![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Time marches on but / memories stays, Torturing silenty the rest / of our days।
জিবনে মায়ের অবদান: একটি ছেলের কথা
আমি যখন তোমার গর্ভেঃ
মা! তোমার সাথে এখানেই তো আমার পরিচয়। এখানেই তো তোমার সাথে আমার বন্ধনের শুরু। আমাকে নিয়ে তোমার কত স্বপ্ন.... কত জল্পনা-কল্পনা। সবই আমি শুনতাম, কিন্তু দেখ, আমি তোমাকে আমার মনের কথা বলতে পারতাম না। আমার জন্য তোমার কতই না চিন্তা? তুমি কি খেলে আমার উপকার হবে কি খেলে আমার ক্ষতি হবে সেসব নিয়ে সর্বদাই তটস্থ থাকতে। তোমার গর্ভে আমার দুস্টুমি গুলো তো তুমি ছাড়া কেউ অনুভব করতে পারবে না, তাইনা মা? রোজ আমি দুস্টুমি করতাম আর তুমি আমার দিকে আঙুল দিয়ে শাসাতে; বলতে, আর যদি নড়াচড়া করেছ তবে কিন্তু তোমার দুস্টুমির কথা তোমার আব্বুকে বলে দিবো।
কিন্তু আমি তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ করতাম না, কারন জানি তুমি আব্বুকে কখনোই আমার নামে নালিশ করো না। রোজ দুপুরের খাবার পর তুমি আমার জন্য নকশি কাঁথা সেলাই করতে। আমি তো অন্ধকার জগতে থাকতাম, তুমিই আমাকে সব বলতে। তুমি বলতে যে, আমার জন্য কাঁথা সেলাই করছো, আমার জন্য জামা কিনছো। আমাকে না দেখেও আমার জন্য তোমার এই আকুলতা দেখে সত্যিই আমি অবাক হতাম মা।
আমার বয়স যখন পাঁচঃ-
সেদিন তুমি আমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়ে আব্বুর সাথে পাঠিয়ে দিলে। আমি খুব কাঁদছিলাম। বলছিলাম, আমি স্কুলে ভর্তি হবো না। অর্দ্ধেক রাস্তা যাবার পর আব্বু আমাকে সামলাতে না পেরে আবার বাসায় ফিরিয়ে এনেছিল। তুমি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বলেছিলে, বাবার সাথে যাবে না ঠিক আছে, কিন্তু আমার সাথে তো যাবে? কাল তোমার সাথে আমিও স্কুলে যাবো। সেই স্কুল জিবন শুরু হয়েছিল আমার।
আমি যখন দুরন্ত কিশোরঃ-
মনে আছে মা সেদিনের কথা? যেদিন ঢিল মেরে মুহিনের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলাম। সেদিন আব্বু আমার উপর খুব রেগেছিল, সেদিন আব্বুর মারের হাত থেকে বাঁচাতে তুমি কিই না করেছিল। সেদিন আমি আব্বুর সাথে ঘুমাবো না জন্য তুমি আব্বুকে একা অন্য ঘরে ঘুমানোর জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিলে।
আমি যখন দশম শ্রেণীতেঃ-
কিছুদিন পরই আমার পরিক্ষা। রাত জেগে পড়তাম। তুমিও আমার সাথে রাত জাগতে। কত করে তোমাকে বলেছি, আমি একা জাগতে পারবো, তবুও তুমি আমার সাথে রাত জাগতে। পড়া শেষে,আমাকে ঘুমানোর জন্য মশারি টাঙিয়ে দিয়ে তারপর তুমি ঘুমাতে যেতে।
প্রথম প্রেমঃ-
যেদিন ফারহানা কে দেখে মুগ্ধ হলাম সেদিনই কলেজ থেকে ফিরে এসে তোমাকে বললাম সব কথা। মনে আছে মা? সেদিন তুমি হাসছিলে আমার কথা শুনে, আর আমি তখন রাগে জ্বলে যাচ্ছিলাম।
যেদিন চাকরি পেলামঃ-
আমার চাকরির খবর শুনে তুমি যতটা খুশি হয়েছিল ততটা হয়তো আমিও হইনি। তবে অনেক তৃপ্তি পেয়েছিলাম তোমার খুশি দেখে। প্রথম চাকরির দিন তুমি বলেছিলে, বাবা সবসময় নিজের বিবেক দিয়ে কাজ করবে, আর ব্যক্তিত্ব টা নস্ট করবে না।
আমার যেদিন বিয়েঃ-
আমার বিয়ের দিনে তুমি কেন কেঁদেছিলে আমি আজও জানি না মা। হয়তো,তুমি ভেবেছিলে তোমার ছেলে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, চিরদিনের জন্য পর হয়ে যাচ্ছে। ভেবেছিলে, তোমার ছেলে আর তোমার কথা শুনবে না,হয়তো তোমাকে দুরে ঠেলে দেবে। তারপরও হাসিমুখে ঘরে তুলেছিলে তোমার বৌমা কে।
আবার যেদিন কাঁদলেঃ-
সারাজীবন আমাকে স্নেহ, আদর, ভালবাসার নমুনা তুমি আজ পেলে মা। আমার অনুপস্থিতিতে তোমাকে অপমান করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল তোমার বৌমা। আমাকে তুমি সেসব কথা কিছুই জানাও নি। জানিয়েছিল তোমার নাতী। সেদিনই আমি বাসার সবার সামনে বলেছিলাম, আমি জন্ম থেকে যাকে এই বাড়িতে দেখে এসেছি সে এই বাড়িতে না থাকলে আমিও থাকবো না, আর যদি কেউ আমার মাকে সহ্য করতে না পারো, তবে সে বাড়ি ছেড়ে চলে যেত পারো।
সেদিন তুমি আবার কেঁদেছিলে মা। সেদিন কেন কেঁদেছিলে আমি হয়তো জানি মা। কারন, মায়ের কান্না হয়তো সন্তান বুঝতে পারে। তুমি কেঁদেছিলে আর ভেবেছিলে শত ব্যাস্ততা, সংসারের ঘানি আর জিবনের তরী বইতে বইতেও তোমার ছেলে তোমাকে ভুলে নাই, ভুলে নাই তোমার ভালবাসার কথা, স্নেহের কথা, আদর আর ত্যাগের কথা।
মায়ের ভালবাসায় সিক্তঃ ভবঘুরে ভূত
©somewhere in net ltd.