![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(১)
রবীন্দ্রনাথকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিলো, "আপনি হিন্দু হয়ে মসুলমানের মত পোষাক পড়েন কেনো?"
উত্তরে কবিগুরু বললেন যে, বাঙালীরা তো মসুলমানদের প্রায় সবই গ্রহণ করেছে, খাবার, ভাষার শব্দ ইত্যাদি, তাহলে বাইরের পোশাক টাই বা বাকি থাকবে কেনো?
এমনই অসাম্প্রদায়ীক মনের মানুষ ছিলেন তিনি। আর যতদিন বেঁচে ছিলেন বাঙালীর একতার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন ।
বঙ্গভঙ্গে কেঁদে উঠেছিলো তাঁর প্রাণ। প্রতিবাদ করে অখণ্ডবঙ্গ রক্ষার জন্য দলে দলে হিন্দু মসুলমান একসাথে করে গঙাস্নান রাখী বাঁধার আয়োজন করেছিলেন কলকাতার গঙ্গার ঘাটে।
রচনা করলেন অমর গান "আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি'।
সেসময় রচিত আরো কিছু অসাধারণ গাণের মধ্যে একটি ছিল, "বাংলার মাটি বাংলার জল "বাংলার বায়ু বাংলার জল", গানটির শেষ ক'টা চরণ কি যে আবেগময়, ভালবাসাময়-
"
বাঙালীর মন বাঙালীর প্রাণ
বাঙালীর ঘরে যত ভাইবোন
এক হউক এক হউক এক হউক
হে ভগবান
"
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বকবি, বিশ্বনন্দিত কবি। বাঙালীর ভালবাসার কবি। বাঙলাকে তিনি ভলবেসেছেন আর বাঙালীরা ভালবেসেছে তাঁকে, বিশ্ব করেছে শ্রদ্ধা।
(২)
পাড়ায় নাড়ুকাকার চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছি। দোকানটা সবসময় জমজমাট থাকে। সেসময় ফাঁকা ছিলো। বেঞ্চে বসে চা খেতে খেতে মোবাইলে নজরুল সঙ্গীত প্লে করে শুনছিলাম। এমন সময় আরেক লোক এলেন, বসলেন আমার পাশে।
-কি গান শোনেন ভাই?
-এইতো নজরুল সঙ্গীত, বললাম আমি।
-অহ, আপনাকে পাওয়া গেলো, আপনিও নজরুলসঙ্গীত শোনেন। আজকালকার ছেলেমেয়েরা তো এসব গান শোনেই না!
এসব বলতে বলতে অমনি আবেগে উনার মনের ভেতরের সব কথা বলা শুরু করলেন। আমার গালে লম্বা লম্বা নূরানী দাঁড়ি দেখে তো গল্প পুরো তুঙ্গে উঠিয়ে দিলেন। আমি আর কাকা চুপচাপ শুনি আর মজা নিচ্ছি।
তো সেই জ্ঞানী লোকটার একটা এপিক ডায়ালগ বলি-
"আসলে নোবেল প্রাইজটা কিন্তু নজরুলের পাওয়ার কথা ছিলো, রবীন্দ্রনাথ সেইটা চুরি করসে "
আমি আর চায়ের দোকানের কাকা দুজনেই বেওকুফ! আর কি কি বলেছিলেন সবাই আন্দাজ করে নিয়েন।
(৩)
একবার নটরডেম কলেজের দিকে গিয়েছিলাম। দুই নটরডেমিয়ান বন্ধু সদ্য বুয়েটে চান্স পেয়েছে, কিন্তু হলে সিট পায়নি তখনো। ওদের মেস এ রাতে ছিলাম। ওদেরই আরেক জুনিয়র এলো গল্প করতে, সেও নটরডেমিয়ান। সেই তিনজনের সাথে ভাবলাম খুব ভালো গল্প হবে, উল্টো তাদের গল্প শুনে আবারো বেওকুফ হলাম।
তারা সমস্বরে যা যা বললেন তার সারমর্ম হলো,
"রবীন্দ্রনাথের লেখা "আমার সোনার বাংলা" গানটি জাতীয় সংগীত করা উচিত হয় নাই। এখন সময় এসছে সেটা চেঞ্জ করার। নজরুল রবীন্দ্রনাথের চেয়ে অনেক বড় মাপের কবি ছিলো। রবীন্দ্রনাথ ছিলো বৃটিশদের দালাল। জয় বাংলা-টা আসলে ইন্ডিয়ার স্লোগান(জানতাম এইটা বলবেই!)। ইত্যাদি ইত্যাদি। নজরুলের নোবেল পাবার কথাটা ইনারাও বাদ দেন নাই। আরো যে কত কিছু বললেন, শোনানোর প্রয়োজন হবে না। যারা বোঝেন তারা ঠিকই ধরে নিতে পারবেন কোন কোন কথা এরা বলতে পারে। আমার এখন একদম বুঝতে অসুবিধা হয় না।
(৪)
একদিন আমাকে এক আঙ্কেল তার মোবাইল থেকে আমাকে ওয়াজ প্লে করে শুনাচ্ছিলেন। পাশের আরেক আঙ্কেল উনাকে জানালেন যে আমি হিন্দু। সেটা শুনে প্রথম জন রসিকতা করে বললেন যে, আরে ব্যাপার না, কাকু এইটা শুনলে মসুলমান হয়ে যাবে!
আমার অবশ্য কখনো কারো কথা শুনতে কখনো অসুবিধা নাই। আমার যদি সময় থাকে, তো সবার কথাই মন দিয়ে শুনি। সুতরাং আমি ওয়াজ শুনতে শুরু করলাম।
জীবনে এদ্দিনে কম ওয়াজ শুনি নাই, এমনকি সাইদির "মেশিনের ওয়াজ" শুনেও অনেক সওয়াব কামিয়েছি। সবগুলোতে কি যে "মধুর মধুর অসাম্প্রদায়ীক বাণী" ছিলো, তা কি বলে যে বোঝাবো!
সেদিনেরটার একটা ডায়ালগ ছিলো এপিক, সেটা হলো, "এই বাংলার মাটি হলো ইখতিয়ার উদ্দীন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির, রবীন্দ্রনাথের নয়!" আর সাথে সাথে শ্রোতারা চিৎকার
করে বললো, "সুবহানআল্লাহ!"
আর আমি যথারীতি আবারো নতুন করে বেওকুফ বনে গেলাম।
(৫)
যেই দেশে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অশিক্ষিত থেকে শিক্ষিত, মাদ্রাসা থেকে বুয়েটের মত জায়গার শিক্ষক(জয় বাংলার ফিল্টার থেকে) পর্যন্ত এইসব ধারণা পোষণ করে, সেই দেশে
রবীন্দ্রনাথের নামে কোনো ইউনিভার্সিটি নাই- ব্যাপারটা খুব একটা অবাক হবার বিষয় না।
রবীন্দ্রনাথ নিজে কখনো স্কুল কলেজে পড়েননি, ইউনিভার্সিটি তো দূরের কথা। আর সেই রবীন্দ্রনাথ কি জিনিস, সেটা জানতেই মানুষকে এখন ইউনিভার্সিটিতে পড়তে হয়। তাঁকে
গবেষণা করে মানুষ এখন রবীন্দ্রগবেষক হয়।
তিনি নিজেই গড়েছেন দুটো বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতায় রবীন্দ্রভারতী আর বোলপুরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। সেখান থেকে বেরিয়েছেন অনেক নামী শিল্পী, জ্ঞানীগুণি জন।
রবীন্দ্রনাথকে সবাই একাধারে কবি সাহিত্যিক অভিনেতা চিত্রশিল্পী অনেক রূপে চেনেন। আরেকটা নতুন রূপে পেয়েছিলাম ইন্ডিয়ান হাই কমিশন থেকে পাওয়া ভারত বিচিত্রা
ম্যাগাজিনের কিছু সংখ্যায় তাঁর প্রবন্ধ পড়ে। তাঁর লেখা মহাবিশ্ব পড়ে আমার মনে হলো তিনি একজন খাঁটি বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানের কঠিন বিষয় গুলো এত সহজ করে রসিয়ে রসিয়ে লিখার
ক্ষমতা আজ পর্যন্তও কারো হবে না, হলফ করে বলতে পারি।
তাঁকে কোনো দিক দিয়ে বিচার করার সাধ্য আমার নেই। অথচ আজও লোকে যেসব বলে, শুনলে অবাক লাগে।
রবীন্দ্র-নজরুলের কখনো বিভেদ ছিল না, ছিলো পরম সখ্যতা। নজরুল ছিলেন কবিগুরুর স্নেহধন্য কবি, অথচ লোকেরাই বানাতে শুরু করেছে বিদ্বেষ। তাঁরা যদি বেঁচে থাকতেন আর এসব শুনতেন, বোধহয় আত্মহত্যা করতেন!
(৬)
আমি রবীন্দ্রগবেষক নই, শুধু একজন সামান্য রবীন্দ্রানুরাগী। একটু আধটু তার লেখা পড়েছি, আর রবীন্দ্রসঙ্গীত বেশ পছন্দ করি।
শেখ হাসিনা সরকার যখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে আওয়ামিলিগ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবেন, তখন বড়় ভাল লেগেছিলো।
খুব ক্ষোভ আর ঘৃণা হয়, যখন লক্ষ্য করি এটা নিয়ে কিছু লোক বলবার চেষ্টা করে যে হিন্দুর নামে ইউনিভার্সিটি হবে বলে নাকি সবাই দোজখে যাবে! এসব লিখে লিফলেট বিতরণও করে।
বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিলো অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে, বড় দুঃখের বিষয়, সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে যেতে পারেনি এখনো। পারেনি এইসব অজাতদের জ্বালায়।
বহির্বিশ্বের লোকেরা যে কজনের নামে বাংলাদেশকে চেনে, তাঁর মধ্যে বিশেষ একজন হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
আমার মত হয়তো অনেকেই বাইরে বিদেশীদের মুখে এই কথাটা শোনে থাকেন,"Oh, you are from Bangladesh, country of Tagore!'
আমরা নিজেরা কি পারবো আমরা নিজের দেশকে কবিগুরুর দেশ বলে চিনতে?
২| ০৩ রা মে, ২০১৫ সকাল ৮:৪৩
কে এম সুমন বলেছেন: জি ভাই রবিন্দ্রনাথ বাংলাদেশকে (পূর্ব বঙ্গ) অনেক ভালোবাসতেন(!) তাহলে জীবনে দুটি বিশ্ব বিদ্যালয় গড়েছিলেন এবং দুটিই পশ্চিমবঙ্গে কেন?? একটিতো ঢাকা বা পুর্ববঙ্গের যেকোন অঞ্চলে করতে পারতেন? বরং যতদুর জানি এবং শুনেছি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও বিরুধীতা করেছিলেন (তথ্য-প্রমান দিতে পারব তবে সময় সাপেক্ষ) এবং তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু নেতারা এও বলেছিলেন যে পূর্ববঙ্গের চাষা-ভূষারা উচ্চ শিক্ষিত হয়ে কি করবে? এসবের কারন কি ছিল?? আর রবীন্দ্রনাথ কতটা সাম্প্রদায়িক তা তার অনেক গুলো লেখা থেকেই বুঝা যায়। যার মধ্যে 'শিবাজি' নামক কবিতা একটি।
তিনি বঙ্গভঙ্গ চাননি বাঙ্গলা ও বাঙ্গালীকে ভালোবাসার জন্য নয়, শোষন করার জন্য। তিনি চাননি মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব বঙ্গ আলাদা হয়ে উন্নতি করুক। সেদিন যদি বঙ্গভঙ্গ বহাল থাকত তাহলে বাঙ্গালীদেরকে ১৯৪৭-১৯৭১ পর্যন্ত নরপশু পাকহানাদারদের নিকট এতটা নির্যাতিত ও শোষিত হতে হতো না।
৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:১৬
দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: সুমন এই সব কি লিখলে ? রবি ঠাকুরের জীবনি পড়েছি ,তুমি যা লিখেছ আমি তা পায়নি ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ২:২৯
অযুক্তিবাদী বলেছেন: মুখে অসাম্প্রদায়িক আর কাজে অসাম্প্রদায়িকতার পার্থক্য অনেক। কথার আর কাজের মিল পাওয়া যায় কয়জনের ? বলা সোজা হলেও করাটা বেশ কঠিন।যেদিন কথা আর কাজ এক হবে সেদিন কবিতার সোনার বাংলা হবে আমাদের বাংলাদেশ। সাম্প্রদায়িকতার জায়গা হবে ডাস্টবিন।
লেখাটা অনেক সুন্দর হইছে।