নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃত্তে বন্দী

বৃত্তে বন্দী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন হিমুর ডাইরি

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৭

বেলভিউ আজ সকালের সূর্যটা আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছিল!সারারাত জেগে থেকে হাতে হেলান দিয়ে কখন জানি ঘুমিয়ে পড়েছি। ঝিকঝিক রোদ চোখে লেগে ঘূম ভেঙে গেছে । রোদ আমার প্রিয় বিষয় না! তবু আজ সকালের রোদটা বেশ আরামদায়ক লাগছে ।



বেলভিউ এর সকালের রোদ কি বলতে চাইছিল তা বুঝা গেল সন্ধ্যাবেলা। আমি একজন ইন্টার্নী ডাক্তার! বেলভিউ এসেছি ইন্টার্নী করতে !! তারথেকেও বড় একটা পরিচয় আছে আমার । আমি একজন হিমু! এই সুদূরের নিঃসঙ্গ হাসপাতালে আমার হিমুজীবন খুব নিঃসঙ্গ অবস্থায় কাটে । নিঃসঙ্গতার একটা অদ্ভুত গুন আছে । নিঃসঙ্গতা বড় স্রষ্টাঅভিলাষী, পশুপাখিরাও নিঃসঙ্গ জীবনে স্রষ্টাকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় । হিমুদের মায়া থেকে দূরে, বহু বহু দূরে থাকার নিয়ম । কিন্তু মায়া হিমুদের থেকে দূরে থাকে না। আষ্ঠে-পৃষ্ঠে বেঁধে রাখতে পিছুটান হয়ে বারবার আসে । হিমুরা এসব তোয়াক্কা করে না! কিন্তু মাঝে মাঝে এসব তোয়াক্কা করার নিয়ম। নাইলে জগতের আরও অনেক বড় বড় নিয়ম, ভালবাসার অমোঘ নিয়ম ছিন্ন হয় । হিমুরা নিজের স্বার্থে এতসব নিয়ম ছিন্ন করতে পারে না । তাই নিঃসঙ্গ হিমুদের সঙ্গ দিতে,ঠিক যেন কোন নীলপদ্মটা তাকে নিতে হবে যেন তার সুপারিশ নিয়েই আসেন হিমুর স্রষ্টা , এবং আমার কাছেও এসেছেন!! কিছুটা রুগ্ন, কোলন ক্যানসার!!



**** **** **** ****



মহিলার নাম আফরোজা বেগম । বাংলাদেশী, গ্রিন কার্ড নেই । কিভাবে বাংলাদেশ থেকে এই আলোকজ্জ্বল নিউইয়র্কের নির্মমতার মাঝে এসে পড়েছেন তার পিছনে নিশ্চয়ই কোন হৃদয়বিদারক কাহিনী আছে । শুনা হয়ে উঠেনি, জিজ্ঞেস করার সুযোগ ই পেলাম না । আমি যেখানে ওনাকে পড়ে থাকতে দেখেছিলাম মর্মান্তিকভাবে তাতে এটুকু বুঝার বাকি ছিল না উনি সন্তানসম্ভবা, খুব বেশিদিন আর নেই । আমার হয়তো উচিত ছিল সন্তানের পিতৃপরিচয় জিজ্ঞেস করে তাদেরকে নিরাপদে পিতার কাছে পৌঁছে দেয়া, আমি দিতে পারিনি । আফরোজা বেগমের মুখ আমি দু হাতে তুলে নিতেই উনি ঝরঝর করে কেঁদে দিলেন, এত দূরের নিউইয়রকে শুধু বাংলাদেশি এটুক পরিচয় আমাদের আত্মার আত্মীয় করার জন্য যথেষ্ট ছিল ।



**** **** **** ****



হুমায়ুন আহমেদের কক্ষে আমি সারারাত থাকি । ইচ্ছে করেই রাতে থাকি । হিমু আর তার স্রষ্টার মাঝে নিবিড় কথোপকথন হয় । এমন একদিন ই কথোপকথন শেষে আমার মনে পড়লো আমার পরিচয়! আমি কে?!! আমি না হিমু! আমি কি করে আফরোজা বেগমের অনাগত সন্তানের মায়ায় জড়াতে পারি!! এ মায়া যে বড় সর্বগ্রাসী! আমি তৎক্ষণাৎ সিদ্দান্ত নিলাম আফরোজা বেগমের ছেলেটাকে আমি খুন করবো!! বড় বড় জীবনের জন্য ছোট ছোট জীবনের ত্যাগ আমাদের মেনে নিতে হয়! না! এই ছেলেটাকে আমি আমার জন্য মারবো না! হুমায়ূন স্যার মারা যাচ্ছেন !! উনার ইনফেকশন হয়েছে। অবস্থা যেভাবে অবনতি হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে খুব সময় নেই ওনার হাতে। মৃত্যুরদেবতার সন্তুষ্টি হয় শুধু মৃত্যুতে । যুগে যুগে প্রাণহীন দেবতার সন্তুষ্টির জন্য হাজার হাজার প্রান বলি হয়ে আসছে! আর মাত্র একটা প্রান না হয় গেলো!! গুরুত্বহীনপ্রান!! কাক-পক্ষী টের পাবে না। হুমায়ুন আহমেদের বাঁচাটা যে কোন মূল্যে জরুরি!



**** **** **** ****



হিমু! আছো?

-জ্বি, স্যার , আমি সারারাত থাকি ।

একগ্লাস পানি দাও

পানি দিতে দিতে স্যার,- আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?

আমি ভয় পেলে কি তুমিও ভয় পাবে?

বুঝতে পারতেছি না।

আচ্ছা ধরো তুমি আত্মহত্যা করার প্রস্তুতি নিয়েছ, একদম ক্লাইমেক্স SCENE , তোমার দেহের ভেতরের যে কোটি কোটি জীবাণু আছে তারা জানে তুমি তাদের পালনকর্তা এক অর্থে স্রষ্টাও! স্রষ্টা আত্মহত্যা করছে যখন তারা বুঝতে পারবে তখন তারা কি ভাববে বা করবে বলে তোমার মনে হয় তোমার হিমু?

-স্যার আমি একজন ডাক্তার। আপনি প্লিজ চুপ করুন । আপনার বিশ্রাম দরকার। এই দেখুন আমি আপনার হাত ধরে আছি, শক্ত করে ধরে আছি ।১৬ কোটি মানুষ আপনাকে ঠিক এইভাবে ধরে আছে। আপনি ভয় পাবেন না। কোন মৃত্যু দেবতা এই বন্ধন ছেড়ে আপনাকে নিয়ে যেতে পারবে না। হিমুদের মায়া নেই, কিন্তু মৃত্যুদূতের মায়া আছে!!

হিমু এমন কি কখনো হয় সৃষ্টি তার স্রষ্টাকে খুন করলো?

-মানে মানুষ ইশ্বরকে?!!

অনেকটা অমনই । কিন্তু ঈশ্বর তো আর মানুষের সামনে আসেন না । ধরো, তোমার দেহের ভেতর কোটি কোটি জীবাণু তোমাকে একটু সুযোগ পেলেই খুন করতে পারে? পারে না বলো?

-তাতো পারেই!

হিমু, আমার না খুব বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে! কি সুন্দর পৃথিবী! তোমাকে একটা অনুরোধ করি?

আমি কিছু বলতে পারলাম না, চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে ।

আফরোজার ছেলেটার নাম “হুমায়ুন” রেখো !! জগতের কোন প্রান ই গুরুত্বহীন হয় । উপরে একজন মহান কারিগর বসে আছেন , জগতের ফানুশ খেলা সব কারিগরের ।



পাশে হাজার হাজার যন্ত্রপাতি । তারমধ্যে একটা নির্মম যন্ত্রে সব রেখা হঠাত করে খুব সরল হয়ে আসছে । আমার চোখের পানি গালে চলে আসছে! আচ্ছা হিমুরা কি এসব মুহূর্তে দুফোটা জল ফেলতে পারে?! নাহ... পারে না ! আমি চোখের জল সামলে সবাইকে জানাতে চললাম স্যার মারা যাচ্ছেন , আর ঘণ্টাখানেক হয়তো সময় পাওয়া যাবে!

**** **** **** ****



আফরোজা বেগম কে নিউইয়র্ক পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, অবৈধ নাগরিকত্বের দায়! শুনতে পেলাম, তার পেটের সন্তানটাকে নাকি মেরে ফেলা হবে! তৃতীয় বিশ্বের আবাদি অবৈধ নাগরিকদের আমেরিকা বয়ে বেড়াবে না!



আমার মানসিক স্থিরতা নেই । প্রতি রাতে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি । বাংলাদেশে কিভাবে জানাজানি হয়ে গেছে স্যারের দায়িত্বে আম সাহায্যকারী ডাক্তার হিসেবে ছিলাম । দেশে আমাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোন সাজা দিতে পারছে না । কিন্তু ১৬ কোটি মানুষ প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা আমার উপর থু থু ফেলে যায়! কি যে প্রবল ঘৃণামিশ্রিত সে দৃষ্টি! সে থু থু! থুথুর সাগরে আমি ডুবতে থাকি । আমার দম বন্ধ হয়ে যেতে থাকে । ঠিক তখন ই ঘুম ভেঙে যায়!



**** **** **** ****



গতরাত থেকে আমি পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন! পাগলদের প্রার্থনা নাকি কবুল হয়! আমি প্রার্থনায় বসেছি । উহু... মৃত হুমায়ুনের জন্য না, জীবিত হুমায়ুনের জন্য । আমার চোখে পানি । থাকুক পানি । চোখের পানি কি শেষপর্যন্ত যথেষ্ট হবে একজন হুমায়ুনকে বাঁচানোর জন্যে???

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩১

মশিকুর বলেছেন:
হিমুই বোধহয় হুমায়ূন আহমেদকে সবচেয়ে বেশি মিছ করবে। তবে হুমায়ূন আবার জন্ম নিবে নতুন হুমায়ূন রুপে। আগের হুমায়ুনের ছিটেফোটাও থাকবে না তার মধ্যে। কারন হিমু একবারই সৃষ্টি হয়েছে।

ভালো থাকুন।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৭

বৃত্তে বন্দী বলেছেন: কিংবা থাকবে! যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই শুরু হওয়াই খুব স্বাভাবিক এবং উচিত ও বটে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.