নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুঃখের সাথে সংসার করি....

উৎসব পাল

facebook.com/dishoneretor.utsab

উৎসব পাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসংজ্ঞায়িত

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৪০

ভোর সাড়ে ছ'টা।
অনুপম আধাঘন্টা ধরে টেবিলে হাতের উপর মাথা ঠেকিয়ে পড়ে আছে।
.
ছিমছাম রেস্ট্যুরেন্ট...
মাথার উপরে ফ্যানের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দই কানে আসছে না।রাস্তাও ফাঁকা।দু একটি রিক্সা মাঝে মাঝে পর্দার ফাঁক দিয়ে চোখে পড়ছে।
.
রেস্ট্যুরেন্টটা নতুন হলেও কয়েকটা চেয়ার টেবিল বাদে মাথার ওপরের ফ্যান থেকে শুরু করে ক্যাশ কাউন্টারের টেবিল সবকিছুই নিজেদের বয়সের অম্তিত্ব জানান দিচ্ছে।
পাঁচটা টেবিল প্রত্যেকটাতে আবার চারটা করে চেয়ার।
এর মধ্যে দু'টো টেবিল পর্দা দিয়ে ঘেরা।
সম্ভবত প্রেমিকজুটির জন্য সংরক্ষিত।
.
পকেটে ফোন বাজছে।
পকেট থেকে ফোন বের করতে গিয়ে বুঝতে পারল মানিব্যাগ আনেনি।
এরই মধ্যে এক ছোঁকড়াকে ডেকে একপ্লেট খিচুড়ীর কথা বলেছে।রান্না চুলা থেকে নামলেই দিয়ে যাবে।
.
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ফোন বের করল।
যা ভেবেছিল তাই,
সাঈদ ভাইয়ের ফোন।
.
-"হ্যালো ভাই বলেন।"
-"ভাইয়া তুমি কই?"
-"ভাই আমি তো বাসায়।"
-"ভাইয়া একটু তোমাদের কলেজের গেটে আসতে পারবা?তোমার সাথে একটু দরকার ছিলো।"
-"ভাইয়া এখন তো পারবো না।আজ একটু পর খুলনা যাবো। এক কাজিনের বিয়েতে।"
-"ভাইয়া একটু চেষ্টা করো..."
-"দেখেন ভাই পারলে তো না করতাম না।"
-"আমি কি তোমাদের এলাকায় আসবো?"
-"ভাইয়া আমি বললাম তো বের হতে পারবো না।বের হতে পারলে তো আসতামই।"
-"তাহলে তুমি এক কা.. "
.
..... কথা শেষ হওয়ার আগেই ফোন কেটে অফ করে পকেটে ঢুকালো।
.
বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে।
.
মাঝখানে একসময় হোটেলের বয় এসে খীচুড়ির প্লেট রেখে গিয়েছে টেবিলে।
ধোঁয়া উড়ছে...
দেখতে ভালোই লাগছে।
ধোঁয়ার উপর কয়েক সেকেন্ড হাত রেখে চট করে উঁঠে পড়ে সাইডে রাখা ব্যাগটা কাঁধে ঝুলালো।
.
ক্যাশ কাউন্টারে মাঝবয়সী এক লোক বসা।
তাকে এখানে ঠিক মানাচ্ছে না।
কোনো হাইস্কুলের গনিতের শিক্ষক হলেই মানাতো।
দুই চোখের আয়তনের দৃশ্যমান পার্থক্য না থাকলে অনুপম লোকটাকে রূপবান বলে চালিয়ে দিতে পারতো।
তবে একটা স্বাভাবিকের চেয়ে বড় চোখের পাশে কুুতকুঁতে ছোট চোখ তার অন্য সব অঙ্গের খুঁতহীনতাকে অদৃশ্য করে দিয়েছে।
.
"আঙ্কেল কিছু মনে করবেন না।আসলে আমার কাছে একটা পয়সাও নেই তাই আর বসতে পারছি না।"
.
কথাটা শোনার সাথে সাথে লোকটার ছোট চোখটা হঠাথ করে বড় চোখটার আকৃতির কাছাকাছিতে চলে এলো।
কিছু বলতে যাচ্ছিল।
তার সুযোগ না দিয়েই রাস্তায় নেমে এলো অনুপম।
.
টিপটিপ করে সবে বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে।
রাস্তাটা বেশ পরিচিত অনুপমের।
এই রাস্তাতেই লোপার সাথে প্রথম দেখা তার।
হুড তোলা রিক্সা থেকে মুখ বের করে উঁকি মেরে ওর দিকে তাকিয়ে হেসেছিল লোপা।
এরপর আর কোনো মেয়েকেই ওভাবে হাসতে দেখেনি।
.
লোপার সাথে ওর পরিচয় ফেইসবুকে।
অনুপম একসময় টুকটাক লেখালেখি করত।
তখন ওদের কলেজের একটা গ্রুপে একটা গল্প লিখেছিল।সেটা পড়েই অনুপমকে মেসেজ করেছিল।তার সপ্তাহখানেক পরেই হুট করে অনুপমকে প্রপোজ করে বসে লোপা।
কিছু না ভেবেই ওর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।
.
অনুপম মফস্বলের ছেলে।রাজশাহীর এক কলেজে অনার্স পড়ছে।বাবা এক বেসরকারি কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন।বর্তমানে অবসরে।ওর মা নেই।বড় এক বোন ছিলো।এখন অস্ট্রেলিয়া আছে স্বামীর সাথে।
বাবার পেনশনের টাকা দিয়েই ওর লেখাপড়ার খরচ চলে।আর নিজের হাতখরচের জন্য দুটো বাসায় টিউশনি করে।
.
লোপা অনুপমের এক ইয়ার নিচে পড়ে।
উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।বাবা ব্যাংকে উচ্চপদে চাকরি করে আর ছোট বোন হাইস্কুলে।
.
অনুপমের মোবাইলেই প্রথম লোপার ছবি দেখে সাঈদ।সাঈদদের বাসার মেসে আগে ভাড়া থাকতো অনুপম।
অনুপম একদিন লোপার সাথে রিক্সায় করে যাচ্ছিল তখন পথে সাঈদের সাথে দেখা।
বয়সে কাছাকাছি হলেও সাঈদকে বরাবর বড়ভাইয়ের মতোই দেখে অনুপম।
সালাম দিলে সালামের জবাব দিতে হাত উঠালেও রিক্সার দিকে তাকিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পরে সাঈদ।পশুর দৃষ্টি নিয়ে লোপার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সাঈদ।
এরপর নানা ছলচাতুরী করে অনুপমের কাছ থেকে লোপার নম্বর যোগাড় করে সাঈদ।
অতিষ্ঠ হয়ে অনুপম একসময় ওদের বাসা ছেড়ে দেয়।
.
তারপর থেকেই সাঈদ লোপাকে নানাভাবে জ্বালাতন শুরু করে।একসময় লোপার বাইরে বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
সাঈদ স্থানীয় ছেলে আর সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনে পদ দখল করে আছে।
তাই অনুপমেরও ওকে কিছু বলার সাহস নেই।
.
গত একবছর ধরে এভাবেই চলে আসছিলো।
সাঈদের যন্ত্রণায় লোপাও বাইরে বের হতে পারছিলো না।ফেসবুক আর হোয়াটস্যাপকেই ওরা পার্কের বেঞ্চ বানিয়ে ফেলেছিল।তেমন সমস্যা হচ্ছিল না।
.
আজ ভোরে কলেজের পাশে এক বাসায় প্রাইভেট পড়াতে বের হওয়ার কথা অনুপমের।নাদিম,ওর ফ্রেন্ড।তার ছোট ভাইকে।অন্যদিন বিকালে পড়ায়।আজ ১০ টায় ওর পরীক্ষা তাই এতো ভোরে।
.
ভোরে উঠতে হবে বলে রাতে লোপার সাথে তেমন চ্যাট করেনি।১২ টার দিকেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
ভোরবেলা উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে মোবাইল বের করে দেখলো ১৩ টা মিসডকল আর ৩ টা টেক্সটমেসেজ।
.
মিসডকল সবকয়টাই আদিবের...সাঈদের সৎভাই।
বয়েসে অনুপমের বছর দুয়েকের ছোট হলেও খুব ভালো ফ্রেন্ড ওর।
.
কল দিলে মিহি কন্ঠের এক তরুণী ওর ফোনের ব্যালেন্স স্বল্পতার কথা জানান দিলো।
.
টেক্সট মেসেজের দুটো আদিবের আরেকটা প্রধানমন্ত্রীর।সম্ভবত কোনো দিবস-টিবস আছে হয়তো!
সব উদ্ভট দিবসগুলোতেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর জনাব আদিব চৌধুরী এ দুজনেই মেসেজ পাঠিয়ে থাকেন।
.
প্রথমে PRIME MINISTER INFO লেখা মেসেজটা খুললো।তিনি জাটকা নিধন না করতে অনুপমকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
জাটকা নিয়ে আদিবের আগ্রহের কথা কল্পনা করে অনুপমের হাসি পেলো।
.
হাসতে হাসতেই প্রথস মেসেজটা খুললো।
"Anup dost plz phone pick kor.itz urgent"
.
দ্বিতীয় মেসেজটা ওপেন করল তারপর,
" Dost Vaia kal k tore marar jonno shokal e college gate e lok ready rakhbe.saradin e Oi road e jabina plz"
.
নাদিমদের বাসা কলেজ রোডেই।যেতে কলেজ গেট পার করতে হয়।
ও কিছুক্ষণ ভেবে পড়াতে যাবে বলেই মনঃস্থির করল।
এই হোটেল পর্যন্ত এসেই মন বদলে ফেললো।
.
রেস্ট্যুরেন্ট থেকে নেমে আবার মেসের দিকে হাঁটা দিলো...
পা যেনো চলতেই চাইছিলোনা।
আবার ফোন বাজলো...
-"হ্যালো ভাইয়া তুমি কি কলেজের দিকে আজ আসবা না?"
-"জ্বী না ভাই"
.....কেটে দিয়ে মোবাইলটাকে আবার পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল।
....বাসার গেটে প্রায় তখন আবার বাজলো।
এবার রিসিভ না করে সুইচড অফ করতে যাবে তখন স্ক্রীনের দিকে চোখ পড়ল...'NADIM'
.
" দোস্তো আমি আজকে নাভীদরে পড়াইতে আস....
-"দোস্ত বিরাট একটা এক্সিডেন্ট ঘটে গেসে।নাভীদ ছাদ থেকে পড়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলসে।তুই একটু তাড়াতাড়ি আয়।"
-"আমি এখনই আসতেছি।"
-"দোস্ত তুই শিওর আসবি?"
-"আমি আসতেছি"
.
একটা খালি রিক্সাকে ডাক দিলো।
লাফ দিয়ে রিক্সাওয়ালাকে কলেজ রোড বলার সাথে সাথে মনে পড়ল যে ওর পকেটে একটা পয়সাও নেই।
.
নাহ!
এতো ভাবার সময় নেই।
রিক্সাওয়ালাকে তাড়াতাড়ি চালাতে বলে ভাবতে লাগলো যে এতো ভোরে নাভীদ ছাদে গিয়েছিল কি করতে?
আরেকটা কথা ভাবছে, ও যে সকালে কলেজের ঐদিকে যাবে সেটা সাঈদ কীভাবে জানলো?
আর ডাক্তারের কাছে ফোন না করে অনুপমকেই বা কেনো ফোন দিলো ?
তখন মনে পড়লো ক'দিন আগে নাদিম বাইক এক্সিডেন্ট করলে কোথাও ওর গ্রুপের রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না।মরতে বসেছিল।তখন অনুপমের রক্তের সাথ মিলে যাওয়ায় অনুপমই ওকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে তোলে।
হয়তো এবারও রক্তের প্রয়োজন হতে পারে ভেবে আগেই....
.
রিক্সাওয়ালা প্রাণপণে রিক্সা টানছে, রিক্সা কলেজের মোড়ে।
এমন সময় ফোনে মেসেজ এলো,
ওপেন করে দেখলো আদিবের...
"Dost college er dike vul koreo asbina ajj.aar ora tui na asle onnyo konobhabe toke anar chesta korbe.khobordar tui biswas korbina.specially Nadim college er committee er general secretary howar jonnyo bhaiar sathe besi mishche don't believe him"
.
অনুপম কিছু বুঝতে পারলোনা মেসেজের এমন সময় শব্দ শুনতে পেলো।দেখলো কয়েকটা লোক ওর রিক্সার দিকে তেড়ে আসছে।
স্পষ্ট দেখতে পেলো না।
....শুধু অনুভব করল মাথায় ভারি কিছুর আঘাত।
পেছনে তাকিয়ে দেখলো আঘাত করেছে নাদিম।
স্পষ্ট না দেখা গেলেও চিনতে পারলো।
কারণ গলগল করে তার মাথা থেকে যে রক্ত পড়ছে সেই একই রক্তই তো নাদিমের শরীরে বইছে।
পরের আঘাতটা এলো পায়ে।
.
এর পর আর কিছু মনে নেই।
.
.
বছর পাঁচেক পর.... :
.
রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের দেয়ালে নতুন করে রং করা হয়েছে।আকাশী তবে প্রায় সাদার কাছাকাছি।
রংটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে হাসপাতালের স্থায়ী বাসিন্দা অনুপম হাসান।
রংটা দেখে মনে পড়ল এটা ছিল লোপার সবথেকে প্রিয় রং।
.
....অনুপম জানে,লোপার সাথে পরে সাঈদের প্রেম হয়েছে।ওরা বিয়েও করে নিয়েছে।
ও মনে মনে হেসেই চলেছে।তারপর আপন মনেই বলে উঠলো ভালো থাকুক ওরা।
.
তারপর সাইডের টেবিলে রাখা দৈনিক পত্রিকা খুললো।প্রথম পাতার নিচের দিকে একটা রক্তাক্ত নারীর ছবি।
তার ইনসেটে এক মধ্যবয়সী পুরুষের ছবি।
....পুরুষটাকে চিনতে পারলেও মহিলাটাকে চিনতে পারলো না।
.
.
তবে চিনতে পারলো ছবির নিচে বড় করে লালাকালিতে লেখা হেডিং পড়ার পর,
.
"রাজশাহীতে পাষণ্ড স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন"

-উৎসব পাল (রোড নং ৩৬/২)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.