নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভোগাই

আদি - অনন্ত

ভোগাই

ধরণী চাহিছে শুধু হৃদয়ে হৃদয়।

ভোগাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্রহরাজ বৃহস্পতির আদি অন্ত

২৩ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৭

রাতের আকাশে এখন চাঁদের পাশেই যে বড় আলোক বিন্দুটি উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিচ্ছে সেদিকে টেলিস্কোপে চোখ রেখলে দেখা যাবে চারটি বিন্দু। একটি বড় আর তিনটি ছোট। বড় বিন্দুটিই হচ্ছে বৃহস্পতি গ্রহ। আর ছোট তিনটি বিন্দু হচ্ছে বৃহস্পতির তিনটি বৃহৎ উপগ্রহ। আসুন সামান্য কিছু জানি বৃহস্পতি গ্রহ সম্পর্কে।







গ্রহরাজ বৃহস্পতিকে প্রকৃত পক্ষেই গ্রহদের রাজা বলা চলে। বৃহস্পতি গ্রহকে ইংরেজীতে বলা হয় Jupiter (জুপিটার)। রোমানরা গ্রহটির নাম রেখেছিল পৌরাণিক চরিত্র জুপিচারের নামে। জুপিটার রোমান পুরাণের প্রধান দেবতা। জুপিটার অর্থ হচ্ছে “আকাশের পিতা”।

সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে পঞ্চম এবং আকার আয়তনের দিক দিয়ে সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ হচ্চছ আমার বৃহস্পতি। বৃহস্পতি ব্যতিত সৌর জগতের বাকি সবগুলো গ্রহের ভরকে একত্র করলেও বৃহস্পতির ভর তা থেকে প্রায় আড়াই গুণ বেশি হবে। সূর্যের সব কটি গ্রহের ভর সমস্টির প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ ভরই হচ্ছে বৃহস্পতির। বৃহস্পতিসহ আরও তিনটি গ্রহ শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুনকে একসাথে গ্যাস দানব গ্রহ বলা হয়। বৃহস্পতি গ্রহ এতোই বড় যে এর ভিতরে চাইলেই ১০০০টি পৃথিবী অনায়াশে পুরে রাখা যাবে।

বৃহস্পতি সূর্য থেকে ৭৭.৮৪ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আর পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৮০ কোটি কিলোমিটার। এর ভর পৃথিবীর ৩১৭.৮ গুণ আর ব্যাস ১১.২ গুণ। এর গড় ঘনত্ব পানির ১.৩ গুণ। নিজ অক্ষের চারপাশে এর ঘূর্ণনকাল ৯.৮ ঘণ্টা আর সূর্যের চারপাশে আবর্তন করতে এর সময় লাগে ১১.৮৬ বছর। অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেবে মাত্র ৯.৮ঘন্টায় বৃহস্পতিতে এক দিন হয়, কিন্তু বৃহস্পতির একবছর হতে সময় রাগে পৃথিবীর হিসেবে মাত্র ১১.৮৬ বছর। এতো বেশী সময় লাগার একমাত্র কারণ হচ্ছে সূর্য থেকে এর দূরুত্বজনিত বিশাল বড় অরবিট বা কক্ষপথ। বিশাল বতুলাকার বা ডিম্বাকার কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় বৃহস্পতি পৃথিবীর অনেকটাই কাছে চলে আসে। এই বছর সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখে ৪৭ বছর পর পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসে বৃহস্পতি। এর আগে সর্বশেষ ১৯৬৩ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিল আর আবার ২০২২ সালের পর পুনরায় একে একই অবস্থানে পাওয়া যাবে।

বৃহস্পতি গ্রহের বায়ুমণ্ডল গ্যাসের মেঘে ছাওয়া। মেঘ ছাড়া বৃহস্পতির আর কিছুই বাইরে থেকে দেখা যায় না, কারণ এই মেঘ প্রায় ১০০ কি.মি পূরু। এই মেঘের তাপমাত্রা -১২০ডিগ্রী সে. এরও কম। পৃথিবী থেকে দেখলে বৃহস্পতির আপাত উজ্জ্বলতার মান পাওয়া যায় ২.৮। এটি পৃথিবীর আকাশে দৃশ্যমান তৃতীয় উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। কেবল চাঁদ এবং শুক্র গ্রহের উজ্জ্বলতা এর থেকে বেশি। অবশ্য কক্ষপথের কিছু বিন্দুতে মঙ্গল গ্রহের উজ্জ্বলতা বৃহস্পতির চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

যদিও বৃহস্পতি গ্যাসিয় গ্রহ তবুও ধারনা করা হয় গলিত সিলিকেট ও ধাতুর দ্বারা বৃহস্পতির একটি কঠিন কেন্দ্রকণা গঠিতো হয়েছে। এই কেন্দ্রকণার আকার প্রায় পৃথিবীর আকারের সমান। এ ছাড়া বৃহস্পতি, সূর্যেরই মতো হাইড্রজেন ও হিলিয়ামে গঠিতো। বৃহস্পতির মেঘের উপরি ভাগের তাপমাত্রা -১২০ডিগ্রী সে. এরও কম হলে কিহবে, এর কেন্দ্রের তাপমাত্রা ৩০০০০ ডিগ্রী সে.। অর্থাৎ এই তাপমাত্রা সূর্যের পৃষ্টদেশের প্রায় ৫গুণ বেশী। তাই বলা যায় বৃহস্পতির অভ্যন্তরে নিজস্ব তেজের উৎস রয়েছে।

আগেই বলেছি বৃহস্পতি গ্রহের প্রাথমিক উপাদান হচ্ছে হাইড্রোজেন এবং সামান্য পরিমাণ হিলিয়াম। খুব দ্রুত ঘূর্ণনের কারণে এর আকৃতি হয়েছে কমলাকৃতির গোলকের মত। এই বিশাস গ্রহের বাইরের বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন অক্ষাংশে ঝড়-ঝঞ্ঝাপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে। এ ধরণের পরিবেশের একটি অন্যতম ফলাফল হচ্ছে মহা লাল দাগ (great red spot)।







এটি মূলত একটি অতি শক্তিশালী ঝড় যা সপ্তদশ শতাব্দী থেকে একটানা বয়ে চলেছে বলে ধারণা করা হয়। গ্রহটিকে ঘিরে একটি দুর্বল বা ক্ষীন বলয় এবং শক্তিশালী চৌম্বোকক্ষেত্র রয়েছে।

উপগ্রহ বৃহষ্পতির ৬৩টি নামকরণকৃত উপগ্রহ বা চাঁদ রয়েছে। এদের মধ্যে ৪৭টির ব্যাস ১০কিলোমিটারের চেয়েও কম এবং ১৯৭৫ সালের পর আবিষ্কৃত । বৃহষ্পতির সবচেয়ে বড় চারটি উপগ্রহ হল আয়ো, ইউরোপা, গ্যানিমেড এবং ক্যালিস্টো, এদেরকে গ্যালিলীয় উপগ্রহ বলা হয়। কারণ ১৬১০ সালে গ্যালিলিও প্রথম এই চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার করেছিলেন।







সেদিন ছিলো ১৬১০ সালের জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখ। বিজ্ঞানী গ্যালিলিও তার তৈরি দূরবীন দিয়ে চোখ রাখলেন রাতের আকাশের সবচে উজ্জ্বল বস্তু, বৃহস্পতি গ্রহের দিকে।







বৃহস্পতির দুপাশে একই সরলরেখায় কয়েকটি ছোট ছোট আলোক বিন্দু দেখতে পেলেন গ্যালিলিও। বৃহস্পতির বামে দুটি ছোট আলোক বিন্দু আর ডানে একটি। পরের রাতে গ্যালিলিও একরাশ বিস্ময় নিয়ে খেয়াল করলেন, তিনটি নক্ষত্রই চলে এসেছে বৃহস্পতির ডানে। দৃশ্যটা দেখে পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন গ্যালিলিও। আরও বোকা বনে গেলেন গ্যালিলিও, এর পরের রাতে এবার দেখা গেল দুটো নক্ষত্র বৃহস্পতির বামে চলে গেছে এবং একটা নক্ষত্র উধাও। এর পরের দুই রাতে দেখা গেল, নক্ষত্র তিনটা বৃহস্পতির এপাশ থেকে ওপাশে নড়াচড়া করছে। শেষমেষ তিনি বুঝলেন, নক্ষত্রগুলো বৃহস্পতির চার পাশে ঘুরছে এবং এরা নক্ষত্র নয়, চাঁদ। বৃহস্পতির চাঁদ। জানুয়ারির ১৩ তারিখ গ্যালিলিও বৃহস্পতির চতুর্থ চাঁদটিকেও দেখতে পেলেন। এটি গ্যালিলিও যে ক’দিন ধরে বৃহস্পতি দেখছেন ততোদিন বৃহস্পতির আড়ালেই ছিলো। এরাই গ্যালিলিও আবিস্কার করা চারটি উপগ্রহ বা বৃহস্পতির চাঁদ। এই চার উপগ্রহ বা চাঁদকে একত্রে গ্যালিলিও সম্মানে বলা হয় গ্যালিলিওউপগ্রহ বা চাঁদ।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.