![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Time marches on but / memories stays, Torturing silenty the rest / of our days।
এই স্কুল ছাত্রীটি প্রতিদিন খেতে আসে। ঘেমে থাকা চিবুক, শ্রান্ত দৃষ্টি, এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুল নিয়ে সোজা চলে যায় ওয়াশ রুমে। সেখানে হাতমুখ ধুয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা টেবিলেই বসে।
টিস্যু নিয়ে এগিয়ে যায় রফিক।
মেয়েটা জানেই না বা কল্পনাই করতে পারে পারে না, প্রতিদিন ঐ টেবিলটা খালি পাওয়ার পেছনে কোন একজনের হাত থাকতে পারে।
প্রতি বৃহস্পতিবার - শুক্রবার কোন একজনের যে এই দুপুরবেলা টা কাটতেই চায় না, তা হয়তো মেয়েটার মাথায় কখনো আসেই নি।
কেন প্রতিদিন একটা ছেলেই টিস্যু এগিয়ে দেয়, এটা নিয়েও হয়তো কখনো ভাবে নি।
স্কুল ব্যাজে ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে মেয়েটার নাম লিখা।
রফিক ইংরেজি পড়তে পারে না।
কখনো কাউকে সাথে নিয়ে আসে না মেয়েটা। সব সময় একা আসে, চুপচাপ খেয়ে চলে যায়। সাথে কেউ আসলে হয়তো নাম ধরে ডাকতো, তখন সহজেই নামটা জানতে পারতো।
আবার, মেয়েটার গুটানো স্বভাবের জন্য কিছু জিজ্ঞেস করতেও ভয় পায়।
তাই রফিক অনেক কস্টে, অনেকদিন সময় নিয়ে মেয়েটার স্কুল ব্যাজের লিখাটা হুবহু কপি করতে পারলো।
সেই কপি করা লেখাটা নিয়ে নিজের চতুর্থ শ্রেণী পড়ুয়া বোনের কাছে গিয়ে জানতে চাইলো কি লেখা আছে।
সরকারি প্রাইমারি স্কুলের অবহেলা প্রাপ্ত ছাত্রী নিজের চেস্টায় যতটুকু পারে তাতে অনেক কস্টে মেয়েটির নাম উদ্ধার করতে পারলো "ছুমনা"।
ছুমনা ওরফে সুমনা খেয়ালই করতে পারে না নোংরা- ময়লা একটা ছেলে মার্জিত হওয়ার চেস্টা করছে।
মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় নাকি খুবই প্রখর, কেউ পর্যবেক্ষণ করলে নাকি কিভাবে যেন ওরা টের পেয়ে যায়।
কিন্তু সুমনার হয়তো ইন্দ্রীয় ঠিকভাবে কাজ করছে না, অথবা ওর এমন কোন ইন্দ্রীয়ই নেই।
রফিক মাসের পর মাস সুমনার খাওয়া লক্ষ্য করছে সেটা যেন সুমনার নজরেই পড়ছে না। একজন হোটেল বয় তার কাস্টমারের খাওয়া লক্ষ্য করবে সেটা স্বাভাবিক ভেবেই হয়তো কেয়ার করে না সুমনা।
সুমনার প্রতি রফিকের এই অতি আগ্রহ সুমনার চোখে পড়ে না। সে নির্বিকার।
রফিক জানে, সে কখনো বলতে পারবে না তার মনের কথা। আসলে সে নিজেও জানে না, কেন সে সুমনার প্রতি এত আগ্রহী।
তবে এটা যে ভালবাসা নয় সেটা উপলব্ধি করতে পারে। কারন, তার ভালবাসার মতো কোন যোগ্যতাই নেই।
কিন্তু, ভালবাসতে যে যোগ্যতার প্রয়োজন পড়ে না বা সামর্থ্য দেখে যে কেউ ভালবাসে না সেটা রফিকের অজ্ঞাত।
এভাবে বেশকিছুদিন যাবার পর মেয়েটি আর আসেনা হোটেলে। দিন যায়, মাস যায় হোটেলে সুমনার কোন আনাগোনা নেই, কিন্তু প্রতিদুপুরে রফিকের মনে সুমনার চলাফেরা দিনকে দিন বাড়তেই থাকে।
অবশেষে রফিক বুঝল এই হোটেলে সে আর কাজ করতে পারবে না। তাই রফিক ওদের জেলা সদরে নতুন একটি হোটেলে কাজ নিলো।
প্রথমদিনেই রফিকের চোখে পড়লো নতুন স্কুল ড্রেস (আসলে ওটা কলেজ ড্রেস ছিল) পড়া সুমনাকে।
সুমনাও রফিককে দেখে ভ্রূকুটি করলো, ধীরে ধীরে সেটা হাসিতে পরিণত হলো।
এ হাসি নিতান্তই হাসি নয়, এ হাসিতে প্রকাশ পেল নির্ভরতা, আপন মানুষ কাছে পেয়ে শরীরের শিথিলতা, অচেনা মানুষের ভীরে হঠাৎ আপন কাউকে পেয়ে যাওয়ার আনন্দ।
রফিক হাসি মুখে টিস্যু নিয়ে এগিয়ে গেল, সুমনা রফিকের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে; আজ হয়তো খাবারের অর্ডারের বাইরেও কথা হবে দুজনের।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:৫৪
ভবঘুরে ভূত বলেছেন: আমার পছন্দের তালিকার প্রথম দিকের গল্প এটা।