![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ বড় বর্ণচোরা স্বভাবের প্রাণী । ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায় । কিংবা আসলে তাকে এক রঙ থেকে আরেকরঙে নিয়ে যাওয়া হয় । নিয়ে যাওয়া হয় কারন এর পিছনে কোন রহস্যময় অস্তিত্বের রহস্যময় স্বার্থ আছে হয়তো!!
সেদিন আমার এক কালো রঙ মানে যার মনের রঙ কালো এমন মানুষের সাথে কথা হল। উনার জীবনের উদ্দেশ্য হল উনি বেঁচে থাকা অবস্থায় করা সম্ভব এমন সব পাপ করে দেখতে চান! তারপর আমার মনের রঙ ও কালো হয়ে গেল!! কেন জানি মনে হতে থাকলো কোথায় যুক্তি আছে, যেখানে আমার জীবনের কোন উদ্দেশ্য নেই সেখানে পাপ করা উদ্দেশ্য খুব খারাপ না!! কালোর পড়ে অব্যাবহতি ভাবে আসে সাদা রঙের সংস্পর্শ । উনি শুনালেন মানব জীবনের ধ্রুব প্রশ্নাবলী , আমরা কোথা থেকে আসছি? কেন আসছি?আমরা কোথায় যাচ্ছি?? বেঁচে থাকার তাৎপর্য কি?
সাদা কালোর মিশেলে আমি হয়ে গেলাম ধুসর। বিষণ্ণতার রঙ ধুসর। নীলু হঠাত কোত্থেকে দৌড়ে আসলো, এসেই হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “চল, তাঁতকুটিরে যাব!! একটা তাতের নীল শাড়ি কিনবো!” আমি বললাম, দেখত, আমার চোখে কি পড়েছে??! জ্বালাচ্ছে খুব! আমার বিষণ্ণতার ধূসর ওর উচ্ছল রঙে ঢুকে গেল! দুজনের ধূসর ধূসর মিলে হয়ে গেল নীল!
মনের রঙ নীল হলে আকাশ দেখার নিয়ম । আমরা নদীর ধারে গিয়ে বসলাম । নীলু শুন্য চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখতে লাগলো কিংবা একঝাক সাদা পাখির উরাউরি। ঠিক কি দেখছিল বুঝা গেলো না। দুজনেই এক দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে থাকা যায় না। তাই আমি নদীর জলে আকাশের ছায়ায় সুনীল আকাশের ছায়া দেখতে লাগলাম । নদীতে খুব হালকা স্রোত বয়ে যাচ্ছে যেন আকাশ আর মন খারাপ তার দোলায় ঝিরিঝিরি কাঁপছে!!
হঠাত নীলুর ফোন বেজে উঠলো। সে আমার দিকে অবাক হয়ে একবার তাকিয়ে ছলছল চোখ সামলাতে সামলাতে দৌড়ে চলে গেল!! হাতের ডাইরি পড়ে রইল নদীর পাশের ঘাসে । আমি ওকে পিছু ডাকলাম, ও শুনল না। কোন কথাও বলল না! সম্ভবত অন্য কোন মায়ার ডাক ওকে তীব্রভাবে ডেকেছে!
আমি ওর ডাইরি হাতে তুলে নিলাম । অন্যের ডাইরি পড়া উচিত নয়, আমার পড়তেও ইচ্ছা করছে না। সামনের দিক থেকে প্রায় মাঝ পর্যন্ত হিজিবিজি অনেক লিখায় ভরপুর ডায়রিটা । আমি শেষের দিক থেকে কয়েকটা পাতা লিখলাম!! তারপর লিখা পাতাগুলো টান দিয়ে ছিঁড়ে কাগজের নৌকা বানিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া শুরু করলাম । হঠাত করে আবিষ্কার করলাম একটা আমার বয়সী ছেলের স্থবির দেহ নদীর জলে ভেসে আসছে!!
**** **** **** ****
যাক বাবা, বাঁচা গেল! শেষপর্যন্ত নীলু একটা নীল শাড়ি পছন্দ করতে পারলো! আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম! এইসব মেয়েদের তেনাবেনা একদম অসহ্য!! এ শাড়ীর পাড় পছন্দ হয় তো এর আঁচল ভালো না! ওর আঁচল ঠিক আছে তো পাড় বেশি বড়! নীলটা আর একটু গাঢ় চাচ্ছি!! দাম এত বেশি কেন!! হাঁটতে হাঁটতে এলিফেণ্টরোড, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত এরিয়া চষে পা ব্যাথা হয়ে গেছে! যাক, শেষমেশ পছন্দ করতে পারলো! আমিও একটা পাঞ্জাবি কিনেছি! হলুদ! নিলুকে পছন্দ করার সুযোগ ই দেই নি!! দোকানি প্রথম যে হলুদ পামজাবিটা দেখালো বললাম, আচ্ছা!!প্যাক করো!!
**** **** **** ****
আমাদের রঙ কিভাবে যেন পরিবর্তন হয়ে গেছে নিজেদের মাঝে! আমি হঠাত করে আবিষ্কার করেছি, আমি নীল রঙের পাঞ্জাবি পড়ে বোকার মত দাঁড়িয়ে আছি! নীলু ক্যাটক্যাটা একটা কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পড়ে কিছুটা দুরত্বে বসে আছে! এত মানুষজন কেন, চারপাশে এত হই হুল্লোড় কিসের আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারতেছি না! নীলুর ডাকে ঘোর ভেঙে চমকে বাস্তবে ফিরে আসি,
-কিরে শিখন?! পাথরের মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলি যে?? সবার তো হলুদ দেয়া শেষ, তুই দয়া করে একটু হলুদ আমার মুখে মাখিয়ে আমাকে উদ্ধার কর! আর কতক্ষণ এইভাবে সার্কাসের মত বসে থাকবো??
আমি কি বলবো কিছুই না বুঝতে পেরে আমতা আমতা করে, হু ?? হ্যাঁ...... লাগাচ্ছি!!
আমি হঠাত করে তখন বুঝতে পারলাম নীলুর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছে! তাই নীলু হলুদ শাড়ি পড়েছে!!
**** **** **** ****
নদীতে ভেসে আসা ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না! এটা যে আমি নিজে! কিন্তু এ কি করে হয়??! আমি তো মারা যাইনি, আমি বেঁচে আছি!
সবাই চলে গেছে, আমিও চলে গেছি আমাকে ছেড়ে। কিন্তু কাউকে ছাড়া কারো জীবন চিরতরে থেমে থাকে না। জীবন বয়ে চলে নদীর মত ছেড়ে যাওয়া মানুষের মৃত স্মৃতি ভাসিয়ে নিয়ে । বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় প্রমান মন খারাপ। আমার এখনো মন খারাপ হচ্ছে । নীলুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে । আমার মন প্রচণ্ড রকম খারাপ ।আমি নীলুর ডাইরি বুকে জড়িয়ে আকাশ দেখছি । মন খারাপ হলে আকাশ দেখতে হয়।
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৪
বৃত্তে বন্দী বলেছেন: আমার মনে হয় না প্যাটার্নে খুব বেশি মিল আছে। এটা অনেক বেশি বাস্তবতা-পরাবাস্তবতার মিশেল । তবু একজনের লিখা কিছুটা ধারায় মিল চলে আসা খুব ই স্বাভাবিক । মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৫
মশিকুর বলেছেন:
মন খারাপ হলে আমিও আকাশ দেখি। গল্পে ভালো লাগা।। গল্পের প্যাটার্নটা আপনার লেখা ভাঁজ খোল আনন্দ দেখাও এর মত লাগলো।
শুভকামনা।।