![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Time marches on but / memories stays, Torturing silenty the rest / of our days।
সকাল...... গল্পের প্রধান চরিত্র। এটা ওর নিজের দেয়া নাম। বাবা মায়ের দেয়া নামটা হলো কাজী আনোয়ারুল ইসলাম। বন্ধুরা আনোয়ার - জানোয়ার বলে খেপায়। তাই ইদানিং নামটা পাল্টিয়ে নিয়েছে। সকাল-নামটা বাছাই করার প্রধান কারন হলো শুক্রবার। প্রতি শুক্রবার সকাল বেলা আনোয়ার বিশেষ কাজের জন্য বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে,ফেরে অনেক রাতে। এই দিনটির জন্য,তাকে কোন জবাবদিহিতা করতে হয় না। প্রতি শুক্রবার সে মোট ৫০০ টাকা পায় মা এবং বোনের কাছ থেকে।
শুক্রবার সকালের জন্য আনোয়ার গোটা সপ্তাহব্যাপী উন্মুখ হয়ে থাকে। তাই, নিজের নামটাই সকাল রেখে দিয়েছে। যদিও বাড়ির কেউ জানে না। এ নামটা কেবল শুক্রবারেই ব্যবহার করে সে।
আজ শুক্রবার.......
সকাল সকাল গোছল সেরে,নাস্তা করে যথাক্রমে মা ও বোনের সাথে দেখা করলো আর পকেটে ৫০০ টাকার অস্তিত্ব অনুভব করলো। যদিও টাকার কোন উত্তাপ নেই তবুও নিজের বাম পাশের উরুতে ছ্যাকা দিচ্ছে টাকা গুলো,অজান্তেই হেসে ওঠে সকাল। মানিব্যাগ থাকা সত্বেও সে মানিব্যাগে টাকা রাখে না। মানিব্যাগ তার অনেক ধরনের কাগজে পরিপূর্ন। সকাল ডানহাতি হয়েও টাকা বাম পকেটে রাখে, পকেটমারের হাত থেকে রক্ষার জন্য। একবার ট্রেন স্টেশনে এক পকেটমারের সাথে পরিচয় হয়েছিল। সেই পকেটমারের কাছ থেকেই জেনেছে...যে পকেটমারেরা ভিকটিমের উপর অনেক্ষন যাবৎ লক্ষ্য করে। ভিকটিম ডানহাতি না বামহাতি এটা জানা একজন পকেটমারের জন্য জানা খুব জরুরি,কারন মানুষ সাধারনত যে হাত ব্যবহার করতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে সেই পকেটেই টাকা বা প্রয়োজনীয় জিনিস রাখে।
যাই হোক, সকাল পকেটে ৫০০ টাকা নিয়ে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। শরাফত চাচার দোকানের এক কাপ চা খেয়ে রওনা দেয় ট্রেন স্টেশনে। পকেটে টাকা থাকলেও সকাল শরাফত চাচাকে টাকা দেয় না। শরাফত চাচা ওকে প্রতিদিন ফ্রীতে চা খাওয়ায়। সকাল প্রতিদিন ভাবে চাচাকে আজ জোর করে টাকা দেবে কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে না।
স্টেশনে পৌছে সকাল তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করে চারপাশ। নাহ্, আজ কাওকেই তেমন ইন্টারেস্টিং লাগছে না। ট্রেন এসে থামলো প্লাটফর্মে। সবাই চঞ্চল হয়ে পড়লো। পেট খালি করা আর ভর্তি করার কাজে লেগে গেল ট্রেনটা। এই দৃশ্য প্রতিদিন দেখলেও কোন বিরক্তি আসে না। যত দেখে ততই ভাল লাগে। পোঁ...... পোঁপোঁপোঁ....ট্রেনটা যেন হুমকি দিল "আমি চলে যাচ্ছি কিন্তু।" চাকা গড়াতে শুরু করলো। সেই মুহূর্তে সকাল চোখের কোনে দ্রুত কোন নড়াচড়া লক্ষ্য করলো। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে ২৩-২৪ বছর বয়সের একটা মেয়ে দৌড়ে গিয়ে ট্রেনে উঠলো। সকালের ইচ্ছা হলো সেও পিছে পিছে গিয়ে ওঠে,কিন্তু ট্রেনটা আর ধরা যাবে না। ট্রেনটার সাথে সাথে মেয়েটাও দৃস্টিসীমার বাইরে চলে গেল। মেয়েটা যেন খুব তাড়াহুড়া করে বেড়িয়েছ। জামা কাপড় যাচ্ছেতাই,মুখে মেকাপ নেই। মেকাপ ছাড়া এখনকার যুবতীদের ভাবাই যায় না। তবে চুল গুলো ঠিকঠাক ভাবে পনিটেইল করে বাঁধা। চুলের সৌন্দর্য আর ভীত সন্তস্ত্র চোখ মেয়েটার মেকাপের অভাব ঘুচিয়ে দিয়েছে।
কিছুক্ষণ পর আরেকটা ট্রেন আসলো ধীরে সুস্থে গিয়ে চেপে বসলো ট্রেনে। ঝিকঝিক শব্দ শুনতে শুনতে অবশেষে জংশনে আসলো।
দ্রুত নজর বুলালো চারপাশে। মুখে ফুটে উঠলো এক চিলতে হাসি। নাহ্,তরুণী কেবল আরেকটা ট্রেনের দিকে এগুচ্ছে। সকাল জানতো মেয়েটা জংশনে ট্রেন পাল্টাবে। কারন, যদি মেয়েটার ট্রেন পাল্টানোর দরকার না পড়তো তাহলে সে এই লোকাল ট্রেনে করে তারাহুড়া করে জংশনে আসতো না। একটু দেরি করলেই আরামসে মেইল ট্রেনে করে আসতে পারতো,যেটাতে সকাল এসেছিল।
যাই হোক মেয়েটার পিছেপিছে ট্রেনে গিয়ে উঠলো।মেয়েটার সামনা-সামনি বসার খুব ইচ্ছা ছিল সকালের,কারন সামনা-সামনি বসে কাওকে পর্যবেক্ষণ করলে সহজে কিছু চোখ এড়ায় না। কিন্তু সকাল মেয়েটার সামনে বসতে পারলো না,সে আসার আগেই সিট দখল। অবশেষে উপান্তর না পেয়ে আড়াআড়ি সামনের ছিটে বসলো। এখান থেকে মেয়েটাকে লক্ষ্য করছে। মেয়েটার নামটা জানা জরুরি। কি নাম হতে পারে মেয়েটার, যা স্মার্ট!! হবে হয়তো কোন স্টাইলিশ নাম। যেমন, সুমি.....। আজকের জন্য মেয়েটার নাম সুমি। যার নাম সকাল জানে না,তার একটা নাম মনে মনে দিয়ে নেয় যাতে তাকে নিয়ে ভাবতে সুবিধা হয়। আর নাম বাছাই করাতেও সকালের একটি বিশেষত্ব আছে। যার নাম সে ঠিক করে নেয় তাদের সবার নামের আদ্যাক্ষর সবসময় "স" দিয়ে হয়।
সুমি; মেয়েটার নাম সুমি।
মনে মনে কয়েকবার আওড়ালো নামটা। আর তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো সুমি কে। সুমি খুব অস্বস্তিবোধ করছে আর বারবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকাচ্ছে। তার মানে কোন কারনে সুমি খুব তাড়া অনুভব করছে, গন্তব্যে তাড়াতাড়ি পৌঁছার জন্য মুখিয়ে আছে। হঠাৎ সকালের দিকে তাকাল। সকাল চোখ না সরিয়ে আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। এতে দুটো কাজ হলো।এক, সুমির চোখের গভীরতা মাপা হল; দুই, মেয়েটাকে একটু অন্যমনস্ক করে দেয়া হলো। সুমি এখন সকালকে নিয়ে ভাববে, ছেলেটা কি পরিচিত? দেখেছি নাকি ওকে? আমার দিকে তাকিয়েছিল কেন? এসব ভাবতে ভাবতে যে কারনে পেরেশান হয়ে আছে সেটা ভুলে যাবে কিছুক্ষণের জন্য।
তবে আরেকটা বিষয় পরিস্কার হলো। মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যে খুবই প্রখর সেটা আরেকবার প্রমাণিত হলো।
সম্ভবত সুমির ফোন বেজে উঠলো। কানে চেপে ধরেই জোরে জোরে কথা বলতে শুরু করলো। সকালের সেটা ভাল লাগলো না। কারন, ট্রেনে শব্দ জন্য সুমি হয়তো কথা ঠিক ভাবে শুনতে পাচ্ছে না কিন্তু যিনি অপর পাশে আছেন তার তো শুনতে সমস্যা হওয়ার কথা না। সুমি আস্তে কথা বললেও সুন্দর ভাবে অপর পাশের ব্যক্তি তা শুনতে পারবে। মানুষের লজিক এখানেই থমকে দাড়ায়। সকাল অনেক শিক্ষিত মানুষকেও এই বোকামি করতে দেখেছে। নিজে কোলাহলের মধ্যে থেকে তার স্বাদ অপর পাশে ব্যক্তিকেও দেয়। একটু চিন্তা করলেই বিষয়টাকে খুব হাস্যকর মনে হবে সবার কাছে।
ইতোমধ্যে তিনটা স্টেশন পার করে ফেলেছে ট্রেনটা। টি.টি এসে সবার টিকিট চেক করে ফেলেছে। সকাল টাকা দিয়ে ট্রেনেই টিকিট সংগ্রহ করলো। সকাল প্রতিদিন টিকিট নেবার সময় ভাবে টি.টি এর পূর্নরূপ কি? টি.টি এর পূর্নরূপ ticket taker হতে পারে কিন্তু সবাই বলে ticket checker। কিন্তু আসলে কোনটা? সকাল কাওকে জিজ্ঞেস করে না এ বিষয়ে। যদি ব্যাপারটা জেনেই যায় তাহরে প্রতিদিন টিকিট নেবার সময় যে চিন্তাটা মাথায় আসে সেটা আর আসবে না। তখন সেই শূন্যস্থানটা কে পূরন করবে?
পরের স্টেশনে সুমি নেমে পড়ল। পিছে পিছে সকাল ও। ট্রেন থেকে নেমে সুমি একটা সিএনজি তে গিয়ে উঠল। সিএনজি টা খালি ছিল। সকাল আর সুমি গিয়ে দুটো সিট পুরন করলো।বাকি আছে তিনটা।
(চলবে……)
©somewhere in net ltd.