নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবি নজরুলের প্রলাপ ও পিতৃত্ব কিংবা তার কবর

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৩২


কবি নজরুল বাকরুদ্ধ ও জীবন্মৃত হয়ে যাওয়ার প্রায় ৬ বছর পর, তার বন্ধু কবি খান মুহম্মদ মঈনুদ্দিন তার হাতে কলম তুলে দেন একদিন। কবির পক্ষে কিছু লেখা তখন অসম্ভব। তবু তিনি লিখতে পেরেছিলেন চার লাইন অস্পষ্ট অক্ষরে। তিনি লিখেছিলেনঃ
“কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবে চির
বুলবুলকে গান গান শেখাব- গান শেখাব
গান করার কবিতা গান করব-
কবি কাজী নজরুল ইসলাম চিরদিন”

চার লাইনের বেশি তিনি লিখতে পারেননি।
এই লেখা থেকে অন্তত বোঝা যায়, তিনি তার পুত্র বুলবুলকে গান শেখানোর কথা বলছেন। গানপাগল কবির ইচ্ছে ছিল প্রিয়পুত্রকে গান শেখানোর। কিন্তু গান শেখানোর বয়স হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করল বুলবুল মাত্র পাঁচ বছর বয়সে। বসন্তরোগে আক্রান্ত হয়ে।
মৃতপ্রায় রুগ্ন শিশুর শিয়রে বসেই নজরুল হাত দিয়েছিলেন হাফিজের 'রুবাঈয়াৎ-ই-হাফিজ’ অনুবাদে। তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত সে বই এর ভূমিকায় তিনি লিখলেনঃ
"বাবা বুলবুল,
তোমার মৃত্যুশিয়রে ব’সে “বুলবুল-ই-শিরাজ” হাফিজের রুবাইয়াতের অনুবাদ আরম্ভ করি। যেদিন অনুবাদ শেষ ক’রে উঠলাম, সেদিন তুমি- আমার কাননের বুলবুলি- উড়ে গেছ! যে দেশে গেছ তুমি, সে কি বুলবুলিস্তান ইরানের চেয়েও সুন্দর?”

বুলবুলের শোক কবি ভুলতে পারেননি মস্তিষ্কবিকৃতির পরও, বুলবুলের মৃত্যুর প্রায় ১৮ বছর পর তার লেখা সেই চারলাইনের 'প্রলাপ' তাই বলে অন্তত। প্রথম মৃত্যুর পর প্রায় ৩৪ বছর তিনি জীবিত ছিলেন। তার কোন আনন্দ ছিল না, অনুভূতি ছিল না- তিনি কবিতা লেখননি, ঝাকড়া চুল দুলিয়ে দরাজ গলায় গাননি, অট্টহাসিতে কাঁপিয়ে তোলেননি পরিপার্শ্ব। কোনকিছু স্পর্শ করত না তাকে। এই ৩৪ বছর হয়তো তিনি শুধু মৃত পুত্রের কথাই ভেবেছিলেন। আমরা জানি না এসব, জানতে পারবও না কোনদিন।
কবির চার পুত্রের মধ্যে তিন জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন তার মৃত্যুর আগেই। যখন কবি ঢাকায় তিরোধান করলেন, তখন তার একমাত্র জীবিত পুত্র কাজী সব্যসাচী ছিল কলকাতায়। তিনি তার পিতাকে শেষবার দেখতেও পারেননি। তার অজান্তেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে কবর দেয়া হয়েছে কবিকে তড়িঘড়ি করে!
এই বিদ্রোহীর পুরো জীবনটাই ট্রাজিক। হিন্দু মুসলিম নয়- বাঙালি পরিচয়েই যে কবি পরিচিত হতে চেয়েছিলেন, লড়েছিলেন ধর্মীয় কুসংস্কার আর গোড়ামির বিরুদ্ধে, তার জীবদ্দশাতেই হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা। ধর্ম, সমাজ আর বাস্তবতাকে চমকে দিয়ে, সব কিছুর বিরুদ্ধে গিয়ে যাকে বিয়ে করেছিলেন, সেই প্রমীলা দেবীও পঙ্গু হয়ে যান ১৯৩৯ সালে। তার আগে মারা যায় দুই পুত্রঃ কাজী কৃষ্ণ মোহাম্মদ ও কাজী অরিন্দম খালেদ (বুলবুল)।
প্রমীলা দেবী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অসুস্থ অবস্থাতেও কবির সেবা করেছেন। কবিপত্নী শায়িত আছেন চুরুলিয়ায়। আর কবিকে কবর দেয়া হলো অন্য দেশে, যে দেশটা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। প্রথমবার মৃত্যুর আগে, তিনি কি জানতেন, ধর্মের জন্য ভাগ হয়ে যাবে তার দেশ? তার দেশের মানুষেরাই ধর্ম নিয়ে খুনোখুনি করে মানচিত্রটাই ভাগ করে ফেলবে?
কবি অভাবে পড়ে গান লেখা শুরু করেছিলেন, যদিও তার গানগুলোই তার শ্রেষ্ঠ সম্পদ। সে'সময়ে তার দরকার ছিল টাকার- কবিতা, গল্প লিখে চলছিল না সংসার। লেখা শুরু করেন গান- যা চলে বাজারে- ধর্মীয়, প্রেম, দেশাত্মবোধক- বাদ রাখলেন না কোনটাই। বাংলা গজল প্রথম তার হাত ধরেই আসে। লিখেছিলেন কীর্তন ও শ্যামাসংগীতও। মেগাফোন আর এইচ.এম.ভি'র রেকর্ডের জন্য লিখলেন দু’হাতে, সুর করলেন অবিরত। বেশি লিখলেন রাগপ্রধান প্রেমের গান। সাথে গজল, শ্যামাসংগীত ,কীর্তন।
ফরমাশের গানও তিনি কম লেখননি। একবার হুগলিতে আসছেন মহাত্মা গান্ধী, বিশাল জনসভার আয়োজন। কিন্তু উদ্বোধনসংগীত হয়নি রচিত! ঘণ্টাখানেকের মধ্যে লিখে সুর করে ফেললেন তিনি। সে আনুষ্ঠানের উদ্বোধন করলেন তিনি নিজে সেই গান গেয়ে।
“আজ না-চাওয়া পথ দিয়ে কে এলে,
ঐ কংস-কারার দ্বার ঠেলে।
আজ শব-শ্মশানে শিব নাচে ঐ ফুল-ফোটানো পা ফেলে।।“

নজরুল মহাত্মার চরকা কেটে স্বাধীনতা আনায়নে কিংবা অহিংসনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন যুদ্ধে, রক্তে। সশস্ত্র সংগ্রাম করে যারা স্বাধীনতা আনতে চেয়েছিল, সেই তেজোদ্দীপ্ত তরুণদের দলেই ছিলেন তিনি। সরাসরি বিপ্লব করে স্বাধীনতা আনার কথা বলাতেই, বাজেয়াপ্ত করেছিল ব্রিটিশ সরকার তার পত্রিকা ‘ধুমকেতু’কে। কিন্তু কী অবলীলায় লিখে ফেললেন গান্ধীর জনসভার উদ্বোধনসংগীত, গান্ধীরই বন্দনা করে। এমনকি লিখলেন ‘চরকার গান’ও।
"ঘোর রে ঘোর রে আমার সাধের চরকা ঘোর
ঐ স্বরাজ-রথের আগমনী শুনি চাকার শব্দে তোর!”

এমনই একটি গান ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই’। সেসময়ে ধর্মীয় গানগুলো চলছিল তার খুব- গজল কী শ্যামাসংগীত, হামদ- নাত কি কীর্তন। লিখেছিলেন এই গানটিও। আর সেই প্রায়-ফরমায়েশি গানের কথা মেনেই কবর দেয়া হলো তাকে ঢাকায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে।
তার পুত্রের মতামত না নিয়ে নিজগ্রামে কবর না দিয়ে ঢাবির মসজিদের পাশে, তার স্ত্রী পুত্র থেকে দূরে কবিকে কবর দেয়ার কাজটা ছিল রীতিমতো অমানবিক।
কবি মৃত্যুবরণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধ নিহত হওয়ার মাত্র এক বছর পর। সেদিনকার অবৈধ শাসকেরা তাকে তড়িঘড়ি করে মসজিদের পাশে সমাহিত করে হাসিল করেছিল নিজেদের স্বার্থ। যে লোকটাকে সুস্থ অবস্থায় কোনদিন ওরা পারত না বাগে আনতে, তাকেই তারা ব্যবহার করল নিজেদের মত করে তার মৃত্যুতে। '৭৫ এর পরেই শুরু হয়েছিল ধর্মের রাষ্ট্রীয়করণ। নজরুলকে মসজিদের পাশে কবর দেয়াটাও হয়তো ছিল সবকিছুকে ধর্মীয়করণ করার প্রথম প্রচেষ্টাগুলোর একটা। আজকাল যে ‘কম্যুনিস্ট নজরুল’, পুত্রের নাম ‘কৃষ্ণ মোহাম্মদ’ ও ‘লেনিন’(১) রাখা নজরুল, ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোন জন’ বলা নজরুল আর চিরবিদ্রোহী প্রেমিক নজরুলকে পাশে ঠেলে, গজল রচয়িতা নজরুলকেই প্রাধান্য দেয়ার একটা প্রবণতা চালু হয়েছে, তা হয়তো নজরুলকে মসজিদের পাশে কবর দেয়ার মাধ্যমেই চালু হয়েছিল।
বর্ধমানের এক অজপাড়াগাঁ থেকে ঝটিকার মত উদয় হয়ে নবদিগন্তের সূচনা করেছিলেন নজরুল একা। একা তিনি মৃত্যুর পরও। পাশে নেই জীবনসঙ্গিনী প্রমীলা। যে সন্তানকে ভুলতে পারেননি মস্তিষ্কবিকৃতির পরও, সেও নেই পাশে। পাশে নেই অরিন্দম- সব্যসাচী।
ধর্মনিরপেক্ষ, সাম্যবাদী, চির-বিদ্রোহী এই কবিকে এখন হাস্যকরভাবে মৌলবাদীরা নিজেদের সম্পদ মনে করে। তাকে বিন্দুমাত্র না পড়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে তাকে আশ্রয় করে, নামে বিষোদগারে। আজন্ম অসাম্প্রদায়িক এক অগ্নিবীণা আজ রাষ্ট্রধর্মওয়ালা একটা দেশের জাতীয় কবি!
শাহবাগ দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকার সময়, তার কবরের দিকে চোখ গেলেই মনে হয়, এখানে শুয়ে আছে হেরে যাওয়া সহস্র স্বপ্ন, যে স্বপ্নে গান আর কবিতা ছিল, প্রেম আর মানুষ ছিল, ধর্মীয় সামাজিক বিভেদ ছিল না, ছিল না কোন কাঁটাতার কিংবা বিজিবি বিএসএস, সে স্বপ্ন আজ মূর্খদের দুর্গন্ধ উপস্থিতিতে পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে।
ছবিতেঃ মস্তিষ্ক বিকৃতির পর লেখা নজরুলের সেই চার লাইন।
ছবিসূত্রঃ নজরুল ইসলাম কিশোর জীবনী/ হায়াৎ মামুদ
(১)- কাজী অনিরুদ্ধের আরেক নাম ছিল লেনিন, কবি ডাকতেন নিনি বলে।

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ২:৪৩

চির চেনা বলেছেন: অথচ ধর্মনিরপেক্ষ লোকদের বা দলের কাছে তার কদর যেন অনেক কম কিংবা অচ্ছুৎ ধরনের কিছু তিনি।যদিও এর পিছনে এক ব্যাখ্যা আছে।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:১৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সাধারণ লোক বুঝবে কী, হুমায়ুন আজাদ পর্যন্ত ওকে ভুল বুঝেছে।
তার পুরো জীবনটাই যেন এক সাহিত্যকর্ম, তিনি জীবনপৃষ্ঠায় যে ধর্মনিরপেক্ষতার অক্ষর লিখে গেছেন, তা আমরা বুঝতে পারিনি, এতে তার ক্ষতি নেই। ক্ষতি আমাদেরই

২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:১২

সোহানী বলেছেন: কি অবহেলায় অযত্নে আমরা হারালাম অমূল্য সম্পদকে।

উনাকে ঢাকায় আনার পর আমার বাবা দেখতে গিয়েছিলেন উনার প্রিয় কবিকে। আমি তখন চান্স পাইনি দেখার শুধু আমার বড় বোন গিয়েছিলেন বাবার সাথে।

ভালো লাগলো আমার প্রিয় কবির স্মৃতিচারণ।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:২০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
নজরুল তো তখন জীবন্মৃত। যদি তাকে দেখার সুযোগ হতো সুস্থ অবস্থায়!

৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৩৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


বাংগালীরা দরিদ্র জাতি, তাদের কবিও ছিলেন দরিদ্র

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কবি দরিদ্র ছিলেন, এটা ঠিক। তবে তিনি জীবনটা রাজার মতই কাটিয়ে গেছেন

৪| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৩৯

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: মি. চাঁদগাজী-- বলেছেন---"বাংগালীরা দরিদ্র জাতি, তাদের কবিও ছিলেন দরিদ্র"

--কবি দরিদ্র ছিলেন ঠিকই- তবে তা ছিল অর্থনৈতিকভাবে;

*** মনের দরিদ্রতা তাঁর কখনোই ছিল না; সবাই তাঁকে দিয়ে ফায়দা লুটিয়েছে যে যার মত করে। তাঁর মনে কলুষতা ছিল না বলেই আমরা তাঁকে কলুষিত করি বিভিন্ন আঙ্গিকে। তাইতো তাঁর নামটাও আমরা শ্রদ্ধাভরে নিতে পারি না; যতটা অন্যান্যদের বেলায়।

---কতজন এলো গেলো....কতজনই আসবে।
তাঁর মতো করে কি কেউ কখনো বাঁচবে?

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: এক মত

৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গবেষনা খুব হয়েছে। সেই তুলনায় কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কিছুই হয় নি। এর কারন কি নজরুল নোবেল পান নি!

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: নজরুলকে নিয়েও কম হয়নি। তবে বেশিরভাগই বায়াসড

৬| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:১০

ডি মুন বলেছেন: নজরুলকে নিয়ে লেখা পড়ে ভালো লাগল।
নজরুলের মতো ব্যক্তিত্ব সাহিত্যে বিরল।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আসলেই বিরল। নজরুলের জীবনটাই একটা সাহিত্য

৭| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০৭

মলাসইলমুইনা বলেছেন: আরণ্যক রাখাল,

ধর্মনিরপেক্ষ, সাম্যবাদী, চির-বিদ্রোহী এই কবিকে এখন হাস্যকরভাবে মৌলবাদীরা নিজেদের সম্পদ মনে করে। তাকে বিন্দুমাত্র না পড়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে তাকে আশ্রয় করে, নামে বিষোদগারে। আজন্ম অসাম্প্রদায়িক এক অগ্নিবীণা আজ রাষ্ট্রধর্মওয়ালা একটা দেশের জাতীয় কবি!

আপনার হতাশ হবার কারণ হয়তো আছে সেটা বুঝতে পারছি । আপনার মন্তব্যের প্রথম অংশের সাথে একমত । নজরুলকে ইসলামপন্থী কোনো কবি আমিও বলতে চাই না। উনি তার জীবন যাত্রায় সেটা ছিলেনও না । কিন্তু আপনার খেদটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। কবিকে বাংলাদেশে নাগরিকত্ব দিয়ে বাংলাদেশে না আনা হলে আজকে সাম্প্রদায়িক বিজেপির দেশে (যেখানে উগ্র ধর্মান্ধতার কারণে উদার গণতন্ত্র, সাম্যবাদ বিদায় হয়ে যাচ্ছে ) নাম না জানা কোনো কবরস্থানে অবহেলায় ঘুমিয়ে থাকতেন।সেটা কি ভালো লাগতো আপনার ? সেটা হলে কোনো পার্থক্য কি হতো মনে হয় আপনার ?

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: এ পোস্ট পড়ে আপনি কী বুঝলেন সেটাই বুঝলাম না। পোস্টে স্পষ্ট সব বলেছি।
তার নিজের সন্তানেরই অনুমতি নেয়া হয়নি, একমাত্র যে সন্তান বেঁচে ছিল। সব্যসাচী পরবর্তীতে তার কবরের মাটি নিয়ে গিয়ে চুরুলিয়ায় সমাধিস্থ করেন।
নজরুলের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভাসাভাসা। সেই সম্পর্কের জেরে এখানে সমাধিস্থ করাটা কতটা যৌক্তিক সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি।
নজরুলের গ্রামের বাড়ি, তার সমাধি, তার বৌয়ের সমাধি ভারতে সংরক্ষিত আছে ভালভাবেই। অবহেলায় পড়ে তো নেই! এ তথ্যটুকু কোথায় পেলেন?

৮| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:০৬

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: কি অবহেলায় অযত্নে আমরা হারালাম অমূল্য সম্পদকে। সোহানী আপা, মনে কথা!

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:২০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ;(

৯| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:৪৮

মলাসইলমুইনা বলেছেন: ১৯৭২ সালের ২৪শে মে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের প্রেক্ষিতেই সপরিবারে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে আসার সুযোগ দেয় ভারত সরকার । সেটা বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময়কার কথা আর তার ব্যক্তিগত আগ্রহেই সেটা হয়েছিল খুব সম্ভবত । সে সময় থেকেই নজরুল বাংলাদেশেই ছিলেন । কবিকে কি পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আনা হয়েছিল ? বাংলাদেশে আসার পরে কবি নজরুল আর তাঁর পরিবারকে যখন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় তখন পরিবারের কেউ কি তখন নাগরিকত্ব নিতে অস্বীকার করেছিলেন, বিশেষ করে কাজী সব্যসাচী ? আমিতো সেই রকম কিছু কোথাও পড়িনি । সেটাই অবাক হয়েছিলাম আপনার লেখাটা পরে । কাজী সব্যসাচীর স্ত্রী উমা কাজীতো তাদের দু মেয়ে মেয়ে খিলখিল কাজী,মিষ্টি কাজী ও ছেলে বুল্বুল কাজীকে নিয়ে নজরুলের সাথে ধানমন্ডির বাসাতেই থাকতেন । উমা কাজীতো খিলখিল কাজী আর বাবুল কাজিকে নিয়ে এখনো মনে হয় বাংলাদেশে, বনানীতেই থাকেন । কাজী সব্যসাচী তার ব্যবসার জন্য কলিকাতায় থেকে যান সেটা অবশ্য ঠিক । কিন্তু বড় ছেলে সব্যসাচীর ফ্যামিলির ঢাকায় কবির সাথে থাকা থেকেইতো মনে হয় পারিবারিক কোনো আপত্তি ছিল না নজরুলের বাংলাদেশে আসবার বা নাগরিকত্ব নেবার ব্যাপারে। কাজী সব্যসাচী মারা যান ১৯৭৯ সালে তার আগেও উনি নজরুলের বাংলাদেশের নাগরিকত্বের ব্যাপারে কোনো আপত্তি করেছেন বলেতো শুনিনি । এই দেশের একজন নাগরিককে এই দেশে দাফন করা খুব আনইউজুয়াল কেন আপনি মনে করছেন সেটা আমি বুঝিনি । কবি নজরুলকে কি অন্য দেশে দাফন করা সম্ভব ছিল ? মৃত্যুর পর যাকে অন্য দেশে দাফন করতে হয় পারিবারিক ইচ্ছায় তাকে কি জাতীয় কবি হিসেবে তখন রাখা যেত আর ? সেটাওতো তাহলে প্রত্যাহার করতে হতো তাই না ? তেমন হলে কি কবি নজরুলকে সন্মান জানানো হতো বেশি ?

কাজী সব্যসাচীর সাথে কবি নজরুলের মৃত্যুর পর যোগাযোগ করা যায়নি কেন আমি জানিনা । কিন্তু মৃত্যুর কিছুদিন আগে থেকেইতো নজরুল ক্রিটিকাল পেশেন্ট হিসেবে পিজিতে এডমিটেড ছিলেন ।সে সময় কবি নজরুলের কবর বাংলাদেশে হবে না পুরুলিয়ায় প্রমীলা দেবীর পাশে হবে সেটা কি কাজী সব্যসাচী কোথাও বলেছিলেন ? খিলখিল কাজী নিজের ক্ষেত্রে গুণী ব্যক্তি । উনি কি কখনো এই বিষয়ে তার বাবার মনোভাবের বিষয়ে কোনো কিছু বলেছেন কোনো সাক্ষাৎকারে বা নিজের কোনো লেখায়? এই ব্যাপারে আমি কোথাও কিছু পড়িনি বরং আমি এটা পড়েছি যে কাজী অনিরুদ্ধর (নজরুলের ছেলে) মেয়ে অনিন্দিতা কাজী বছর দুয়েক আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঢাকায় এসে থাকবার কথা বলেছিলেন নজরুলের ওপর গবেষণা করবেন বলে । পশ্চিম বাংলায় নজরুলের ওপর গবেষণার সুযোগ কম, বাংলাদেশে বেশি বলে । আমার পড়া থেকে মনে হয়েছিল নজরুলের পরিবারের কোনো অপত্তি ছিলোনা বাংলাদেশে তার দাফনের ব্যাপারে । অবহেলা হিসেবে বলতে চাইছিলাম এখানে নজরুল একটা দেশের জাতীয় কবি আর সেখানে ভারতে তার হতো একটা প্রাদেশিক পরিচিতি ।ভারতে তাকে আর জাতীয় পর্যায়ের সন্মান দিতো না । সেটাই অবহেলা বলেছিলাম ।

বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান কবিকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা তার প্রতি অসম্মান হয়েছে কি না আমি সেটাও জানিনা । আপনার মন্তব্যের সাথে এখানেও আমি একটু দ্বিমত করলাম । ভারত আর পাকিস্তান ধর্মের ভিতিত্তে হয়েছিল । কিন্তু সেই দিক থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবি ও উত্থান ছিল অনেক বেশি অসাম্প্রদায়িক । ধর্মের ভিতিত্তে পাক ভারত ভাগ হবার আগেই ১৯৪২ সালে নজরুল বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন আর মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন । নজরুল সুস্থ্য থাকলে ভারত আর পাকিস্তানের চেয়ে অসম্প্রদায়িক স্পিরিটের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশেই থাকতে চাইতেন না সেটাই বা কে বলবে ?তাই আমি কিছুটা কনফেউজড হয়েছি আপনার লেখার টোন থেকে । আর খানিকটা বিস্মিত আমার কমেন্টে আপনার রেস্পন্সের কিছুটা অসহিষ্ণু ভঙ্গিতে। যাহোক আমি এ'ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ কেউ না। আমি অল্প যা জেনেছিলাম এব্যাপারে মিডিয়াতে পাবলিশড লেখা, সাক্ষাৎকার থেকে তা থেকে আমার এটাই মনে হয়েছিল যে নজরুলের ঢাকায় দাফনের ব্যাপারে বা তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করতে তার পরিবারের কোনো আপত্তি ছিল না । আমার প্রথম মন্তব্যের কারণ ছিল সেই কনফিউশনটাই । আর কিছু না ।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:২০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আমি কি পোস্টের কোথাও নাগরিকত্ব দেয়ার বিরোধিতা করেছি? যে ক্ষোভটা প্রকাশ করেছি, সেটা তার নাগরিকত্ব নিয়ে নয়, বর্তমান বাংলাদেশের ধার্মিক অবস্থান নিয়ে।
আমার বক্তব্যটা তাকে মসজিদের পাশে কবর দেয়া নিয়ে। পোস্টেই বলেছি, ব্যাপারটা রীতিমত তার বন্ধুজনদের লেখা থেকে প্রমাণিত যে গজল, কীর্তন, শ্যামাসঙ্গীত কবি লিখেছেন টাকার জন্য। গানের ব্যাপারে নিজের চেতনাবিরোধী চরকার গানও লিখেছেন। তেমন একটা গানকে ভিত্তি করে তাকে মসজিদের পাশে কবর দেয়াটার মাধ্যমে সে সময়কার সরকার প্রধানদের মানসিকতা বোঝা যায়। সবকিছুকে সাম্প্রদায়িক করার একটা চেষ্টা চলছিল তখন। নজরুলের কবরটা মসজিদের পাশে দেয়াটাও ছিল তেমন একটা প্রচেষ্টা। না হলে অন্তত সব্যসাচীর মতামত নেয়া হতো।
তার আত্মীয় তো ছিলই অনেকে, তার বংশধর এখনো অনেক আছে, এখনো বাংলাদেশের আর্মি রণসঙ্গীত গায় 'সজীব করিব মহাশ্মশানের' স্থলে 'সজীব করিব গোরস্থান'। সে বিষয়ে তাদের অবস্থান কোথায়?

১০| ২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৫০

প্যারাডক্স কিউরেটর বলেছেন: আপনার কি মনে হয় না কাজী নজরুল ইসলামের ইচ্ছাতেই মসজিদের পাশে কবর দেওয়া হয়েছে? আপনি ওনার কবর নিয়ে ওনার
ইচ্ছাটাকেই দয়া করে আগে প্রাধান্য দিন। একজন কবি নিশ্চই নিজের মনের কথা তেনার কবিতা বা লেখায় উপস্থাপন করেন। ওনার লেখা মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই এটি সম্পর্কে নিশ্চই জানেন। কবি মসজিদের পাশে নিজের কবরকে কল্পনা করে লিখেছেন এটি। কিন্তু কোথাও ওনার স্ত্রী/ জীবন সঙ্গীনির পাশে কবর বা এরকম কিছু উপস্থাপন করেন নি। তাই মসজিদের পাশে উনাকে কবর দেওয়া আহামরী কিছু হয় নি। ধর্মান্ধত্বও প্রকাশ করা হয় নি। বরং আপনি যদি এতে সংশয় প্রকাশ করেন তবে আপনি মানসিক ভাবে অন্ধ। একজন মানুষের তার ব্যাক্তিগত চয়েজ নিয়ে সমালোচনা বন্ধ করুন।

১০ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ২:৪৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ব্যক্তিগত চয়েজ হতো তখনই, যখন সে নির্দিষ্ট করে বলে দিত, কোথায় তাকে কবর দেয়া হবে। গানটা ছিল বাণিজ্যিক, স্পষ্ট লিখেছি সেকথা। না মানতে পারেন। এতে তার কবরের স্থান পরিবর্তন হবে না, ভয় পাবেন না

১১| ১০ ই আগস্ট, ২০২০ ভোর ৫:২৪

এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: লেখাটির কিছু অংশে চিন্তার অবকাশ আছে, কিছু অংশ আবার সুচিন্তিত নয়।

টাকার জন্য লেখায় সমস্যা কী, টাকার অনেক লেখাও বিশ্বসাহিত্যে মহান হয়ে আছে। চার্লস ডিকেনসের বিরুদ্ধে ভিক্টোরিয়ান উন্নাসিকতা ছিল, এবং এখনও অভিযোগ করেন অনেকে, টাকার জন্য গ্রন্থ লিখতেন তিনি, উপন্যাস টেনে টেনে লম্বা করতেন। একজন মহান লেখক টাকার জন্য লিখতে পারেন, কিন্তু যখন লিখেন, তখন লেখাটি হয় তাঁর নিজস্ব হৃদয় উৎসারিত। দালালী ধরণের লেখা অন্য জিনিস।

একজন মহান লেখক সকলেরই সম্পদ বিবেচিত হতে পারেন: ধার্মিক, অধার্মিক, গোঁড়া, নীতিবান, দুর্নীতিবাজ সকলের। মৌলবাদীরা সম্পদ মনে করলে, যৌগবাদীদের প্রতিক্রিয়াশীল হওয়ার কিছু নেই কিংবা বিপরীতে তাঁকে অসম্পদ ভাবার কারণ নেই। সম্পদ নিয়ে কেউ আইনবিরুদ্ধ কাজ না করলেই হলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.