![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
নাজমুন নিজের মুখ থেকেই মাছের গন্ধ পাচ্ছে! বাইং মাছ নামক একটা অদ্ভুত মাছ আজকে তাদের বাসায় রান্না করা হয়েছে। মাছটা মনিরের খুব প্রিয়। সাপের মত একটা মাছ মানুষের কি করে প্রিয় হয়! নাজমুন যতবার তাকায় মনে হয় ডিসকভারি চ্যানেলের লোকটার মত সাপ খাচ্ছে । একটা বেয়ারা কাটা আবার মাড়িতে বিঁধে গেছে । সে ইতিমধ্যে তিনবার দাত ব্রাশ করে ফেলেছে । কিছুতেই বের হচ্ছে না। খুব অস্বস্তিকর ।
জাহানারা বেগম খাটে বসে টিভি সিরিয়াল দেখছিলেন। মেয়ের ভাবসাবে তিনি খুব ই বিরিক্ত। আজকালকার মেয়েগুলা যা ঢঙী হচ্ছে! তিনি টিভি সিরিয়াল দেখবেন নাকি বারান্দায় মেয়ের নাটক দেখবেন বুঝতে পারছেন না । তার কেন জানি মনে হচ্ছে আজকে রাতে মেয়ে বাসা থেকে পালাবে! বাসা থেকে পালানোর আগেই মেয়েরা এমন অস্থির থাকে। কোন অকর্মার কাছে মন দিয়ে বসে আছে কে জানে ।
শাহরিয়ার সাহেব বিছানায় আধশোয়া হয়ে খবরের কাগজের পাতা উলতছিলেন। জাহানারা বেগম দ্রুতগতিতে প্রবেশ করতে গিয়ে সিগারেটের ছাই সমেত কাত করে ভাতের খোড়া ফেলে দিলেন ।
-কি ব্যাপার? এত হন্ত দন্ত হয়ে ঢুকছ কেন?
বাড়ির কোন খবর তো তুমি রাখো না।সব খবর রাখতে হয় সেই আমাকে। আমার কি আটটা চোখ?
-হলটা কি বলবা তো??
তোমার মেয়ের কাণ্ডটা দেখছ?
-কি করেছে সে?
সে ইতিমধ্যে তিনবার দাঁত ব্রাশ করে ফেলেছে!
-তিনবার দাঁত ব্রাশ করেছে তো কি হয়েছে ?
কি হয়েছে মানে? দাঁত ব্রাশ করলেই কি দাঁত দিয়ে মুক্ত ঝরবে?? আমার জানো কি মনে হয়? আমার মনে হয় ও আজকে কোন অকর্মা ছেলেকে চুমু খেয়ে বাসায় এসেছে। তাই বারবার দাঁত ব্রাশ করছে। যাতে আমি না বুঝতে পারি! মায়ের চোখকে কি আর ফাঁকি দেয়া যায়?!
আহ চুপ করও তো । মেয়েকে পাঠিয়ে দাও ।ওর সাথে আমার কথা আছে ।
-মা কি হয়েছে রে? তুই নাকি বারবার দাঁত ব্রাশ করছিস?
কেন? ব্রাশ করা যাবে না?
-করা যাবে না কেন? তোর মা বলছিল তোর দাঁতে আবার কোন সমস্যা হল কিনা!
বাবা,মা মোটেও একথা বলেনি ।মা কি বলেছে আমি জানি ।তুমি অযথা মাকে এত শুদ্ধ সাজাবা নাতো ।অসহ্য লাগে।
তিনি মেয়ের মাথায় হাত রেখে সামান্য হাসলেন। তারপর বললেন, একটা ছেলে সকালে বারবার ফোন দিয়ে তোকে চাচ্ছিল ।আমার মনে ছিল না। দেখত কে।
-এখন দেখতে ইচ্ছে করছে না বাবা। পরে দেখবো ।
২
-হ্যালো,নাজু?
নাজমুনের মন তখন ভীষণ খারাপ। সে আয়োজন করে কাঁদতে বসেছে ।মুনির তাকে ফোন দিয়েছিল কিন্তু তখন মায়ের কথা শুনে মেজাজ এত খারাপ হয়েছিল যে দেখতে ইচ্ছে করেনি কে ফোন দিয়েছে।তাছাড়া আজকাল আজেবাজে ছোকরারা বাবার ফোনে তাকে বড্ড বেশি খোঁজাখুঁজি করে!
হুম...মনির কেমন আছো??
-আরে ঢাকা শহরের গরম খবর শুনছ?
নাতো! কি গরম খবর?
ঢাকার তাপমাত্রা আজকে ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড! ইতিহাসে রেকর্ড অতিক্রম করছে! এটা গরম খবর না?
নাজমুন ফিক করে হেসে দিল!
-শোন, এই গরমের মধ্যে অযথাই কান্নাকাটি করে লাভ কি? তোমার চোখের জল বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে ।
নাজমুন বিস্ময় গোপন করে বলল, আমি মোটেই কাদছি না, কি আশচরয কাঁদতে যাব কেন? উলটা পাল্টা কথা বলবা না!
-তুমি অবশ্যই কাঁদছ ।
-হ্যাঁ আমি কাঁদছি! কি করে বুঝলে?
-আমি যে কানে ফোন ধরে আছি সেই কানটা ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগতেছে তো তাই বুঝলাম!
নাজমুন আবার ফিক করে হেসে দিল। তুমি এমন কেন?
-তোমার চোখের কাজল নষ্ট হয়ে তোমাকে অপূর্ব রূপবতী লাগছে। এই অবস্থায় তোমাকে যেই দেখবে সে তোমার প্রেমে পড়ে যাবে। তুমি ঘরে দরজা জানালা বন্ধ করে বসে থাকো ।
মনির শোন, আজকে আমাদের বাসায় তোমার প্রিয় মাছ রান্না হয়েছে। মা করেছেন । পেয়জাএর ঝোল দিয়ে । তুমি যেভাবে পছন্দ কর। তুমি কি আমাদের এখানে আসবা?? আমি তোমার জন্য একটা টিফিন বক্সে একটু ত্রকারি ফ্রিজে রেখে দিসি । মেসে থাক,কি খাও না খাও ।
-নাজ, বাইং আমার প্রিয় হল কিভাবে জানো??
হুম...আমাকে বলছিলা। এটা তোমার বাবার সবচেয়ে প্রিয় মাছ। তোমার বাবার অনেক কিছুই তোমার প্রিয়। তারমধ্যে এটা একটু বেশি ।
- বাবা একটু আগে মারা গেছেন ।বাইয়ং এখন আর আমার প্রিয় মাছ না । আমার খুব অস্থির লাগছিল । আমার মানসিক স্থিরতা নেই । খুব কাঁদতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু কাঁদতে পারছি না। প্রকৃতি যখন বেশি অস্থির হয় তারপরেই বৃষ্টি হতে হয় ।এটাই নিয়ম। আমি বুঝতে পারছিলাম আমার কোনএকজন প্রিয় মানুষ আমার হয়ে কাদছে। আর সেই মানুষটা তুমি । তুমি প্লিজ কান্না থামিয়ো না! আমার এখনো খুব অস্থির লাগছে।
নাজমুন আকাশের দিকে তাকাল ।আকাশে একফোঁটা মেঘ নেই । ঝকঝকে রোদ। কিন্তু সে জানে একটু পরেই আকাশ অন্ধকার করে মেঘ করবে । তারপর ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি নামবে ।সে কাদছে । তার চোখে এত জল ছিল সে নিজেই জানত না ।এই কান্না এখ ন আর কেউ থামাতে পারবে না, মুনির ও না ।
©somewhere in net ltd.