![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাত্র চারশত বছর পূর্বে বাংলা গদ্যের প্রথম প্রকাশের নমুনা পাই; জনৈক ‘দোম আন্তেনিও রোজারিও’ (জন্ম আনুমানিক ১৬৪৩ খ্রিষ্টাব্দে) ‘ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক সম্বাদ’ নামে ১২০ পৃষ্ঠার একটি বই রচনা করেন যা গদ্যরীতির আদি নিদর্শন হিসাবে খ্যাত। তার জন্মস্থান ছিল যশোর-ফরিদপুর অঞ্চলে ভূষণা গ্রামে। তিনি ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান।’
দ্রাবিড়ভাষাভাষীরা শক্তি-সামর্থ্য ও শিক্ষা-দীক্ষায় এদেশের ভূমিপুত্রদের থেকে অগ্রসর ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এ কারণে ভূমিপুত্রদেরকে কোণঠাসা করতে তাদের বেশি বেগ পেতে হয়নি। দ্রাবিড় ভাষাভাষীদের মধ্যে যারা বাংলাদেশে এসেছিল তাদের প্রতাপে ভূমিপুত্ররা অবনমিত হয়ে তাদের সঙ্গে বাস করতে বাধ্য হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে তাদেরই কোনো কোনো শাখা সম্ভবত সমতলভূমি ত্যাগ করে আশেপাশের পাহাড়ি এলাকায় এবং বনে-জঙ্গলে তাদের পূর্বপুরুষদের অবস্থানের মধ্যে তাদের নতুন নিবাস খুঁজে পায়। অবশ্য এ ধরনের পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বাস করার অভিজ্ঞতা তাদের পূর্বপুরুষদেরও ছিল। রক্তের এবং ভাষার সংমিশ্রণে সংকর জাতি বঙ্গবাসী হয়ে যায় এবং প্রকৃত ভূমিপুত্রদের একটি অংশ সমতলভূমি ত্যাগ করে আরো দূরে নিরাপদ আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এ বিষয় সম্বন্ধে প্রমাণাদি অবশ্যই যথাস্থানে আলোচনা করার ইচ্ছা রইল।
এদেশের রাজা-বাদশাহ ও তাদের অমাত্যদের উপর অনেক লেখালেখি হয়েছে। তাদের ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ না হলেও অনেক কথা আমরা জানতে পেরেছি এবং ভবিষ্যতেও আরো জানার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যা আমরা জানি না বা আংশিক জানি তা হলো, দেশের কথা। অর্থাৎ আদিতে বাংলাদেশ কেমন ছিল, তার ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, নদ-নদী, উদ্ভিদ, সাধারণ মানুষজন, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবনধারণ প্রণালী, তাদের হাসি-কান্নার কথা আমরা অতি অল্পই জানি। তাদের ইতিহাস পড়লেও এদেশের আদি অবস্থাকে অনেক দূরে থেকে দেখার মতো ঝাপসা দেখা যায়। হয়ত বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে কিছুটা মিলে আবার অনেক কিছুই বুদবুদের মতো শূন্যে মিলিয়ে যায়। তাই তেমনভাবে জানতে পারি না বাংলার আদি প্রকৃতি, চিনতে পারি না এদেশের পূর্বপুরুষদের, শুনতে পাই না তাদের সুখ-দুঃখের অনেক কথা। কাজেই আমাদের হৃদয়ের কাছে তাদেরকে আনার পথ সহজ হয় না। অন্যদিকে আমরাও তাদের কাছে পৌঁছাতে পারি না। সত্যিকারভাবে, অদৃশ্যের সাথে প্রেম হয় না। কাজেই পূর্বপুরুষ হলেও তাদেরকে সম্যক ও বাস্তব অবস্থার মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাই।
এদেশের আদিবাসীদের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে যেসব লিখিত তথ্যের উপর নির্ভর করতে হয়, তা কোন প্রাচীনত্ব দাবি করতে পারে না। ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের কোন লিখিত তথ্য দেশী বা বিদেশী, আমাদের কাছে নেই। আবার যা পাওয়া যায় তাও নির্ভরশীল নয়। গল্প লেখার জন্য যথেষ্ট হলেও ইতিহাস লেখার জন্য পর্যাপ্ত নয়। কাজেই ইতিহাসের তথ্য পেতে হলে আমাদের খুঁজতে হবে মাটিতে। ইতিমধ্যে মহাস্থানগড়, পান্ডু রাজার ঢিবি, তাম্রলিপ্তি, চন্দ্রকেতুগড় আমাদের অনেক মূল্যবান তথ্য দিয়েছে। কাজেই নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়ার জন্য মাটি খোঁড়াখুঁড়ির কোন বিকল্প নেই। তবেই একদিন হয়তো আমাদের নির্ভুল শিকড়ের সন্ধান পাবো।
এ বিষয়ে মন-মানসিকতায়, বিশেষ করে বাংলাদেশের মুসলমান জনসমাজে, একটি মানসিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। অনেক সময় আমাদের চিন্তাচেতনা থেকে, ১২০৫ খ্রি. ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী বাংলা জয় করার পর, আমাদের পূর্ব-পুরুষদের কথা জানতে গেলে খুঁজে বেড়াই আরব, ইরান, তুরান, তুরষ্ক, আফগান প্রভৃতি জাতির ইতিহাস। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা তা নয়। অল্পসংখ্যক বাইরের মুসলমান বাংলাদেশে এসেছিল এবং রাজত্ব করেছে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত। এদেশের মোট জনসংখ্যায় তারা ছিল অতি নগণ্য অংশ। খিলজী’র বাংলাদেশ বিজয়ের পর থেকে তাদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এদেশের মুসলমানদের ধর্মীয়ভাবে গোড়াপত্তনের ভিত্তি বিদেশভূমিতে খুঁজে পেলেও এদেশবাসীর পূর্ব-পুরুষের ঠিকানা এখানেই। কারণ, এদেশের মুসলমান জনসংখ্যার গরিষ্ঠভাগ ধর্মান্তরিত মুসলমান, যারা এদেশের নিন্মবর্ণের হিন্দু এবং অল্পসখ্যক বর্ণহিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশীদের পূর্বপুরুষের ইতিহাসের অর্থ এদেশের আদি ভূমিপুত্রদের ইতিহাস। ধর্মীয় ঠিকানা পেতে এদেশের মুসলমানরা আরবের মরুভূমিতে ঘুরে বেড়াতে পারে, কিন্তু পূর্বপুরুষের ঠিকানা বাংলার আনাচে-কানাচেই পেতে হবে। কারণ, বাঙালিরা অনেকাংশে এদেশেরই ভূমিপুত্রদের সন্তান বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটি সত্য যে, আদিবাসীদের কথা উঠলেই অস্ট্রিক বা অস্ট্রলাইড বা বড়জোর দ্রাবিড় পর্যন্ত এসেই সর্বভারতীয় ভিত্তিতে এবং কোনো কোনো সময় দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার ভিত্তিতে জাতিগোষ্ঠী নিরূপণ করতে গিয়ে আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হারিয়ে যায়।
একইরকম জটিল মানসিকতায় ভুগছেন এদেশের অত্যন্ত বিদগ্ধ হিন্দু মনীষী ও ঐতিহাসিকগণও। যদিও বাংলাদেশে আর্যদের আগমন মাত্র ৭০০ থেকে ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ঘটনা, তবুও আদি বাংলার মানুষের কথা বলতে গিয়ে তারা শুরু করেন আর্য জাতির গুণগান ও বৈদিক ধর্মের প্রশস্তি। যে কোনো ধর্মবিশ্বাসীরই স্বীয় ধর্মের প্রশস্তি করার মধ্যে কোনো হীনম্মন্যতা নেই, কিš ‘ বাঙালি হিসেবে আদি বাঙালি বা ভারতীয় আদিবাসীদের কথা না বলে যখন বৈদিক ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠাতা, আর্যদের গৌরবগাঁথা রচনা করে তখন কিছুটা হলেও সত্যের অপলাপ হয়। একসময় সিন্ধু নদীর চতুর্পার্শ্বে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে, তাই ছিল ভারতের আদি সভ্যতা, অধিবাসীরা পরিচিত ছিল জাতি হিসেবে হিন্দু। তাদের সংস্কৃতির নামও ছিল ‘হিন্দু সংস্কৃতি, যা দেশের নামানুসারেই বা জাতিতত্ত্ব অনুসারেই পরিচিতি লাভ করেছিল। তাদেরও ধর্ম ছিল যা পরবর্তীকালে সনাতন ধর্ম হিসেবে পরিচিতি পায়। তাদেরও দেব-দেবী ছিল। আর্যরা ভারতে আগমনের পর তারা যে ধর্ম প্রচার করে তাকে ভারতবাসী বৈদিক বা ব্রাহ্মণ্য ধর্ম হিসেবে জানে, সনাতন ধর্ম হিসেবে নয়। ইতিহাসের পাতায় সনাতন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা দ্রাবিড় ভাষাভাষীরা, আর্যরা নয়।
আদিকাল থেকেই এদেশে, অন্যান্য দেশের মতো, সমাজে শ্রেণীভেদ থাকলেও বর্ণভেদ ছিল না। আর্যদের বর্ণভেদ প্রথায় বাংলার অধিবাসীকে কখনও সম্মানের আসন দেওয়া হয়নি। মনুর কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, মাত্র আটশ বছর আগেও পুরাণগুলিতে বাংলাদেশে ক্ষত্রিয় বা বৈশ্য আছে বলে স্বীকার করেনি। বাঙালি জাতির ধর্মীয় শ্রেণীভাগ, পুরাণের বিধান মতে, শুধু শূদ্র এবং তাও আবার সংকর শুদ্র। সংকরদেরকে ৩৬ ভাগে ভাগ করা হয়েছে যা বাস্তব ক্ষেত্রে ৪২ ভাগে বিভক্ত। তাদের মধ্যে জল-চলের সংখ্যা অতি নগণ্য। বাকিদের সঙ্গে জলস্পর্শও অচল এবং এসময়েই হিন্দু সংস্কৃতিকে হিন্দু ধর্ম হিসেবে প্রথম মানুষ জানতে পারে। বর্ণবাদের এমন পরাকাষ্ঠা হওয়া সত্ত্বেও এদেশে ধর্মপ্রাণ মনীষীরা বাংলার বর্ণবাদবর্জিত আদিবাসীদেরকে উপজাতি এবং নিন্ম জাতি হিসেবে চিহ্নিত করে। বাংলার ইতিহাস লিখতে গিয়ে, একটি সময়ে এসে, তাঁরা বাঙালি ব্রাহ্মণ্য ধর্মানুসারীদের ইতিহাস লিখেছেন, বাঙালির ইতিহাস লিখেন নি। যেমন, পরম শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, বাঙালির নবজাগরণে অবশ্যই বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান অসামান্য। কিন্তু তিনি জাগরণ চেয়েছেন বাঙালি হিন্দু এবং বৈদিক ধর্মের। একইভাবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথও একই অনুপ্রেরণার অনুসারী। তারা বাঙালি জাতিসত্তার ভিত্তিতে বাংলার কথা চিন্তা করেননি, সর্বভারতীয় ভিত্তিতে বাংলার কথা বলেছেন। কাজেই তাঁদের বক্তব্যে এবং চিন্তা চেতনায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা দুর্বল এবং অবাস্তব। ধর্ম, বর্ণ, রাজনীতি, শিক্ষা-দীক্ষা, মননশীলতা, চিন্তা, চেতনা, সংবেদনশীলতা, সাহিত্য ও সৃষ্টিকর্মে বাঙালি হিন্দুসমাজ বাংলার পরিধিতে আবদ্ধ থাকতে পারে নি, পারার কথাও নয়। সর্বভারতীয় অস্তিত্বে তাদের কাছে বাংলার অস্তিত্ব বর্তমান। বৈদিকধর্মের উৎপত্তি উত্তর ভারতে এবং পরবর্তীকালে পীঠস্থান হয়ে দাড়ায় মধ্যভারত যার নাম হয় আর্যাবর্ত। কাজেই ভারতীয় হিন্দু মাত্রেরই মধ্যভারতের প্রতি দুর্বলতা ও আনুগত্য একটি ঐতিহাসিক সত্য। ধর্মীয় অনুপ্রেরণা ও সহজাত প্রবৃত্তি বশেই বাঙালি হিন্দু জনগোষ্ঠী বাংলার কথা বলতে গিয়ে এবং বাংলার চিত্র আঁকতে গিয়ে সর্বভারতীয় ভিত্তিতেই রূপ দিয়েছেন। এটি কোনো চারিত্রিক দোষের বা গুণের কথা নয়। বাস্তবে যা হয়েছে তারই উল্লেখ করছি মাত্র।
বাঙালি মুসলমান জনগোষ্ঠীর এমন চিন্তা-চেতনা ধারণ ও বহন করার কোনো কারণ বর্তমান নেই। ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় তারা আরবের প্রতি দুর্বল, সংবেদনশীল ও অনুগত। কিন্তু দূরত্বের কারণে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, চিন্তা-চেতনা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আরবের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মুসলিম বিশ্বের সদস্য হলেও চিন্তা-চেতনার সকল ক্ষেত্রে বাঙালি হয়ে বেঁচে থাকা ছাড়া এদেশের মুসলমানদের অন্য কোনো উপায় নেই। এ কারণেই বাঙালি মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝে বাঙালি হয়ে বেঁচে থাকার প্রেরণা যত দুর্বার, বাঙালি হিন্দু জনগোষ্ঠীর এমন দুর্বার হওয়া যুক্তিসঙ্গত কারণেই প্রয়োজন নেই।
আমার এ কথা বলার অর্থ এই নয় যে, বাঙালি হিন্দু জনগোষ্ঠী বাংলাকে ভালোবাসেন না, বা বাংলাকে ভালোবাসার কোনো অনুপ্রেরণা রেখে যাচ্ছেন না। সবই ঠিক আছে। শুধু বাংলার হয়ে, বাংলার ভিত্তিতে, বাঙালি হিসেবে বেঁচে থাকতে চাননা। সর্বভারতীয় ভিত্তিতে বাঙালি হয়ে বেঁচে থাকার প্রেরণা যত দুর্বার, অস্থিমজ্জায় যত নিমজ্জিত, শুধু বাঙালি হয়ে বেঁচে থাকার প্রেরণা ততটাই দুর্বল। এমন হওয়াটা কোনো অন্যায় বা অপরাধ নয়, বা নৈতিকতাবিরোধীও নয়, তবে উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের অনুকূল নয়। কিন্তু সর্বভারতীয় চিন্তা-চেতনার সহায়ক। একারণেই, কঠোর বর্ণবাদ সমর্থক হয়েও হিন্দুধর্মের ভিত্তিভূমি এখনও অটুট আছে এবং ভাষা, বর্ণে এমন বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় জাতীয়তাবাদের তেমন দুর্বলতা নেই।
আরেকটি ঐতিহাসিক ভুল আমরা প্রায়ই করে থাকি এই বলে যে, ‘ভারত এবং বাংলাদেশে মুসলিম বিজয় ও শাসনকাল’- কথাটি একেবারেই সত্যের অপলাপ। বাংলাদেশ জয় করেছিল তুর্কিরা, তারপর আসে আফগান, মোঘল এবং সর্বশেষে ইরানিরা। তারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হলেও জাতিতে ছিল বিভিন্ন। তাইতো তারা শুধু স্থানীয় হিন্দু শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি, নিজেদের মধ্যেও যুদ্ধ করেছে। তাছাড়া, ইসলামের মূল প্রশাসনিক কাঠামো বা কুরআনের আইন কোনো সময়ই এদেশে বলবৎ করেনি এবং নিজেরাও ইসলামী অনুশাসন মেনে চলেনি। কাজেই বিভিন্ন দেশবাসীর ভারত বিজয়কে মুসলিম বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না। যেমন, ইংরেজদের ভারত দখলকে খ্রিষ্টানদের ভারত-বিজয় বলে না। দেশের অনেক হিন্দু বিদগ্ধ মনীষী ও পণ্ডিতব্যক্তি বাঙালি জাগরণের কথা বলেছেন। তাঁরা বলেছেন সর্বভারতীয় ভিত্তিতে বাঙালির কথা, বলেছেন ব্রাহ্মণ্য ধর্ম জাগরণের কথা। ইতিহাসের নিরিখে শুধু বাংলার কথা যাঁরা বলেছেন এবং ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টি দিয়ে বাঙালিকে একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে দাঁড় করাবার চেষ্টা করেছেন তাঁদের মধ্যে অতি অল্প কয়জন বাঙালি রয়েছেন। তাঁরা সর্বভারতীয় ভিত্তিতে বা পাকিস্তানের ভিত্তিতে বাঙালির পরিচয়, বা কোনো ধর্মীয় লেবাসে বাঙালি জাতীয়তাবাদের খোল তৈরি করেননি। শুধু বাংলার পরিচয়, বাঙালি জাতীয়তার ভিত্তিতে একটি স্বতন্ত্র জাতি, দেশ ও রাষ্ট্রের কথা যারা চিন্তা করেছেন, বক্তব্যে প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করেছেন তাদের মধ্যে ইদানীংকালের উল্লেখযোগ্য একটি নাম হলো- মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তাঁরই মানসপুত্র শেখ মুজিবুর রহমান ভাসানীর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে বাংলার জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি দেশের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
আমি জানি আমার এ প্রচেষ্টায় অর্থাৎ সত্যিকার ইতিহাস তুলে ধরার জন্য আমার জ্ঞান-বুদ্ধি শুধু সীমিতই নয়, লেখার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান আরো বেশি সীমিত। এ দূরূহ এবং কষ্টসাধ্য যাত্রাপথে অতি সামান্য হলেও এগিয়ে যেতে চাই এবং এই উদ্দেশ্য নিয়েই বাঙালির নয়, বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে চাচ্ছি। এ যাত্রাপথে নতুন কোনো উপাদানই তৈরি করা সম্ভব নয়। যা আছে, যাচাই-বাছাই করে, তা দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।
আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) ২য় পর্ব
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৩
তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: ভাল লাগছে। পরের পর্বগুলোও পড়ে নেব।