![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সম্ভবত এটা পৃথিবী নয়! সম্ভবত না সত্যিই এটা পৃথিবী নয় । এখানে স্বপ্ন বপন করা মানেই আক্ষরিক অর্থেই স্বপ্ন বপন করা ঠিক যেভাবে পৃথিবীতে আমরা গাছ বুনে থাকি । তারপর সকাল সন্ধ্যা নিয়ম করে পানি ঢালা, আনুষঙ্গিক পরিচর্যা শেষে একদিন ভোরবেলা হঠাত করে বিস্ময় মাখা চোখে আবিষ্কার করতে হয় মাটি ভেদ করে দুটি পাতা বেরিয়েছে! স্বপ্ন জাগ্রত হচ্ছে বাস্তবতায়! কি আনন্দ!
আমি পুরাতন কয়েকটা চিঠি পরপর বুনে গেলাম ছোট ছোট গর্তে! এখানে পানি দেয়ার নিয়ম হচ্ছে নিজের চোখের পানি দিতে হয়! আমি কাদার চেষ্টা করছি! কিন্তু কাদতেন পারছি না! তখন ই সন্দেহ হল, আচ্ছা এটা স্বপ্ন নয় তো!!
**** **** ****
ক্লাসে ঢুকতে না ঢুকতেই নিতু হাসিমুখে এগিয়ে এল! দুই দিন পর দেখা, কেমন আছি, শরীর কেমন এসবের ধারের কাছ দিয়েও গেলো না!
তোকে একটা ধাধা ধরবো, বলতে হবে জিনিসটা কি?
-ধুর, এসব ধাধা ফাধা আমার দ্বারা হবে না!
আগে শোন তো, "কালিদাস পণ্ডিতের ছোটবেলার কথা
এক লক্ষ তেঁতুল গাছে কয় লক্ষ পাতা?!"
ও শেষ করতে না করতেই আমি বললাম, জানিনা!
একটু ভেবে তো বল! একদম সহজ ধাঁধা!! চোখ বন্ধ করে ভাব!
-উত্তর জানা থাকলে তো সব ই সহজ। আমি মুখে বললাম ঠিকই তবু চোখ বন্ধ করলাম! এবং আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলাম আমি কেমন জেনো লালচে মাটির একটা জায়গায় চলে এসেছি অনেক অনেক সদ্য বোনা হয়েছে এমন গাছ যার প্রতিটিতে সদ্য অঙ্কুরিত হওয়া দুটো করে পাতা! আমি উত্তেজিত হয়ে চোখ খুলে বললাম, দুই লক্ষ পাতা!! এই দৃশ্য আমি আগে কোথাও দেখেছি! কোথায় জানি দেখলাম!! মনে পড়ছে না!
নিতু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, কোন দৃশ্য??!! তুই তো উত্তর পেরেছিস! বলেছিলাম না সহজ!
হ্যাঁ পেরেছি কারন এই দৃশ্য আমার খুব চেনা! দুই পাতাওয়ালা গাছের দৃশ্য!
নিতু হাত নেড়ে হালছাড়ার ভঙ্গি করে, ধুর! কি বলছিস কিচ্ছু বুঝতেছি না!
**** **** ****
বাসায় খিচুড়ি রান্না হয়েছে হঠাত। আমার নানা মারা গেছেন দু বছর আগে । আমার আব্বা স্বপ্নে দেখেছে আমার নানা আমাদের বাসায় এসেছেন। দুপুর রোদে পিঁড়িতে বসে উনি খিচুড়ি খাচ্ছেন। খিচুরির ঝালে ঘেমে ঘেমে যাচ্ছেন । । কাকতালীয় ভাবে অথবা খুব ই লজিকাল ভাবে আমার আম্মা এবং নানী একই রাতে নানাকে স্বপ্নে দেখেছেন! পৃথিবী খুব ই রহস্যময় জায়গা!
**** **** ****
নিতু আমার কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে বলল, আজ সঞ্জীব চৌধুরীর জন্মদিন। চল দুজনে মিলে উনার একটা গান শুনি! গানের কথাগুলো এরকম ছিল,
“ ভাজ খোল, আনন্দ দেখাও
করি প্রেমের তর্জমা
যে বাক্য অন্তরে ধরি
নাই দাড়ি তার নাই কমা!! ”- এ পর্যন্ত শোনার পর নিতু বলল, আচ্ছা এই গানের ধাঁধাটার উত্তর বলতে পারবি?
-দাড়ি কমাহীন কোন বাক্য? ভাবতে হবে! তবে গানটা সুন্দর। অনেক সুন্দর।
আচ্ছা ভাব, ২৫ তারিখের আগে ভেবে বের করতে পারলে আমাকে বলবি!
-কেন ২৫ তারিখ কি?
২৫ তারিখ আমার বিয়ে! আব্বু বলেছে, দেখতে আসবে। পছন্দ হলে বিয়ে! তুই বল আমাকে কেউ না পছন্দ করে পারে?! দেখলেই পছন করা যায় আমি এমন মেয়ে না?!! এটুক বলে নিতু হঠাত করে কেঁদে দিল! ঘটনা কোন দিকে এগুচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না!
-তোর বিয়ে আমাকে আগে জানাস নি কেন?!!
এইতো জানালাম!
-আচ্ছা কাদছিস কেনও?! কাঁদার মত কি কিছু হইছে?!
তুই বুঝবি না! উত্তর বের করতে পারলে জানাস। অবশ্যই ২৫ তারিখের আগে!
-আমি তো তোকে বললাম এইসব আমি পারি না! তবু ATLEAST কোন ক্লু দে । যেটা ধরে চেষ্টা করা যায়!
নিতু বলল, এরকম একটা বাক্যই পৃথিবীতে আছে! শুধুই একটা! ONLY ONE!!
**** **** ****
‘”৭৯৮টি স্পেসিস মুছে গেছে চিরতরে মানুষের মৃত্যু হবে কবে সহাস্যে ও স্বতঃস্ফূর্ততায় পুষ্পেরা নিকটে আসে মৃত্যু হলেই তবে”- এমন একটা কবিতা পড়ছিলাম। পড়তে পড়তে মনে হল আচ্ছা, আমি মারা যাচ্ছি এটা কি একটা দাড়ি কমাহীন বাক্য?? কমাহীন তো বটেই, কিন্তু দাড়িহীন হচ্ছে না! মৃত্যুর শেষে দাড়ি এসে পড়ে । অনন্ত কোন ব্যাপার হলেই শুধু দাড়িহীন বাক্য হতে পারে! পৃথিবীতে অনন্ত ব্যাপার তো একটাই আছে.........ভালোবাসা! বাক্যটা কি তবে “আমি তোমাকে ভালোবাসি.........” ?? আচ্ছা, নিতু আমাকে ভালবাসে ?!! কিন্তু নিতু তো বলেছিল একটামাত্র বাক্যই আছে! আমি টের পেলাম আমার বাম পাশের সক্রিয় লজিকাল ব্রেইন কাজ করা শুরু করেছে! “আমি তোমাকে ভালোবাসি” এটাকে বিন্যাস সমাবেশ করে আরও অনেকভাবে লিখতে পারা যায়! তাছাড়া নিতু আমাকে ভালোই বা বাসতে যাবে কেন?!! নাহ, এই বাক্য হতে পারে না!
সেদিন রাতে আমি আবার সেই অদ্ভুত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখলাম! আমি একের পর এক চিঠি বপন করে যাচ্ছি! আজকে আমি চিঠির ভাষাগুলো পড়তে পারছি! প্রত্যেকটা চিঠিতেই লিখা “আমি তোমাকে ভালবাসি......”
এতসব কিছুর মাঝে আমি স্বপ্নেই টের পেলাম , আমি বুঝে গেলাম নিতু আমাকে ভালো বাসুক না বাসুক আমি নিতুকে ভালোবাসি!!অসম্ভব ভালোবাসি! এতদিন টেরই পাইনি!! এটা কি করে হয়?!! খুব উত্তেজিত অবস্থায় কাঁপা কাঁপা হাতে নিতুকে চিঠি লিখলাম । তুই বলেছিলি পৃথিবীতে একটা মাত্র লাইন আছে! কিন্তু আমি অনেকগুলো লাইন এমন খুঁজে পেয়েছি! হয়তো আমি সঠিক জবাব পাইনি!
আমি তোমাকে ভালোবাসি......
তোমাকে আমি ভালোবাসি......
ভালোবাসি...... তোমাকে আমি
তোমাকে ভালোবাসি ...... আমি
আমি ভালোবাসি...... তোমাকে
ভালোবাসি...... আমি তোমাকে
ভালো...... আমি বাসি তোমাকে
বাসি আমি তোমাকে ভালো......
বাসি তোমাকে আমি ভালো......
বাসি ভালো ...... আমি তোমাকে
বাসি আমি ভালো...... তোমাকে
বাসি তোমাকে ভালো...... আমি
আমি বাসি ভালো ...... তোমাকে
আমি ভালো...... তোমাকে বাসি
আমি তোমাকে বাসি ভালো......
তোমাকে আমি বাসি ভালো......
তোমাকে বাসি আমি ভালো......
তোমাকে বাসি ভালো আমি......
তোমাকে ভালো আমি বাসি......
ভালো তোমাকে আমি বাসি......
ভালো আমি তোমাকে বাসি......
ভালো আমি বাসি তোমাকে......
ভালো ...... তোমাকে বাসি আমি...
তোমাকে ভালোবাসি......
ভালোবাসি...... তোমাকে
বাসি ভালো ...... তোমাকে
তোমাকে বাসি ভালো......
ভালো...... তোমাকে বাসি
বাসি তোমাকে ভালো......
**** **** ****
সেদিনের চিঠি আমার কাছেই ফিরে এসেছিল! ভালোবাসা বুঝতে পেরে এতটা উত্তেজিত হয়েছিলাম প্রাপক-প্রেরক গোলমাল করে ফেলি! প্রাপকের জায়গায় নিজের নাম, আর প্রেরকের জায়গায় নিতুর নাম ঠিকানা লিখে চিঠি পোস্ট করে দিয়েছিলাম! নিতুর বিয়ে হয়ে গেছে তাও অনেকদিন! যোগাযোগ নেই। আজ অনেকদিন পর হঠাত নিতুর চিঠি পেলাম!
সেদিন আমার ক্লুটা ভূল ছিল। আবেগী ছিলাম তো...... তাই বুঝতে পারিনি যে ভুল ক্লু দিচ্ছি! দাড়ি কমাহীন ২৯ টা বাক্য আমাকে নিতুল আমাকে শুনিয়েছে, যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছে! ওহ তোমাকে তো বলাই হয়নি, নিতুল আমার স্বামীর নাম!! তোমাকে ভুল ক্লু দেয়ায় পারলে আমাকে মাফ করো! সঠিক ক্লু দিলে হয়তো তুমি উত্তর খুঁজে পেতে!
চিঠিটা পাওয়ার পর আমি চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম, আচ্ছা, নিতু কি আমাকে আগে তুই ডাকতো না তুমি??!! তুমি স্বম্মোধন এত অদ্ভুত শুনাচ্ছে কেন?একবার মনে হচ্ছে তুই, একবার তুমি! কিছুতেই কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে পারলাম না তুই না তুমি!!
২০ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৮
বৃত্তে বন্দী বলেছেন: উত্তর দিতে দেরি হওয়ায় দুঃখিত । ২৯ লাইন আনিসুল হক থেকেই আমার মাথাতেও আসছে । তাড়াহুড়া ব্যাপারটা পড়ে পড়ার সময় আমারও কেমন জানি মনে হল! হয়তো পরিধি না বাড়ানোর প্রবল ইচ্ছাই মূল কারন । মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৫
মশিকুর বলেছেন:
লেখার প্লটটা খুবই ভালো লাগল। ২৯ টা লাইন আনিসুর হক এর একটা লেখায় দেখেছিলাম। কিছু কিছু যায়গায় একটু তাড়াহুড়া হয়ে গেছে। যেমন নিতুর কান্নার ব্যাপারটা আর একটু আবেগের ছোঁয়া আশা করছে(মনেহল)।
"মৃত্যুর শেষে দাড়ি" -ভাবনাটা ভালো লাগলো। ঠাট্টার ছলে শেষ পর্যন্ত নিতুরা আসলে মূল্যবান অনেক কিছুই হারায়।
একেবারে শেষ অংশটার জন্য +++
শুভকামনা।