![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চক্ষু বিষেশজ্ঞ একজন মেয়ে!!!
শুনেই একটু অবাক হয় নাদিম।লোকজন কম থাকায়
খানিক পরেই ডাক পড়ে ওর।রুমে
ঢুকেই
কাপড় দিয়ে ঢাকা ডাঃ রুপন্তীর
সৌন্দর্য্যের ঝলসানি দেখে
অনেকটাই
কমে যায় নাদিমে চোখের সমস্যা!!!
নাদিমের ভাবনাতে ডাঃ
মেয়েরা
শুধুই ধবধবে সাদা হয়,এদের চেহারায়
কোন মায়াবীয়তা বা শ্রী নেই।
কিন্তু
এ মেয়ে যেন সাগড়পাড়ের অজস্র
ঝিনুকের মাঝে একটি মুক্ত,সমগ্র
বাগানের মাঝে একটি টকটকে
গোলাপ।
.
প্রেশক্রিপশন করা হলে রুম থেকে
বের
হয়েই নাদিম সিরিয়াল লেখা
ছেলেটিকে ডেকে বলে,
__ডাঃ রুপন্তী কি বিবাহিত??
আগাগোড়া ভালো করে দেখে
ছেলেটি বলে
__নাহ,কি দরকার?
__নাহ,এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
কথাটা শুনে অজানা এক সুঘ্রাণে
মেতে উঠে নাদিমের হৃদয়।
.
প্রেস্ক্রিপশন অনুযায়ী ১৫দিন পর
দেখা
করতে বললেও নাদিম ৫দিন পরই
ডাঃ
রুপন্তীর চেম্বারে গিয়ে হাজির।
"এটা কি শুধুই রুপন্তীর প্রতি তার
সৌন্দর্য্যের টান নাকি সঙ্গহীন
জীবনে খুজে পাওয়া সঙ্গীর
আকর্ষণের
বাণ!!
নাকি আসলেই চোখের প্রব্লেম??
__কি ব্যাপার,আপনাকে তো ১৫দিন
পর
আসতে বলছি।
__চোখের ডাঃ হয়েও চোখের
ভাষা
বুঝতে পারলেন না কেন এসেছি এত
তারাতারি?
__মানে? চোখ বড় বড় করে একটু কঠিন
স্বরে বলে রুপন্তী।
__মানে,চোখের লালচে দাগটা
যে
বেশি হয়েছে তা কি দেখতে
পারছেন না?
রুপন্তী একটু ভালো করে নাদিমের
চোখের দিকে তাকায়।এভাবে এখন
পর্যন্ত কোন ছেলে বা রোগীর
দিকে
তাকায় নি রুপন্তী....
এই সুযোগে নাদিমও সুবোধ বালকের
মত
মায়া ভরা চোখ করে তাকিয়ে
রুপন্তীর রুপসুধা পান করে।
কোন রোগী দেখা হচ্ছে নাকি
মনের
অজান্তেই প্রাপ্ত বয়স্ক দুটি হৃদয়ের
শুভ
দৃষ্টি বিনিময় হচ্ছে তা কেওই টের
পায়
না যতক্ষন না সিরিয়াল লেখা
ছেলেটি এসে লাঞ্চের খবর দেয়!!!
রুপন্তীর ফর্সা মুখটা লাল হয়ে যায়
লজ্জায়,নাদিমও মাথা নিচু করে
মুচকি
হাসে।
.
চোখের ক্রিমটা চেঞ্জ করে ড্রপ
দিয়ে বলে ৫দিন পর আবার দেখা
করবেন।
__এক্সকিউজ মি,আমি একা ড্রপ
নিবো
কিভাবে,ভয় করে??
__কেন আপনার বউকে দিতে বলবেন।
__এই চেহারায় মেয়ে দিবে
কে,বিয়ে
তো পরের কথা!
__কেন,আপনি কি করেন?
__এইতো টুকটাক একটা চাকরি
করি,জনতা ব্যাংকের কর্পোরেট
ম্যানেজার।
__ভালো পদেই আছেন,মেয়ে
দেওয়ার
জন্যে তো সবাই সিরিয়াল ধরার
কথা।
__আমার পিছনে সবাই সিরিয়াল
ধরলেও আপনার পিছনে কিন্তু আমিই
সিরিয়াল ধরেছি!
__কিভাবে?
__এই যে,আপনাকে দেখতে বাইরের
ছেলের কাছে সিরিয়াল কাটলাম।
__হাহাহা,বেশ মজার তো।আমি
আরো
অন্যকিছু ভাবলাম।
দুজনেই হেসে উউঠে।যাবার সময়
নাদিম
ওর ভিজিটিং কার্ডটা রুপন্তী কে
দিয়ে যায়।
আরো দু-একদিন চেম্বারে আসা
যাওয়া
হয়।একদিন শপিং এও সঙ্গী হয়
নাদিম,রুপন্তীর....ভালোই সখ্য গড়ে
উঠে ওদের মধ্যে।
.
রাকিব,উচ্চতর সার্জন ডিগ্রি নিতে
কানাডা গিয়েছে ১বছর ৩মাসের
জন্যে, রুপন্তীকে কাবিন করে।
প্রতিদিনই কথা হয় ওদের।কিন্তু গত এক
সপ্তাহ যাবত কি একটা বিষয় নিয়ে
যেন গুমোট ভাব চলছে ওদের মধ্যে
যা
আজ বৃষ্টি রুপে ফলিত হয়।রাগে ফোন
রেখে দেয় রুপন্তী। অনেকক্ষন নিশ্চুপ
থাকার পর টেবিলের উপর নাদিমের
ভিজিটিং কার্ডের উপর চোখ যায়।
সাহস করে ফোন দেয় রুপন্তী,
__কে বলছেন?
__আমি রুপন্তী।
__বাহ,রুপন্তীর উপস্থিতি তে তো
আজকের রাতটা আমার কাছে রুপবতী
মনে হচ্ছে।
__তাই বুঝি! কিন্তু একজনের কাছে
রুপবতী হলেও আরেকজনের কাছে
তো
আমি কালো আধার।
__মন খারাপ?
__নাহ,মেঘহয়ে কারো মনে
প্রশান্তির
বৃষ্টি ছড়াতে চাচ্ছিলাম কিন্তু
সেখানে জলীয়বাষ্প এর বড়ই অভাব।
__কালকে বিকেল ৫টার পর ফ্রি
আছেন?
__কেন?
__না মানে বলাটা ঠিক হবে না
তবুও"
কাল আপনাকে সুন্দর একটা জায়গায়
নিয়ে যেতাম।"
__কিছুক্ষন ভেবে, আচ্ছা যাব,সমস্যা
নেই।
.
নির্জন, নির্মলা বৈকালিক
পবন;শুভ্রনীলের বিস্তৃতি গগন।আসন্ন
গোধুলী লগন, দুটি মন ভাবছে আনমন।
খানিক নীরবতা ভেঙ্গে রুপন্তী
বলে,
__আজকের বিকেলটা মনে হয় একটু
বেশিই সুন্দর?
__আপনি আসবেন বলেই হয়তবা এমন!
__আচ্ছা,আপনি আকাশ
ভালোবাসেন
নাকি নদী?
__বৃষ্টি, ছড়িয়ে যায় দুজনার মাঝে।
__রাত না দিন পচ্ছন্দ?
__ মৃদু আলো, যা দ্বীপ্তমান করে তুলে
অনুভুতি গুলিকে।
__পাহাড় নাকি সাগর?
__ঝর্না, যা বেয়ে চলে ললনার
বেনীর
মত অনন্তকাল।
.
নাদিমের রোমাঞ্চে অভিভূত হয়
রুপন্তী। নাদিমের পচ্ছন্দের সাথে
সবই
মিলে যায় রুপন্তীর।নাদিমের
উপস্থিতিই রাকিবের অনুপস্থিতি
ভুলিয়ে দেয়।
.
রুপন্তী কি বলে দিবে নাদিমের
প্রতি
যে ও দিন দিন দুর্বল হচ্ছে? কিন্তু
নাদিম
যদি শুধু ওকে বন্ধু হিসেবেই ভাবে
তখন??
অন্যমনস্ক রুপন্তী কে দেখে নাদিম
বলে,
__ভাবনার স্রোতে হারিয়ে
গেলেন
নাকি?
_গেলেই বা কি,তীরে উঠানোর
মানুষ
তো আর নেই।
__অনুমতি দিলে অনেকেই হাত
বাড়িয়ে দিবে....
__সব কিছুতেই কি অনুমতি লাগে? আর
আমি সবার হাত ধরবো কেন?
__নাদিম একটু ঘুরে রুপন্তীর হাতটা
ধরে
চোখেচোখ রেখে বলে,
"ভাবনার স্রোতে যেও না
হারিয়ে
দেব আমি হাত আজন্ম বাড়িয়ে
রবো পাশে চিরকাল তোমায়
ভালোবেসে!!!"
.
নাদিমের বুক ধুরু ধুরু কাঁপছে, রুপন্তী
লজ্জিত চাপা উল্লাসে।কারো
অনুপস্থিতি তে হয়তবা শুরু হলো
আরেকটা প্রনয় উপ্যাখান!
.
দেশে ফিরার ১০দিনের মাথায়
বিয়ের দিন ঠিক করে
রাকিব,রুপন্তীর
বাবার সাথে আলাপ করে।রুপন্তী
এখন
না পারছে নাদিমের কথা
রাকিবকে
বলতে না পারছে রাকিবের কথা
নাদিমকে বলতে।
বিয়ের দিন বিকেল থেকে
নাদিমকে
ফোন দিচ্ছে রুপন্তী, সুইচড অফ।
চিৎকার
করে কাদতে ইচ্ছে করছে ওর এখন.....
.
রাত ১২টায় চোখের জল মুছতে মুছতে
বাসর ঘরে ঢুকে রুপন্তী। খানিক পর
রাকিব ঢুকার পর রাকিবের বাবার
সাথে রুপন্তীর সেই সিরিয়াল
লেখা
ছেলেটি হন্তদন্ত হয়ে বলে,
__ম্যাডাম,সেই নাদিম নামের
স্যারটা
আজ দুপুরে বাইক এক্সিডেন্ট করে
আপনি
যে হসপিটালে বসতেন,সেই খানে
ভর্তি আছে।জ্ঞান হারানোর আগ
পর্যন্ত আপনার কথাই বলছিলো
বারবার।
কিন্তু আপনার বিয়ে বলে কিছু
জানাইনি।তবে এখন অবস্তা খুবই মুমূর্ষু,
তাই জানাতে আসলাম...ক্ষমা
করবেন।"
একদমে কথাগুলি বলে ছেলেটি
হাপাতে থাকে।রুপন্তী লাফ
দিয়ে
বিছানা থেকে উঠে,রাকিব হা
করে
কথাগুলি শুনে।বিয়ের সাজেই
ভালোবাসার মানুষটার সাথে
দেখা
করতে ছুটে যায় হসপিটালে
ছেলেটির
সাথে।পিছন পিছন ছুটে যায় রাকিব।
.
নাদিমের অপারেশন টা রাকিবই
করে।
৪ব্যাগ রক্তের ২ব্যাগই দেয় রাকিব।
এখন
অবধি রুপন্তী পাশে বসে আছে
নাদিমের। ওকে খাইয়ে দেওয়া,
মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া সব করে
রুপন্তী...দরজার ওপাশ থেকে রাকিব
সব
দেখে।
রাকিবের এখন কি করা উচিত
ভেবে
পায় না...।
.
৩দিন পর রাকিব নাদিমের কাছে
আসে,অনেকটাই সুস্থ এখন।রুপন্তী
পরিচয়
করে দেয়, সব খুলে বলে,পাশ থেকে
এক
নার্স নাদিমের জন্যে রাকিব কি
কি
করেছে তাও বলে।
রুমটা নিশ্চুপ হয়ে যায়,নাদিমের
চোখ
দিয়ে পানি পড়তে থাকে।কঠিন
একটা
সিদ্ধান্ত নেয় রাকিব,
__রুপন্তী, বিয়ে মানেই সুন্দর সংসার
না,সুস্থ জীবন না।এর জন্যে লাগে
দুজনার পচ্ছন্দের মিল, কাছে থাকার
আকর্ষণ,অনুপস্থিতির অনুভবতা...যা শুধু
নাদিমের সাথেই তোমার হয়েছে।
একটু থেমে নাদিমের দিকে মুখ
ঘুরিয়ে
বলে,
__নাদিম সাহেব,রুপন্তী আর আমার
মধ্যে
শুধুই কাবিন আর তিনবার কবুল বলাই
হয়েছে,তার থেকে বেশি কিছু না।
রুপন্তীকে আপনার সাথেই
মানায়...সুন্দর
হোক আপনাদের জীবন।
.
নাদিম হাত বাড়িয়ে রাকিবকে
থামতে বললেও চলে যায় রাকিব।
নাদিমের বাড়িয়ে দেওয়া
হাতটাকে নিজের দিকে নিয়ে
আলতো করে চুমু দিয়ে রুপন্তী বলে,
__আল্লাহ্ যা করেন,ভালোর জন্যেই
করেন।
__________________________________
মানুষের মন কখনই ধরে রাখা যায় না।
কাবিন করে ৬মাস বা বছরের নামে
দূরে থাকবেন আর আপনার হবু বউ এর মন
ঘরে বন্দী থাকবে এরকম কখনই
ভাববেন
না।সরাসরি বিয়ে করে বউকে ঘরে
তুলুন,স্বামীর সোহাগ দিয়ে তার মন
জয়
করুন।দেখবেন আপনাকে ছেড়ে তার
মন
কখনই কারো কাছে যাবে না।
__________
লেখাঃ http://www.facebook.com/venus.vasper
©somewhere in net ltd.