![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[উপশিরোনাম: ভূমিকা, গানের বৈচিত্র্য, ভাটিয়ালি, জারিগান, মুর্শিদিগান, ভাওয়াইয়া, বৃষ্টির গান, উপসংহার।]
ভূমিকা: ধানে ভরা, গানে ভরা আমার এ দেশ ভাই
ফুলে ভরা, ফলে ভরা এমন দেশ আর নাই।
কবি এখানে গর্ব করে যে দেশের কথা বলেছেন, সে দেশ আমাদের প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষের কণ্ঠে কত কথা, কত গান। আমাদের চারপাশের জগতে গানের মেলা। এসব গান মাটি ও মানুষের কথা বলে। এসব গান মানুষের শ্রমের ফসলের কথা বলে। বলে বহমান নদীর কথা। এসব গানের সুরে স্পন্দিত হয় জনজীবন। তাই এসব গানকে বলা হয় লোকসংগীত।
গানের বৈচিত্র্য: বাংলাদেশের প্রকৃতির রং ও রূপ যেমন বিচিত্র, গান এবং সুরও তেমনি বৈচিত্র্যে ভরা। গানের কথা ও সুরে ফুটে ওঠে প্রকৃতি ও জীবনের নানা দিক। আর তাই সব গানের কথা এক নয়, সুরও এক নয়। গানের সঙ্গে যে বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়, তাতেও রকমফের ঘটে। কোনো কোনো গায়ক একতারা বা দোতারা হাতে নেচে নেচে গান করেন। কেউ গান করে গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে, কেউবা খঞ্জনি হাতে। জনজীবনকে প্রভাবিত করা এসব গানের মধ্যে রয়েছে ভাটিয়ালি, সারিগান, জারিগান, ভাওয়াইয়া, বৃষ্টির গান ও বিয়ের গান।
ভাটিয়ালি: বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের মাঝিমাল্লাদের গান ভাটিয়ালি। এ দেশের মাঝিমাল্লারা নদীপথে চলাচল করে গঞ্জ থেকে গঞ্জে, বন্দর থেকে বন্দরে। নদীর বুকে হাওয়া বয়। হাল ধরে মাঝি তখন মনের সুখে গান ধরে:
নদীর কূল নাই, কিনার নাই রে।
আমি কোন কূল হইতে কোন কূলে যাব/
কাহারে সুধাই রে?
ভাটির টানে ভাসতে ভাসতে এই গান গাওয়া হয়। তাই এর নাম ভাটিয়ালি।
জারিগান: জারি গান শোকের গান, দুঃখের গান। কারবালার করুণ কাহিনি এই গানে বর্ণনা করা হয়। বছরের যেকোনো সময়ে, হাটে-বাজারে, গ্রামে-গঞ্জে এর আসর বসে। এই গানের একজন মূল গায়কের সঙ্গে একদল দোহার থাকে। গানের সঙ্গে ঢাক, ঢোল ও দোতারা বাজানো হয়।
ভাওয়াইয়া: আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে নদ-নদীর সংখ্যা কম। সেখানে যানবাহন হিসেবে গরু ও মহিষের গাড়ির প্রচলন দেখা যায়। গাড়িতে যাত্রী বোঝাই করে আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচু মাটির পথ দিয়ে মৈষাল দূরের পথে পাড়ি জমায়। পথ চলতে গিয়ে মৈষাল ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে উদাস সুরে গান গায়।
এ রকম একটি গান:
ও কী গাড়িয়াল ভাই,
কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে...
মৈষালদের গাওয়া এই গানকে ভাওয়াইয়া গান বলে।
বৃষ্টির গান: আমাদের দেশে চৈত্র-বৈশাখ মাসে প্রচণ্ড রোদে-গরমে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর ফেটে চৌচির হয়ে যায়। খেতের ফসল শুকিয়ে যায়। আকাশে মেঘের কোনো চিহ্ন থাকে না। চাষিরা তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে এক ফোঁটা পানির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানান। এ গানগুলোকে বৃষ্টির গান বলে। এ রকম একটি গান:
আল্লাহ ম্যাগ দে, পানি দে,
ছায়া দেরে তুই,/আল্লাহ্ ম্যাগ দে।
উপসংহার: গানের দেশ বাংলাদেশ। বহুকাল ধরে এ গানগুলো লোকের মুখে মুখে চলে আসছে। এ দেশের দোয়েল-শ্যামার সুমধুর কলকাকলির মতো, নদীর কলতানের মতো এসব গান আমাদের জীবনের সঙ্গে মিশে আছে। এসব গান আমাদের নিজস্ব সম্পদ।
©somewhere in net ltd.