নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অেচনা পথীক পলাশ

অেচনা পথীক পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তেঁতুল বয়ান

১৪ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৪০

হেফাজতের বড় হুজুরের ওয়াজ মাহফিলে অনেক রসালো কথাবার্তা'র মাঝে একটি অংশে তেঁতুল বিষয়ক কিছু বক্তব্য ছিলো। (http://dnewsbd.com/single.php?id=37412)





"মহিলা তেঁতুলের মত-তেঁতুলের মত-তেঁতুলের মত। ছোট্ট একটা ছেলে তেঁতুল খাইতেসে, আপনে দেখতেছেন, আপনার মুখ দিয়া লালা বাইর হবে। সত্য না মিথ্যা বলেন তো? তেঁতুল বৃক্ষের নিচ দিকে আপনে হাইটা যান, আপনার মুখ থেকে লালা বাইর হয়। মার্কেটে যেখানে তেঁতুল বিক্রি করে ওদিকে যদি আপনে যান, আপনার মুখ থেকে লালা বাইর হয়। মহিলা তাঁর থেকেও বেশি খারাপ! মহিলাদেরকে দেখলে দিলের মইধ্যে লালা বাইর হয়, বিবাহ করতে ইচ্ছা হয়। লাভ ম্যারেজ/ কোর্ট ম্যারেজ করতে ইচ্ছা হয়। হয় কিনা বলেন? এই মহিলারা তেঁতুলের মত। দিনেরাত্র মহিলাদের সাথে পড়ালেখা করতেসেন, আপনার দিল ঠিক রাখতে পারবেন না। রাস্তাঘাটে হাঁটাহুটা করতেসেন, হ্যান্ডশেক কইরা কইরা, আপনার দিল ঠিক রাখতে পারবেন না। যতই বুজুর্গ হোক না কেন, এই মহিলাকে দেখলে, মহিলার সাথে হ্যান্ডশেক করলে আপনার দিলের মধ্যে কুখেয়াল আইসা যাবে, খারাপ খেয়াল। এইটা মনের জেনা, দিলের জেনা হইতে হইতে আসল জেনায় পরিণত হবে। এটা সত্য না মিথ্যা? কেউ যদি বলে একজনবুড়া মানুষ হুজুর মহিলাকে দেখলে আমার দিল খারাপ হয় না, কুখেয়াল দিলের মধ্যে আসে না। তাহলে আমি বলব ভাই, হে বুড়া তোমার ধ্বজভঙ্গ বীমার আছে। তোমার পুরুষত্ব নস্ট হয়া গেসে। সেজন্য মহিলাদের দেখলে তোমার মনে কুভাব আসে না।"







তাঁর লালাঝরা সেই কথার প্রেক্ষিতে তেঁতুল জাতির একাংশের প্রতিক্রিয়া;







তেঁতুলিয়ার তেঁতুল সংসদে তেঁতুলগঞ্জ হতে নির্বাচিত বিরোধীদলীয় সাংসদ তেঁতুলতুল বেগম একটি পয়েন্ট অফ অর্ডার-এ বক্তব্য দিচ্ছেন :







তেঁতুলতুল বেগম : প্রিয় তেঁতুলিয়াবাসী ভাইও বোনেরা, সংসদে উপস্থিত সরকারদলীয় এবং বিরোধীদলীয় বাঘা তেঁতুল আর স্পিকার তেঁতুল ম্যাডাম, আঁর সশ্রদ্ধ সালাম এবং বিপ্লবী শুভেচ্ছা গ্রহণ করৈন। আঁর ভাইয়েরা, আইজ বড়ই মনর দুঃখ লইয়া আপনেগো সামনে হাজির হইছি। আন্নেরা হক্কলি জানৈন আর বুঝৈন। আঁরা আমগোর জীবন দিয়া চ্যাষ্টা করসি, কিন্তু আফসুস, তেঁতুল হইলাম বলিয়া কি আঁরা আইজও মানুষ হইতাম ফাইরতম ন' ? আন্নেরা হুঁশ করিয়া দেইখচেন নি, আঁরা তেঁতুল বলিয়া আমগোর বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রমূলক কতাবার্তা বলা হইছে, হেই কতাবার্তা'র কারণে আমগোর ভাবমূর্তি আইজ দরিয়ার ফানিত ভাসি যাইবার লাইগজে। দর্মের দুহাই দিয়া এই সমস্ত না-হক কতাবার্তা আল্লায় কি সইজ্য কইরতো নি ?





তেতুল সংসদে উপস্থিত সকল বিরোধীদলীয় তেঁতুলসদস্য তেঁতুল কাঠের টেবিল চাপড়ে সমস্বরে চিত্কার করতে থাকেন : না না না, আল্লায় সইজ্য করতোনা, এইসব না-চিজ কথাবার্তা বন্ধ করতে হইবো |





তেঁতুলিয়ার তেঁতুল স্পীকার এসময় তেঁতুল কাঠের টেবিলে তেঁতুল কাঠের গ্যাভেলটি সজোরে বাড়ি মারতে মারতে হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন : অর্ডার, অর্ডার, অর্ডার । তেঁতুলগঞ্জ হতে নির্বাচিত সম্মানিত সংসদ সদস্যকে অনুরোধ করছি, আপনি পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়েছেন। আপনার পয়েন্টটা পরিস্কার করেন |





তেঁতুলতুল বেগম : ম্যাডাম, আমার ফয়েন্ট ফকফকা ফরিস্কার, আন্নেরটা ফরিস্কার আছেনি হেইডা চেইক করেন, নাইলে, নাইলে বড় হুজুরে আইন্নের ফয়েন্ট ফরিস্কার করি দিবো । বুঝিয়া দেখেন ম্যাডাম, আইন্নেও তেঁতুল আঁরাও তেঁতুল । আঁই যখন তেঁতুল অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সংরক্ষণের খতা খই, তখন হেইডা হক্কল তেঁতুলের স্বাইর্থের খতা চিন্তা করিয়াই খই । আইজ দ্যাশের হক্কল তেঁতুলরে এক-ই গাছের নিচে ঐক্যবদ্ধ হইতে অইবো, আন্নেরেও আমি আহ্বান জানাইতাছি, আন্নে হক্কলের লগে তেঁতুল অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সামিল হইয়া যান, আসেন একই তেঁতুল গাছের নিচে দাঁড়ান । নাইলে কইলাম সময় বড়ই খারাপ । আন্নে হুইনচেন নি , আন্নেরে দেখিয়া বড় হুজুরের দিলের মইধ্যে কি হয় ? লালা ঝরে বলে, হ্যাতেনের দিলে বলে লালা ঝরে ! হুজুরের বয়স ৯২ বছর! আন্নে বুঝিয়া দেখেন ম্যাডাম, আল্লায় আন্নের বুঝের হেদায়েত করুন |





এসময় সরকারদলীয় একজন সাংসদ উঠে দাঁড়িয়ে স্পীকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে থাকেন : মাননীয় স্পীকার, তেঁতুলগঞ্জ হতে নির্বাচিত আমার সতীর্থ সাংসদ যে ভাষায় কথা বলছেন, সেটা সংসদীয় শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং অশ্লীল বিবেচনায় আমি তার বক্তব্য কার্যবিবরণী থেকে এক্সপাঞ্জ করার জোরালো দাবী জানাচ্ছি |





স্পীকার : সন্মানিত সাংসদকে আমি আস্বস্ত করতে চাই, যে সাংসদ তেঁতুলতুল বেগমের বক্তব্য সংসদীয় অভিধানের আলোকে বিশ্লেষণ করে দেখা হবে এবং বক্তব্যে অশ্লীলতার প্রমান পেলে তা কার্যবিবরণী থেকে এক্সপাঞ্জ করা হবে । আমি সন্মানিত সাংসদ তেঁতুলতুল বেগমকে তাঁর অবশিষ্ট বক্তব্য পেশ করার অনুরোধ জানাচ্ছি ।





তেঁতুলতুল বেগম : মাননীয় স্পীকার, আঁর বক্তব্য অশ্লীল হইলে আন্নে হেইডা এসপঞ্জ করবেন না ফেলাস্টিক করবেন হেইডা আন্নের ব্যাফার । তয় মাননীয় স্পীকার, আঁর প্রশ্ন অইলো, তেঁতুল দেখলেই যদি হুজুরের জিহ্বায় লালা ঝরে, তাইলে হেইডা তেঁতুলের দুষ নাকি হ্যাতেনের জিহ্বা'র দুষ ? জিহ্বা দেইখলে তো তেঁতুলের শরীল থিকা লালা ঝরে না ! তাইলে আফনের জীহ্বারে কন, লালা ফালাইস'নারে শালা, মুহের মইধ্যে সান্দাইয়া থাক । মুহের থিকা বাইর হইলে আল্লায় তরে ফালাফালা কইরবো ।





তেঁতুল দেইখলে আইন্নের জিহ্বায় যদি লালা আসে, তাইলে একখান লুহার শিক গরম কৈরা জিহ্বায় ছ্যাঁকা দেন, আন্নের তেঁতুল আম্মা, তেঁতুল বইনের খতা চিন্তা করেন, আন্নের আব্বাজান, দুলাভাই আন্নের দিলের লালার খবর জাইনলে আন্নের কী হাল কৈরতো, হেই কতা মাথায় আনেন, লালা শুকাই যাওয়ার কথা । আঁরা উলঙ্গ হইয়া মার্কেটে যাই ন', শখ করিয়া মার্কেটে যাই ন' , প্যাটের দায়ে যাই ; আমগোর গায়ের চামড়া আন্নের থে বেশি মুটা, আন্নে চক্ষের পর্দা করিয়া মার্কেটে যান । মার্কেটে হক্কলের সামনে হ্যান্ডশেক না করিয়া বাড়িত গিয়া আইন্নের বিবিগোরে কন, আন্নের হক্কল বিবিরা মিল্ল্যা আন্নেরে হ্যান্ডশেক করিয়া দিবো ।







চিন্তা খরিয়া দেখেন, মায়ে যখন বাইচ্চা ফুয়া কুলে নিয়া চুলার ধারে ফাক করে, তখন বাইচ্চা যদি চুলার আগুনে হাত দিবার যায়, মায়ে তখন কি কইরতো ? চুলা নিবাইয়া দিয়া রান্না-ফাক বন্দ কইরবোনি ? নাকি বাচ্চারে চুলার আগুনের'থে দুরে সরায় দিয়া বুঝাইবো, 'বাবারে, আগুনে হাত দিও না বাজান, আগুনে হাত দিলে হাত ফুইরা যায়' ?





তেঁতুলরাও মানুষ, তয় হ্যাতেনেরে শুধু নারীজাতির সাথে তুলনা করলে হ্যাতাগোইর স্বতন্ত্র জাতিস্বত্তার চরম অপমান করা হয় । আঁরা তেঁতুল, তয় আমগোর মইদ্যে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ নাই । আর যদি তুলনা কইরতেই হয় তাইলে ভুইলা গেলে চইলতো ন', যে আমগোর বিচি আছে, আর আঁরার বিচি মাইত্র দুইখান না, মনো রাইখ্যেন ।





আরেকখান কতা, তেঁতুল দেইখ্যা যাগোর জিহ্বায় আর দিলে লালা ঝরে, মনে কুভাব আসে, হ্যাতাগোইর মর্দামী আর কুত্তার মর্দামীর মইধ্যে কোনো ফাইর্থক্য নাই । মাইনষেরে 'আশরাফুল মখলুকাত' ইয়ানে ‘সৃষ্ঠির সেরা জীব’ বলা হইছে,‘সৃষ্ঠির সেরা জীভ’ বলা হয় নাই। সৃষ্ঠির সেরা জীভ হইছে কুত্তার জীভ। তেঁতুল দেখিয়া মনে যাগোর কুভাব আসে না, হুজুরে কৈসেন হ্যাতাগর নাকি বিশেষ বীমার আছে । বুঝ করিয়া দেখেন মাননীয় স্পীকার, দ্যাশের পুরুষ মাইনষেরে হুজুর কইতাসেন, তেঁতুল দেখিয়া তোমার মনে কুভাব পয়দা যদি না হয়, তাইলে বুইঝবা তুমার বীমার আছে । দ্যাশের লক্ষ্য-কোটি পুরুষ মানুষ এই কতা থিক্কা কিতা শিখতো ? হ্যাতেনের বীমার নাই, হেইডা পরমান করনের লিগা হ্যাতেনেরা কি তেঁতুল দেখিয়া মনে কুভাব পয়দা করার চ্যাষ্টা কইরবো ? এমুন কতাবার্তা দর্মে আছে নি কুথাও ?





মাননীয় স্পীকার, আঁর খতা অইলো তেঁতুল একখান স্বাধীন জাতি, জীহ্বারও কিছু স্বাধীনতা দরকার, তয় হেইডা লালা ফালানের লাইগ্যা না । খেয়াল রাইখতে অইবো হেইদিকে, তেঁতুল আর জিহ্বা'র হ্যাতনে-হ্যাতেনের স্বাধীনতার চর্চা য্যান একে-ঐন্যের স্বাধীনতা হরণ না করে।





অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা অনেক টক ঝরাইয়া, অনেক পরিশ্রম করিয়া এই তেঁতুল জাতি স্বাধীনতা অর্জনের পথে আগাইয়া যাইতেছে । তাগোর এই আগাইয়া যাওনের পথে জিহ্বার লালাকেন্দ্রিক অপবাদের বোঝা চাপাইয়া কালা বৈয়মের মইধ্যে বন্দী করিয়া রাখার চেষ্টা মানা যায় না । মাননীয় স্পীকার, আঁর শ্যাষ খতা অইলো, তেঁতুলজাতির মুক্তিসংগ্রাম নিয়া চুদুরবুদুর চইলতো ন' | ধৈন্যবাদ |

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.