নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\" ইতিবাচক চিন্তা ইতিবাচক ফল বয়ে আনে ।\"

ভ্রমণ বাংলাদেশ

“ভ্রমণ বাংলাদেশ” ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। ভ্রমণ এবং এডভেঞ্চার এক্টিভিটিস এর পাশাপাশি সামাজিক বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে। আর সেই সূত্রে ভ্রমণ ও ফটোগ্রাফী সংক্রান্ত লেখালেখি’র জন্য আমাদের এই আইডি। FB Page: http://www.facebook.com/VromonBangladeshpage E-mail: [email protected] Website: www.vromonbangladesh.org আমাদের ফেসবুক গ্রুপ https://www.facebook.com/groups/vromonbangldesh

ভ্রমণ বাংলাদেশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিপ্পি আরসুয়াং-মোরগের ঝুটি![/sb মাহামুদ সাফায়েত জামিল কোরেশী

১৯ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৪:৩২

ডিসেম্বর মাস। ঢাকাতে বোঝা না গেলেও সারা দেশে শীতের পদচারণা চলছে। এখন সময় বেড়ানোর। ১৬-১৮ ডিসেম্বর ২০১০ ০৩ দিনের ছুটির বন্ধনে বাধাঁ পড়ল সবাই, আর আমরা কজন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ মুক্ত হলাম নাগরিক বেড়াজাল থেকে। বাংলাদেশে Trekking, Hiking, Scuba Diving সহ সব ধরণের দুঃসাহসিক ভ্রমণের পথিকৃত “ভ্রমণ বাংলাদেশ” ক্লাব। ক্লাবের ২৩ জন সদস্যর লক্ষ্য বাংলাদেশের তৃতীয় উচ্চতম পাহাড় শিপ্পি (৩০২৮ ফুট)।

রিপোর্টিং ছিল ১৫ তারিখ রাত ১০:০০ টায় এস আলম বাসের কমলাপুর কাউন্টারে। যথাসময়ে সবাই উপস্থিত। সদস্যরা হলাম টুটু, মনা, আবু বকর, হাস্না, বাবু, সরোয়ার, রঞ্জু, মিজান, মৌরি, জুবায়ের, অনিকেত, তুহিন, কামাল, তারেক, মাসুদ, মোহন, ইকা, ইডেন, চিশতী, শাহরিয়ার, শংকর, কোরেশী, ফয়সাল। বাস ছাড়ল বান্দরবানের উদ্দেশ্যে, তবে একটু দেরিতে।

একটু একটু দেরি আমাদের অনেক দেরি করিয়ে দিল বান্দরবান পৌঁছাতে। ১৬ই ডিসেম্বর, ঘড়িতে বাজছে সকাল ৯টা। সবাই নাস্তা করে নিলাম। আবু বকর চাঁদের গাড়ি ঠিক করে আনল। ভিতরে জায়গা না হওয়ায় ইকা, ইডেন আর মৌরির জায়গা হলো মালপত্রের সাথে গাড়ির ছাদে। গাড়িতে উঠার আগে এ পর্যন্ত ভালভাবে আসার এবং সামনের পথও নিরাপদে যেন পাড়ি দিতে পারি সেজন্য সংক্ষিপ্ত দোয়া ও মোনাজাত করা হলো। যাত্রা হলো শুরু রুমার পথে।

রুমা যাওয়ার রাস্তা বেশ খারাপ। তবে রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে। রঞ্জু ভাই সারাটা পথ হাসি আর আনন্দে মাতিয়ে রাখলেন। রুমা পৌঁছে দুপুরের খাওয়া সারলাম। খাবার সময় দেখা হলো বাদশা ভাই আর লারমার সাথে। রুমা, বগা লেক, কেওক্রাডং -কে পর্যটকদের কাছে পরিচিত করার পেছনে এই দু’জন মানুষের অবদান অনস্বীকার্য। দু’জনই অমায়িক, বন্ধু বৎসল। এখানে সিয়াম (টুটু ভাই যাকে আদর করে ডাকেন সালমান শাহ) গাইড কাম পোর্টার হিসাবে আমাদের সাথে যোগ দিল। আর্মি ক্যাম্পে সবার নাম, ঠিকানা দিয়ে আসা হলো। প্ল্যান ছিল রুমা থেকে চাঁদের গাড়িতে করে প্রথমে যাব মুন্নাম পাড়া, সেখান থেকে আমাদের ট্র্যাকিং শুরু করে রনিন পাড়াতে গিয়ে রাত্রি যাপন করব। এমনিতেই আমরা আমাদের সিডিউল থেকে বেশ পিছিয়ে পড়েছিলাম, এর উপর দেখা দিল আরেক বিভ্রাট। খবর পাওয়া গেল রুমা থেকে যাওয়ার জন্য যে চাঁদের গাড়ি ঠিক করা হয়েছিল সেটা নষ্ট। নতুন কোন গাড়িও পাওয়া গেল না। এদিকে বিকাল হয়ে গেছে। নতুন প্ল্যান করা হলো যে আমরা রুমা থেকেই ট্র্যাকিং শুরু করব আর আজ রাতে রনিন পাড়া নয় মুন্নাম পাড়াতেই থাকব। ট্র্যাকিং এর প্রস্তুতি নিতেই বাদশা ভাই এসে হাজির। তবে একা নয়, সাথে আছে একটা দেড় টনের ট্রাক। ট্রাক আমাদের পৌঁছে দেবে মুন্নাম পাড়া পর্যন্ত। সবাই ট্রাকের পাছনে চড়লাম, বাদশা ভাই কিছু দূর এগিয়ে দিতে আমাদের সাথে এলেন। ট্রাক চলল পাহাড়ি পথ ধরে। অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা, এই খাড়া উঠছি আবার পরক্ষনেই নেমে যাচ্ছি ঢাল বেয়ে। মাটির রাস্তা, কোথাও কোথাও কাদা। খোলা ট্রাকে পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দেওয়ার আনন্দ চাঁদের গাড়ি থেকে অনেক বেশি।

মুন্নাম পাড়াতে ঢোকার আগে আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করলাম। রাত হয়ে গেছে অনেক আগেই। ট্রাক থেকে মালপত্র নামিয়ে নিলাম। টুটু ভাই, মনা ভাই, আবু বকর গেল কারবারীর সাথে রাতে থাকার ব্যাপারে কথা বলার জন্য। কারবারী থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন একটা বড় ঘরে। কিন্তু সমস্যা হলো ঘরটার একদিকের দেয়াল জানালার গ্রিলের মতো কাঠের বার ফাঁকা ফাঁকা করে বসানো। শীতের রাতে ঠান্ডায় কষ্ট পেতে হবে এই ঘরে থাকলে, তাই কারবারীর সাথে সমস্যাটা নিয়ে কথা বলা হলো। উনি বললেন যে সবার থাকার মতো বড় ঘর পাওয়া যাবে না, তাই আলাদা আলাদা ভাবে দুই-তিনটা ঘরে থাকতে হবে। রাজি হয়ে গেলাম। এমন সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন সাইলুং বম। উনি বাচ্চাদের একটা স্কুল পরিচালনা করেন পাড়াতে। আমাদের থাকার জন্য ঘর খালি করে দিলেন, রান্না করার জন্য সব ব্যবস্থা করে দিলেন। রাতে খাবার পর চায়ের দাওয়াত দিলেন। তার এবং তার স্ত্রীর আথিতেয়তায় আমরা মুগ্ধ। ১৭ই ডিসেম্বর সকালে বিস্কিট, কলা, চা দিয়ে নাস্তা সারলাম। ট্র্যাকিং শুরু করার আগে এ পর্যন্ত ভালভাবে আসার এবং সামনের পথও যেন নিরাপদে পাড়ি দিতে পারি সেজন্য সংক্ষিপ্ত দোয়া ও মোনাজাত করা হলো। পাড়া থেকে আর একজন গাইড নিলাম। মুন্নাম পাড়ার আর্মি ক্যাম্পে আমাদের রনিন পাড়া হয়ে শিপ্পি যাওয়া রিপোর্ট করলাম। সকাল ৭:১৫ টায় শুরু করলাম ট্র্যাকিং।


পাহাড়িদের পায়ে চলা পথ ধরে এগিয়ে চললাম। ক্রমশ উপরের দিকে উঠছি। একদিকে পাহাড় অন্য দিকে খাদ। হঠাৎ শংকর বলল, “দেখ দেখ”। আমরা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি তার নিচে ছোট ছোট পাহাড়ের মাঝে সাদা মেঘ। দেখে মনে হয় গতি হারিয়ে মেঘের দল পাহাড়ের মাঝে আটকা পড়েছে। নিজের চোখে না দেখলে এমন সৌন্দর্য্য ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। সমতলের মানুষের জন্য পাহাড়ি পথে চলা শুধু কষ্টের নয় কিছুটা কঠিন। তাই কিচ্ছুক্ষণ পর পর বিশ্রাম নিতে হচ্ছিল। বিশ্রামের ফাঁকে বিস্কুট, খেজুর, পানি খেয়ে নিচ্ছিলাম। এমনিতেই চড়াই উতরাই তার উপর সকালের শিশিরের কারণে পথ পিচ্ছিল হয়ে ছিল। বেশ কয়েকবার আছাড় খাবার উপক্রম হলো। শংকর দুই বার আছাড় খাবার পর সাবধান হয়ে গেল। অনেক্ষণ চলার পর একটা ঝিরিতে পৌঁছালাম।



এত ঝকঝকে পরিষ্কার পানি দেখে গোসল করতে নেমে পড়ল কয়েকজন। গোসলের পর আবার পথ চলা শুরু হলো। ইতিমধ্যে দলের অনেকেই পিছিয়ে পড়েছে, ক্লান্তিতে শরীর আর চলছে না। কারও কারও Muscle pull করেছে। কিন্তু সামনে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। অবশেষে মনা, আবু বকর, রঞ্জু, মিজান, মোহন, শাহরিয়ার, মাসুদ, মৌরি, শংকর আর কোরেশী এই দশ জন পৌঁছে গেল রনিন পাড়া। ঘড়িতে তখন প্রায় ১১:৩০ বাজে। মনা ভাই বললেন যে আমরা কিচ্ছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে শিপ্পির উদ্দেশ্যে ট্র্যাকিং শুরু করব। বিস্কুট, খেজুর, পানি খেয়ে নিল সবাই। মাসুদ আর শংকর বলল যে তারা পাড়াতে থেকে যাবে। দলের বাকিরা তখনও এসে পৌঁছাইনি। সিয়াম আর মুন্নাম পাড়া থেকে নেয়া গাইড আমাদের বাকি ১৩ জনের সাথে ছিল। রনিন পাড়া থেকে শিপ্পির চূড়া পর্যন্ত যাবার জন্য আর একজন গাইড নেয়া হলো। বাকি আট জন রওনা হলো ১২:১৫ টার দিকে।


জোর কদমে পা চালাল সবাই। কারণ সামিট করে ফিরতে রাত হয়ে যাবে, রাতে কুয়াশা পড়ে পথ থাকে পিচ্ছিল, বিপদজনক। আমরা খবর পেলাম গত ১৫ তারিখ চট্টগ্রাম থেকে ১৩ জনের একটা দল সামিট করতে এসেছিল। তারা সকাল ৭ টায় রনিন পাড়া থেকে ট্র্যাকিং শুরু করে শিপ্পি সামিট করে পাড়াতে ফিরে আসে রাত ১ টায়। অবশ্য উনাদের একজন পায়ে আঘাত পাওয়ায় গতি কমে গিয়েছিল। তারপরও বুঝলাম ট্র্যাকটা বেশ দীর্ঘ। কিছুদূর যাবার পর কোরেশী আর শাহরিয়ারের পায়ের Muscle pull করে। পথের উপর বসে পড়ল তারা। বাকিরা এগিয়ে গেল। পানি কম খাওয়ার কারণে এভাবে Muscle pull করে। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর ওরাও রওনা হলো। গাইড সহ মনা, আবু বকর, মোহন, রঞ্জু, মিজান বেশ এগিয়ে গেল। মৌরি, শাহরিয়ার, কোরেশী পিছিয়ে পড়তে লাগল। এক সময় সামনের ৫ জনকে আর দেখা গেল না। পথ কোথাও উঠছে তো উঠছেই, যেন পথের শেষ আকাশে। আবার ঝট করে খাড়া নেমে গেছে কয়েক‘শ ফুট। কয়েক জায়গায় পথ এত পিচ্ছিল, মনে হচ্ছিল সূর্যের আলো এরা কখনো দেখে না। আর কোথাও তো পা রাখার জায়গাই পাওয়া যাচ্ছিল না। কিছু জায়গাতে মাটি এত আলগা যে পা দিলেই পিছলে যাচ্ছে। মোট ৪ টা ঝিরি পার হতে হলো। শিপ্পির চূড়া থেকে বেশ কিছুটা নিচের দিকে একটা Y-জাংশন আছে। জাংশন থেকে একটা পথ গেছে চূড়া পর্যন্ত, অন্যটা নিচের দিকে নেমে ঝিরি হয়ে আরেকটা পাহাড়ে উঠেছে। জাংশন থেকে চূড়া পর্যন্ত পুরো পথটায় ঘন বাঁশঝাড়ে ভর্তি। বাঁশঝাড় না বলে বাঁশের ঘন জঙ্গল বলায় ভালো। ৫ জনের অগ্রগামী দল ঢুকে পড়ল এই জঙ্গলে। একেবারে সামনে ধারালো দা হাতে বাঁশ কাটতে কাটতে এগিয়ে যাচ্ছে গাইড, পিছনে বাকিরা। এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের ১৩ জনের দলটিকে ধন্যবাদ দিতে হয়। কারণ জঙ্গল আরও ঘন ছিল, তারা সামিট করার সময় পথটা অনেকখানি পরিষ্কার করে গিয়েছিল। তারপর সেই মহেন্দ্রক্ষণ, বিকাল ৪:১৫ টায় ভ্রমণ বাংলাদেশের ৫ সদস্য পৌঁছে গেল ৩০২৮ ফুট উচ্চতার শিপ্পির চূড়ায়।
চট্টগ্রামের দলটি যারা সামিট করেছে তাদের নাম কাগজে লিখে একটা বোতলে ভরে চূড়াতে রেখে গিয়েছিল। আমাদের সদস্যরাও তাদের নাম লিখে সেখানে রেখে দেয়। গ্রুপ ছবি তোলা শেষে তারা নামতে শুরু করে। এদিকে দলের বাকি তিন সদস্যও জাংশনে পৌঁছে যায়। কিন্তু তারা ভুল করে অন্য পথ দিয়ে চলতে থাকে। কিছুদূর যাবার পর দেখা গেল পথ বলে কিছু নেই। ন্যাড়া খাড়া পাহাড়ের কয়েক’শ ফুট নিচে গাছ দেখা যাচ্ছে। যা আছে তা হলো একদিকে পাহাড়ের গায়ে বাঁশ আটকানো, যেটা হাত দিয়ে ধরতে হবে আর পা রাখার ব্যবস্থা বলতে প্রাকৃতিক ভাবে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হওয়া কিছু খাঁজ। এভাবে আনুমানিক ১০ ফুট এগুনোর পর না আছে হাত দিয়ে ধরার কিছু, না আছে পা রাখার জায়গা। এখানে ক্ষান্ত দিল কোরেশী। কারণ তার উচ্চতা ভীতি আছে। কথা হলো মৌরি, শাহরিয়ার এগিয়ে যাবে আর কোরেশী জাংশনে অপেক্ষা করবে অথবা ইচ্ছা করলে আলো থাকতে থাকতে যতটা পারে নিচে নেমে যাবে। ফিরে আসলো কোরেশী জাংশনে। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিচে নামবে বলে ঠিক করল। অল্প কিছুক্ষণ পর সে পুরান বাংলা সিনেমার গান শুনতে পেল। সে ভাবল নিশ্চয় রঞ্জু ভাই। কারণ রঞ্জু ভাই এ ধরনের গান করেন। জোরে চিৎকার করে তাদের ডাকতে শুরু করল, শুনতে পেয়ে তারাও সাড়া দিলেন। একে একে সবাই বাঁশের জঙ্গলের মধ্যে থেকে বের হয়ে আসলো। জানা গেল গায়ক ছিলেন মিজান ভাই। কোরেশী তাদের জানালো যে বাকি দু’জন ভুল রাস্তায় গেছে। মনা ভাইয়ের কাছে একটা বাঁশি ছিল সেটা নিয়ে আবু বকর ওদের ফিরিয়ে আনতে গেল। বাকিরা জাংশনে অপেক্ষা করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর পরই বাঁশি বাজাতে বাজাতে এগিয়ে গেল আবু বকর। বেশ কিছুদূর যাবার পর দু’জনকে খুঁজে পেল। ফিরে এলো তিনজন। সূর্য অস্ত যাচ্ছে, রনিন পাড়াতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে আর শিশিরে ভিজে পথ থাকবে পিচ্ছিল। তাই মনা ভাই বলল যে এবার তাহলে ফেরা যাক। কিন্তু মৌরি জানালো যে এতদূর এসে সামিট না করে ফিরে যাবে না। কেউ না গেলেও গাইডকে সাথে নিয়ে সে সামিট করবে। ঠিক হলো মৌরি, শাহরিয়ার, কোরেশী সামিট করবে, সাথে থাকবে আবু বকর এবং গাইড। বাকিরা ফিরে যাবে রনিন পাড়া।

শুরু হলো দ্বিতীয় দলের সামিট। ইতিমধ্যে রাত হয়ে গেছে। পথ চলতে হচ্ছে টর্চের আলোতে। এত ঘন বাঁশের জঙ্গল যে আকাশে চাঁদ উঠলেও অন্ধকার যাচ্ছিল না। এর ভিতরেই এগিয়ে চলা। অবশেষে সবাই পৌঁছে গেল চূড়াতে। ক্যামেরা না থাকায় কোনো ছবি তোলা গেল না। কাগজ থাকলেও কলমের অভাবে নাম লিখে বোতলে রেখে আসতে পারলো না। ভ্রমণ বাংলাদেশের এই দলটা চূড়াতে পৌঁছানোর সাথে সাথে একটা ইতিহাস রচনা হলো। মৌরি বাংলাদেশের প্রথম মেয়ে হিসাবে শিপ্পি সামিট করলো। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর শুরু হলো নিচে নামা।


দলের বাকি ১৩ জন ভালোভাবেই দুপুরের দিকে পৌঁছায়। রাতের জন্য রান্না করে তারা অপেক্ষা করছিল সামিট করতে যাওয়া ৮ জনের। ফিরতে রাত হচ্ছে দেখে সবাই দোয়া ও মোনাজাত করতে থাকে ওদের ভালোভাবে ফিরে আসার জন্য। প্রথম দলটা ৭:৪৫ টার দিকে পাড়াতে পৌঁছে যায়। রাতের খাবার মেনু ছিলো পোলাও, মুরগীর তরকারী। সবাই খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে। চিশতী, মনা, মোহন, শংকর দ্বিতীয় দলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ১১:৩০ টার দিকে পৌঁছায় দ্বিতীয় দল। খেয়ে নিয়েই সবাই দেয় ঘুম।


১৮ই ডিসেম্বর সবাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ে। মিশন সফল, এবার ফেরার পালা। গতদিনের ট্র্যাকিং করার সময় অনেকেই পায়ে ব্যথা পাওয়ার কারণে ৪ জন পোর্টার ঠিক করা হয় মালপত্র নেয়ার জন্য। আর আমাদের সিয়াম তো ছিলোই। গ্রুপ ছবি তুলেই সবাই রওনা দিলাম। আমাদের ফেরার রুট ছিল রনিন পাড়া থেকে পাইক্ষ্যং পাড়া হয়ে রোয়াংছড়ি উপজেলা। এ পথ ট্র্যাকিং করতে বেগ পেতে হয়নি। রাস্তা ভালো আর কিছু কিছু জায়গাতে উঠতে হলেও বেশির ভাগ জায়গাতে শুধুই নিচে নামা। পথের শেষ অংশটুক ঝিরি দিয়ে যেতে হয়। তবে বর্ষার সময় ঝিরি দিয়ে যাওয়া অসম্ভব, তাই একটু ঘুরে যেতে হয়। রোয়াংছড়ি পৌঁছানোর পর উপজেলার ওসি সাহেবের সাথে দেখা হয়ে গেল রাস্তায়। আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলেন সবকিছু। সবাই বাস স্ট্যান্ডে চলে গেলাম। ৩:৩০ টাতে বান্দরবানের বাসে চেপে বসলাম। বান্দরবান পৌঁছে খাওয়া দাওয়া করে শহর ঘুরতে গেল সবাই। ঘুরে ফিরে সবাই এসে হাজির হলাম এস.আলম বাসের কাউন্টারে। ৯:৩০ টায় বাস ছাড়ল। ঢাকায় এসে পৌঁছালাম ১৯ই ডিসেম্বর ভোর ৬ টায়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৪:৪৯

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: এডভেঞ্চারাস!! ভ্রমণ কাহানী ভালো লাগলো।

২| ২০ শে জুন, ২০২২ রাত ১২:৪৫

ভ্রমণ বাংলাদেশ বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

৩| ২০ শে জুন, ২০২২ রাত ১:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: ভ্রমন কাহিনী আমার খুব প্রিয়।

২১ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৩:২৯

ভ্রমণ বাংলাদেশ বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.