![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
৩-৪-২০০৫।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করেই জানতে পারলাম মুন্নি আর নেই। নাটোরে সড়ক দূর্ঘটনায় মুন্নি ও তার বড় ভাই লিটন মারা গেছেন। শোনার পর মনে হলো, আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরেছে!
আমি তখন দশম শ্রেণীতে পড়ি, মুন্নি নবম। আমার দুজনেই ভিন্ন-ভিন্ন স্কুলে পড়তাম। তবে বাসা একই এলাকায় হওয়ায় মুন্নিকে চিনি। তাকে আমার ভালো লাগতো। সত্যি বলতে কি, মুন্নিকে আমি ভালবাসতাম।
তাকে একনজর দেখার জন্য স্কুল, প্রাইভেট পড়া ফাঁকি দিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতাম। তার সাথে প্রথম সাক্ষাত হয়েছিল স্কুল থেকে ফেরার পথে। ও ছিল রিক্সায় আর আমি বাইসাইকেলে। বুকটা কাঁপছিল। তারপরও সেদিন ওর সাথে চলন্ত অবস্থা ২-১ মিনিট কথা বলেছিলাম। এরপর দ্বিতীয় সাক্ষাতের দিন ও আমাকে বলেছিল, আর কখনোই আসবেন না। এরপর অবশ্য তার সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করার মতো সাহস আর কখনোই দেখায়নি। তবে আড়ালে-আবডালে থেকে তাকে দেখার চেষ্টা করতাম।
মুন্নি কিন্তু অসম্ভব সুন্দরী মেয়ে ছিল। ও স্বভাবে চঞ্চল ছিল। সবার সাথে সহজেই মিশে যেতে। বড়লোক বাবা-মা’র একমাত্র মেয়ে সন্তান হলেও ওর মধ্যে অহংকারের লেশমাত্র কখনোই দেখিনি। লিটন ছিল মুন্নির একমাত্র ভাই।
শুনেছিলাম মুন্নির বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। তার দাদা ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। সে ছেলে নাকি তার দাদার বন্ধু, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। গরিবের সন্তান হওয়ায় আমি আর সাহস দেখায়নি। তাকে কখনোই বলতে পারিনি, মুন্নি আমি তোমাকে ভালবাসি। কিংবা আমার সে ভালবাসার কথা তার পরিবারকে বলার মতোই সাহস ছিল না। কারণ, আমি গরিব সে বড়লোকের মেয়ে। গরিবের সন্তানের সঙ্গে কোনও বাবা-মা’ই তার সন্তানকে বিয়ে দিতে চান না। প্রেম তো দূরের কথা।
যায় হোক, মুন্নি মারা গেছে জানার পর অনেক কেঁদেছিলাম। জীবনে কখনোই শ্মশানে যায়নি। সেদিনই প্রথমবারের মতো শ্মশানে গিয়েছিলাম। ও ছিল বাইকে। একটা ট্রাক ধাক্কা দেওয়ায় দুজনেই রাস্তায় পড়ে যায় এরপর ট্রাক তাদের পিষে ফেলে চলে যায়। শরীর ক্ষত-বিক্ষত হওয়ায় ওর লাশে দেখা হয়নি। অবশ্য একবারের জন্য ওর দুখানি পায়ের পাতা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। সাদা হয়ে গিয়েছিল পা দুখানি।
মুন্নির লাশ যখন চিতায় তুলে আগুন দেওয়া শুরু হলো, আমি তখন শ্মশান থেকে বের হয়ে বাড়ির পথ ধরলাম। চারপাশে অন্ধকার দেখছিলাম। কাঁদছিলাম, কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয়নি আমার কান্নার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে ভালবাসার অকাল মৃত্যু। সত্যি বলতে কি, ওর যদি বিয়ে হয়ে যেত তাহলেও বোধহয় আমি কাঁদতাম না! যাকে ভালবাসি সে সুখে থাকবে এটাই তো সবাই চাই? কিন্তু চিরতরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে মুন্নি এটা কিছুতেই মানতে পারছিলাম না।
কিছুদিন পর এল পয়লা বৈশাখ। সবাই আনন্দে মাতলেও আমার জীবন থেকে উৎসব হারিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার ছিল পয়লা বৈশাখ। মুন্নির চলে যাওয়ার মাসে আমি কি উৎসব পালন করতে পারি? না, ১১ বছর হলো আমার জীবন থেকে মুন্নির হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হারিয়ে গেছে পয়লা বৈশাখও! যেখানেই থাক, ভাল থেকে মুন্নি।
২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৪০
ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেছেন: অত্যন্ত মর্মান্তিক কাহিনী। সহানুভূতি জানানোর ভাষা নেই।।
৩| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:৩৮
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: খুব কষ্ট পেলাম।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৩
বিজন রয় বলেছেন: দুঃখজনক।