নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃত্তে বন্দী

বৃত্তে বন্দী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়া ঐশী কিংবা অরন্য অথবা শুধুই আমাদের গল্প

১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৩০

অরন্য হাসল ।তার হাসিটা খুব সুন্দর । সে যখন হাসে তার সারা শরীর হাসে। সবচেয়ে মোহনীয় ব্যাপার হচ্ছে তার চোখও হাসে। নিঃসঙ্গতার রঙ নীল বলেই হয়তো তার চোখের হাসির রঙটাও নীল ।সে নীল সর্বগ্রাসী রকম মায়াবী । সূর্য উঠার আগে বা ডুবে যাওয়ার সময় যেমন আকাশ লালচে হয়ে থাকে অমনি অরন্য হাসার আগে আর হাসি শেষ হয়ে গেলেও অনেকক্ষণ তার চোখে নীলচে আলো আভা ছড়াতে থাকে ।



পাখিটাও হাসল ।অরন্যের পোষা ময়না পাখি । তার একমাত্র বন্ধু । অরন্য এতক্ষণ ধরে পাখিটার দিকে তাকিয়ে হেসে যাচ্ছে। পাখিটাও তাকে ভেঙচি কেটে হাসছে। অরন্যের মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা হয় পাখিটাকে মুক্ত নীলে ছেড়ে দিতে। কিন্তু যে মানুষের এক জীবনে একটা পাখি বন্ধু তার পক্ষে তাকে ছেড়ে দেয়া খুব সহজ কাজ না । অরন্য খুব ভালো ছবি আঁকে । তার যখনই ময়নাটাকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছা হয় তখন সে ছবি আঁকে । সেসব ছবিতে পাখিরা মুক্ত নীল আকাশে ওড়ে । কারো চোখের নীলে বন্দী হয়ে থাকে না। ছবি আঁকতে আঁকতে অরন্যের চোখ ভিজে ওঠে ।কেন ভিজে উঠে সে জানে না। সেই জল সে জলরঙ গুলাতে ব্যবহার করে! চোখের জলে রঙ গুলালে আলাদা একটা রঙ হয়, সেই রঙ মাখালে ছবিগুলো ও নিঃসঙ্গ হয় ।মনে হয় ছবিটাকে একা রেখে গেলেই ছবিটা চোখে নীল তোয়ালে জড়িয়ে কাঁদবে!



অরন্যের বাবা-মার কথা ভীষণ রকম মনে পড়ছে ।গত তিনদিন অরন্যের বাবা মা তার খোঁজ নিচ্ছেন না। সে সকালে কি খাবে,রাতে কয়টায় বাড়ি ফিরবে তা জানতে চাচ্ছেন না । বাবার ফোনটা পাশেই মেঝেতে পড়ে ছিল ।সে তার বাবার ফোন থেকে নিজের ফোনে একটা রিং দিল। তারপর নিজের ফোনে আবার নিজেই রিসিভ করল । তারপর বাবার মত করে বলল,

-অরন্য বাবা,তুমি কোথায়?

আবার নিজেই নিজের ফোন থেকে উত্তর দিল, আমি গাড়িতে ।

-বাবা, রাত তো অনেক হল। বাসায় আসবা কখন?

উফফ... বাবা ,আমি মাকে বলে আসছি আজকে আমাদের ফ্রেন্ডদের সারারাত পার্টি ।বাসায় আসবো না। আমি তোমার সাথে পরে কথা বলব ।

তারপর বাবাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিল! অরন্যের মনে হয় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সে বারবার একই দৃশ্যে অভিনয় করতে লাগল । দুইকানে দুটি ফোন লাগিয়ে একই সাথে বাবা এবং ছেলে!

অরন্যর ফোনে চার্জ ও নেই। ফোনটা বন্ধ হয়ে যাবে । বিপ বিপ করে সিগন্যাল দিচ্ছে । তিনদিন ধরে সে চারজার খুঁজে পাচ্ছে না । মাও নেই তিন দিন ধরে। মাকে ছাড়া সে কখনোই কোন জিনিস খুঁজে পায় না। ছোট্ট ছোট্ট জিনিস মাকে ছাড়া হয় না। রাখার বেলায় রাখে সে। অথচ দরকার পড়লেই মা! আম্মা এটা কই? আম্মা ওটা কই? মাও যেমন! কিভাবে জানি জেনে ফেলে কই রাখছে! আর স্নেহের হাসি মুখে ঝুলিয়ে হাজির হন ।



প্রত্যেক মানুষের মনের ভেতরেই একটা অরন্য থাকে।অরন্যের মনের ভেতরেও একটা অরন্য আছে। সে অরন্যের সবগুলা গাছের রঙ নীল, পাতার রঙ নীল । সব অরন্যেই যেমন পশু থাকে এ অরন্যেও পশু আছে। একটা পশু সেই সব পশুদের রাজা । সে পশুটাকে অরন্য চিনত না। তিনদিন আগে চিনেছে যখন অরন্য তার বাবা মার চায়ের কাপে ঘুমের অশুধ মিশিয়ে দিয়েছিল। সে নিজেই সেই পশু । ঘটনা তেমন কিছু ছিল না । হঠাত করে বনে আগুন লাগল । পশুগুলা সব বাঁচতে বাইরে এল । সবার আগে রাজা বের হয় যেমন তেমনি ভাবেই রাজপশুটা তার বিশাল আকৃতি , নির্মমতা, ধ্বংসলীলা সমেত বের হয়ে এল।তারপর চোখে আগুনের ধুঁয়া লেগে জল গড়াতে লাগল ।সে জলে আগুন নিভে গেল।পশুগুলো যারযার মত বনে ঢুকে গেল । রাজপশু নিবিড় অরন্যে তার ছোট্ট দুটি বাচ্চাকে শিকারের কলাকৌশল দেখিয়ে গর্বিত ভঙ্গিমায় নিবিড় অরন্যে লুকাল ।



তখন রাত ১১ টার মত বাজে । অরন্য তার বাবা মার লাশ টেনে হেঁচড়ে বাবা মার রুমে নিয়ে গেল । সেখানে নতুন একটা ময়না পাখি এনে রাখা । তাকে দেখেই ময়না পাখিটা “শুভ জন্মদিন, অরন্য , শুভ জন্মদিন, অরন্য’ করতে লাগল। আজকে রাত ১২ টার সময়ই তার জন্মদিন ছিল ।বাবা মা নিশ্চয়ই তার জন্মদিনের উপহার হিসেবে ময়না পাখিটাকে এতদিন ধরে কথা শিখিয়েছেন তাকে আজ রাতে তাকে চমকে দেবেন বলে। এক বারিতেই থাকে অথচ অরন্য টের ও পায়নি!



অরন্য হঠাত হেসে উঠল । সেই নীল হাসি । তার যেদিন জন্ম হয়েছিল সেদিন তার বাবাও হেসেছিলেন ।দুজনের হাসির মাঝখানে অবিস্বাস্যভাবে দারুন মিল ।অরন্য জানে তার আর তার বাবার হাসির মাঝে অদ্ভুত মিল । ঈশ্বর এত অদ্ভুত মিল অমিলের খেলা খেলেন তা কে জানে? কিংবা হয়তো এই ময়না পাখিটাই জানে ।অরন্য কৌতূহলী দৃষ্টিতে ময়না পাখিটার চোখে তাকিয়ে আছে। পাখিটা কি বলবে কেন এমন হল?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.