![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এত রাতে শ্মশানঘাটে কেউ নেই । থাকার কথাও নয়। শ্মশান মানেই অজানা ভয় । আমি একা । শীতটা বেশ জাকিয়ে পড়েছে, আগুনে হাত পোহাচ্ছি! উনিশতম কবিতাটা চিতায় জ্বলছে। কবির কাছে কবিতা সন্তানের মত । সে হিসেবে আমি মানুষের মত কল্পনা করা হয় এমন কারো জ্বলে যাওয়ায় উষ্ণ হচ্ছি! কি বীভৎস আনন্দ! তবু আনন্দ পাচ্ছি সেটাই বড় কথা!
**** **** **** ****
নেত্রী হাসলেন। তার বেশ শীত শীত লাগছিল । বুড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্মণ, ট্রাফিকের এ শহরে শীত এখনো অতটা রাজত্ব করতে পারে না । এমন সময় খবর পেলেন আটটা লোক হরতালের আগুনে পুড়ে মারা গেছে।তারমধ্যে একটা ৭২ ঘণ্টা বয়সী শিশুও আছে! পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মেরেছিল কে বা কারা! কে বা কারা তিনিও চিনেন না ! এ খবর শোনার পর থেকে তার তেমন শীত লাগছে না, বীভৎস আনন্দ! যেন হাত সেঁকে নিচ্ছেন জ্বলে যাওয়া কোন মানুষের উপর!!
**** **** **** ****
শিশুটা PREMATURE BABY। সাতমাস বয়সে চলে এসেছে পৃথিবীতে । যেন পৃথিবীর নির্মমতা দেখার তাড়া সইছিল না। ডাক্তার বলেছিলেন, হয় মা নাহয় বাচ্চা , যেকোন একজনকে বাচানো যাবে! কাকে চাই আপনি সিদ্ধান্ত নিন! বাবার সিদ্দান্ত নিতে তিন সেকেন্ড সময় নিয়েছিলেন! , মাকে বাঁচান! সাত মাসের বাচ্চা বাবার করুনা পায় নি! পাওয়ার কথাও না যেখানে স্ত্রীর সাথে সাড়ে ছয় বছরের ভালোবাসার ঘরসংসার । কিন্তু ঈশ্বরের করুনা পায় শিশুটা। মা শিশু দুজনেই বেঁচে উঠে! কিন্তু PREMATURE BABY অনেক সমস্যা! ফুসফুস ঠিকমত কাজ করা শুরু করে নি এখনো। তাই ইনকিউবেটর এর ভিতর রেখে শিশুটাকে তাপ দেয়া হচ্ছে ।
আমি মাথার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম বাচ্চাটার । পাশের রুমে টিভিতে দেখলাম পেট্রোল বোমায় মানুষ পুড়ে যাবার খবর ।ইনকিউবেটর মেশিন উষ্ণতা দিয়ে শিশুটার ফুসফুস কর্মক্ষম করার ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইনকিউবেটর মেশিন ছুঁড়ে ফেলে একটা পেট্রোল বোমায় তৎক্ষণাৎ বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে তুলতে বা মেরে ফেলতে ইচ্ছে হল!
**** **** **** ****
এতরাতে শ্মশানঘাটে আমি কোন কারন ছাড়া নই। আজকে মিলুর একুশতম জন্মদিন ছিল । ছিল মানে এখন রাত বারটার বেশি বেজে গেছে । আমি অনেক ভেবেছি ওকে কি দেয়া যায়? উপন্যাস? কবিতার বই?উম...উম...অন্যের কবিতা! আচ্ছা নিজে একটু চেষ্টা করা যাক! রুদ্র , রবিন্দ্রনাথ, সুনীলের লাইন মেরে দিয়ে শুরু করে গোটা দশ বারো মিস্রন তৈরি করা গেল! বোঝার উপায় নেই আসলে কার! আনলাকি ১৩ থেকে মনে হল নিজে এক আধটু পারছি! মিশ্রণ চুলোয় ঢেলে আবার শুরু! এরকম করেই অনেক সাধনা শেষে একদিন আবিষ্কার করলাম বিশটা কবিতা লিখা হয়েছে! জীবননান্দের একটা মৌলিক খুব পছন্দ, ওটা মিলিয়ে একুশ বানিয়ে তৈরি হল মিলুকে দেয়ার জন্য উপহার!
ঠিক বারটা বিশ মিনিটে মিলু নিজেই ফোন দিল!! সে আজ খুব খুশি! আমি বললাম ঘটনা কি?!
উত্তেজনায় কথা বলতে পারছে না মিলু! রাজনভাই তাকে একুশটা গোলাপ দিয়েছে, তার ক্লাসমেট পিয়াল তার হলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে, তার বাবার বন্ধুর ছেলে তার জন্যে আগামীকাল রেখেছে সারপ্রাইজ পার্টি। আমাকেও যেতে বলল। আমার মন বিষিয়ে গেল । বললাম, হুম...আসবো! অথচামি ভালো করেই জানি কারো পিছনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আমার দাঁড়া হবে না। একা মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়াব কেন?!
আমার সাথে সারাদিন মিলুর আরও তিনবার কথা হল । সে কোথায় কোথায় কি করছে তার নিখুঁত বিবরণ । একুশটা কবিতা তখন থেকে খুব করে বলে যাচ্ছে আমাদের অপমান করো না! মানুষের মত পুড়িয়ে মারো!
কবিতাগুলো পুড়ছে আলাদা আলাদা একুশটা চিতায় । জীবনান্দের মৌলিক কবিতাটা খুব PAIN দিচ্ছে! মানুষের নাভি যেমন পুড়ে না তেমনি এই কবিতাটাও পুড়ছে না । আমি একবার ভাবলাম মিলুকে আর একবার ফোন দিয়ে শুনানোর নাকি অন্তত এই কবিতাটা! রাত বিরেতের ভাবনাগুলোকে প্রশ্রয় দিতে নেই!
**** **** **** ****
বাচ্চাটার নানী দাদী একসাথে বসে কাঁথা সেলাই করছেন ওর জন্য। উনাদের দুজনের বয়স বয়স আমাদের দুই নেত্রীর মত! অমনোযোগী দর্শক চেহারাতেও মিল খুঁজে পান! দুজনের মুখে অফুরন্ত হাসি একটা স্বপ্ন বেঁচে আছে বলে!গল্প করতে করতে বোনা হচ্ছে নকশীকাঁথা। নকশীকাঁথায় সুঁই সুতোর টানে টানে ফুটে উঠছে ঘাস, লতাপাতা, নদী, ফুল পাখি---- হঠাত দেখলে বাংলাদেশের ছবি বলে বিভ্রান্তি হয়!!
**** **** **** ****
বাচ্চাটার ফুসফুস এখন কাজ করা শুরু করেছে, পুরপুরি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মত পৃথিবীতে তার বসবাস শুরু হয়েছে। আমি তাকে গাল টিপে দিয়ে বললাম, “উলে লে! আজকে হচ্ছে তোমার প্রকৃত জন্মদিন,সোনা! শুভ জন্মদিন! WELCOME TO THE WORLD!!”
এদিকে ওর বাবা হরতালের গণ্ডগোলের মাঝে পড়ে হাত ভেঙে নিয়ে বসে আছেন! আমি নেড়েচেড়ে দেখছি অবস্থা কি রকম এখন । এমন সময় মিলুর ফোন এল, কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে একদমে বলে গেল,
“আমি তার উপেক্ষার ভাষা
আমি তার ঘৃণার আক্রোশ
অবহেলা করে গেছি; যে নক্ষত্র — নক্ষত্রের দোষ
আমার প্রেমের পথে বারবার দিয়ে গেছে বাধা
আমি তা ভুলিয়া গেছি;
তবু এই ভালোবাসা — ধুলো আর কাদা — "
জীবনআনন্দের এই কবিতাটা জোশ না?! শুনেছিস?!
কাকতালীয়ভাবে এই কবিতাটাই সেই কবিতা যেটা সেদিন রাতে পুড়ছিল না! আমি ওকে শুনাতে চেয়েও শুনাই নি। আশ্চর্যভাব সামলে নিয়ে বললাম, নাহ, শুনিনি! আমি একটু ব্যাস্ত! পরে কথা বলি!
**** **** **** ****
বাচ্চাটা একটা মেয়ে শিশু। রিলিজ ডেট এ আমি ওর হাতে একটা জীবনান্দের কবিতার বই ধরিয়ে দিলাম!!! ওর মাকে বললাম এত কিউট বেবি! দেখলেই কিছু দিতে মন চায়! বইয়ের প্রথম পাতায় আবার গতরাতে রঙিন জেলপেন দিয়ে গোটা গোটা করে লিখেছি,
“একা মানুষকে কখনো পোড়াবে না।আগুন দিয়ে আগুন পুড়লে যে ছাই হয় তা কোন বুকপকেটে রাখা যায় না। হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে হয়,বাতাসে ভাসিয়ে দিতে হয়। উড়তে উড়তে সব ছাই মিলে একটা চিরকুট বা ইচ্ছেপাখি হয়ে যাবে। পাখি কি আর ঘুড়ি বল যে তাকে নাটাইয়ে বেঁধে রাখবে? ইচ্ছে পাখির ইচ্ছের কথা শুনতে চেয়ো না কারন সে যে ইচ্ছে বলে ফেলে তা ফলে যায়!তাই তো সে ইচ্ছেপাখি!”
ও এসবের কি বুঝবে! কেন করি এসব পাগলামি কে জানে!
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪১
বৃত্তে বন্দী বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৮
মশিকুর বলেছেন:
অন্যরকম ভাললাগা।