আছো তুমি প্রতিনিয়তই আমার সাথে.

৩১ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ২:০৪

বাবা তুমি চলে গেছ আজ অনেক দিন কিন্তূ আমরা তোমাকে বয়ে বেড়াচ্ছি।

আমার প্রিয় বাবা তোমার কথা মন এ করলেই চোখের কোন জল এ ভরে উঠে ।বাবা সেই যে গেলে বলে গেলে দেখে রাখিস, তোর মা কে তোর দু বোন কে নিয়ে সাবধানে থাকিস আরো কত কি.।.বাবা অনেক তারার ভিড়ে তুমি হারিয়ে গেছ তুমি ।ছোট বেলায় খুব দুষ্টমি করতাম মায়ের মারের ভয়ে লুকিয়ে থাকতাম তুমি এলেইআশ্রয় নিতাম তোমার বুকে।

বাবা সেইদিন সেই আশ্রয় ভেঙ্গে গেছে তুমি নেই এটা মন এ হলেই সব কেমন হয়ে যায়।



বাবার মৃত্যু বার্ষিকী আজ ।মা আজ অনেক কিছু করছেন আমি চুপিসারে সরে এসেছি ।.

সে দিনের ছবি আজ ও উজ্জল বাবা হজ্বে যাবে তুমি কত কি ঠিক করছ আমি তোমার সাথে সাথে ছিলাম।একটু ও ইচ্ছে হইনি তোমায় যেতে দিতে .তোমার ট্যুর ছিল পৃথিবীর অনেক দেশে । যখন middle east যেতে তখনি তুমি ঘুরে আসতে মক্কা মদিনা কত কিছু বলতে সেটাই যে শেষ যাওয়া হবে ভাবিনি বাবা তুমি আরো অনেক দিন থাকতে পারতে ।

তুমি এতটা জুড়ে ছিলে যে তুমি চলে যাওয়ার পড় সব শূন্য মনে হয়েছিল তোমার হজ্বে যাওয়ার সময় সব কিছু আমাকে নিয়ে করেছ...।শেষে যখন ধরা পড়ল তোমার হার্ট এ infarction আছে পুরনো তুমি আমাকে শোনাতে দাওনি ভাইয়া কে তুমি বলেছ দেখিস আমি ঠিক ফিরে আসব আমি ছুটেছিলাম ডাক্তারকে জিগ্গেস করেছি উনি বলেছেন যেতে দে কিছু হবে না। সেই দিনের কথা ভুলিতে পারিনি। এত নিষ্ঠুর কঠিন কথা শুনতে হবে ভাবিনি বাবা শুধু একটা ফোন কলেই সব শেষ.।

আমি সেদিন ঘুম থেকে উঠে পিজিতে FCPS এর ক্লাস গিয়েছি সকাল ৮ টা থেকে ক্লাস মনযোগ দিয়ে লেকচার শুনছি ,হটাথ ম্যাডাম আমার নাম ডাকলেন কাছে যেতেই বললেন, বাড়ি যাও তোমার বাসা থেকে নিতে এসেছে আমি অবাক হলাম মাত্র কিছুক্ষণ আগে এলাম আবার কি হলো যা হোক বার হলাম ক্লাস থেকে দেখি ছোট দু বোন আমি তখনো বুঝিনি ওরা একজন কাঁদতে কাঁদতে বলল আব্বু আর নেই আমি সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম তারপর এর ঘটনা মন এ নেই.শুধু জানি কয়েকজন মিলে আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিচ্ছে ।.

আমার ছোট্ট দুটি বোন আমাকে মাঝে বসিয়ে কেঁদেই চলছে আমার আর ভালো লাগছিল না ওদের সরিয়ে এক পাশে চলে এলাম ।গাড়ি ফার্মগেট ক্রস করছে তখন একটা ডোর খুলে লাফ দিতে চাইলাম কারণ বাবা ছাড়া সব কিছুই শূন্য মন এ হচ্ছিল কি বোকা আমি ভেবেছিলাম মরলেই বুঝি তোমাকে ভোলা যাবে ।

সেদিন মন এ হয়েছিল তুমি না থাকলে বেঁচে থাকার মানে নেই কোনও।কিন্তূ আজও তো বেঁচে আছি.এই আমি তুমিহীন।



এক দিনের কথা খুব মন এ পরে আমার খুব জ্বর ক্লাস ফোর এ পড়ি, একলা বিছানায় শুয়ে মা মাথার কাছেই বোন কাঁদতে উঠে গেলেন রুম এ জিরো পাওয়ারের নীল বাতি দুরে রাস্তায় এক লোক একলা বাঁশী বাজিয়ে যাচ্ছে এত সুন্দর না বাবা আমি দৌড়ে গেলাম জানালায় তুমি স্টাডিতে ছিলে উঠে এসে মৃদু ধমক দিয়ে নিয়ে এলে তারপর ঘুম পারানি গান গাইলে,আমি সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পরলাম তোমার গলা জড়িয়ে এখন তো বাবা অত জ্বর এ পরে থাকি দেখার সময় কই....।.......

কি করে বোঝাব তুমি কত খানি জুড়ে আছ আমার ।একটু ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে ছিলনা আমার statistics এ ভর্তি হয়েছি খুব খুশি DU তে। .একদিন খুব ভোরে দেখি বাবা আমার বিছানার কাছে মাথায় হাত রাখলেন আসতে করে ডাকছেন আমি উঠে পরলাম ভাবলাম আমেরিকায় যাওয়ার আগে কিছু বলতে চান কিন্তূ নাহ সব ভুল প্রমান করে একটা ফর্ম বার করলেন আর বললেন, মা রে আমার খুব ইচ্ছা তুই ডাক্তারি পড় আমার যে কি মনে হচ্ছিল মাথা নাড়ছি না না পড়ব না আমি পারবনা।

বাবা অসীম ধৈর্য নিয়ে বোঝালেন তুই শুধু জমা দে তোকে পড়তে হবে না বলি ফর্ম এর তারিখ শেষ বাবা বাড়িয়ে দিলেন ফর্ম টা ফিল আপ করা আমাকে কয়েকটা জায়গায় সাইন করতে হবে শুধু করলাম বাবা মাথাত হাত রাখলেন ।

কার হাত এ যেন জমা দিয়েছিলেন জানিনা যেদিন নাম উঠলো মেরিট লিস্ট এ কি যে খুশি তুমি। আমার বাবা র ইচ্ছে পূরণ হলো অনেক বড় ডাক্তার না হলেও ডাক্তার তো হয়েছি ।



এক বার অনেক জ্বর হলো আমার ১০৫ বাবা সারা রাত জেগে ছিলেন কোলে নিয়ে হেঁটেছ তুমি নেই আজ বাবা কেউ কাছে থাকার ও কেউ নেই ।সময় এর বড়ই অভাব সবার .।



আমিও ছায়ার মতন হারিয়ে যাব আসব ফিরে কোনো দিন...........

মন আমার বাঁধলো বাসা ব্যথার আকাশে

পাতা ঝরা দিনের শেষে মেঘলা বাতাসে......



.এ গান তুমি খুব শুনতে বাবা ।



অফিসে আছি মনের কোনে মেঘ জমেছে ....খুব কষ্ট হচ্ছে আজ ।

আজ বার বার গানটা শুনছি বাবা ।







আমার বাবা অনেক বড় অফিসার ছিলেন কিন্তূ নিজের শেকর ভুলে যান নি এত বড় হয়েও কোনো দিন ঘুষ খাননি, অন্যায় এর সাথে আপোষ করেননি..। সরকারী চাকুরিতে যখন যেতে বলা হয়েছে, উনি ছুটেছেন তাকাননি তার পরিবারের লাভ লোকসানের দিকে ।

বড্ড বেশী ভালবাসতেন সন্তানদের কোনো দিন ছেড়ে থাকতে চাইতেন না..আজ কি করে আছ বাবা ?.

বাবা আজ তুমি কত দুরে ,? আমাদের সবাই তোমার স্মৃতি রাখলেও আমি রাখিনি কারণ আমি নিজেই তো তোমার gene বয়ে বেড়াচ্ছি রক্ত.। আমার ৪৬ টা ক্রোমোসমের ২৩ টি মানে অর্ধেক তোমার অর্ধেক মায়ের আমি তবে কেন স্মৃতি বয়ে বেড়াব.?বাবা তুমি কি আমার কথা শুনতে পাও আমার কষ্ট দেখতে পাও.?.এমন তো হওয়ার কথা নয় বাবা .।

প্রতারণা, হিংসা এ শব্দ গুলোকে ঘৃনা করতে তুমি কিন্তূ তুমি কি জানো নিয়তই প্রতারিত হচ্ছি।



আমার লোহিতকনিকারা বিদ্রোহ করেছে ভাঙছে ভাঙছে আমাকে দুর্বল করছে করছে ফ্যাকাশে আমাকে দিন দিন...হয়তো একদিন নিশব্দে বিদায় নেব.।

আজ তুমি থাকলে তোমাকে বলতাম বাবা খুব কষ্ট হয়.....অনেক কথা বলার ছিল তোমাকে.।.

ও বাবা বলো কেন কেন এমন হলো সব ।কেন চলে গেলে আমাকে একা ফেলে গেলে আমার খুব বন্ধু ছিলে তো তুমি ।

তোমার স্মৃতি তো জীবনের প্রতি পাতায় পাতায় আজ ওদের বলতে ইচ্ছা হয় এসব বন্ধ কর দোহাই লাগে ।

বাবা তোমাকে নিয়ে লিখতে ভালো লাগেনা কেমন বারোয়ারী মনে হয় কিন্তূ কার কাছে বলব?

আমার শৈশবের শিউলি কুড়ানো দিন গুলোয় মার কাছে ধরা পরে যখনি মা মারতে উঠতেন, তুমি জড়িয়ে নিয়েছ.,চাকরি তে ঢুকেছি তুমি পাশে থেকেছ.।আমার এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় তুমিই ছিলে একমাত্র সঙ্গী বন্ধু আমার,।.আজ তুমি নেই সব কেমন হয়ে গেছে।

অনেক গল্পই বলা হয়নি তোমায়.।.বলব কোনো এক চাঁদনী রাত এ তুমি আর আমি তুমি থাকবে কোনো নাম না জানা তারা হয়ে.।

আজ ঘটা করে তোমার মৃত্যু উদ্দেশে কত কি করছে...শুধু এই একটা দিন কি তোমাকে মনে করার জন্য তুমি তো আছ প্রতিনিয়তই আমার সাথে....আমার রক্তে তুমি প্রতিধবনিত হচ্ছো.।.





প্রিয় বন্ধুরা আমার সেদিন লিখেছিলাম ৮ মাস হয় এসেছি আপনারা অনেকেই বর্ষ পূর্তিতে লেখার কথা বলেছিলেন সেদিন পর্যন্ত আমি থাকব না এলাম দেখলাম অনুভব করলাম আপনাদের হয়ত আসব হয়ত নয়.।.আজ বাবার মৃত্যু বার্ষিকী। তিনি এত দুরে সেই মদিনায় শুয়ে তার কাছে তো যেতে পারবনা তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি তিনি জান্নাত বাসি হন এটাই চাই।

আরো বলছি আমি ইমোসনাল নই আমি বোকা হয়ত আমি রাগী একটু হতে হয় যার কাঁধে এত বড় বোঝা তাকে অমন হতেই হয় ..।

আমি আমার প্রতি ব্লগার ভাই বোনদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি.অনেক সময় নিজের অজান্তে অনেক কিছু বলেছি ক্ষমা কর ।

৩৯ টি +৭/-০