![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষের জীবন ভাল্লাগেনা আর...খরগোশ হয়ে জন্মাতে চাই...বাচ্চা খরগোশ...!বাবু খরগোশ...!!পিচ্চি খরগোশ......!!
আমার সেজ চাচা সিজোফ্রেনিয়াক ছিলেন।
বড় হবার পর থেকে কখনোই তাকে পুরোপুরি সুস্থ অবস্থায় দেখিনি...সারাক্ষণ দেখেছি,উনি হাত নেড়ে নেড়ে অদৃশ্য কারো সাথে অনর্গল গল্প করে যাচ্ছেন...
সেজো চাচা একসময় আর্মি তে ছিলেন...তখন অবশ্য আমার জন্ম-ও হয়নি...তবে ছোট বেলার অল্প কিছু স্মৃতি টুকটাক মনে আছে.....
........উনি হঠাৎ করেই মাঝে মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যেতেন! আর্মিদের সাথে থাকাকালীন সময়ে কি যেন একটা মজার গান শিখেছিলেন,,,ওইটা গাইতে গাইতে আমাদেরকে নেচে নেচে দেখাতেন!
........মাঝে মধ্যে রাতের বেলায় একটানা অনেক্ষণ ধরে বাঁশি বাজিয়ে যেতেন...একটা সময় আম্মু কিংবা বড় চাচী,,বিরক্ত হয়ে একগাদা বকা-ঝকা শুনিয়ে দিত,,,
আর বাঁশির সুর থেমে যেত.....
সেজো কাকু ভাল বাঁশি বাজাতেন.....আশেপাশের সব এলাকায় সবাই তখন বলাবলি করতো,ওইযে একটা ছেলে আছে-না,,,লম্বা,ফর্সা,ছিপছিপে শরীর,,খুব চমৎকার বাঁশি বাজায়.....ছেলেটা না পাগল হয়ে গেছে.....
,,,,,,,
বড় হবার পর আর কখনোই বাঁশি বাজাতে শুনিনি....ওনাকে শুধু শুনতাম,উনি প্রতিনিয়তই অদৃশ্য কাদের সাথে যেনো_অনর্গল কথা বলে যাচ্ছেন..........অনর্গল........
কেবল তিনবেলায় খাবার সময় আমাদের ঘরে আসতেন।
আম্মু মেঝেতে পাটি বিছিয়ে দিয়ে ওনাকে খেতে দিতেন,,উনি সেই পাটিতে বসে_কোলের উপর ওনার পোষা বিড়ালটাকে নিয়ে একপ্লেটে ভাত খেতেন....
,,,,,উনি যেদিন মারা গেলেন_সেদিন ছিল প্রচন্ড শীতের সকাল.....প্রচন্ড.......
খবর শুনে কেমন যেন রোবট রোবট হয়ে গিয়েছিলাম.......এই প্রথম কোনো মৃত মানুষের শরীরে হাত রাখলাম.....বুকের উপর সমস্ত কিছু শূণ্য...কোনো স্পন্দন নেই......হাতটা বেশ কিছুক্ষণ ধরে ছিলাম......শান্ত......ঠান্ডা.......প্রাণহীন....কোমল একটা হাত..........
,,,,,,,
ছোট কাকুকে এখন দেখি,,,আফিস থেকে ফিরে বাঁশি নিয়ে বসেছেন !
মোটামুটি মন্দ বাজান-না তিনি! তাও যেটুকু বাজান,সেটুকু খুব আগ্রহ নিয়ে সবাইকে ডেকে ডেকে শোনান!!! আমার ভাইটা বরাবর-ই বিরক্ত হয়! বুড়ো বয়সে এসব হচ্ছে হাস্যকর ছেলেমানুষী!
আমার কিন্তু মোটেও কখনো বিরক্ত লাগেনি! কিছু কিছু ছেলেমানুষী,,,না থাকলেই বরং বেশী হাহাকার থেকে যেত.....কিছু কিছু ছেলেমানুষী ভাললাগার!
কিছু কিছু ছেলেমানুষী ভালবাসার!!
,,,,,,,
একটা সময় হঠাৎ করে এই একই রকম ছেলেমানুষী আমার আব্বুকেও পেয়ে বসলো! বাশিঁতে শুধুমাত্র সারগাম টুকু তুলতে পারেন তিনি......,,,
একদিন দেখলাম নানান সাইজের একগাদা বাঁশি কিনে এনে দিনরাত কেবল সারগাম বাজিয়ে যাচ্ছেন!
দিন-রাত...............!
অবশ্য এর থেকে বেশী আব্বুকে দিয়ে আর হল না...
একটা সময় উনি ওনার শখের বাঁশিগুলো_ওনার এক একজন প্রিয় মানুষকে একটা করে উপহার দেয়া শুরু করলেন!
মজার ব্যাপার হল,,,
এই যে এখানে আজকে যেটুকু বাঁশি নিয়ে গুছিয়ে লিখেছি,,
আমি নিজেও কখনো এমন করে গুছিয়ে কখনো ভাবিনি.........অথচ আজকে যখন এখানে এটুকু গুছিয়ে লিখছি,,,তখন পুরো ব্যাপারটাই কেমন যেন বিষন্ন একটা গল্প হয়ে যাচ্ছে.........
,,,,,,
টুকটাক তো গান করা হয়.......গিটার নিয়ে টুকটাক যেটুকু এক্সপেরিমেন্ট চলছিল,,,সেটুকুকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্যে_এখন নিয়ম করে প্রতিদিন গীটার নিয়ে বসা হয়........,,,ভাবছিলাম গীটারটা যখন পুরোপুরি হাতে চলে আসবে,,,এরপর কোনটা শুরু করবো???
ছোট ভাইয়ের মাউথঅর্গানের শখ........ওর সাজেশন-"মাউথঅর্গান" !
পুরনো প্রেমিক গীটার বাজাতো,,,আর আমাকে সবসময় বলতো-"ভায়োলিনটা" শিখে ফেলো,,,আমার খুব পছন্দের !!
যাদের সাথে গান করি,,ওরা রাবাব বাজায়,সেঁতার বাজায়,তবলা বাজায়....
তারপরেও কেন যেন নিজেই নিজে ঠিক কররাম-"বাঁশি" শিখবো......!
অথচ তখনো_এমন করে ভাবা হয়নি ঠিক..............
আজকে একটা মুভি দেখলাম-"দ্যা ইন্টারপ্রিটার",,,
মুভির মাঝের একটা দৃশ্যে_একটা মেয়ে রাতের বেলায় নিজের ঘরে বসে_একা একা বাঁশি বাজিয়ে যাচ্ছে........
হঠাৎ করে দেখে এত্ত ভাল লাগলো...........!
একা থাকা মেয়েগুলোর গল্পগুলো এমনিতেই আমার বরাবরের পছন্দের !!
আর সেই মেয়েটা গভীর রাতে_সরল কোনো সুরে_যখন মগ্ন হয়ে বাঁশি বাজিয়ে যায়.........,,,
তখন_এই আমিকে সেই জায়গায় সাথে সাথে রিপ্লেসড্ করে দিই!!!
বাঁশির সাথের যোগাযোগটা সম্ভবত জেনেটিক......
তবে যেটাই কিংবা যাই হোক না কেনো,,,
একা থাকার রাতগুলোতে কোনো একদিন নিশ্চিত বাঁশির সঙ্গ যুক্ত হচ্ছে!
সময় লাগবে অনেক..............অনেক সাধনার ব্যাপার...............,,,
তবে,,,
সময় আছে!
অনেক আছে!!
বুড়ো হবার এখনোতো_আরো অনেক বছর বাকি!!!
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৯
উলসিত তটিনী বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দাদা!
২| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৩৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
ভালো
৩| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:৪১
মানবী বলেছেন: মন ছুঁয়ে যাওয়া বিষন্ন লেখা!
বাঁশের বাঁশির সুরের যে মাদকতা তা আর অন্য কোন বাদ্যযন্ত্রে খুঁজে পাওয়া যায়না। দূর্ভাগ্যজনক ভাবে বাস্তব জীবনের আমার পরিচিত জনদের মাঝে এমন কেউ নেই যিনি এই অসাধারণ সুরের বাঁশি বাজাতে জানেন। আপনার সেজ চাচার বাজানো বাঁশির সুরের রেকর্ড থাকলে শুনতে ইচ্ছে করছে।
দেশের পথে ঘাটে হঠাৎ হঠাৎ কোন অপরিচিতের বাজানো বাঁশির সুর কানে পৌঁছলে কেমন মন খারাপ করা ভালো লাগা গ্রাস করতো। বিষন্ন মনে লেখা আপনার এই লেখার করুণ সুর ও পাঠকদের ছুঁয়ে গেছে।
সুন্দর পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪১
উলসিত তটিনী বলেছেন: ওনার কোনো রেকর্ড তো নাই,,,,,তবে আমি কখনো শিখতে পারলে রেকর্ড করে পাঠিয়ে দিব আপু!
৪| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫০
আহমেদ জী এস বলেছেন: উলসিত তটিনী ,
কিছু কিছু ছেলেমানুষী ভাললাগার!
কিছু কিছু ছেলেমানুষী ভালবাসার!!
ঃভায়োলিনের ছড় টানার মতো তীব্র হয়ে বাজলো লাইন দুটো ।
পোষ্টের ছবিতে বাঁশির ছবি দেখে ঢুকেছি । বাঁশি আমার সবচেয়ে প্রিয় । যদিও বাজাতে জানিনে ,তবে তেমন সুর হলে চোখ বুজে ঝিম মেরে থাকি । বুকের কোথাও টান পড়ে ।
মরনের আগ পর্য্যন্ত লেগে থাকুন সুরে ...........
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৭
উলসিত তটিনী বলেছেন: মরণের আগ পর্যন্তই লেগে থাকবার ইচ্ছা!
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দাদা
৫| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১৫
সুমন কর বলেছেন: এই প্রথম কোনো মৃত মানুষের শরীরে হাত রাখলাম.....বুকের উপর সমস্ত কিছু শূণ্য...কোনো স্পন্দন নেই......হাতটা বেশ কিছুক্ষণ ধরে ছিলাম......শান্ত......ঠান্ডা.......প্রাণহীন কোমল একটা হাত.........
এসব লাইন পড়লে, মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়।
আপনার লেখাটি খুব ভালো লাগল। ভালো লাগা রইলো।
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১১
উলসিত তটিনী বলেছেন: ধন্যবাদ....
আর,,আপনার প্রো-পিকটা খুব সুন্দর দাদা!
৬| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৯
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লেখেন আপনি। অনুসারিত।
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৬
উলসিত তটিনী বলেছেন: অনুপ্রাণিত!
ধন্যবাদ দাদা
৭| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৭
প্রামানিক বলেছেন: ছোটকালে রাতের বেলা বাঁশি শুনতে ভাল লাগত। এখন আর সে পরিবেশ নেই গ্রামে কেউ বাঁশি বাজায় না।
৮| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৩
জাবের তুহিন বলেছেন: বিষণ্ণতার গল্প ।
বাঁশি এক অন্য ধরনের বাদ্যযন্ত্র । মাদকতা আছে ।
নিজেরও দূর্বতলতা আছে ।
৯| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১২
ক্ষুদে লেখক বলেছেন: ,,উনি যেদিন মারা গেলেন_সেদিন ছিল প্রচন্ড শীতের সকাল.....প্রচন্ড.......
খবর শুনে কেমন যেন রোবট রোবট হয়ে গিয়েছিলাম.......এই প্রথম কোনো মৃত মানুষের শরীরে হাত রাখলাম.....বুকের উপর সমস্ত কিছু শূণ্য...কোনো স্পন্দন নেই......হাতটা বেশ কিছুক্ষণ ধরে ছিলাম......শান্ত......ঠান্ডা.......প্রাণহীন....কোমল একটা হাত.....
এই বাক্যগুলো পড়তে কেমন কেমন যেন মনে হয়
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৯
উলসিত তটিনী বলেছেন:
১০| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৫
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
চমৎকার আপনার লেখনী।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৩৮
শান্তির দেবদূত বলেছেন: লেখাটা পড়তে পড়তে কেমন যেন ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম। বেশ ভাল লিখেছেন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য সেই সাথে আপনার মেজ চাচার জন্য অনেক দোয়া।
লেখাটি দুইবার চলে এসেছে। ঠিক করে নিয়েন।