানে?
--জানে মানে, বড়বাবু ছোটবাবু, সব বাবু জানে।
--তা ধরপাকড় করছে না কেন?
--কেন করবে চোরাই ওষুধের সাথে ইলিশ মাছও আনে ধনা।বাবুদের খাওয়ায়,তেনারাই তো ওর লাইসেন বাবু।
রাঘব জ্যোতিষীর পরামর্শ মত ধারণ করা আংটির পাথরের দিকে তাকিয়ে কোবরেজ বললেন—সবই ললাটলিখন বুজলে সুবল,সবই ললাটলিখন।এখন বলো তোমার সমস্যা কি।
--ললাটলিখনও পালটানো যায় কোবরেজ মশাই।যাকগে সে কথা,বোয়াল মাছের ঝোল খেয়ে অম্বল হয়েছে।
--বোয়াল মাছ টাটকা বুঝি?
জ্বিভে জল গড়ানো টের পেলেন কোবরেজ।ষাটের পর অনেককিছু আটকানো দায়।
--হ্যাঁ কত্তা টাটকা,বস্তা নিয়ে ঘাস কাটতে গেলাম,দেখি কলমীলতার ঝোড়ে লটপট করছে।ভাবলাম,সাপ।খানিক খেয়াল করে দেখি,বোয়াল।
দেড় সের তো বটেই।বস্তা চাপা দিলাম।সুড়সুড় করে ঢুকে গেল বস্তায়।ধনা কবে অমনকরে জেলে ঢুকবে।
--পুলিশ বশ করলে কি আর কলমীলতায় আটকায় কেউ।আমার কাছে হজমপুরি আছে খাবে নাকি এক ডোজ।
--আপনি একদিন বড়বাবুদের বোয়াল খাওয়াতে পারবেন না কত্তা?
--কি তখন বোয়াল-বোয়াল করছো সুবল।গত পাঁচ মাসে টাটকা বোয়াল চোখে দেখিনি।
--চেম্বারে বসে ঝিমোলে দেখবেন কি করে কত্তা?আজকের ওই বোয়ালটা আপনার আধকাটা পুকুর থেকেই পেয়েছি।আরো আছে।জেলে ডেকে ধরেন।বড়বাবুকে খাওয়ান।ধনার নিশ্চয় একটা ব্যবস্থা হবে।মনে রাখবেন পচা ইলিশের চেয়ে টাটকা বোয়ালের জোর বেশী।

কথা শেষ করে সুবল ভাবল তার একটা ঢেঁকুর উঠবে।উঠল না।বুঝল,তার পেটে আর বদহজমের ছিঁটেফোটা নাই।
@

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৩৪

শায়মা বলেছেন: সুবলকে মনে হলো চোখের সামনেই দেখতে পেলাম সিনেমার মত ভাইয়া।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:১৮

তুষার আহাসান বলেছেন: অজস্র ভাল লাগা আপনার এই কমেন্টে,
ভাল থাকবেন।

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:১০

কল্লোল পথিক বলেছেন:




সুন্দর গল্প।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:২২

তুষার আহাসান বলেছেন: ধন্যবাদ পথিক ভাই ,ভাল থাকবেন সবসময়।

৩| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:২৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালোই লিখসেন।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৬

তুষার আহাসান বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ হামা ভাই,
আপনার প্রতিটি মন্তব্যে আমি খুব উৎসাহ পাই,ভাল থাকবেন।

৪| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:০৪

অদৃশ্য বলেছেন:



দারূন গল্প আহাসান ভাই... এমনিতেই আপনার ছোট গল্পের খুব ভক্ত আমি... এতো অল্পে আপনি এতো চমৎকার সব দৃশ্য তৈরি করতে পারেন যা আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় ও মজাদার...

শুভকামনা...

০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৭

তুষার আহাসান বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ অদৃশ্য ভাই,
বহুদিন পরে আপনাকে আমার ব্লগ-বাড়িতে দেখতে পেয়ে খুব খুশি।
আপনার প্রতিটি মন্তব্যে আমি খুব উৎসাহ পাই,ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.