নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টরুম প্রথাঃ নির্যাতন ও রাজনীতি; কোনদিন কি দৃষ্টি পড়বে প্রশাসনের?

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৪:৫৪



কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েই শুরু করি লেখাটা।
কে যেন একবার বলেছিল, কোন ছেলের চুল বড় হলে, যে কেউ অন্তত ২য় বার ফিরে তাকায় তার দিকে। কথাটা মনে ধরেছিল। তাই কিনা কে জানে, হঠাৎ করেই ইচ্ছে হলো চুল বড় রাখার। মেয়েদের মত কোমর পর্যন্ত না হলেও, রবীন্দ্রনাথের তরুণবেলার চুলের মত কাঁধ পর্যন্ত। মেয়েরা এমনিতে কেউ তাকায় না, চুলের বদৌলতে যদি তাকায় একআধবার- সেটাই বা কম কিসের?
কিন্তু চুল বড় রাখতে চাইলেই তো আর রাখা যায় না। চুল বড় হতে সময় লাগে। এই ছোট থেকে বড় হওয়ার মাঝের সময়টাই সবচেয়ে ভয়ংকর। এসময়েই লোকের বিভিন্ন কথা শুনতে হয়। কেউ দেয় বাহবা, কেউ মারে টিটকারি।
মা খুব একটা আপত্তি করেনি আমার এ সিদ্ধান্তে। বাবা করেছিল। বাবা একটু মৌলবাদী টাইপের মানুষ। আমার চুলের বেগতিক রকমের দৈর্ঘ্য দেখে দুএকদিন চোটপাট করলেন। কিন্তু আমি যখন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, নিউটন, কার্ল মার্ক্স, দ্যা ভিঞ্চি থেকে একালের জয় গোস্বামী আর নির্মলেন্দু গুনের উদাহরণ টেনে বোঝালাম, একমাত্র চুলের দৈর্ঘ্য কম বলেই তাদের নাগাল ধরতে পারছি না, প্রতিভাটা খুলছে না খুলি খুলি করেও, তখন তিনি চুপ করে গেলেন।
কিন্তু সমস্যাটা বাঁধল বাড়ি থেকে হলে এসে। একদিন গেস্টরুমে বড় ভাইরা ধরলেন বড় চুলের জন্য। আচ্ছা মত ঝাড়ি দিয়ে বললেন, আমার এমন চুল দেখে হলের আরো অনেকেই বড় চুল রাখতে পারে, যা ছেলেদের নৈতিক চরিত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আমাকে তাই চুল কাটাতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। নাহলে ছাড়তে হবে হলের মায়া।
বড় ভাইদের কথা শুনে আমার প্রতিক্রিয়া হলো মিশ্র। তাদের মতে, আমার চুল দেখে অনেকেই বড় চুল রাখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। তারমানে, আমার চুলগুলো অন্তত অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে! আয়নায় নিজের বিশাল সাইজের চুলগুলো যতটা খারাপ দেখায়, ততোটা খারাপ নয় অন্তত! আর খারাপ লাগলো, একথা ভেবে যে, আমার চুল নৈতিক চরিত্রের জন্য ক্ষতিকর। আমাকে অবিলম্বে এমন অনুকরণযোগ্য চুলও কাটিয়ে ফেলতে হবে!
উক্ত প্রতিক্রিয়ার পর যা হলো, তা প্রচন্ড রাগ। আমাকে চুল কাটানোর নির্দেশ দেয়ার বড় ভাইয়েরা কে? আমার কি নিজের চুল বড় রাখার অধিকারও নেই? নিজের বাবা মা যেখানে কিছু বলল না, সেখানে কোন বড়ভাইয়ের আদেশ শুনে আমাকে চুল ছোট করে ফেলতে হবে!
ঠিক করলাম, যা ইচ্ছে বলুক ওরা। আমি আমার ইচ্ছে মত চুল রাখবো। কাটালাম না পরের গেস্টরুম পর্যন্ত।
ফলাফল? আমার অবাধ্যতা দেখে, সিংগেল গেস্টরুম নিল ওরা আমার। আমাকে একা একটা রুমে নিয়ে গিয়ে র‍্যাগ দিল ২০-২৫ জন মিলে। র‍্যাগিং এর এক পর্যায়ে, আমাকে বাধ্য করল নিজের চুল নিজেই কাচি দিয়ে কাটতে!
এ ঘটনার পর, ইচ্ছে হয়েছিল, সব ছেড়েছুড়ে বাড়ি চলে যাই। বাড়ির পাশের অনার্স কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করলেও অন্তত পেটের ভট জুটবে। বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইয়ের অত্যাচার তো আর সইতে হবে না!
কিন্তু চলে যেতে পারিনি হল ছেড়ে। বাস্তবতা বাধা দিয়েছিল বাড়ি ফিরতে। ইগোর চেয়ে ক্যারিয়ার অনেক বড়, এমনটা সহপাঠীরাও বুঝিয়েছিল সান্ত্বনা দিয়ে।
বড় ভাইদের সাথে এখন দেখা হয় প্রতিদিন। ক্যান্টিনে, রিডিং রুমে, লাইব্রেরিতে, ডিপার্টমেন্টের সামনে। প্রতিবার দেখা হলে, সালাম দিয়ে হ্যান্ডশেক করি তাদের সাথে। হাসি মুখে জিজ্ঞেস করি, “ভাই, কেমন আছেন?”।


কোটা সংস্কার আন্দোলন তখন তুঙ্গে। অনেক তর্কবিতর্ক, অনেক আলোচনার পর ঠিক করলাম সবাই, ডিপার্টমেন্টের ক্লাস বর্জন করা হবে। সেদিনই ক্লাস ছিল আমাদের। একটা assignment জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল সেটা। ঠিক করা হলো, সেদিনের ক্লাসটা করবো আমরা, কিন্তু আগামীদিন থেকেই ক্লাস পুরোপুরি বন্ধ।
ক্লাস ছিল দুপুর দুটোয়। হল থেকে হন্তদন্ত হয়ে এসে, ক্লাসে ঢুকতে যাবো, ঠিক এমন সময়ে বড় ভাইয়ের ফোন।
“মধুতে আয় পাঁচ মিনিটের মধ্যে।“
বললাম, “ভাই, ক্লাস আছে। আমি ডিপার্টমেন্টে এখন।“
আমার কথা শুনে বড় ভাই, মনে হলো, তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। হয়ত তার সামনে থাকলে, গালে একটা থাপড়ই বসিয়ে দিতেন। বললেন, “তুই কোথায় আছিস, কী করছিস- এগুলা তো আমি শুনতে চাই নাই। তুই আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে মধুতে আসবি। তোকে আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে মধুতে দেখতে চাই।“
সারারাত জেগে assignment এর কাজ করেছি। সকালে উঠে ছবি সংযোজন, প্রিন্ট ইত্যাদি করতে গচ্ছা গেছে একশো টাকার মত। অথচ সে assignment আমার জমা দেয়া হলো না!
ক্লাসের বদলে মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে স্লোগান দিতে হলো আমার মতই ক্লাস মিস করে আসা আরো অনেকের সাথে। “কে বলে রে মুজিব নাই? মুজিব সারা বাংলায়। আমরা সবাই মুজিবসেনা, ভয় করিনা বুলেট বোমা। **** হলের মাটি, ছাত্রলীগের ঘাঁটি।“
সত্যিই আজ দেশের প্রতিটা ঘরে ঘরে একজন করে মুজিব জন্ম নিয়েছে। তারা এখন সবাই ছাত্রলীগের কর্মী হয়ে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদকের পা চাটছে ক্লাস, পড়াশুনো, বই ছেড়ে।


আমার জিয়া হলের এক বন্ধু সিগারেট খাচ্ছিল টিএসসিতে দাঁড়িয়ে। আচমকা হলের এক পলিটিক্যাল বড় ভাইকে দেখে সালাম দিয়ে হ্যান্ডশেক করে সে। এটাই নিয়ম সব হলের। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় সে ভুলে গিয়েছিল সিগারেট ফেলে দিতে।
সিগারেট হাতে বড় ভাইয়ের সাথে হ্যান্ডশেক করার অপরাধে জিয়া হলের বড়ভাইয়েরা রড দিয়ে পিটিয়েছিলেন আমার সে বন্ধুকে।
ডিএমসিতে আহত সে বন্ধুকে দেখতে গেলে সে বন্ধু বলেছিল, “আমার বাড়িতে এসব বলিস না, প্লিজ। আম্মুর হাই ব্লাডপ্রেসার। আমি মার খেয়ে মেডিকেলে আছি শুনলে কী যে হবে, ভাবা যায় না!”
আমি আমার সে বন্ধুর মাকে জানাইনি এসব। শুধু আর টিএসসিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাই না। হঠাত কোন ভাইয়ের দেখা হলে? যদি সিগারেট হাতেই হ্যান্ডশেক করে ফেলি? আমি বুঝে গেছি, এই বিশ বছর বয়সেও আমার স্বাধীনভাবে সিগারেট খাওয়ার অধিকার নেই।


কিছুদিন আগে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এটা নিয়ে লেখালেখি হয়েছে অনেক। সেসব নিয়ে বলতে চাই না।
যেদিন সম্মান পেয়েছে বাংলাদেশ, সেদিনই গেস্টরুমে বলে দেয়া হলো, “কাল ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিল হবে। হলের সবাইকে যেন হলগেটে সকাল দশটায় পাই আমরা। কেউ না থাকলে তাকে হল থেকে বের করে দেব!”
পরদিন সকাল দশটায় আমরা হলগেটে উপস্থিত হলাম। দুঘণ্টা অপেক্ষার পর, আমরা অংশ নিলাম আনন্দ মিছিলে। প্রচন্ড রোদের মধ্যে মধুর ক্যান্টিন থেকে টিএসসি হয়ে শহীদ মিনার পর্যন্ত স্লোগান আর হাততালি। এর মধ্যে টিএসসিতে লীগের কয়েকজন হোমরাচোমরা ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে। আমরা তার সেই ভাষণ সূর্যের প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে শুনে হাততালি দিলাম।
বিশ্বাস করুন, সেদিনের আনন্দ মিছিলের পর, যদিও কোন ঈশ্বরেই বিশ্বাস করি না, প্রার্থনা করেছিলাম, “বাংলাদেশ যেন উন্নয়নশীল দেশ হয়েই চিরদিন থাকে। উন্নত দেশ হয়ে না যায় কোনিদিন। উন্নত দেশ হলেই তখন আবার আমাদের বাধ্য হয়ে রোদের মধ্যে আনন্দমিছিল করে কিছু পাতি নেতার মুখে প্রধানমন্ত্রীর গুণগান শুনতে হবে।“



গেস্টরুমে আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমরা যেন প্রতিটা ভাইকে ফেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাই আর তাদের আপলোড দেয়া ছবি আর পোস্টে কমেন্ট করি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি কোন ছবি আপলোড করলে, আমরা যেন তার ছবি শেয়ার করি, সেকথাও বলে দিয়েছেন তারা।
আমরা সাধারণত বড় ভাইদের ছবিতে “নাইস পিক” আর পোস্টে “সহমত ভাই” লিখে কমেন্ট করি। কেন্দ্রীয় ও হল সভাপতির ছবি শেয়ার করলে তার সাথে লিখে দেই, “ভালবাসা!”



বড় ভাইয়েরা এটাও বলে দিয়েছেন, কারও সাথে সমস্যা হলে আমরা যেন আগে পিটাই। পিটিয়ে হলে ফিরে আসি। এ জন্য তারা আমাদের সবসময় একসাথে থাকতে বলেছেন। যাতে আমরা কোথাও ঝামেলা লাগলে একসাথে ঝাপিয়ে পড়তে পারি।
মারামারির পর কী হবে সেটা নিয়ে আমাদের কিছু ভাবতে হবে না। আমাদের রক্ষার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ট্যাগ আছে।
আমরা তাই মাঝেমাঝেই মারামারি করি। বাস ভাঙ্গি। রিক্সাওয়ালার সাথে পাঁচটাকা নিয়েও বচসা হলে থাপ্পড় মারি গালে। চায়ের দোকানে বিল না দিয়ে চলে আসি অনেকসময়। পুরান ঢাকার বহিরাগতদের ধরে পিটাই। বুয়েট আর মেডিকেলের সোনার ছেলেদের সাথে আমাদের প্রায়ই মারামারি লাগে।

***
উপরের ঘটনাগুলোর মত শতশত ঘটনা বলে যেতে পারবো একটানা। এর সব কিছু ঘটেনি আমার সাথে। কিন্তু আমার মতই কোন একজনের সাথে হয়েছে এমন।
প্রতিবছর জানুয়ারিতে নতুন ছাত্ররা হলে আসা শুরু করে। ঠিক এসময়েই তাদের ম্যানার শেখানোর নাম করে গেস্টরুম শুরু হয় প্রতিটা হলে। গেস্টরুমে বড় ভাইদের হাতে থাকে সুপ্রিম পাওয়ার। তারা চাইলেই ফ্রেসারদের গায়ে হাত দিতে পারে, রডের বাড়ি দিতে পারে, কলার ধরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে, গালি দিতে পারে বাপমা বোন তুলে, শাস্তি হিসেবে হল থেকে বহিষ্কার করতে পারে কয়েকদিনের মত। আর ভাইয়েরা এ সুযোগ ব্যবহার করে ইচ্ছে মত। এভাবে চলতে থাকে টানা একটা বছর। গেস্টরুমের লক্ষ্য, হলে আসা নতুন ছাত্রদের ছাত্রলীগের কর্মসূচীতে নিয়ে যাওয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রেরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পড়তে আসে। অনেকের এ শহরে থাকে না কোন পরিচিত। বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবে, এ সামর্থও থাকে না সবার। তাদের একমাত্র ঠিকানা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো। নিজের শেকর ছেড়ে আসা অসহায় এই ছাত্রদের হলে এসে পড়তে হয় গেস্টরুমের বড়ভাই নামক জানোয়ারদের হাতে। গালি দিয়ে, মেরে, মানসিকভাবে নির্যাতন করে তারা ভেঙ্গে দেয় প্রতিটা তরুণের মেরুদণ্ড। যাতে করে, তারা দলের প্রতিটা কর্মসূচিতে থাকে। এবং থেকে সরকারী দলের কর্মীসংখ্যা বৃদ্ধি করে।
শুধুমাত্র দলীয় কর্মসূচি নয়, প্রথম বর্ষের ছাত্রদের বড় ভাইদের খুঁটিনাটি কাজও করে দিতে হয়৷ যেমন, সিগারেট কিনে দেয়া, ক্যান্টিন থেকে খাবার নিয়ে আসা, লন্ড্রিতে কাপড় দিয়ে আসা ইত্যাদি। এসব করতে করতে ফ্রেসারদের ব্যক্তিত্ব কখন যে নেই হয়ে যায়, তা তারা নিজেরাও বুঝতে পারে না। সাথে আছে শাস্তি ও শাস্তির ভয়। তাদের স্কেলে ছোট অপরাধ হলে গালাগাল আর বড় অপরাধ হলে রডের বাড়ি। একটা ব্যাচকে মেরুদণ্ডহীন করতে এর চেয়ে বেশি কী লাগে আর?
গেস্টরুমের প্যারা, প্রোগ্রামের ব্যস্ততা এসব কাটিয়ে ছাত্ররা লেখাপড়ার সুযোগ কমই পায়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ছাত্র যে কারণে আসে, নতুন জ্ঞান অর্জন ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টি- তার কোনটিই সাধিত হয়ে ওঠে না। যারা টাকাওয়ালা কিংবা স্থায়ী ঠিকানা যাদের ঢাকা, তারা সাধারণত হলে থাকে না। তারা পড়াশুনা করার সুযোগটা হলের ছাত্রদের চেয়ে সামান্য হলেও বেশি পায় বলে, ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষাগুলোতেও তাদের স্কোর বেশি থাকে সাধারণত। যা পরের বছরগুলোয় পূরণ করা রীতিমতো কষ্টসাধ্য। এভাবে একই মেধায় ভর্তি হওয়া ছাত্রদের ভেতরেও একটা সুক্ষ ক্লাস তৈরী হয়ে যায়৷ যারা হলে থাকে না, যাদের পারিবারিক অবস্থা আমাদের চেয়ে একটু সচ্ছ, তারা রীতিমতো টিটকারি মারে আমাদের চামচামির জন্য; কেন আমরা চামচামি করি তা না বুঝেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থার এমন নড়বড়ে অবস্থার জন্য গেস্টরুম অবশ্যই অনেকাংশে দায়ী।
গেস্টরুম প্রথা ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে ঢাবিতে জানি না। তবে এটুকু জানি পূর্বেই সব সরকারের আমলেই এটা ছিল। প্রত্যেকটা সরকারী দল চেয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজেদের আয়ত্তে রাখতে। আর এজন্য তাদের দরকার শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন। আর ছাত্র সংগঠন শক্তিশালী রাখতেই তারা শুরু থেকে গেস্টরুমের মাধ্যমে ফ্রেসারদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে তাদের নিজেদের দলে টেনে নেয়। পরবর্তীতে তারা যাতে রাজনীতি না করলেও যেন তাদের বিরুদ্ধাচরণ না করে, সে শিক্ষাও দিয়ে দেয় পুরোপুরি। ভয়ংকরভাবে।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের একটা ভাষণ দেখেছিলাম কিছুদিন আগে ইউটিউবে। তিনি কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বলেছেন, তাদের সময়ে নতুন কোন ছাত্র এলেই তারা তার সব ধরনের সাহায্য করত। ফর্ম পূরণ করে দিত, মেস ঠিক করে দিত ইত্যাদি। যাতে সে ছেলেটার সমর্থন পায় তারা। সে সময়কার ছাত্ররাজনীতিই ছিল এমন। ছাত্ররা নিজের ইচ্ছায় রাজনীতিতে যোগ দিত। কারণ তখন ছাত্ররাজনীতি মানে চাঁদাবাজি বোঝাত না, তখন ছাত্ররাজনীতি মানে নেতার পা'চাটা বোঝাত না, তখন ছাত্ররাজনীতি মানে বোঝাতো না মাদক ব্যবসার লাইসেন্স। ছাত্ররাজনীতি ছিল জনগণের জন্যই।
পাশার দান উলটে গেছে এখন। ছাত্রদের জোর করে রাজনীতি করানো হচ্ছে। বাধ্য করানো হচ্ছে মিছিলে যেতে। আর এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে গেস্টরুমের মত একটা অস্ত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এব্যাপারে জানে না, এমন একটা ভান করে থাকে৷ সত্যি বলতে, সরকারি দলের কাছে তারা অসহায়। কিংবা ক্ষমতা থাকলেও তার সঠিক প্রয়োগ তারা করছে না। নতজানু হয়ে আছে সরকারী ছাত্রসংগঠনের কাছে।অথচ একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই পারে গেস্টরুম প্রথার বিলোপ ঘটাতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, সাদ্দাম হোসেন, কিছুদিন আগে বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম কালচারের ধারণা আর থাকবে না। অতিথি কক্ষ অতিথিদের জন্যই থাকবে। আমরা সংখ্যায় নয়, মানে বিশ্বাস করি। সে কারণেই সাধারণ ছাত্রদের কাউকে জোর করে কর্মসূচিতে নেয়া হবে না।“
এটা একটা ভাল খবর। তার কথাগুলো শুনে আশা পেয়েছি। যদিও এসব লোকভোলানো কথা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তারপরও, তার আগে এভাবে কেউ বলেছেন বলে মনে পড়ছে না।
খারাপ খবর ছাড়া ভাল কোন খবরে ছাত্রলীগের নাম আজকাল আর শোনা যায় না। যে ছাত্র সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে জড়িত, তার এমন অধঃপতন দেখে লজ্জা লাগে। আশা করি, তারা এখন থেকে ভাল কাজ করেই খবরে আসবে। তাদেরও যে পূর্ববর্তী সরকারি ছাত্র সংগঠনগুলোর মত আচরণ করে ক্যাম্পাসে টিকে থাকতে হবে, এর মানে নেই কেন। এসব না করেও যে ছাত্রদের সমর্থন পাওয়া যায়, তার উদাহরণ তাদের নিজের দলেই আছে।
গেস্টরুম প্রথার ফলাফল কতটা ভয়াবহ এটা নতুন করে বলে দিতে হয় না। র‍্যাগিং এর নিও রুপ এই গেস্টরুম। র‍্যাগিং তো দু একদিন পর থেমেও যায়। কিন্তু কন্সেনট্রেশান ক্যাম্পের মত এই গেস্টরুম চলতে থাকে বছরব্যাপি। সপ্তাহে তিনদিন। কোন কোন হলে সপ্তাহের সাতদিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় অন্তত ৩০ হাজার শিক্ষার্থী থাকে। তাদের প্রত্যেককেই যেতে হয় এই গেস্টরুমের গণ্ডী পেরিয়ে। সবাইকে সহ্য করতে হয় বড় ভাইদের নির্মম অত্যাচার আর শীতল আচরণ। মানসিক পীড়নের ভয়ে জড়সড় থাকতে হয় সর্বদা। এই প্রথার বিলোপ হোক তাই অবিলম্বে। না হলে, আরও নিচে নামবে ঢাবি। অবস্থা হবে অনেকটা ঢাকা কলেজের মত। শিক্ষিত কারো বদলে প্রতিবছর উৎপাদিত হবে হাজার হাজার হৃদয়হীন নেতা আর রাজনৈতিককর্মী। মেরুদণ্ডহীন কিছু গিনিপিগ দখল করবে দেশের বিভিন্ন সেক্টরগুলো। দেশের জন্য এটা কোন সুখবর নয়।

মন্তব্য ৪৭ টি রেটিং +১৬/-০

মন্তব্য (৪৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৫:০৪

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: শুধু একটিই কথা বলবো এমনটি বদলে আবার একই দৃশ্য দেখবেন সরকার বদল হলেই।। বিশ্বাস হয়!!

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:১২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হ্যাঁ। বিশ্বাস হয়৷ প্রতিটা সরকারই তা চাইবে৷ চাইবে যেন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের হাতে থাকে, যেভাবেই হোক।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পারে গেস্টরুম প্রথা তুলে দিতে। আর তাদের ভাবটা এমন, আমরা গেস্টরুম বলতে কিছু আছে, সেটাই অস্বীকার করবো৷ তোদের যা ইচ্ছে কর!

২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৫:৩৯

চাঙ্কু বলেছেন: যেই ঘটনাগুলোর বর্ননা দিলেন, এইগুলো খুব চরম অমানবিক এবং বর্বরতা কিন্তু ঢাবি'র জন্য চরম বাস্তবতা।
আমরাও ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে এইগুলো দেখে এসেছি। রাজনীতিবাজ খুব কাছের কিছু বন্ধু থাকার কারনে ব্যাক্তিগতভাবে কখনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি কিন্তু এইগুলো অহরহ দেখেছি! গেস্টরুমে পায়ের উপর পা তুলে বসার কারনে ফার্স্ট ইয়ারের ছেলে থার্ড ইয়ারের ছেলেকে পিটাইছে!! রাজনীতি বন্ধ না হলে এই বর্বরতা বন্ধ বলে আমার মনে হয় না।

আপনার জন্য শুভকামনা তবে সাবধানে থাকবেন!

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:১০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সেটাই। সাবধান থাকতেই হবে

৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৫:৫২

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলে উঠে একজন শিক্ষার্থী শুরুতেই পরিচিত হবে র‍্যাগিং কিংবা গেস্ট রুমের মত অধ্যায়ের। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে র‍্যাগিং এর দরকার আছে কিনা, ম্যনার শিখানোর জন্য গেস্ট রুম করানোর প্রয়োজন পড়ে কিনা! এই ব্যাপারগুলো নিয়ে তুমুল হতাশা ও তর্ক বিতর্ক আছে। এমন ঘৃণ্য প্রথা একটি সভ্য সমাজের বিশববিদ্যালয়ে কলপনা করা যায় না।

প্রথম বর্ষের এই যে নবীন ছেলেমেয়েগুলো একদমই অপরিচিত একটি জায়গায় এত সংখ্যক অপরিচিত মানুষের সাথে মিশবে। কলেজ পর্যন্ত পার করে আসা জীবনকে বিদায় জানাবে। এই শিক্ষার্থীরা (বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা) এমনিতেই ভয়ের মধ্যে থাকে!

সিনিয়রদের কোন জুনিয়র সালাম না দিলে, হ্যান্ড শেইক না করলে বা এড়িয়ে গেলে ব্যাপারটা এমন নয় যে, জুনিয়রটি বেয়াদব। হয়তোবা ছেলেটি তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিল তাই আপনি তার দৃষ্টিতে পড়েননি কিংবা আপনি তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিলেন তাই ছেলেটি আমাকে সম্বোধন জানাতে পারেনি। আবার আরেকটি ব্যাপারও হতে পারে যে আপনি নিজেই সম্মান পাওয়ার মত ব্যক্তিত্ব নন।

এগুলো এখন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা করে সবচেয়ে বেশী করছে; এর অবসান চাই।

সময়োপযোগী ও পরিশ্রমী এ লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ আরণ্যক রাখাল ভাই।

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৪৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: গেস্টরুম নিয়ে তর্ক বিতর্ক হয় কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। এটাই সত্যি। খুব হতাশ লাগে যখন লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতা করে ঢাবিতে এসে বড় ভাইয়ের চামচামি করতে হয়।

৪| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:২৯

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, তবে দূরত্বের কারনে হোস্টেল না পেয়ে মেসে থেকেছি। প্রয়োজনে হোস্টেলের বন্ধুদের সঙ্গে রাতে গেস্ট হয়ে কাটিয়েছি। সামান্য একটুআধটু র‍্যাগ হলেও বড়ভাই নামক জানোয়ারদের এহেন আচরণে স্তম্ভিত হলাম। জানতে পারলাম হোস্টলে দূরদূরান্ত থেকে স্বপ্ন নিয়ে পড়তে আসা ছাত্রদের নিয়ে কীভাবে অমানুষিক অত্যাচার করা হয়। পড়াশোনার পরিবেশ যে হোস্টলে অস্তমিত তা বলাবাহুল্য। প্রতিদিন কত স্বপ্নদ্রষ্টা এভাবে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তার হিসাব কে রাখে।

সুন্দর অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। এদিক দিয়ে বলবো ভয়ংকর সুন্দর। লাইক দিয়েছি। প্রার্থনা করি এ প্রবনতা যেন অচিরেই বন্ধ হয়।

শুভকামনা রইল।


১১ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:২৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: মেসে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মজাটা ঠিক পাওয়া যায় না। আমিও ছিলাম কিছুদিন মেসে। ভাল লাগেনি। তাই হলে আসা। কিন্তু হলে এসেই এই অবস্থায় পড়তে হলো। এমন প্রথা অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। কেউ প্রতিবাদ করছে না। আন্দোলন করছে না। আওয়াজ তুলছে না। ভয়ংকর অবস্থা। যেন সবাই চায় প্রথাটা যেমন চলে আসছে এতদিন ধরে, তেমনভাবেই চলুক।
বাম দলগুলো অবশ্য শুরু থেকেই গেস্টরুম প্রথার বিপক্ষে। কিন্তু দেশের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাদের সংখ্যা এতোটাই নগন্য যে, তাদের গুণতির ভিতরেই কেউ ধরে না।

৫| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:১৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এ ভয়ংকর প্রথা বন্ধ হোক।

কিছূদিন আগে পত্রিকাতেই দেখলাম বোধকরি, টিভীতেও নিউজ হয়েছিল=
একটা ছেলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল-তাদের অত্যাচারে!
নিজের বাবা কেও চিনতে পারছিল না! কি ভয়ংকর !

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেই যখন পদের জন্য লেজুর বৃত্তি করে- তারা কি করে বন্ধ করবে?
তারা উল্টো তাদের সাহায্য চায়!
সম্প্রতি এক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের দৃশ্য দেখে হতাশায় ট্রমায় যাবার দশা-
ছাত্রলীগের কলেজের ইউনিয়ন রুমে এক টিচার আসলেন। পুচকি পোলা সভাপতির পদের চেয়ারে!
স্যার এসে দাড়িয়ে রইলেন। যতক্ষনা ঐ পুচকি ইশারা করলো বসার!
বিস্ময়কর অধ:পতন!

অত্যন্ত জরুরী এবং প্রয়্রজনীয বিষয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ।
লেখায় ++++

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:২৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: র‍্যাগিং এর ঘটনাটা ঘটেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ঠিকই বলেছেন, নিজেরাই যখন লেজুড়বৃত্তিক কাজকারবার করে বেড়াচ্ছে, তখন আর কী করার

৬| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:২২

রাজীব নুর বলেছেন: ৩ নং টা খুব মর্মান্তিক।
৪ নং, দেশ আসলে উন্নয়নের মহাসড়কে না। সব ওদের মিথ্যা কথা।
৫ নং, যারা বলে লাইন , এবং শেয়ার তারা সেচরা।

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য, রাজীব ভাই

৭| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৪৬

বিজন রয় বলেছেন: সোনার ছেলেরা।
পরে হয় সব দেশের বোঝা।

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: রুপার ছেলে, হীরার ছেলে

৮| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:২৯

ভাইয়ু বলেছেন: উপরওয়ালার রহমতে এমন কোন কিছুর চক্করে পড়তে হয়নি ৷ আর এখন তো আমি-ই সিনিয়র ৷ তবে দেশের পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষিত এসব যুবকেরা অশিক্ষিত মুর্খের মত এমন আচরন কেন করে আমি ঠিক জানি না ৷ অামার ব্যাচের অনেকেই আছে যারা সারাদিন ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে এমন মুরগি খুঁজে ৷ এতেই নাকি তাদের মজা...

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: মুরগি খোঁজাটাকে তারা মজা মনে করে। এরা মানসিক প্রতিবন্ধী

৯| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৩

রাকু হাসান বলেছেন:



সত্যিই খুব খারাপ লাগলো পড়ে,এসব যেন ফ্যাশন হয়ে গেছে । র‌্যাগ দেওয়ার ব্যাপার টা পরিষ্কার কিন্তু ফেসবুকে কমেন্ট করা ,শেয়ার করা ইত্যাদি বাজে ,নোংরা মানসিকতার লাগলো । জোর করে সমর্থন বা ভালবাসা পাওয়া যায় না । এই সব দল টল ই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদুর্য নষ্ট করে ।

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: এটা ওরা বুঝলে আর সমস্যা হত না। জোর করে সমর্থন ভালবাসা পাওয়া যায় না।

১০| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৭

কেতন বলেছেন: আপনার দেখার মত চোখ নেই বলেই ছাত্রলীগের ভাল কিছু আপনার চোখে পড়ছেনা। দল ক্ষমতায় থাকলে সব দলই ছাত্রলীগের মত আচরণ করে - আপনার চোখে সেগুলো ধরবেনা। শিশুদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ একটা ধাওয়া দিলে শিশুদের বাবা মায়েদেরকেও আর খুঁজে পাওয়া যেতনা। কিন্তু ছাত্রলীগ কি তাদের সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করেছে? বরং আমার মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেল যখন প্রথম আলোতে পড়লাম ছাত্রলীগ রাস্তায় বলে তাদের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করেছে, তাদের বক্তব্য হাই কমান্ডে পৌঁছে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্য কোন ছাত্র সংগঠন এতটা সহনশীলতার পরিচয় দিত?

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কাল্লু চোরার চেয়ে আমি ভাল এটা কোন ভাল কথা না।৷
ছাত্রলীগ দল কিংবা শিবিরের চেয়ে অনেকগুন ভাল এ নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু ওরা ওদের চেয়ে ভাল হলেও ভাল ঠিক নয়

১১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:২৩

সুখী পৃথিবীর পথে বলেছেন: বিশ্ববিদ্যালয়! সভ্যতা কি শেখানো হয় না। নাকি রাজনীতি থেকে সুশীলতা উঠে যাচ্ছে?

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সেটাই।

১২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৩০

অচেনা হৃদি বলেছেন: সিগারেট খাওয়ায় ছোটভাইকে রড দিয়ে পিটুনি দিল ছাত্রলীগ বড় ভাই! ওয়াও, মনে হয় এই প্রথম ছাত্রলীগের ভালো কোন কাজ দেখতে পেলাম! তাঁরা শাসন করতে জানেন দেখছি!
হিহিহি...

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সিগারেট খাওয়ার জন্যও কেউ কাউকে মারতে পারে না।

১৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৫

চাঁদগাজী বলেছেন:

ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির জাতির যতটুকু ক্ষতি করেছে, সেই তুলনায় পাকীরা এদের থেকে ভালো ছিলো

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হয়তো। তবে আইয়ুব খানের এনএসেফ বাহিনীর কাছে এরা বাচ্চা ছেলে

১৪| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:০৩

নীলপরি বলেছেন: বাস্তবচিত্র । দৃশ্য বদলালেও চিত্র বোধহয় বদলানোর নয় ।
++

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:২৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কথাটা বলেছেন মনের মত

১৫| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৩৩

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: বাবা একটু মৌলবাদী টাইপের মানুষ। আমার চুলের বেগতিক রকমের দৈর্ঘ্য দেখে দুএকদিন চোটপাট করলেন। কিন্তু আমি যখন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, নিউটন, কার্ল মার্ক্স, দ্যা ভিঞ্চি থেকে একালের জয় গোস্বামী আর নির্মলেন্দু গুনের উদাহরণ টেনে বোঝালাম, একমাত্র চুলের দৈর্ঘ্য কম বলেই তাদের নাগাল ধরতে পারছি না, প্রতিভাটা খুলছে না খুলি খুলি করেও, তখন তিনি চুপ করে গেলেন। অনেকক্ষণ হাসলাম ।
নিচে নেমে গম্ভীর হয়ে গেছি। নিজের ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে শংকিত হচ্ছি।

শিক্ষিত কারো বদলে প্রতিবছর উৎপাদিত হবে হাজার হাজার হৃদয়হীন নেতা আর রাজনৈতিককর্মী। মেরুদণ্ডহীন কিছু গিনিপিগ দখল করবে দেশের বিভিন্ন সেক্টরগুলো। দেশের জন্য এটা কোন সুখবর নয়। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের !!!

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:০০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আপনি রম্যের মানুষ। ঠিক খুঁজে বের করবেন, কোথায় হিউমর আছে।
আসলেই আপনার ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ আছে। আমার বাবা মা আমাকে ভবিষ্যৎ নয় বরং বর্তমান নিয়ে চিন্তিত। সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও যখন র‍্যাগিং থাকে, তখন দুশ্চিন্তা করতেই হয়।
ইউএসে বুলিং নিয়ে টিভি সিরিজ হচ্ছে, জনপ্রিয়তাও পেয়েছে একটা। থার্টিন রিজনস হোয়াই তার অন্যতম। আর আমাদের দেশে এসব তো হয়ই না, হয় না সামান্য প্রতিবাদও

১৬| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৩৩

আখেনাটেন বলেছেন: শিক্ষিত কারো বদলে প্রতিবছর উৎপাদিত হবে হাজার হাজার হৃদয়হীন নেতা আর রাজনৈতিককর্মী। মেরুদণ্ডহীন কিছু গিনিপিগ দখল করবে দেশের বিভিন্ন সেক্টরগুলো। -- এটা কি এখনও বাকি আছে। লাইব্রেরীতে বসে কিছু গাইডবই গলাধ:করণ করে দেশের পলিসি মেকিং এ অংশ নিচ্ছে। এদের দ্বারা দেশ কী পেতে পারে?

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:০৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খারাপ বলেননি। তাই হচ্ছে৷ এমন পরীক্ষা পদ্ধতি আগেও ছিল বলে, আগেও দেশের বড় বড় পদে ছাগলেরা ছিল। রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত নোট বইয়ের বিপক্ষে লিখে গেছেন। পরীক্ষা পদ্ধতি এমন বলে, ছাত্রেরা সারাদিন লাইব্রেরিতে বসে বিগত বছরের প্রশ্নের আদলে তৈরী গাইডগুলো হজম করছে। পরীক্ষা পদ্ধতি পাল্টালে হবে না আর এমন। সেটা বিসিএস থেকে সব ধরনের চাকরির ও স্কুল কলেজের পরীক্ষা। তাছাড়া আর অন্য উপায় নেই।
সমস্যা হলো, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সবখানেই ফোঁড়া আছে একটা করে। একটার সাথে আরেকটা গভীরভাবে রিলেটেড বলে, কোন বিষয় নিয়েই আর কাজ করা যায় না। পাল্টাতে হলে, পাল্টাতে হবে পুরো ব্যবস্থাটাই। যা বিপ্লব ছাড়া সম্ভব নয়, আর এদেশে তা রীতিমতো অসম্ভব

১৭| ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:২১

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: একটা সভ্য দেশে কীভাবে রেগিং এখনও চালু থাকতে পারে? আবার এটাও তো সত্য যারা রেগিং করছে তারাও রেগিং-এর শিকার হয়েছিল। এটা কত বড় অমানবিক যে নিজে রেগিং-এর শিকার হয়ে সিনিয়র হওয়ার পর সেও জুনিয়রদের সাথে এসব করবে আর বলবে এটাই ফান, এটাই ঐতিহ্য! তাদের ছোট ভাই বোন এমনকি সন্তানও তো একই ভাবে রেগিং-এর শিকার হতে পারে এক দিন...
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িনি। তবে আমি সব সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগিং আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বগি কালচারের বিরোধী...
ভদ্রবেশী ভিসি, প্রফেসর, সুশীল সমাজকে দেখা যায় না এসব নিয়ে কোনদিন কথা বলতে...

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:২৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ফালতু অবস্থা।
প্রতিশোধের মানসিকতা সবার আছে৷ সেই প্রতিশোধটা ওরা নেয় জুনিয়রদের উপর। এটা রীতিমত বর্বরতা।

বন্ধ হওয়া উচিত এমন প্রথা

১৮| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৪২

হাসান মাহবুব বলেছেন: আমি দেশে থাকলে আমার সন্তানদের ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষাই দিতে দিবো না।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাল সিদ্ধান্ত। তবে আপনারা তো ঢাকাতেই থাকবেন হয়ত। বাসায় থাকলে কোন সমস্যা এই। সমস্যা যারা হলে থাকে, তাদের। তাদেরই অত্যাচার করে এরা।
তবে অন্য অপশন থাকলে ঢাবিতে ভর্তি না হওয়াই উত্তম

১৯| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৩৫

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনার ব্লগটি ১,৯০,৪৮৫ বার দেখা হয়েছে !!!

বিস্ময়ে ভাষা হারিয়ে ফেলছি ঠিকই কিন্তু ঈর্ষা আমাকে ছেড়ে যেতে পারিনি।

আপনার ব্লগে আসার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত বোধ করছি।

অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং শুভ কামনা রইল।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অপু তানভীর আর হাসান মাহবুব এর ব্লগ ঘুরে আসুন একবার। আমাকে দেখে আর ঈর্ষা হবে না আপনার

২০| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৪

নাইট রাইটার বলেছেন: অনেক কিছু জানতে পারলাম। আশা করি ঢাবি নিয়ে আরো লিখবেন।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৪২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: লেখার মত থাকলে, অবশ্যই লিখব

২১| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৫৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এই জাতীয় ঘটনা কম বেশী অনেকেরই আছে।
আমাদের মানুষ হওয়া খুব প্রয়োজন।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সত্যিই, খুব প্রয়োজন মানুষ হওয়া

২২| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৫:২৬

সোহানী বলেছেন: জানি না কি বলা উচিত। আমি বাকরুদ্ধ। এভাবে কতদিন চলবে??? কিভাবে চলবে??? কত কষ্ট করে একটি ছেলের টাকা বাবা মা জোগাড় করে তা কি তারা জানে??? হয় রোবট হও নতুবা মরে যাও। বিবেক মানবিকতা সব এখন কোল্ড স্টোরেজ এ.....

১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:০১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সেটাই। সুন্দর বলেছেন। হয় রোবট হও নতুবা মরে যাও

২৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:১৯

সুমন কর বলেছেন: নির্মম সত্য। হয়ত, এ কারণগুলোর জন্য কখনো হলে থাকিনি (ঢাবি'র ছাত্র হয়েও)......... রক্ত-হাসপাতাল-ভাঙা অঙ্গ-মারামারি খুব ভয় পাই !!!

+।

২৪| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: এসব ভয়াবহ সিস্টেমের কথা এ পোস্ট না পড়লে এতটা জানা হতো না। এই কুপ্রথার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
গেস্টরুমে পায়ের উপর পা তুলে বসার কারনে ফার্স্ট ইয়ারের ছেলে থার্ড ইয়ারের ছেলেকে পিটাইছে!! (২ নং মন্তব্য) - একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা প্রতিবাদহীন যেতে পারে, কোন সভ্য সমাজ এমনটি ভাবতেও পারেনা। বিদ্রোহী ভৃগু বর্ণিত ঘটনাটি তো আরও ন্যাক্কারজনক!
বাইকে তেল দেয়ার ব্যঙ্গচিত্রটি বেশ মজার হয়েছে!!! :)

২৫| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
এটা বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ঘটনা। আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখনও ছিল। এখনও আছে। এটার অবসান চাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.