নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃত্তে বন্দী

বৃত্তে বন্দী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত্যুদূত {{ছোটগল্প}}

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫২

রায়হান মৃত্যুশয্যায়। মানুষ বলে, কেউ মারা গেলে তিনদিন আগে থেকেই টের পাওয়া যায়। আত্মায় জান দেয়। সে হিসেবে রায়হান দুদিন সময় কম পেয়েছে। সে গতকাল মাত্র বুঝতে পেরেছে সে আর বাঁচবে না । আজকে মরণ এসে উপস্থিত!অথচ ভোরবেলায় ও রায়হান হেঁটে গিয়ে গরুর শিনার মাংস কিনে আনল। ভোরে না গেলে শিনার মাংস পাওয়া যায় না। বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি থেকে কারা কারা যেন আসবে। মা যখন তাকে ডেকে তুলল রাতের কালচে ভাব তখন ও কাটে নি। ধুরমুর করে ঘুম ঘুম চোখে কসাইখানায় গিয়ে দেখে সব ঘুমে অচেতন। সে কড়া নাড়তে লাগল জোরে জোরে,

মনসুর, মনসুর!

-কে ?? কে অইখানে?? কি চান??

মনসুর আমি রায়হান! এক কেজি শিনার মাংস লাগবে! দরজা খোল!

মনসুর কসাই ঘুম ঘুম কণ্ঠে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে জবাব দিল,

-ধুর মিয়া ভোর রাইতে ফাইযলামি করেন! ঘণ্টা দুই পরে আসেন!

রায়হান কাঁচুমাচু করে, ভাই আমার বাসায় গেস্ট আসবে! আজকে ঘণ্টা দুই আগে জবাই করা যায় না?!

মনসুর সম্ভবত স্বপ্ন দেখছে। দার্শনিক টাইপ স্বপ্ন।

-এত ভোরে কারো বাসায় গেস্ট আসে??গরুটারে আর একটু বাঁচতে দেন! গরু বইলা কি সে মানুষ না!

তখন থেকেই রায়হানের মাথায় চিন্তাটা ঢুকেছে আচ্ছা এমন কি হতে পারে সে এই গরুটার মৃত্যুসংবাদবাহী?? মানব সমাজে যেমন মৃত্যুসংবাদবাহীকে নিয়ে নানা গল্প প্রচলিত তেমনি গরু সমাজেও নিশ্চয়ই আছে। সে গরুটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে গরু কি তার সাথে চেহারা মিলিয়ে নেবে?? রায়হান মনে মনে গরু সমাজের দুই গরুর কথোপকথন ভাবতে থাকে,

-তোমার যে মরনের খবর নিয়ে আসবে তার চোখে ভারী পাওয়ারের চশমা থাকবে!

চশমা !!কেন??

-কারণ ঐ লোকটার যে জান কবজ করবে আজরাইল তার এক চোখ কানা। ওরা বলে মুসার চড় খেয়ে কানা হয়ে গেছিল এক চোখ। আর এ যেহেতু তোমার মৃত্যুর খবর আনবে তাই এর থাকবে দুই চোখ কানা!!

-এই লোককে কে চড় মেরেছিল??

নাম জানি না! উনার কি জানি এক প্রেমিকা ছিল!



রায়হান আজরাইলকে দেখতে পাচ্ছে। বর্ণনার সাথে হুবুহু মিল চেহারা! বাম চোখ অন্ধ। লোমশ কালো অন্ধকার ইয়া বড় আবয়ব। ছায়ার মত অশরীরী শীতল। অস্তিত্বহীন অনুভূতির মত একটা শিহরণ যেন শুধু। রায়হান স্বভাবিক থাকার চেষ্টা করল! কিন্তু সে ক্রমাগত ঘামছে। অস্বস্তিকর নীরবতা চারপাশে। মৃত্যুর আনাগোনার শব্দ শুধু। আজরাইল নীরবতা ভাঙলেন!

-রায়হান, তুমি আমার চেয়ে বয়সে ছোট হবে, তোমাকে তুমি করে বলি??

জ্বিনা! আপনি ফেরেশতা, আমার থেকে অনেক নিচু লেভেল এর প্রাণী। আমি মানুষ, সৃষ্টির সেরা। বয়সের কম বেশি তে কি হয়। আপনি করে বলুন ।

-আমি আপনার চেয়ে নিচু শ্রেণীর তো আমাকে আপনি বলছেন কেন?? তুই বলুন। আমি কিছু মনে করব না!

আমি প্রথম দেখায় কাউকে তুই বলতে পারি না!

-কিন্তু আমার সাথে তো কারো দ্বিতীয় দেখা হয় না।

আপনি কি আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন??

-না, আমি মোটেই ভয় দেখাচ্ছি না। যা সত্য তাই বলছি। আপনি এত ঘামছেন কেন রায়হান??

আজরাইল সাহেব! আপনি কি চান??

-কিছু চাই নাতো! আমি একটা জিনিস দিতে এসেছি!

বলে আজরাইল রায়হানের দিকে একটুকরো সাদাকাগজ বাড়িয়ে দিল।

কি এটা??

-একটা ঠিকানা!

তাতো দেখতেই পাচ্ছি! কিসের ঠিকানা??

-বাঁচার ঠিকানা!

রায়হান ভালো করে কাগজের টুকরোটা দেখল। ১২৬/E , পূর্ব নাখালপাড়া!

এইটা কার ঠিকানা আজরাইল সাহেব??

কেউ উত্তর দিল না।

রায়হান চিৎকার করল ।

আজরাইল সাহেব??এইটা কার ঠিকানা আজরাইল সাহেব?? এইটা কার ঠিকানা??





ঘটনাস্থল-১২৬/E , পূর্ব নাখালপাড়া!

মেয়েটা ফ্যানের গায়ে উড়না পেঁচিয়ে দুঃসাহসে ঝুলে পড়ল। আত্মহত্যার কারণ জানা যায় নি ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২১

জনাব মাহাবুব বলেছেন: গল্পের মোড়টা অন্যদিকে ঘুরে গেল।
আমি ভাবলাম এক, হইল আর এক। :D :D :D

এটাই লেখকের লেখার যাদু B-) B-)

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৩

বৃত্তে বন্দী বলেছেন: সে যাদু ছুঁয়ে গেলেই আমার সার্থকতা । :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.