![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ফারহানা আফরোজ, আমার বর র্দুষ্টুমি করে বলে ফারহানা আফসোস। পেশায় মনোবিজ্ঞানী। কাজ করছি একটা আন্তর্জাতিক সংস্থায়।ঘুরে বেড়াই মানুষের মনের অলিতে-গলিতে আর সাফ করি মনের ময়লা। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোন সমস্যায় আমাকে কাছে পেতে পারেন [email protected] এইখানে লিখে। যদি সম্ভব হয় বাংলায় লিখুন । নিশ্চয়তা দিচ্ছি না খুব তড়িঘড়ি করে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেব, কারণ কাজের ফাঁকে সময় বের করা বেশ কষ্টকর। তবে কথা দিচ্ছি, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আপনাকে সহায়তা দিতে, আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে। ভাল থাকুন।
খুব সম্প্রতি সাভার দূর্ঘটনায় একজন সাইকোলজিস্ট হিসেবে আমি আমার নিজস্ব কিছু ধারণা শেয়ার করতে চাই। গত সপ্তাহে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত ”জরুরী পরিস্থিতিতে মনোসামাজিক সহায়তা’’ বিষয়ক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছিলাম। যার ফলে এই ধরণের পরিস্থিতিতে মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি কিভাবে মনোসামাজিক সহায়তা দেয়া যায় সে বিষয়ে কিছুটা ধারণা অর্জন করতে পেরেছি। এখানে যে বিষয়টি মনে রাখা দরকার তা হলো মনোসামাজিক সহায়তা পৃথক কোন সেবা নয় বা এর জন্য পৃথক কোন সেবাকেন্দ্র চালু করার দরকার নেই । যা করতে হবে তা হলো প্রাথমিক সেবার মধ্যে মনোসামাজিক সেবা অন্তর্ভূক্ত করে নিতে হবে।
প্রথমতঃ যারা বিশেষ করে মনেসামাজিক সেবা দিচ্ছেন সেটা ছোট প্রতিষ্ঠানই হোক বা বড় প্রতিষ্ঠান হোক তার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। যেমন; ফেসবুকে দেখলাম সাইকোলজি বিভাগ থেকে সেবা দেয়া হচ্ছে ও চিকিৎসা মনোজ্ঞিান বিভাগ থেকেও সেবা দেয়া হচ্ছে। অন্যান্য বিভাগগুলো সেবা দিচ্ছেন কিনা এখনো জানিনা। এখন বিষয় হলো প্রতিটি বিভাগ কি ধরণের সেবা দিচ্ছেন সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। তা নাহলে যে যার মতো সেবা দিতে থাকলে সেবাদানকারীরা যেমন কোন কূল খুঁজে পাবেন না, ঠিক তেমনি এক ধরণের অদৃশ্য প্রতিযোগীতা গড়ে উঠবে। প্রতিটি মনোসামাজিক সেবা যেন এক ছাতার নিচ থেকে হয় সেদিকে দুষ্টি দেয়া উচিত। এখানে ভাবা ভুল হবে যে শুধু বিশেষায়িত সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা মনোসামাজিক সেবা দিতে পারবেন, আর অন্য কেউ পারবেননা। তবে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক সেবার পাশাপাশি বিশেষায়িতঃ সেবা দেওয়ার যোগ্যতা রাখেন- সে বিষয়ে কোন দ্বিধার অবকাশ থাকেনা।
যে বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো পৃথক পৃথক সেবার চেয়ে কিভাবে সেবাগ্রহীতার জন্য সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী। তাই ফলপ্রসূ কো-অর্ডিনেশনের কোন বিকল্প নেই।
এরপর ফিল্ডে নামার আগে যথ্ষ্টে পরিমাণ তথ্য আছে কিনা তা যাচাই করা নেয়াটা জরুরী। যেমন; কোন কোন প্রতিষ্ঠান কি কি সেবা দিচ্ছেন সেবিষয়ে অবগত থাকা ও ভিকটিম বা সারভাইভরদের সে রির্সোসের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে সাহায্য করা।
দ্বিতীয়তঃ যারা সাভার ঘটনাস্থলে আছেন সেটা সারভাইভর বা ভিকটিম বা উদ্ধারকারী যেই হোকনা কেন তাদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরী করা। যেমনঃ যারা নিখোঁজ আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ নিতে আসছেন ও যারা উদ্ধার হচ্ছেন ও উদ্ধারকারী সবার জন্য-
ক্স একটি নির্দিষ্ট নিরাপদ জায়গায় বসা বা দাড়াঁনোর যথাযথ ব্যবস্থা করা এবং
ক্স যথেষ্ট পরিমাণ পানি ও খাবারের ব্যবস্থা রাখা।
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এই বেসিক দুটো জিনিস নিশ্চিত করলেই মনোসামাজিক সহায়তার অনেকটা পূরণ হয়। যারা খোঁজ নিতে আসছেন তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌছাঁনোর জন্য সাহায্য করা। যেমনঃ
যেখানে গেলে সে তার স্বজনের খোঁজ পাবে তার কাছে বা সে ডেস্কের কাছে পৌঁছানোর জন্য সাহায্য করা।
(ঐ মানুষটির সাথে কথা বলা থেকে শুরু করে মানুষটিকে যথাযথ ডেস্কের কাছে পোঁছানোর মাঝে যে বাচনিক ও অবাচনিক যেগাযোগের দরকার হয় তা কিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সকল শিক্ষার্থী যথেষ্ট ভালোভাবে জাননে, তাই আমি এই সংক্রান্ত কোন আলোচনায় যাচ্ছিনা।)
তৃতীয়তঃ যাদেরকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে ও ভুক্তভোগীদের জন্য যে ধরণের সেবা দেয়া যায় তা হলো তাদেরকে
ক্স প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা (যদি তা জানা থাকে),
ক্স যদি কোথাও রেজিষ্ট্রেশনের প্রয়োজন হয় তাহলে তা করতে সাহায্য করা।
বিশ্বাস করুন, কাউন্সেলিং এর চেয়ে জরুরী মূহূর্তে এই ধরণের মনোসামাজিক সেবাটাই বেশি জরুরী। অনেকেই মনে করতে পারেন যেহেতু এই ভিকটিমটি কথা বলার অবস্থায় নেই সেহেতু আমাদের পক্ষ থেকে সাহায্য করার কোন সুযোগ নেই। বাস্তবে , এই ধরণের জরুুরী পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ মানুষই শান্ত হয়ে বসে কথা বলা বা কাউন্সেলিং এর জন্য প্রস্তুত থাকেনা । উপরন্তু তা দিতে গেলে তাদের ক্ষতি হওয়ার আশংকা বেশি থাকে। যেমন; অনেকেই দেখেছেন ইতিমধ্যে গণমাধ্যমগুলো তাদের দিয়ে কথা বলানোর জন্য অনেক সময় এক ধরণের মানসিক নির্যাতন করতেও দ্বিধা করেননি। আমি জানিনা, যারা ইতিমধ্যে কাজ করতে নেমেছেন তারা দেখেছেন কিনা যে ভিকটিমরা কথা বলায় কোন আগ্রহ পাচ্ছেন না ; এমনকি কেউ কথা বলতে চাইলেও বিরক্ত হচ্ছেন। তাই এই পরিস্থিেিত তাদের দিয়ে কথা বলানোর চেয়ে তাদের কি প্রয়োজন সেদিকে নজর দেয়া ও যথাযথ রির্সোসের সাথে (যদি পর্যাপ্ত থাকে) সংযুক্ত করে দেয়াটাই আসল সহযোগীতা।
চতুর্থতঃ পিএফএ দেয়ার পর এক্ষেত্রে যে বিষয়ে নজর দেয়া দরকার তা হলো বিশেষায়িত সেবা। এক্ষেত্রে শুরুতে যে জিনিষটি জরুরী তা হলো ভিকটিম বা সারভাইভরদের মানসিক সমস্যা বা ট্রমা বা পিটিএসডি বা স্ট্রেস এর লক্ষণগুলো ও কিভাবে এর প্রাথমিক মাকাবিলা করা যায় ও কোথায় গেলে বিশেষায়িত সেবা পেতে পারে সে সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য বিতরণ করা। এখন কথা হলো, কিভাবে করা যায়? সেটা করা যেতে পারে –
ক্স হাসপাতালগুলোতে পোষ্টার দিয়ে,
ক্স ছোট ছোট সচেতনতামূলক প্রোগাম করে,
ক্স ডাক্তার ও নার্সদের এই বিষয়ে সচেতন করে এবং
ক্স টিভি চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে সচেতনতামূলক অ্যাড/প্রতিবেদন প্রচার করা যেতে পারে।
এবং এটাই সবচেয়ে বেশি কাজে দিবে, কারণ এখন সবার চোখ টিভি চ্যানেলের দিকে । টিভি চ্যানেলগুলোর সাথে সাইকোলজি ও আমাদের বিভাগের নিশ্চয়ই বেশ ভালো যোগাযোগ আছে। সে যোগাযোগের মাধ্যমে টিভিতে এই বিষয়ক সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করা যায় ।সাভার ঘটনাস্থলে ও হাসপাতালগুলোতে যদি সম্ভব হয় সাময়িকভাবে মনোসামাজিক কেন্দ্র খোলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পিএফএর পাশাপাশি কাইন্সেলিং বা বিশেষায়িত সেবা দেয়াটাও সম্ভব হতে পারে।
পঞ্চমত: যেসকল উদ্ধারকারীরা কাজ করেছেন তারাও ট্রমার শিকার হতে পারেন। সেক্ষেত্রে যেসকল উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করেছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে । তাদেরকেও –
ক্স ট্রমা সংক্রান্ত লক্ষণ,
ক্স যথাযথ মোকাবিলামূলক পন্থা ও
ক্স রেফার করার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য প্রদান করাটা জরুরী , যেন দরকার হলে তারা যোগাযোগ করতে পারে।
সরকার যেভাবে নিয়ম মেনে মুতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করেছেন, তা প্রশংসনীয় এবং তা মনোসামাজিক সহায়তারই অংশ। সেই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে ভুক্তভুগী সকলেই এই মনোসামাজিক সহায়তা নেয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু সকলেরই এই সহায়তার প্রয়োজন হবে তা ভাবাও ভুল। এমন অনেককেই আছেন যাদের কোপিং স্ট্রাট্রেজি খুবই ভালো তারা ভালোভাবেই চলমান পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু যাদের সেবা দরকার তারা যেন এই সেবা পেতে পারেন তা নিশ্চিত করাটা জরুরী।
©somewhere in net ltd.