![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'অটিজম' আজকের পৃথিবীর অনেক আলোচিত বিষয়। আমরা হয়তো অনেকেই 'অটিজম' সম্পর্কে জানিনা। শব্দটি আমাদের কাছে অপরিচিত। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের অটিস্টিক বলে। অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা বাংলাদেশ তথা সমগ্য পৃথিবীতে দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েই চলছে। অটিজম সম্পর্কে সর্বস্তরে সচেতনতা প্রয়োজন। আসুন আমরা অটিজম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।
একটি পরিবারে যখন একটি অটিস্টিক শিশু থাকে, সেই পরিবারের মা-বাবার এবং আর সব সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক কষ্ট একটি স্বাভাবিক পরিবারের সদস্যদের ধারনার বাইরে। আবার অনেক পরিবারের মা-বাবা জানেনও না যে তার সন্তানটি অটিজমে আক্রান্ত।
অটিজম মস্তিস্কের বিকাশের প্রতিবন্ধকতা যা শিশুর জন্মের ৩ বছরের ভিতরই প্রকাশ পায়।
অটিজমকে সামপ্রতিককালে বিশেষজ্ঞরা অটিজম "স্পেকট্রাম ডিসওর্ডার" বলে আখ্যায়িত করছেন। যার ফলে অতি সামান্য থেকে শুরু করে গুরুতর সমস্যাগ্রস্থ অটিস্টিক শিশুরা এ নামের ছত্র ছায়ায় চলে আসছে। যদিও অটিজম বলে চিহ্নিত করার ব্যাপ্তি বিশাল আকার ধারণ করেছে এবং এক একজন অটিস্টিক শিশু এক এক ধরণের, তবুও প্রধান তিনটি সমস্যা সকল অটিস্টিক শিশুর ভিতর রয়েছে।
প্রথমতঃ
•মৌখিক ও অমৌখিক যোগাযোগে অক্ষমতাঃ
অটিজমে আক্রান্ত শিশু কিশোররা সাধারণতঃ ভাবভঙ্গি বা কথায় তাদের মনের ভাব প্রকাশে ব্যর্থ হয়। অনেক শিশুদের বয়স অনুযায়ী শব্দ বৃদ্ধি পায়না, অনেক শিশুর যে কথাগুলি এসেছিল, সেগুলো হারিয়ে যায়। অনেক শিশু তোতা পাখির মত কথার প্রতিধ্বনি করে।
অনেক শিশুরা চোখে চোখে তাকাতে চায়না ।
দ্বিতীয়তঃ
•স্বাভাবিক সামাজিক আচরণে সমস্যাঃ
স্বাভাবিক সামাজিক আচরণেও তারা অনেক পিছিয়ে থাকে। তাই বাবা অফিসে যাবার সময় টাটা দেয়া কিংবা সমবয়সীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন কিংবা অন্যের মনোভাব বোঝা তাদের কাছে এক দুরূহ ব্যাপার হয়ে যায়। একটি অটিস্টিক শিশু কিশোর জানেনা কিভাবে বন্ধুত্ব করতে হয় কিংবা কিভাবে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা যায়।
তৃতীয়তঃ
•খেলায় ক্রিয়াকলাপে ও কল্পনাযুক্ত খেলায় সমস্যাঃ
আদান প্রদান মূলক খেলায় বিশেষ করে কল্পনাযুক্ত খেলায় অটিস্টিক শিশুরা অত্যন্ত পিছিয়ে থাকে। এছাড়া পুনরাবৃত্তি মূলক আচরণ ও রুটিন পরিবর্তনের ঘোর বিরোধিতা করাও অটিজমের আর একটি লক্ষণ।
এছাড়া অটিস্টিক শিশু কিশোররা পঞ্চ ইন্দ্রিয় যথাঃ দেখা, শোনা, স্পর্শ, স্বাদ গন্ধ, চলাচলে কোন না কোন ভাবে সংবেদনশীল থাকে এবং এই সংবেদনশীলতার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে তারা অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে।
অটিস্টিক শিশু কিশোররা আর সকল সকল শিশুদের মতই দেখতে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের কোন শারীরিক সমস্যা থাকে না। ব্যবহারিক সমস্যা দিয়েই অটিজমকে সনাক্ত করা হয়।
এই অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতা, অটিজম সমর্পকে গণসচেতনতা বৃদ্ধিও আর একটি প্রধান অন্তরায়।
সামপ্রতিককালে বিশেষজ্ঞরা মস্তিস্কের বিকাশের প্রতিবন্ধকতার কারণ হিসাবে ব্রেনের অস্বাভাবিক রাসায়নিক কার্যকলাপ কিংবা ব্রেনের কিছু অস্বাভাবিক গঠনকে দায়ী করছেন।
সম্ভাব্য কারণসমূহঃ
•গর্ভকালীন সময়ে মার ভাইরাস জ্বর বিশেষ করে রুবেলা ভাইরাস, Cytomegalovirus ইত্যাদি।
•শিশুকালীন টিকা বিশেষ করে MMR টিকা।
•জন্মের সময় শিশুর অক্সিজেনের অভাব।
•শিশুর কোন কারনে খিচুনি রোগ।
•প্রসবকালীন সময়ে Syntocinon drip ব্যবহার।
•খাদ্যনালীতে ছত্রাকের আধিক্য।
•খাদ্যে এলার্জি।
•পরিবেশ দূষন।
•অতিরিক্ত এ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ।
•বংশগত কারণ।
{নানাবিধ কারণকে অটিজমের কারণ মনে করা হলেও সঠিক কোন কারণ কিংবা কারণসমূহকে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়নি।}
সারাবিশ্বে অটিস্টিক শিশুদের সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে বেড়েই চলছে। সঠিক পরিসংখ্যন না থাকলেও অনুমান করা হচ্ছে বাংলাদেশেও অটিস্টিক শিশু কিশোরদের হার ভয়াবহ।
শিশুদের বিকাশগত সমস্যার ক্ষেত্রে অটিজমের স্থান তৃতীয়। ছেলেরাই এই রোগে বেশী আক্রান্ত হয়। ছেলেমেয়ের আনুপাতিক হার ৪:১।
অটিজম কোন মানসিক রোগ নয়ঃ
বেশীরভাগ অটিস্টিক শিশুরা অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হয়। প্রতি ১০টি অটিস্টিক শিশুর মধ্যে ১ জনের ভিতর প্রচন্ড দক্ষতা দেখা যায় ছবি আঁকা, গানে কিংবা গণিতে বা কমপিউটারে।
অটিজম একটি মস্তিস্কেও বিকাশগত সমস্যা হলেও রোগটি সনাক্ত করা হয় একটি শিশু/কিশোরের ব্যবহারিক সমস্যা দেখে, মা-বাবার কাছ থেকে বিস্তারিত ইতিহাস শুনে এবং কিছু মনস্তাত্বিক পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা। কোন ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করে এই রোগটি অদ্যবধি সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
অটিজমের চিকিৎসাঃ
অটিজমের কোন জাদুকরী চিকিৎসা নেই। পৃথিবীর উন্নত দেশ সমূহে অটিজমের নানা ধরনের চিকিৎসা বের হয়েছে। তার ভিতর সবচেয়ে প্রচলিত ও কার্যকরী চিকিৎসা হচ্ছে অটিস্টিক শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতি সমূহ। যত দ্রুত এই রোগটি সনাক্ত করা যায় এবং যত দ্রুত একটি অটিস্টিক শিশুকে সঠিকভাবে যথোপযোগী একটা শিক্ষা কার্যক্রমে সমপৃক্ত করা যায় তত তাড়াতাড়ি উন্নতি লাভ করা সম্ভব।
অটিজমের কারণ সমূহ চিহ্নিত না করতে পারলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে গত ২০ বছরে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রতিটি অটিস্টিক শিশু কিশোরকে তাদের প্রতিভা ও সীমাবদ্ধতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে একটা যথোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে পারলে এই শিশুরা বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারে। একটু সহযোগিতা পেলে অত্যন্ত মেধা সম্পন্ন অটিস্টিক শিশু কিশোররা সাধারণ স্কুল কলেজে ও সাফ্যলের পরিচয় রাখতে পারে।
বিশ্বের উন্নত দেশ সমূহ অটিস্টিক ব্যক্তিদের শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে অনেক এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশ এখনও শিশু অবস্থায়।
*নিম্নলিখিত সমস্যা/সমস্যাগুলি একটি শিশুর ভিতর দেখা গেলে অবিলম্বে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেনঃ
• একটি শিশু যদি ১ বছরের ভেতর মুখে অনেক আওয়াজ (Bubbling) না করে, কিংবা আঙ্গুল দিয়ে বা অঙ্গঁভঙ্গি করে কোন কিছু না দেখায়।
•১৬ মাসের ভিতর যদি এক শব্দের সংমিশ্রণে বাক্য না বলে।
•২ বছরের ভিতর যদি দুই শব্দের সংমিশ্রণে বাক্য না বলে।
•একটি শিশুর কথা ও সামাজিক আচরণ যদি হঠাৎ হারিয়ে যায়।
*অটিস্টিক শিশুর অভিভাবকদের জন্য বক্তব্য
•নিজেকে অসহায় কিংবা একা ভাববেন না।
•শিশুর প্রতিভা কিংবা ভাল দিকগুলো বিকাশে সাহায্যে করুন।
•বাড়ীতে শিশুর জন্য গঠনমুলক প্রোগ্রাম তৈরী করুন।
•শিশুর যোগাযোগ ও সামাজিক বিকাশে জোর দিন।
•ধৈয্য হারাবেন না কারণ এই শিশুদের অনেক উন্নতি সম্ভব
(রেফারেন্স- ডাঃ রওনাক হাফিজ)
২৬ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:৩৬
ভূবন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।
২| ২৭ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ১২:৩৬
অকৃতকার্য বলেছেন: খারাপ লাগে যখন মানুষ অটিস্টিকদের পাগল বলে এবং বিভিন্নভাবে উত্তক্ত করে।
২৭ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ১০:৫১
ভূবন বলেছেন: মানুষকে অটিজম সম্পর্কে বেশী বেশী জানাতে হবে।
৩| ২৭ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ১২:৪১
ভোর বলেছেন: খুব ভাল লাগল। এ ধরনের পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।
২৭ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ১০:৫৪
ভূবন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
৪| ২৭ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ১০:৫৩
ভূবন বলেছেন: অটিজম সম্পর্কে পরিচিত মানুষদের জানানোর অনুরোধ রইলো।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:২২
আইসিস বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।