নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বঙ্গ বাংলা বাঙালি

বাংলার ভূমিপুত্র

দেশের সাধারন মানুষ

বাংলার ভূমিপুত্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৩০

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৩২

আদি বাংলার ইতিহাস

(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৩০





বাংলাদেশে এখন যেমন, অতীতেও তেমনি বেশিরভাগ লোক গ্রামে বসবাস করত। এর মূলে রয়েছে প্রকৃতির উদার অবদান; কেননা, বাঙালিদের কৃষিজ দ্রব্যের উৎপাদনে প্রাকৃতির বদান্যতা ছিল অপরিসীম। অসংখ্য নদ-নদী ও বর্ষার জলধারা সমতলভূমির উর্বরতা সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে। জমির উৎপাদন-ক্ষমতা চাষাবাদে উৎসাহিত করেছে এবং সমতলভূমিতে বসতি স্থাপনের জন্যে বহুসংখ্যক লোককে আকর্ষণ করেছে। এভাবে, গ্রামীণ লোকসংখ্যা বাংলার নদীমাতৃক অঞ্চলসমূহে দ্রুত বৃদ্ধি পায়; ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে চাষাবাদের বাইরে বলতে গেলেএক টুকরা জমিও আর বাকি নেই। অনেক ক্ষেত্রে চাষাবাদের জমিতেই এখন বসতবাটি নির্মিত হচ্ছে। এই অঞ্চল বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর অন্যতম।



* বাংলাদেশের নদ-নদী

ইতিপূর্বে বর্তমান বাংলাদেশের সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতি চলে নিজের খেয়ালের বশে, সীমারেখা মেনে চলে না। বাংলার ইতিহাস, প্রাচীন সভ্যতা ও ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, নদ-নদীর সম্পর্কে বলতে গেলে শুধু বৃহত্তর বাংলাদেশের পটভূমিকাই যথেষ্ট নয়, সর্বভারতীয় ভিত্তিতেও অনেক সময় তুলে ধরতে হয়। বর্তমান বাংলাদেশের বেশিরভাগ নদ-নদীই পশ্চিম বাংলা ও বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত। কোনো কোনো নদীর উৎস ও উৎপত্তিস্থল হিমালয়ে, কিন্তু বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গন্তব্য বঙ্গোপসাগরে। কাজেই এ দেশের নদ-নদী সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে পশ্চিম বাংলাও আলোচনায় অবিচ্ছেদ্য হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার মিলিত ভূখণ্ডের ভৌগোলিক পরিচয় নিন্মরূপ:

উত্তরে তুষার-মুকুট হিমালয় এবং হিমালয় পর্বতশ্রেণী, নেপাল, সিকিম ও ভুটান প্রভৃতি রাজ্য। উত্তর-পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার উপত্যকা, পূর্বে গারো, খাসিয়া, জয়ন্তিয়া, ত্রিপুরা ও মায়ানমারের পার্বত্যভূমি। উত্তর-পশ্চিমে দ্বারবঙ্গ বা দ্বারভাঙ্গা পর্যন্ত সমভূমি; পশ্চিমে রাজমহল, সাঁওতাল পরগনা, ছোটনাগপুর, মানভূম, সিংভূম, কেওঞ্জর, ময়ূরভঞ্জের পর্বতময় গৈরিক মালভূমি; সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। বঙ্গের উত্তরে সুউচ্চ পর্বত, দুই পার্শ্বে পূর্ব ও পশ্চিমে সুকঠিন শৈলভূমি, দক্ষিণে বিস্তীর্ণ সমুদ্র এবং মধ্যভাগে সুজলা সুফলা সমভূমি। এটিই বাংলার ভৌগোলিক পরিচয়। এই ভূখন্ডের উপর দিয়ে জন্মলগ্ন থেকেই বয়ে চলেছে অসংখ্য নদ-নদী আরো রয়েছে বিস্তীর্ণ জলাশয়।



বাংলাদেশের মাটির মতোই এদেশের নদ-নদী অনবরত তাদের স্রোতধারাগুলি পরিবর্তিত করে সময়ে অনেক সভ্যতা গড়ে তুলেছে আবার সময়ে ধ্বংস করেছে। কাজেই নদ-নদীর স্রোতধারার সাথে শুধু বাংলাদেশের নয়, বৃহত্তর বাংলার সভ্যতা ও অর্থনৈতিক বুনিয়াদের অনেক কিছু জড়িত। তার প্রধান কারণ – নদ-নদী, জলাভূমি ও বন-জঙ্গলে পূর্ণ এই দেশে রাস্তা- ঘাট ছিল অত্যন্ত সীমিত। কাজেই ব্যবসা-বাণিজ্য, লেন-দেন, আদান-প্রদান, যাতায়াত সবই প্রায় গড়ে উঠেছে নৌপথকে কেন্দ্র করে। নদী পথেই মালপত্র পরিবহন যুগ যুগ ধরে ছিল সহজ এবং সময়ে অঞ্চলবিশেষে একমাত্র পরিবহন ব্যবস্থা। বাংলায় এই নদ-নদীসমূহ দেশের প্রাণশক্তির অন্যতম উৎস। এরা বাংলার ভূ-প্রকৃতি গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। নদ-নদীর গতিপ্রকৃতি বাংলার আকার-আকৃতি নির্ধারণ করেছে। এই অঞ্চলের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি হিসেবে এই নদীসমূহ চিহ্নিত হলেও প্রাচীনকালে এদের গতিপথের ধারাবাহিক ইতিহাস পুনর্গঠন করা সম্ভব নয়। কারণ, বর্তমানের মতো প্রাচীনকালেও এই নদ-নদীসমূহের গতিপথ ঘন ঘন পরিবর্তিত হতো। বিশেষ করে সমতলভূমিতে নদীর খাত পরিবর্তন করা খুবই সাধারণ ঘটনা। এই নদীসমূহের তীরবর্তী অঞ্চলে শহর, বন্দর ও ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, তাছাড়া রাজনৈতিক কেন্দ্রও এদের তীরে স্থাপিত হতো। গৌড়, তাম্রলিপ্তি, গঙ্গার নদীতীরে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে গঙ্গানদীর খাত পরিবর্তন হয়। ফলে গৌড় ও তাম্রলিপ্তির যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে এদের প্রাধান্য হারিয়ে যায়।



একসময় লুপ্ত হয়ে যায় এদের সব গুরুত্ব। তাছাড়া, প্রাচীন বাংলার শাসকদের সামরিক বাহিনীর একটি শাখা হিসেবে নৌবাহিনী ছিল অন্যতম। নদীর খাত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কোনো বন্দরের নৌঘাটির গুরুত্বও লুপ্ত হয়ে যায়।



সুতরাং এই নদীসমূহ যেমন বাংলাকে সমৃদ্ধিশালী হতে সহায়তা করেছে, তেমনি সময়ে অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাবকে ধ্বংসও করেছে। তাই, এই নদ-নদীর গতিপথের পরিবর্তন প্রাচীন বাংলার মানুষের জীবনযাত্রা ও সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে, এ বিষয়ে সকল ঐতিহাসিক একমত পোষণ করেন।



শুধুমাত্র বাংলাদেশেই রয়েছে প্রায় সাত শতাধিক নদ-নদী। এসব নদ-নদী জালের মতো সারাদেশে বিস্তৃত। মোট নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২২,১৫৫ কি.মি.। ৫৪ এসব নদ-নদীর মাধ্যমে বছরে প্রায় ১৩৫০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়। পানির এ প্রবাহের সাথে বছরে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন টন পলিমাটি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। পূর্বে প্রবাহিত পানি ও তৎসঙ্গে বাহিত পলির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। এই পলিতেই গড়ে উঠেছে আবাদি জমি, লোকালয়, শহর ও বন্দর। আবার এই নদীই ধ্বংস করেছে বহু জনপদ ও চাষযোগ্য ভূমি। নদীর এই ভাঙ্গাগড়া বহু যুগ যুগ ধরে অপ্রতিহত গতিতে চলছে। উলেখযোগ্য নদ-নদীর যুগে যুগে গতিপ্রবাহের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং দেশের উত্থান-পতনে নদীর অবদানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিন্মে বর্ণনা করা হলোঃ



বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীঃ

নদীর নাম দৈর্ঘ্য (কিমি) প্রবাহিত এলাকা (বৃহত্তর জেলা) এবং দৈর্ঘ্য (কিমি) আড়িয়াল খাঁ ১৬০ ফরিদপুর (১০২), বরিশাল (৫৮), বংশী ২৩৮ ময়মনসিংহ (১৯৮) ঢাকা (৪০), বেতনা-খোলপটুয়া ১৯১ যশোর (১০৩) খুলনা (৮৮), ভদ্রা ১৯৩ যশোর (৫৮), খুলনা (১৩৫), ভৈরব ২৫০ যশোর, খুলনা, ভোগাল-কংস ২২৫ ময়মনসিংহ (২২৫), ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ২৭৬ রংপুর (১৪০) পাবনা (১৩৬), বুড়িগঙ্গা ২৭ ঢাকা (২৭),চিত্রা ১৭০ কুষ্টিয়া (১৯) যশোর (১৫১), ডাকাতিয়া ২০৭ কুমিল্লা (১৮০) নোয়াখালী (২৭), ধলেশ্বরী ১৬০ ময়মনসিংহ, ঢাকা, ধনু-বৌলাই-ঘোড়াউত্রা ২৩৫ ময়মনসিংহ (১২৬) সিলেট (১০৯), দোনাই-চরলকাটা-যমুনেশ্বরী-করতোয়া ৪৫০ রংপুর (১৯৩), বগুড়া (১৫৭), পাবনা (১০০) গঙ্গা-পদ্মা ৩৭৪ রাজশাহী (১৪৫), পাবনা (৯৮), ঢাকা এবং ফরিদপুর (১৩৫), গড়াই-মধুমতি-বলেশ্বর ৩৪১ কুষ্টিয়া (৩৭) ফরিদপুর (৭১) যশোর (৯২), খুলনা (১০৪), বরিশাল (৩৭), ঘাঘট ২৩৬ রংপুর (২৩৬) করতোয়া-আত্রাই-গুর-গুমনি-হুরসাগর ৫৯৭ দিনাজপুর (২৫৯), রাজশাহী (২৫৮), পাবনা (৮০), কর্ণফুলি ১৮০ পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম, কপোতাক্ষ ২৬০ যশোর (৮০) খুলনা (১৮০), কুমার ১৬২ যশোর, ফরিদপুর, কুশিয়ারা ২২৮ সিলেট (২২৮), ছোট ফেনী-ডাকাতিয়া ১৯৫ নোয়াখালী (৯৫) কুমিল্লা (১০০), লোয়ার মেঘনা ১৬০ চাঁদপুর থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত, মাতামুহুরী ২৮৭ পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম মাথাভাঙ্গা ১৫৬ রাজশাহী (১৬) কুষ্টিয়া (১৪০), নবগঙ্গা ২৩০ কুষ্টিয়া (২৬) যশোর (২০৪), পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ২৭৬ ময়মনসিংহ (২৭৬), পুনর্ভবা ১৬০ দিনাজপুর (৮০) রাজশাহী (৮০), রূপসা-পসুর ১৪১ খুলনা (১৪১), সাঙ্গু ১৭৩ পার্বত্য চট্টগ্রাম (৯২) চট্টগ্রাম (৮০), সুরমা-মেঘনা ৬৭০ সিলেট (২৯০), কুমিলা (২৩৫), বরিশাল (১৪৫), তিস্তা ১৫৫ রংপুর (১১৫) গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র এবং এদের অসংখ্য শাখাপ্রশাখা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও বিভিনড়ব অংশের সীমা নির্দেশ করেছে। এর ফলে প্রধানত চারটি বিভাগে বাংলাদেশ বিভক্ত হয়েছে উত্তর, পশ্চিম, মধ্য ও পূর্ব। এর প্রত্যেকটি ঐতিহ্যসমৃদ্ধ। এগুলি যথাক্রমে-১. গঙ্গার প্রধান প্রবাহ পদ্মার উত্তরে এবং ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিমে প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন অঞ্চল, বরেন্দ্র ছিল এর একটি বিখ্যাত মণ্ডল, ২. গঙ্গার অপর প্রবাহ ভাগীরথীর পশ্চিম পাশ্ববর্তী ছিল প্রাচীন রাঢ়, ৩. ভাগীরথী, পদ্মা, নিন্মগামী ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনার মধ্যবর্তী বিভাগ বঙ্গ এবং ৪. মেঘনার পূর্ববর্তী অঞ্চলে সমতট রাজ্য অবস্থিত ছিল।৫৫

—————————————————————

৫৪ বিধানচন্দ্র মন্ডল ও আসম উবাইদ উল্লাহ- ভূগঠন বিদ্যা।

৫৫ এ.এইচ.দানী: সিলেট কপার প্লেট ইন্সক্রিপশন অফ শ্রীচন্দ্র।



আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ২৯

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৫:২৬

মিশু মিলন বলেছেন: যথেষ্ট শ্রমসাধ্য এবং সমৃদ্ধ পোস্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সময় করে আপনার অন্য পোস্টগুলোও পড়বো।

২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:১০

বাংলার ভূমিপুত্র বলেছেন: মিশু মিলন আপনাকে ধন্যবাদ

৩| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৫৯

*কুনোব্যাঙ* বলেছেন: ভালো লাগলো। আমার প্লাস দেয়ার অপশনটা এখনও ঠিক হয়নি।

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৭

বাংলার ভূমিপুত্র বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.