![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতি ৪ বছর পর পর বিশ্বকাপ ঘুরে ফিরে আসে এবং অনেকেরেই হাসিয়ে আবার কাউকে না কাউকে কাঁদিয়ে চলে যায়। এই বিশ্বকাপকে ঘিরে অনেকেরেই ফেলে আসা জীবনে কত না সুখ স্মৃতি আবার কতনা দুঃখ স্মৃতি জড়িয়ে আছে? তারপরও সবকিছু ভুলে গিয়ে আমরা আমাদের প্রিয় দলের সারাক্ষণ মঙ্গল কামনায় অস্থির থাকি। আমাদের প্রিয় দল জয়লাভ করলে আমরা আনন্দিত হই আর পরাজয়ে আমরা ভীষণ কষ্ট পাই। আমার কাছে কেন জানি মনে হয় ব্যাপারটা ঠিক মানব-মানবির প্রেমের মত । এক জন যেমন অন্য এক জনের প্রেমে পরে যায় কোন কারন ছাড়াই। আর তা থেকে আমি বাদ যাই কিভাবে? আমারও ভাল লাগা থাকতে পারে। থাকতে পারে কোন পছন্দের দল।
১৯৮৬।
যে দেশের মানুষের সাথে রক্তের কোন সম্পর্ক নেই, নেই কোন আত্নীয়তার বন্ধন। সেই দেশের ফুটবলকে কি না ভালাবাসি? আমি ক্লাস ২য় শ্রেণীতে পড়ি তখন। ফুটবল নিয়ে ছুটো-ছুটি করি। বাড়ির সবাইকে ম্যারাদোনা ম্যারাদোনা বলে চিৎকার করতে শুনেছি। বড় ভাইদের সাথে বসে রাত জেগে টিভিতে খেলা দেখেছি। যদিও ২০১৪ সালে বসে এখন কোন খেলা আমি মনে করতে পারছি না। তখন থেকেই আর্জেন্টিনাকে সাপোর্ট করি, যে দেশটাকে চিনি না শুধু একজন প্লেয়ারকে দেখে যার নাম ম্যারাদোনা। পরবর্তীতে আমার ফুটবল মাঠে ম্যারাদোনার ১০ নম্বর জার্সি এবং তার ছবি সম্ভিলিত ক্লাসের খাতা আমার চা-ই চাই। এর জন্য যে কত কেঁদেছি তার কোন হিসেব নেই।
১৯৯০।
২য় বারের মত World Cup দেখব। মনে অনেক উৎসাহ, উদ্দীপনা নিয়ে প্রহর গুনছি। কবে শুরু হবে খেলা? এরই মধ্যে অনেক বড় হয়ে গেছি। প্রাইমারী স্কুলের গণ্ডি পার হয়েছি। ফুটবলও ভাল খেলতে পারি তখন। ১ম খেলা ক্যমেরুনের সাথে, শুরু হবে রাত ১০ টা। ততক্ষন জেগে থাকা একটা বিরাট কষ্ট সাধ্য ছিল আমার জন্য। ঘুমিয়ে পড়লাম। দেখা হল না খেলা । সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে প্রচণ্ড মন খারাপ। আরও মন খারাপ যখন শুনলাম ক্যামেরুনের সাথে ১ গোলে হেরেছে। পারল না ম্যারাদোনা, ক্যানেজিয়া ও বুরুচাগারা। ক্যামেরুনের খেলোয়াড়রা নাকি ম্যারাদোনাকে অনেক মেরেছে। যাই হোক তারপর থেকে কোন খেলা আর বাদ দেইনি। সেবার মনে হল ফাইনাল খেলায় রেফারী এক প্রকার জোর করে আর্জেন্টিনাকে হারাল। দুইটা লাল কার্ড, তারপর একটা পেনাল্টি। আর্জেন্টিনাকে জিততে দিল না, ৩য় বারের মত বিশ্বকাপ। World Cup গেল West Germany র ঘরে রেফারীর কল্যাণে।
১৯৯৪।
ক্লাস TEN এ পড়ি তখন। পড়াশুনা নিয়ে তখন খুব সিরিয়াস। খেলা আর আগের মত টানে না। নিজেও সকল প্রকার খেলাধুলা ছেড়ে দিয়েছি। তারপরও ম্যারাদোনা বলে কথা। সেবারই কোকেন নামের সেই মাদকের জন্য ফুটবল মাঠ থেকে বিদায় নিতে হল ম্যারাদোনা কে চিরদিনের জন্য। বিদায় ম্যারাদোনা। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ক্যানেজিয়াকে দিয়ে যে গোল করিয়েছে তা এখনও আমার স্মৃতির আকাশে নক্ষত্রের মত জ্বল জ্বল করছে । সেবার 2nd Round ই রুমানিয়ার সাথে ৩-২ তে হেরে গেলো আর্জেন্টিনা। আসলে আমরা ম্যারাদোনা ছাড়া আর্জেন্টিনাকে কখন চিন্তাই করতেই পারতাম না । ম্যারাদোনা আর মাঠে নামতে পারবে না, তার খেলা আমরা আর কেউ দেখতে পারবো না তা ভেবে যে কষ্ট পেয়েছি তা যারা আর্জেন্টিনাকে সাপোর্ট করে, পুরো ফুটবল দলকে ভালবাসে, ভালবাসে ম্যারাদোনার গতিময়, শৈল্পিক ফুটবলকে তারাই সেইদিন টের পেয়েছিল হাড়ে হাড়ে।
১৯৯৮।
কলেজ পাশ করে বেকার জীবন যাপন করছি প্রায় বছর খানেক। তখনও কোন University তে Admission নিতে পারিনি। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্তপূর্ণ এক অধ্যায় পার করতে যাচ্ছি। এরই মধ্যে আবার Football World Cup উত্তেজনায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখলাম । ১৯৮৬ এর পুনরাবৃত্তি ২য় রাউন্ডে English দেরকে টাইব্রেকারে (2)৪-৩(2) হারিয়ে শেষ আটে হল্যান্ড এর মুখোমুখি। প্রতিপক্ষের রক্ষণ দুর্গে হানা দিল সেই সময়ের নতুন ম্যারাদোনা নামে রব উঠা এরিয়েল ওরতেগা । পেনাল্টি বক্সে পরে যায় এরিয়েল ওরতেগা । গর্জে উঠল সমগ্র স্টেডিয়াম পেনাল্টির দাবীতে। হল্যান্ডের গোলরক্ষক প্রতিবাদ করতে এগিয়ে যায় এরিয়েল ওরতেগার কাছে । আর ওরতেগাও মেজাজ হারিয়ে নিজের মাথা দিয়ে ধাক্কা দিল গোলরক্ষককে। রেফারী ওরতেগাকে লাল কার্ড দেখালো । ২-১ গোলে হেরে সকল আর্জেন্টিনার ফ্যানকে চোখের জলে ভাসিয়ে বিদায় নিল আর্জেন্টিনা।
২০০২ সাল।
এইবারের World Cup আর্জেন্টিনাই পাচ্ছে, সকল ফুটবল বোদ্ধাদের মতে আর্জেন্টিনার গায়ে ছিল Favorite এর তকমা। ইংল্যান্ড, সুইডেন আর নাইজেরিয়ার মত দল নিয়ে আর্জেন্টিনা টিম পড়ল Death Group এ । বিস্ময়কর ভাবে ইংল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলে হেরে আর সুইডেনের সাথে ১-১ গোলে ড্র করে কোটি কোটি ভক্ত হৃদয়কে কান্নায় ভাসিয়ে আরও একবারের মত প্রিয় দল আর্জেন্টিনা বিদায় নিল 1st Round থেকেই ।
২০০৬।
এইবার যেন আর্জেন্টিনা তাঁর চিরাচরিত ছন্দে উদ্ভাসিত। আইভেরি কোস্ট কে ২-১ গোলে আর সার্বিয়া মন্টিনিগ্রোকে ৬-০ তে উড়িয়ে দিল। সার্বিয়া মন্টিনিগ্রোর বিপক্ষে ৩২টি পাসের পর ক্যাম্বিয়াসোর সেই অসাধারণ গোল কার না মনে আছে? দ্বিতীয় রাউন্ডে মেক্সি রদ্রিগুয়েজের সেই সময়ের সেরা গোলে মেক্সিকোকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা তখন আত্মবিশ্বাসের আকাশে উড়ছে। কে ছিলনা দলে? আক্রমন ভাগে হারনান ক্রেসপো, সেভিওলা, তেভেজ মাঝমাঠে রিকুয়েলম, মাসচারানো, রক্ষণে আয়ালা, সরিন, রিজার্ভে ছিলেন নবাগত লিওনেল মেসির মত তারকা। যাদের আলোয়ে তখন জার্মান বিশ্বকাপ আলোকিত। মুখোমুখি আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানি। ম্যারাদোনার গ্যালারী উপস্থিতি গত কয়েকটা ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে তখন ভয়ংকর এক দলে পরিণত করে তুলল। কর্ণার কিক থেকে হেডে আয়লার অসাধারন গোলে ৮০ মিনিট ধরে রাখল ১-০ লিড। আর্জেন্টাইন Coach প্যাকারমান ভুল করলেন, অতি আত্নবিশ্বাসী হয়ে মাঝমাঠের প্রান রিকুয়েলমকে উঠিয়ে নিলেন। সেই সুযোগে খেলায় সমতা নিয়ে এল জার্মান। শেষ পর্যন্ত খেলা গড়ল টাইব্রেকারে। হেরে গেলো আর্জেন্টিনা (১)৪-(১)২ গোলে।
২০১০।
এবার ডিয়াগো ম্যারাদোনা দলে ফিরলেন নতুন করে। ভার নিলেন দলের ম্যানাজার হিসেবে। বুড়ো ভেরন কে ফিরিয়ে আনলেন। ভেরনের কর্ণার কিক থেকেই হেইঞ্জের অসাধারণ হেইডে ১-০ গোলে নাইজেরিয়াকে হারালো আর্জেন্টিনা। পরের খেলা এশিয়ার প্রতিনিধি South Korea এর সাথে, হিগুয়েনের হ্যাট্রিকে ৪-১ গোলে জয় পেল। এবার গ্রিসের মুখোমুখি, ম্যারাদোনা প্রথম বারের মত মেসিকে দলের নেতৃত্বের ভার দিলেন। বিশ্রাম দিলেন নিয়মিত অধিনায়ক মাশ্চেরানো ও তেভজকে । তারপরও অনায়াসে ২-০ গোলে হারালো গ্রিসকে। যেন নিয়মিত হয়ে গেছে মেক্সিকোর সাথে ২য় রাউন্ডে মুখোমুখি হওয়া । তেভেজের ২ গোল আর হিগুইয়েনের ১ গোল, ৩-১ কে পরাভূত করল North America এর এই দলটিকে। সবাই যখন আকাশ জয়ের স্বপ্ন দেখছিল ঠিক তখনই মুখোমুখি শক্ত প্রতিপক্ষ জার্মানদের। মনে পড়ল সেই আগের বারের কথা, আর ভুল না। এবার জার্মানদের আমরা হারাবোই। খেলা শুরু হল। কিন্তু ঠিকই ভুল করল আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক। এক ফ্রি-কিক থেকে ৩য় মিনিটের মধ্যেই থমাস মুলারের গোলে এগিয়ে গেল জার্মানরা। ৬৮ মিনিট পর্যন্ত জার্মানিদের ঠিকই চেপে রেখেছিল আর্জেন্টাইনরা ! হিগুয়েন-মেসিদের গোল বারে দূর্বল শট আর অন্যদিকে জার্মানদের গতি এবং পাওয়ার ফুটবল যার ফলস্রুতিতে কাউন্টার অ্যাটাকে চার-চারটি গোল খেল আর্জেন্টিনা। হয়ত আমরা আর্জেন্টিনার অতিমাত্রায় অ্যাটাকিং ফুটবলের জন্য ম্যারাদোনার কৌশলকে দায়ী করেছি। তারপরও বলব আর্জেন্টিনা সেদিন ভাল খেলা উপহার দিয়েই হেরেছে এবং কোয়াটার ফাইনাল থেকে বিদায় নিল আরো এক বারের মত !
২০১৪ ।
আর মাত্র ক’টা দিন বাকি। ১৩ই জুন (বাংলাদেশ সময়) ২০১৪ থেকে ব্রাজিলে শুরু হতে যাচ্ছে ২০তম ফুটবল বিশ্বকাপ। অপেক্ষায় আছি ঠিক আগের মত কৈশরের আবেগ আর নতুন উদ্দীপনা নিয়ে খেলা দেখবো । সেই ১৯৮৬ থেকে আজ ২০১৪ মাঝ খান দিয়ে ২৮টি বছর কেটে গেছে। শরীরে, মনে, ভাবনায় - চিন্তায় কাজে কর্মে অনেক পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন এসেছে আর্জেন্টিনা দলেও। সেই ম্যারদোনা নেই, নেই ক্যনেজিয়া, নেই বাতিগোল - বাতিস্তুতা, পাবলো আইমার, ভেরন, রেকুয়েলমে। এখন ভরসা লিওনেল মেসি, আগুয়েরা, হিগুইয়েন, ডি-মারিয়া, মাসচেরানো আর জাবালেতার উপর। তাদের খেলার প্রতি ভাললাগা আর দলের প্রতি ভালবাসা এখনও একটুও কমেনি। আশা বলি কি প্রত্যাশা বলি তাদের উপরই । লিও কি পারবে সেই ম্যারাদোনার মত কোটি কোটি দর্শকদের সেই অপেক্ষার অবসান ঘটাতে?
-------*------
এবারের দল:
http://www.youtube.com/watch?v=D1-WImFK7Qk
২| ২৪ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৫
ভুয়া প্রেমিক বলেছেন: আকাশী সাদা ঐ জার্সি দেখলেই বুকে উল্লাস জাগে, মনে হয় যেন নিজের দেশ।
নিজের দেশ হারলেও কেউ কি সেটা ছেড়ে যায়?
৩| ২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:২৪
আছিফুর রহমান বলেছেন: আমি যদিও কট্টর ব্রাজিলের সাপোর্টার। তারপরও পাস্তরেই কে মিস করবো, আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডের দুর্বলতা চোখে পরার মত। এই দুর্বল মিডফিল্ড আর্জেন্টিনাককে মারাত্মক ভোগাবে
৪| ২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:১১
লিমন আজাদ বলেছেন: আর্জেন্টিনার ফুটবল সৌন্দর্য একধরনের নেশার না। এই নেশা চিরজিবনের নেশা।
৫| ২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:১৫
লিমন আজাদ বলেছেন: নেশার নাম*
৬| ২৫ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:০৪
ড. জেকিল বলেছেন: নিজেও জানি খুব শক্তিশালী টিম না এইবার আর্জেন্টিনা। স্ট্রাইকিং নিয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু মিডফিল্ড আশানুরুপ না। তেভেজ কে নিতে পারতো। পাস্তোর থাকলে হয়তো সে ভালো কিছু দেখাতে পারতো। মেসি কে মাঝমাঠে খেলতে হবে। তা না হলে স্ট্রাইকার রা ঠিক মতো বলই পাবেনা। ডিফেন্স মনে হয়না খুব ভালো। দেখা যাক কেমন পারফর্মেন্স দেখাতে পারে। মাত্র কয়েকটা ম্যাচ ই তো। দক্ষতার চাইতে বোঝাপড়াটাই বেশি কাজে দিবে।
আশায় আছি। বেশি কিছু চাইনা। ভালো খেলা চাই। মন মাতানো খেলা!
৭| ২৫ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৪
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। ড.জেকিল সুন্দর বিশ্লেষন করেছেন।
এবার আশা করি আর্জেটিনা ভাল খেলবে।
সেই প্রত্যাশায়।
৮| ২৬ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৪০
ইলি বিডি বলেছেন: দল টার একটা অন্য রকম মাদকতা আছে, নেশার মত............।। আমার টিম।
৯| ২৬ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৪১
ইলি বিডি বলেছেন: দল টার একটা অন্য রকম মাদকতা আছে, নেশার মত............।। আমার টিম।
সুন্দর লিখা ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৫০
তাসজিদ বলেছেন: প্রতিবার আর্জেন্টিনা নিয়ে সপ্ন দেখি। আশায় বসতি জাগাই।
কিন্তু স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। লজ্জা, অপমান নিয়ে গা ঢাকা দেই।