নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উত্তম কুমার ঘোষ

নতুন ব্লগার

উত্তম কুমার ঘোষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশে দেশে ভ্রমি তব দূঃখগান গাহিয়ে

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:২১

যদি কারো পড়তে সময় না থাকে, না পড়তে পারেন, কিংবা কম থাকলে শেষের দুটি পয়েন্ট (ঋ, এ) দেখতে পারেন। সেটাই মূল অংশ, বাকিটুকু ডিসক্লেইমার অংশ। চাইলে এড়িয়ে যেতে পারেন।

(অ)
বেশ কিছুদিন আগের কথা, টাইমস অব ইন্ডিয়াতে পড়লাম, ইন্ডিয়ার একটা নামকরা ইউনিভার্সিটির কিছু ছেলেরা সেসময়ের এক ইন্ডিয়া-পাকিস্তান খেলার পর ইন্ডিয়া হেরে যাবার পর (বিশ্বকাপের খেলা না ) বাইরে বেরিয়ে এসে খুব হইচই করে পাকিস্তানের পক্ষে চিয়ার-আপ করেছে।
ইউনিভার্সিটি সেইসব ছাত্রদেরকে এই anti-national act এর জন্য বহিঃস্কার করেছে।
পরিহাসের ব্যাপার, এরা ছিলো Prime Minister’s Special Scholarship পাওয়া ছাত্র। ভাবা যায়?

(আ)
আমি অবাক বনে যাই, এইসব মানুষ দুই দেশেই আছে।
ভারতের মত বাংলাদেশের দূর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু জারজ সন্তান জন্ম দিয়েছে বাংলা মা। এদেরকে আমরা বলি "জামাত-শিবির রাজাকার"
আমি যখন এদের বা এদের মত কাউকে দেখি, তখন আমার খুব ঘৃণা হয়। বুক ভরা ঘৃণা। এমন রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পরও এরা কিকরে বাংলাদেশে থেকে বুক ফুলিয়ে পাকিস্তান করতে পারে!

(ই)
পাকিস্তানী আর্মিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো যত পারা যায়, বাঙালী নারীদের ধর্ষণ করতে, যাতে পরবর্তীতে জন্মানো গর্ভের সন্তান সেই ঔরসদাতার পন্থি হয়।
আমার ধারণা, ওদের ধারণা ভুল ছিলো না, তার প্রমাণ রাজাকার বাদেও আরো অনেক তরুণ ছেলেমেয়ে যারা জামাত শিবির করে কিংবা পাকিস্তানের গুণগ্রাহী, আর পাকিস্তানের কথা বললেই একই পাল্লায় ভারতকেও তুলে আনে।
এদের জন্ম নিয়ে আমার সন্দেহই করে, এর চেয়ে খারাপভাবে আমি আর লিখতে পারবো না এই কাগজে।

(ঈ)
বাংলাদেশের জন্য একটা আশীর্বাদ হলো, সেইসব কুখ্যাত রাজাকারদের বিচার হতে শুরু করেছে, যাদের কাজগুলো এতই অমানবিক ছিলো যে বাংলার হিন্দু মুসলমান মা বোনদের খড়ের গাদায় লুকিয়ে পর্যন্ত আত্মরক্ষার ব্যার্থ চেষ্টা করতে হয়েছিলো, রত্নগর্ভা বাংলার সোনার ছেলেদের, বুদ্ধিজীবীদেরও নৃশংসভাবে হত্যা করতে ছাড়ে নাই।
আর যথারীতি বাংলার সেই রাজাকারের রক্তবীজ সন্তানেরা দেশটাকে কলঙ্কমুক্ত হতে দেখে আবারো বিভিন্নভাবে দূষণ ছড়াতে শুরু করেছে।

(উ)
আমার দেখা যা কিছু ভাল, তার একটা বিশাল অংশ জুড়ে আছে যে প্রতিষ্ঠান, সেটা বাংলাদেশের সেরা ইঞ্জিনীয়ারিং ইউনিভার্সিটি।
সেখানকার কিছু শ্রদ্ধেয় শিক্ষক এবং দাদা দিদিদের আমি অনেক আগে থেকেই চিনতাম।
সেখানে চান্স পাওয়া তো দূরের কথা, ভর্তি পরীক্ষা দেবারই সৌভাগ্য আমার হয় নাই, কিন্তু তারপরও তার আগে ও পরে সেখানকার অনেক ভাল মানুষের সান্নিধ্য আমি পেয়েছি, যেটা আমি কোনোদিনও ভুলবো না।
চান্স না পাওয়ার কারণে সেটা আমার কাছে পাকাপাকিভাবেই স্বপ্নের ইউনিভার্সিটি হয়ে গেছে,
তবে সেখানকার সবাই আমাকে দূরের কেউ মনে করলেও আমি তাদের "মহাভারতের একলব্য"র মত আমার রোল মডেলের হিসেবে ধারণ করেছি।
আমার ধারণা, যা কিছু ভালো, তার গোড়া খুঁজলে বেশিরভাগ তাঁরাই বেরিয়ে আসবে।

(ঊ)
উল্টোটা হওয়াও যে একেবারে অসম্ভব কিছু না, সেটা জানতে পারলাম এই দুই দিনের মধ্যেই।
বাংলাদেশের সেরা ইউনিভার্সিটি-টিও সেই সব পরজীবদের থেকে মুক্ত হতে পারে নাই।
রাজাকারের বিচার নিয়ে, আর বাঙালীর প্রাণের স্লোগান "জয় বাংলা" নিয়ে আপত্তিকর ভাবে মন্তব্য করেছেন সেখানকারই এক "জারজ গোছের" শিক্ষক (শিক্ষক মানেই যে ফেরেশতা না, তার খাঁটি প্রমাণ হলো অধ্যাপক গোলাম আজম রাজাকার)।
যতদূর জেনেছি, "জয় বাংলা"র বিপরীতে তিনি বলেছেন "জয় মা কালী, জয় ইন্ডিয়া"।
তার প্রতিবাদে যখন অনেকে সোচ্চার হতে শুরু করেন(সম্ভবত এঁরাই আমার রোল মডেল), তখন সেই শিক্ষকের আসল রূপ বেরিয়ে আসে ধীরে ধীরে- যে সেও বাঙালীর কলঙ্ক-প্রজন্মের এক অংশ, বাংলার কুলাঙ্গার সন্তান (সকল শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি)।
আসলে এইসব কুলাঙ্গার সন্তানদের চিনতে রাজনীতি বিশারদ হওয়া লাগে না, রকেট সায়েন্স পড়াও লাগে না, খুব ছোট খাট ব্যাপারগুলোর যেকোন একটি দিয়ে ফিল্টার করলেই হয়।
"জয় বাংলা"র মত শক্তিশালী শব্দটি হলো এমন এক কার্যকরী ফিল্টার।
এই কুলাঙ্গার সন্তানেরা যতই মেধাবী হউক, তার দেশ ও জাতীর কলঙ্ক। আমার তো মনে হয় এদের যথোচিৎ জায়গা হলো পাকিস্তান।

(ঋ)
আরো লজ্জার কথা, কুকুর কে কামুড় দিয়ে নিজেরও কুকুরত্ব প্রমাণ করেছে সেই সেরা বিদ্যাপীঠের ছাত্রলীগ শাখা।
আমি যে এক কালে গর্ব করে বলতাম, যে যারা চাপাতির কোপ দেয়, কলমের বদলে কলমের প্রতিবাদের বদলে আক্রমণ করে, তারা অশিক্ষিত, মূর্খ- তা আর বলতে পারবো না।
আমার মত অনেকেরই সেই গর্বভরা কথা কে ধূলিস্যাৎ করে সেই শিক্ষককে পরদিন মারধোর করেছে ছাত্রলীগের ছেলেরা বলে জানলাম পত্রিকায়।
তারা তো শিক্ষিত ছেলে, লেখার জন্য ব্লগ না হলেও কমপক্ষে ফেসবুক আছে, ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের জায়গা আছে, তারা কি পারতো না লিখে এর শক্ত প্রতিবাদ করতে?
তারা কি একজোট হয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে যেতে পারত না ব্যানার নিয়ে- "কলঙ্কমুক্ত হতে চাই, জামাত-শিবির রাজাকার মুক্ত হতে চাই" বলে?
সবাই যদি একসাথে প্রতিবাদ করে, তাহলে কুলাঙ্গার সন্তানদের কোণঠাসা করে ফেলাটা কি কঠিন কাজ এই বাংলাদেশে?
কেন তারা এই ঘৃণ্য কাজ টা করতে গেলো? লেখার বা মত প্রকাশের বদলে শারীরিক আক্রমণের চেয়ে অসভ্য আর বর্বর কাজ কি হতে পারে?
আমার আজ খুব লজ্জা হচ্ছে এদের জন্য, এদের কারণেই পরোক্ষভাবে আংশিকভাবে হলেও আমার লেখাটি একটা জামাতির ফেভারে কিছুটা হলেও বুঝি চলে গেলো! এমন লজ্জার কথা কি আমি আগে স্বপ্নেও কখনো ভেবেছিলাম?
আমি সেই অপরাধী ছাত্রদের বিচার চাই, শাস্তি চাই। আমি আমার দেশের নাগরিক হয়ে লজ্জিত, এই লজ্জা দূরীত করতে চাই। জানি না, তা হবে কি না। মত প্রকাশের জন্য আর কত লোকেদের মার খাওয়ার দূর্ভাগ্য এই জাতিকে বহণ করতে হবে, তা কি কেউ বলতে পারবে?

(এ)
কথা এখানেই শেষ না, আসলে জামাতির ফেভারে লিখি নাই-
মত প্রকাশের জন্য শারীরিক আক্রমণ যেমন ঘৃণ্য কাজ, তেমনি দেশের অস্তিত্বতের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ও উস্কানিমূলক আচরণও জঘন্য কাজ।
ছাত্রদের অপরাধের কারণে সেই শিক্ষকের কাজ টা জায়েজ হয়ে যেতে পারে না। বাঙালীর প্রাণের স্লোগান আর মুক্তিযুদ্ধকে যারা অস্বীকৃতি জানায়, তাদের বাঙালী ক্ষমা করতে পারে না। তাহলে সেটা তাদেরই অস্তিত্বের সঙ্কটের কারণ হবে- ইতিহাস তাই বলে।
অপরাধীর যোগ্য সাজা হোক, নয়তো সে অপরাধ করতে আরো উৎসাহিত হবে।
আমাদের পাশের দেশই "দেশ ও জাতি"র প্রশ্নে কোনো ছাড় দেয় না অপরাধী যেই হোক- সবার প্রথমেই সেটা বলেছি। আমরা কি আমাদের এই বড় দুঃখী, মমতাভরা দেশটাকে নিয়ে তার কিছুটা হলেও করতে পারি না?
আমরা কি পারি না দেশ থেকে জামাত শিবির রাজাকার মুক্ত করতে? আমাদের এ দেশ কে নিয়ে অনেক স্বপ্ন। অনেক!
মন খুব কাঁদে যখন দেশের দূর্দশাগুলো নির্মমভাবে দেখা দেয়। আমি যেন দেশে দেশে ভ্রমি বাংলা মায়ের দূঃখগাঁথা বুকে নিয়ে।

"তোমারি দুঃখে কাঁদিব মাতা, তোমারি দুঃখে কাঁদাব ।
তোমারি তরে রেখেছি প্রাণ, তোমারি তরে ত্যজিব ।
সকল দুঃখ সহিব সুখে
তোমারি মুখ চাহিয়ে ॥
দেশে দেশে ভ্রমি তব দুখ গান গাহিয়ে
নগরে প্রান্তরে বনে বনে । অশ্রু ঝরে দু নয়নে,
পাষাণ হৃদয় কাঁদে সে কাহিনী শুনিয়ে ।"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.