![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বয়স চল্লিশের কাছাকাছি । নাম রাজা, রাজা মিয়া । রাজা মিয়া অটো রিক্সা চালান । ধন-সম্পদে রাজা না হলেও মনের দিক থেকে উনি ঠিকই রাজা । চেনা পরিচিত, বন্ধু, আত্মীয়দের মাঝে যে কেউ বিপদে পড়লে রাজাকে পাশে পায় । কিন্তু, আজ রাজার মিয়ার বিপদের দিনে রাজা মিয়াকে একাই লড়াই করতে হচ্ছে । কারণ, নিজের সমস্যার কথা মুখ ফুটে কাউকে জানানোর মত অভ্যাস ওনার স্বভাবে নেই । আর পরিচিতদের মধ্যে যারা ওনার সমস্যার কথা জানে তারা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসলেও রাজা মিয়া কারো সাহায্য না নিয়ে বলেছেন, এখনো তো সময় আছে, দেখি কি করা যায় ।
তিন সন্তানের জনক রাজা মিয়া । দুই মেয়ে, এক ছেলে । বড় মেয়ে রূপাকে বিয়ে দিয়েছেন দুই মাস আগে ।রূপা ক্লাস নাইনে পড়ত । রাজা মিয়ার ইচ্ছে ছিল মেয়েকে কলেজে পড়াবেন । কিন্তু, ভাল সম্বন্ধ পাওয়ায় ক্লাস নাইনের মেয়েকেই বিয়ে দিয়েছেন ।বিয়েতে বেশ খরচ হয়ে গেছে । রাজা মিয়া ভেবেছিলেন একটু বেশি পরিশ্রম করে সব খরচ পুষিয়ে নেবেন । কিন্তু, মেয়ে বিয়ে দেওয়ার এক মাসের মাথায় জ্বরে পড়েন । সুস্থ্য হতে না হতেই রাজা মিয়ার সারা শরীরে গুটি বসন্ত দেখা দেয় । সুস্থ্য হয়ে কাজে ফিরতে এক মাস লেগে গেছে । এ সময়ে কোনো রকমে সংসার চলেছে । কিন্তু, অটো রিক্সা কেনার ঋণের টাকা পরিশোধ করার কিস্তির পরিমাণ বেড়েছে । মেয়ের বিয়ের কথা বলে দুই মাসের টাকা এক সাথে দেওয়ার সময় নেওয়া হয়েছে । কিন্তু, রাজা মিয়া অসুস্থ্য থাকায় তা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি । এখন তিন মাসের ঋণের বোঝা মাথায় রয়েছে । গত দুই দিন হলো রাজা মিয়া কাজে আসছেন ।
রাজা মিয়ার সাথে রুস্তম আলীর দেখা অটো রিক্সা স্টান্ডে । রুস্তমও অটো রিক্সা চালায় । রুস্তম বলল, রাজা ভাই, এই দু’দিন হলো সুস্থ্য হয়ে ফিরেছেন । এখন এত বেশি পরিশ্রম করলে তো আবার অসুস্থ্য হয়ে পড়বেন । তার থেকে বলি কি, আমরা আপনার কিস্তির টাকা পরিশোধ করে দিই । পরে আস্তে ধীরে আপনি আমাদের দিতে পরবেন । রাজা মিয়া বললেন, দেখি কতদূর কি করা যায় । শেষ মেশ না পারলে তোমরা তো আছোই । রস্তম জানে রাজা ভাই এক কথার মানুষ । তাই আর কথা না বাড়িয়ে বলল, ঠিক আছে প্রয়োজন হলে আমাদের পর না ভেবে অবশ্যই বলবেন ।
আচ্ছা ।
সারাদিন কাজ করে রাজা মিয়া বাড়িতে ফিরলেন রাত নয়টার দিকে । গোসল করে স্ত্রী কোহীনূর বেগমকে জিজ্ঞাসা করলেন, চাউল আর কত দিনের মত আছে ?
তিন চার দিনের মত আছে । আর আব্বা এক বস্তা চাউল পাঠিয়েছেন । সব মিলিয়ে মাস খানিক চলে যাবে । এখন আর কেনা লাগবে না ।
এক বস্তা চাউলের কথা শুনে রাজা মিয়ার মনে হলো যেন এক বছরের চাউল পাঠিয়েছে । কিচুটা চাপ কমল । সাত পাঁচ ভেবে রাজা মিয়া বললেন, এই ক’টা দিন একটু কষ্ট করে চালিয়ে নাও । কিস্তির টাকা পরিশোধ হয়ে গেলে আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে ।
চিন্তা করোনা । আমি এদিকটা সামলে নেব ।
রাজা মিয়া যেমন র্ধৈযশীল, তেমনিভাবে ওনার স্ত্রীও যথেষ্ট র্ধৈযশীল । সংসারে আসার পর থেকে ছোট-খাট ঝামেলা, অভাব-অনটনে কখনো অভিযোগ না করে বরং সব কিছু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন । এজন্য সংসারের সব দায়িত্ব বউয়ের কাঁধে দেওয়ার পর রাজা মিয়া অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকেন । এখনো মনে স্বস্তি নিয়ে রইলেন । পরের দিন আরো বেশি ইনকাম করতে হবে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লেন ।
রাজা মিয়া খুব ভোরে উঠে পান্তা ভাত খেয়ে কাজে চলে গেলেন । অন্য সময় যতগুলো ট্রিপ পেতেন তার থেকে বেশি ট্রিপ ধরতে লাগলেন । আগে দিনে আসত ছ’শ থেকে ন’শ টাকা পর্যন্ত । আর এখন প্রতিদিন চৌদ্দ’শ থেকে পনের’শ টাকা পর্যন্ত ভাড়া মারছেন । হাতে এক সপ্তাহ সময় আছে । মোট তিন কিস্তির টাকা বাকী আছে । এই সপ্তাহে পরিশোধ না করতে পারলে সমস্যা হতে পারে ।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত একই ভাবে কাজ করলেন রাজা মিয়া । রাতের খাওয়া শেষ হলে স্বামী-স্ত্রী মিলে টাকার হিসাব নিয়ে বসলেন । কোহিনূর বেগম বললেন, মোট নয় হাজার টাকা হয়েছে ।
রাজা মিয়া জিজ্ঞাসা করলেন, আর কত দরকার ?
তিন হাজার ।
হাতে আছে দুই দিন । ইনশা আল্লাহ্ ম্যানেজ হয়ে যাবে । শুক্র, শনিবার কাজ করে রবিবার তিন কিস্তির টাকা পরিশোধ করে দেব ।
স্বামী-স্ত্রী হিসাবের কাজ শেষ করে নতুন দিনের আশায় ঘুমিয়ে পড়লেন ।
রাজা মিয়া খুব ভোরে উঠে ঘোর ঘোর অন্ধকার থাকতেই অন্যদিনের চেয়ে আগে রওনা দিলেন । রাজা পত্নী স্বামীর পথপানে চে য়ে রইলেন ।
রাজা মিয়ার স্ত্রী সারাদিন চিন্তিত মন নিয়ে কাজ কর্ম করলেন । সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসতেই মনের অজান্তে পথের দিকে চেয়ে রইলেন । একটু পর পর রাস্তার দিকে তাকাচ্ছেন কোহিনূর বেগম । স্বামীর আজকের রোজগারের উপর নির্ভর করবে ঋণ পরিশোধের বিষয়টি ।
সন্ধ্যার গভীর হতে হতে রাতে পরিণত হলো । অন্যদিন সন্ধ্যার সময়ই রাজা মিয়া বাড়ি ফিরে আসেন । আজ দেরী হওয়াতে কোহিনূর বেগমের একটু বাড়তি চিন্তা হচ্ছে । কোনো সমস্যা হলো না তো ? এমন কথা মনে হতেই শঙ্কায় ওনার মনটা কেঁপে উঠল । আবার আপন মনেই উচ্চারিত হলো, আল্লাহ্ ভরসা ।
রাজা মিয়া রাত নয়টার সময় বাড়ি পৌঁছে দেখলেন, অধীর অপেক্ষায় কোহিনূর বেগম দাঁড়িয়ে রয়েছে । রাজা মিয়াকে দেখেই কোহিনূর বেগম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন ।
আজ একটু দেরী হয়ে গেল । কথাটি বলে রাজা মিয়া মুখে হাসি আনার চেষ্টা করলেন । স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে হাসিতে প্রাণ নেই !
রাজা মিয়া গোসল করে খেতে বসলেন । খেতে খেতেই রাজা মিয়া বললেন, আজ একটা সমস্যা হয়েছিল ।বিকালে শেষ খ্যাপ মেরে আসার পথে দেখি মধ্য বয়স্ক এক লোক এ্যাক্সিডেন্ট করে পড়ে আছে । আমি ওনাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম ।প্রথমেই কিছু ঔষধ কিনে স্যালাইন দিতে হলো । সব মিলিয়ে চৌদ্দশ টাকা খরচ করেছি । তারপর রোগীর অবস্থা একটু ভাল হলে ওনার বাড়িতে খবর দেওয়ার পর ওনার আত্মীয় স্বজন আসলে আমি চলে আসি । এজন্য দেরী হলো । আর দু’শ টাকা হাতে ছিল । দেড়’শ টাকা দিয়ে খোকার জন্য একটা স্কুল ব্যাগ কিনে এনেছি ।
এখন তাহলে কিস্তির কি হবে ?
চিন্তা করোনা আল্লাহ্ একটা না একটা ব্যবস্থা করবেন ।
শনিবার সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফিরে স্বামী-স্ত্রী মিলে টাকার হিসাব করতে বসেছেন । রাজা মিয়া জিজ্ঞাসা করলেন, কত টাকা বাকী থাকল আর ?
আজকের দেড় হাজার টাকা যোগ করার পর আরো দেড় হাজার টাকা ঘাটতি রইল । অথচ, আগামীকাল অফিসার আসবেন কিস্তি নিতে । কথাগুলো শুকনো কণ্ঠে বললেন কোহিনূর বেগম ।
আমিও সেটাই ভাবছি । রাজা মিয়ার চোখে-মুখেও চিন্তার ছাপ ।
রাজা মিয়া একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলেন, যা যোগাড় হয়েছে ঐটায় দিও আর বলবা আগামি পরশু বাকী টাকা আমি গিয়ে সমিতির অফিসে দিয়ে আসব ।
ঠিক আছে বলব ।
স্বামী-স্ত্রী দুজনার মুখেই চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে !
পরদিন ভোর সকালে রোডে বের হতে হতে রাজা মিয়া মনে মনে ভাবছেন, ঋণের টাকা সময় মত পরিশোধ করতে না পারাটা লজ্জার বিষয় । তার থেকে বেশি লজ্জার বিষয় হচ্ছে কথা শুনে হজম করা ।
রাজা মিয়ার খুব খারাপ লাগছে বউটার কথা চিন্তা করে । আজ না জানি কত কথা শুনতে হয় তাকে !
রাজা মিয়া সব সময় কথা শোনার মত লজ্জার বিষয়টাকে ভয় পান ।এজন্য যত কষ্টই হোক লেনদেনের বিষয়টা স্বচ্ছ রাখার চেষ্টা করেন । এবারই কেবল এমন হয়ে গেল । তবুও আল্লাহর উপর ভরসা রেখেই এগিয়ে চললেন ।
আজ সন্ধ্যার সাথে সাথেই বাড়ি ফিরেছেন রাজা মিয়া । কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করেই বললেন, জানো ! আজ দুই হাজার টাকা ইনকাম হয়েছে । সকালে এক হাজার টাকার ভাড়ায় গিয়েছিলাম বেশ দূরে ।ফেরার পথে পাঁচ ছয় শ’র মত ভাড়া পেয়েছি । দুপুর আড়াই টায় বাজারে পৌঁছেছি । তারপর সন্ধ্যা পর্যন্ত বাজারে যা পেয়েছি সব মিলিয়ে দুই হাজার টাকা ভাড়া পেয়েছি । আগামীকাল সকালেই বাকী টাকা পৌঁছে দেব । এক বারে কথাগুলো বলে রাজা মিয়া থামলেন ।
কথাগুলো শোনার পর কোহিনূর বেগম হাসি মুখে বললেন, আজ অফিসার আসেনি । আজ সরকারী ছুটি ছিল । খোকাকে স্কুলে যেতে বললে খোকাই আমাকে জানাল, কি জন্য যেন আজ সরকারী ছুটি ।
রাজা মিয়া বললেন, আলহামদুলিল্লাহ্ ! বলো কি ! আমি তো চিন্তায় অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম যে, তোমাকে হয়তো অনেক কথা শুনতে হয়েছে ।
তুমি যেভাবে মানুষের উপকার করো তাতে তাদের দোয়ার বিনিময়ে আল্লাহ্ আমাদের সময়ে বরকত দিয়েছেন । কোহিনূর বেগম বললেন ।
০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৫৩
হাসান হাফিজ টুটুল বলেছেন: ধন্যবাদ ।
২| ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৩৬
ওমেরা বলেছেন: মানীর মান আল্লাহ রক্ষা করেন ।
০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৪১
হাসান হাফিজ টুটুল বলেছেন: সত্য বলেছেন ।
৩| ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৪২
মো. রবিউল ইসলাম বলেছেন: অনেক সুন্দর গল্প।
০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১:০১
হাসান হাফিজ টুটুল বলেছেন: ধন্যবাদ ।
৪| ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৫১
কানিজ রিনা বলেছেন: ভালমানুষেরআল্লাহসহায়
০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১:০০
হাসান হাফিজ টুটুল বলেছেন: সত্য কথা ।
৫| ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:১১
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সুন্দর। কিন্তু আমাদের স্ত্রীরা তো এত ধৈর্য্যশীল না...
৬| ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:২৮
হাসান হাফিজ টুটুল বলেছেন: স্বামী-স্ত্রী দুজনারই ধৈর্যশীল হওয়া দরকার ।
৭| ২৩ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:১১
বর্ষন হোমস বলেছেন: ভালই খারাপ না
৮| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৭:৫৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: এক নিঃশ্বাসে সুন্দর একটা গল্প বলে গেছেন। গল্প ভাল লেগেছে।
এক বস্তা চাউলের কথা শুনে রাজা মিয়ার মনে হলো যেন এক বছরের চাউল পাঠিয়েছে -- প্রচন্ড চাপের মুখে এরকম একটা সুসংবাদ শুনলে এরকমই মনে হয়। এই অনুভূতিটা আসে চাপ বিমুক্তির স্বস্তি থেকে।
ঋণের টাকা সময় মত পরিশোধ করতে না পারাটা লজ্জার বিষয় । তার থেকে বেশি লজ্জার বিষয় হচ্ছে কথা শুনে হজম করা -- এই বোধটুকু যদি আমাদের দরবেশ বাবাজীদের থাকতো! কিন্তু বোধ তাদের আসবে কী করে, তাদেরকে তো কথা শুনাবার মত কেউ নেই!
তুমি যেভাবে মানুষের উপকার করো তাতে তাদের দোয়ার বিনিময়ে আল্লাহ্ আমাদের সময়ে বরকত দিয়েছেন - সুবহান আল্লাহ! যদিও নিছক গল্প, তথাপি কোহিনূর বেগম এর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলাম।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:২৪
কালীদাস বলেছেন: সিম্পল। কিন্তু খারাপ লাগেনি পড়তে