নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
বসন্তের কোকিল ডেকে বিদ্রুপ করছে, এ ধারণা থেকে চন্দ্রশেখর কোকিল হত্যা করেছিল। পরদিন তার দুই পুত্র জলবসন্তে আক্রান্ত হয়। অপচিকিৎসা, সুচিকিৎসার অভাব অথবা অভিশাপের কারণে দুই সন্তানের মৃত্যু হলে চন্দ্রশেখর পিতৃত্ব-কর্তৃত্ব হারিয়ে উন্মাদে পরিণত হয়। গল্পের এই চন্দ্রশেখর একজন সাধারণ মানুষ হলেও আমাদের সমাজের অসম্ভব ক্ষমতাধররা সংবিধান রক্ষার নামে গণতন্ত্রের কোকিল হত্যায় উদ্যত। প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, চলতি অর্থ বছরের গত সাত মাসে সরকারের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি সহায়তাকারীদের কাছ থেকে। অন্য খবরে বলা হয়েছে, ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে স্বস্তি বোধ করলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের অবস্থানে অস্বস্তিতে আছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। এই দেশগুলো এ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডাসহ পশ্চিমা কূটনৈতিক মহল সকল দলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকারকে চাপে রাখলেও সরকারের একজন সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বিরোধীদের হাত-পা কেটে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। অন্য খবরে বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনের পর বিএনপি আন্দোলনে নামবে, বেগম খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ আন্দোলন প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীনদের আশু লক্ষ্য, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপি এবং তার সমমনাদের রাজপথের আন্দোলনে নামতে না দেয়া। অন্তত একটি বছর দেশকে আন্দোলনমুক্ত রাখতে যত কঠোর অবস্থান নেয়ার দরকার পড়ুক না কেন, সরকার ও দল তা করবে। সুতরাং নির্বাচন পূর্বকালে গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে প্রসঙ্গ নানাভাবে আলোচিত হয়েছিল তা কার্যত সুদূরপরাহত বলেই মনে হচ্ছে।৫ জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি দিনদিনই যে জটিল হয়ে উঠছে বা উঠতে শুরু করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কেবলমাত্র সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার কথা বলে সে সময় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হলেও এখন সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিপরীত বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। এমনকি সরকার সমর্থক কোন কোন মহল নির্বাচন প্রসঙ্গে পুরনো বিতর্ককেই টেনে নিয়ে আসছেন। বলতে চাচ্ছেন, সরকার নির্বাচন দিলেও তা অনুষ্ঠানগত বিতর্ক থেকে মুক্তি পাবে না। সরকার কোন গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার ব্যাপার ইতিবাচক ধারণা পোষণ করছে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কোন প্রেক্ষিতে, কোন বাস্তবতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে অথবা এ ধরনের নির্বাচনকে আদৌও কোন নির্বাচন বলা যাবে কিনা এসব প্রশ্নের যে কোন অবসান হয়নি তা সরকারের চেয়ে আর কারও বেশি জানার কথা নয়। নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দেশের কাছে সরকার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গত মাসেই বাংলাদেশের সব দূতাবাস-হাইকমিশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত ও সংবিধানের বাধ্যবাধকতা তুলে ধরে কেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন করতে হয়েছে সে বিষয়ে বিদেশের মিশনগুলোতে অবস্থানপত্র পাঠানো হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে এই বিষয় বিশেষভাবে তুলে ধরতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারের এই অবস্থান প্রমাণ করে সরকার যত বাগাড়ম্বরই করুক না কেন, ভেতরে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। সরকারের কাছে নিশ্চিত ধারণা রয়েছে যে, পশ্চিমা বিশ্ব ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণ করেনি। বিষয়টি নির্বাচনকালীন সময়ও পরিষ্কার হয়েছিল। নির্বাচনের পূর্বেই পশ্চিমা বিশ্বসহ জাতিসংঘ বা কোন মহলই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কোন টিম পাঠায়নি। ভারত ছাড়া পৃথিবীর কোন দেশই এই নির্বাচন গ্রহণ করেনি বরং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তারা শুরু থেকেই চাপ দিয়ে আসছেন। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রশ্নে জাতিসংঘের ফর্মুলা মূলত সরকারের কারণেই ব্যর্থ হয়েছে, সে কথাও সব মহলের জানা। সরকার প্রকাশ করতে না চাইলেও এটাই সত্য যে, সরকার যে সময় বেঁধে নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছে তার পেছনেও এক ধরনের প্রস্তুতি হয়তো কাজ করে থাকতে পারে। চাপের প্রসঙ্গটি আরো বেশি পরিষ্কার হয়েছে সহায়তাকারী দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি না দেয়ার মধ্য দিয়ে। ইতিপূর্বে সংসদ সদস্যদের নেতৃত্বাধীন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ না দেয়া বা কমিয়ে দেয়ার আলোচনা হয়েছিল যুক্তরাজ্যে। গত সাত মাস অর্থাৎ একটি গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তুঙ্গে উঠার সময় থেকে উন্নয়ন সহযোগীরা সরকারের সাথে চুক্তি করা, চুক্তি নবায়ন করার ক্ষেত্রে এক ধরনের অনীহা প্রকাশ করে আসছিল। এমনকি এ সংক্রান্ত পারস্পরিক বৈঠকেও এক ধরনের বিরূপতা লক্ষ্য করা গেছে। পদ্মা সেতুর দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলে সরকার যে বিরূপ সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে সে প্রসঙ্গ ধরেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রসঙ্গে দাতাদের অনীহার বিষয়টি স্পষ্ট হতে থাকে। সেই সাথে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলে ধরে তারা স্পষ্টতই যে অবস্থান গ্রহণ করেছে তার প্রভাব কেবলমাত্র প্রতিশ্রুতি না দেয়ার মধ্যেই নয় বরং পোশাক শিল্প এবং আমাদের জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রেও পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি উদ্ধার করতে সরকার এখনো কোন সফলতা দেখাতে পারেনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যরাও যদি অনুরূপ সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। সরকারের ভারতমুখী নীতির কারণে মুসলিম দেশগুলোতে জনসংখ্যা রফতানি নিয়ে নিত্যনতুন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছে, একদিকে বেকারত্ব বাড়ছে অন্যদিকে গত আট মাসে রেমিটেন্সে ভাটার টান চলছে। একজন অর্থনীতিবিদ সুনির্দিষ্টভাবেই বলেছেন, বিদেশি সহায়তা পাওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা। এটি নির্ভর করে অভ্যন্তরীণ বাস্তবতার ওপরে। রাজনীতিকে স্থিতিশীল বা গতিশীল রাখা না গেলে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা সম্ভব নয়। সরকার যেভাবে রাজনীতিকে স্থিতিশীল করতে দমন-পীড়ন, নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে বা নিতে চাচ্ছে সেটি মূলত স্থিতিশীলতার ধারণার বিপরীতে অবস্থান করছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঐকমত্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, এবছর পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৬ দিনে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে ৪৬ জন। এর মধ্যে র্যাবের হাতে ১৫, পুলিশের হাতে ২২, র্যাব ও পুলিশের হাতে ১ জন, বিজেবির হাতে ১ জন এবং যৌথবাহিনীর হাতে ১৬ জন। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। এটা আইন ও গণতন্ত্র পরিপন্থী এবং কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আইজিপি বলেছেন, গুম-হত্যা নতুন কোন বিষয় নয়। আগে থেকেই এ ধরনের ঘটনা চলে এসেছে, এখনো চলছে। তিনি না বললেও ধরন দেখে মনে হতে পারে, চলতে থাকবে। স্পষ্ট যে, এই হত্যার শিকার মূলত বিরোধী রাজনৈতিক মহল। সে বিবেচনায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে বিশ্লেষণ করলে অবশ্যই এ প্রশ্ন উঠতে পারে, আমরা কি সম্ভাবনার দিকে এগোচ্ছি না পেছনের দিকে হাঁটছি?মূল বিতর্ক নির্বাচন কেন্দ্রীক সরকার নিয়ে। উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা বিতর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার পর একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের প্রশ্ন আরো জোরদার হয়েছে। সরকারি মহল যাই বলুক না কেন, দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনে কারচুপির সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া গেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ক্যাডার দ্বারা আগামী নির্বাচন পরিচালনা করা হতে পারে। সরকারি দলের বক্তব্যের মধ্যেও নানা প্রসঙ্গ রয়েছে। তারা গণতন্ত্রকে গ্রহণ করছে, না মোড়ক ব্যবহার করছে সে প্রশ্ন দিনদিনই গুরুতর হয়ে দেখা দিচ্ছে। বিরোধী মহলের প্রতি যেভাবে অবাঞ্চিত অরাজনৈতিক ভাষা ব্যবহার এবং হুমকি প্রদান করা হচ্ছে তার ফলে দেশে রাজনৈতিক আচরণের প্রসঙ্গটিও আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠছে। সরকার যে কোন ইস্যুকে কেন্দ্র করেই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের হয়রানিমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে বা করতে যাচ্ছে। সরকার গণতন্ত্র রক্ষার জন্য বারবার অঙ্গীকার ঘোষণা করছে, নির্বাচনের কথা বলছে কিন্তু সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায় এমন ধারনা স্পষ্ট করছে না। এমনকি স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতেও বিরোধী রাজনৈতিক মহল অংশগ্রহণ করুক, মাঠে থাকুক- এটিও সহ্য করছে না। গণতান্ত্রিক বাস্তবতা যখন কঠিন থেকে কঠিনতর অবস্থায় উপনীত হয় তখন জনগণের শেষ অস্ত্রের প্রয়োগকেই ত্বরান্বিত করে। নির্বাচনকালীন সরকার বা নির্বাচনী ব্যবস্থার আলোচনা এখন মুখ্য বিষয়ে পরিণত হওয়ার কারণেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তার একটি তুলনামূলক মূল্যায়ন প্রয়োজন। সরলিকরণ করলে বলা যায়, ’৭৩ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কোন নির্বাচনই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। আরো সুনির্দিষ্ট করলে বলা যায়, এক ধরনের নির্বাচন ছিল পূর্ব নির্ধারিত। এসব নির্বাচনে জনগণের কিছুই করার ছিল না। ’৭৩ সাল, ’৮৬ সাল, ’৮৮ সাল, ’৯৬ সাল এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনগুলোর ফলাফল পূর্ব নির্ধারিতই ছিল। এই নির্বাচনগুলোতে কি হতে যাচ্ছে তা আগে থেকেই অনুমান করা গিয়েছিল। এর মধ্যে ব্যাতিক্রম ছিল, ’৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন। ঐ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে। ’৯১ সালের সংসদ বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে মেয়াদ পূরণে সক্ষম হয়নি। এই ধরনের অন্য নির্বাচনগুলোর পরিণতি ভিন্নভাবে হলেও এক হয়েছে। ’৭৩ সালের নির্বাচনের পর বেশিদিন সরকার টিকে থাকেনি। বিএনপিবিহীন ’৮৬ সালের নির্বাচন, বিএনপি-আওয়ামী লীগ বিহীন ’৮৮ সালের নির্বাচন কেবলমাত্র সময়ক্ষেপণ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এই পর্যায়ের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৫ জানুয়ারি। এই বাস্তবতা জানা থাকা সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে যে আলোচনা করা হচ্ছে তা মূলত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে না অন্য কোন প্রশ্নে, সেটি খুঁজে দেখা দরকার।এটা বলা দরকার পাতানো, সাজানো বা পূর্ব নির্ধারিত নির্বাচনগুলো জাতীয়-আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন না পাওয়ায় টিকে থাকতে পারেনি। এবারের নির্বাচনে ভারত একটু আগ বাড়িয়ে সমর্থন করলেও মূলত দীর্ঘ মেয়াদে টিকিয়ে রাখার জন্য তারা তা করেছে, এরকম মনে হবার যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, ভারতের লোকসভার নির্বাচন ঘোষিত হবার পরে অনির্ধারিত বৈঠকে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বৈঠকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আলোচনায় উঠে আসতে পারে। বর্তমান আলোচনায় আরো একটি বিষয় স্থান পেয়েছে, তা হলো, সরকারের এই সংবিধানপন্থী অবস্থানকে অনেকে মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক আলোচনার মোড়কে গ্রহণযোগ্যতা দিতে চাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ এরকম ধারণাও ব্যক্ত করছেন- যা হবার হয়ে গেছে, এখন একটি ন্যায়ভিত্তিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। বাস্তবত এটি হচ্ছে, কাঁঠালের আমসত্ব। এক বালতি দুধে এক ফোঁটা মূত্র পড়লে তা যেমনি পানযোগ্যতা হারায়, বর্তমান প্রসঙ্গও তেমনি। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তনের মূল বিষয় যেখানে নির্বাচন, সেই নির্বাচনই যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং সংবিধান যেখানে নির্বাচিত হবার কথা বলেছে, সেটি যদি মনোনীত হয় তাহলে যে সরকার গঠিত হয় সেই সরকারের বৈধতা, গণতন্ত্রপ্রিয়তা অথবা কল্যাণকামী চিন্তার কোন সুযোগ থাকার অবকাশ নেই। এই ধরনের সরকারকে মুক্তিযুদ্ধের সরকার বলে চেতনা সৃষ্টি করার চেষ্টা মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। আরো পরিষ্কারভাবে বলা যায়, যে মহল রাজনৈতিক বিভাজনের ক্ষেত্রে বিএনপিসহ সমমনাদের আন্দোলনকে ভিন্নরূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন তাদের বোঝা দরকার, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনেরই অংশ ছিল। আরও বলা প্রয়োজন, বর্তমান সরকারকে যারা সমর্থন করতে চাচ্ছেন তারা কি মুক্তিযুদ্ধ না ভারতের পছন্দকেই নিজের পছন্দের সাথে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন- স্বাধীনতার এই মাসে অবশ্যই এ প্রসঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম প্রভাব ও হস্তক্ষেপ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য। এখন যদি আমাদের নির্বাচন, সরকার গঠন, এমনকি আমাদের রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দের ক্ষেত্রেও কোন বিশেষ দেশের নির্দেশকে মেনে নিতে হয় তাহলে অবশ্যই মৌলিক প্রশ্ন উঠতে পারে। বর্তমান সরকারকে নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় আসা সরকার বলা হলেও ওই নির্বাচনকে প্রকৃত নির্বাচন মনে করার কোন কারণ নেই। সম্প্রতি আইন মন্ত্রীর নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে মাননীয় হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। এর আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের প্রসঙ্গে মাননীয় হাইকোর্টের রুল রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন সংবিধানগতভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। নির্বাচন অনুষ্ঠানগত বিষয়ে যে মৌলিক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে তাকে এড়িয়ে গিয়ে অন্য আলোচনার কোন সুযোগ নেই। বিতর্ক এড়াতে হলে অবশ্যই সকলের অংশগ্রহণ ভিত্তিক একটি নির্বাচন পরিচালনা করতে পারার মতো বাস্তবতা তৈরি করতে হবে। দেখা যাচ্ছে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গে তো নয়ই বরং সরকার ক্ষমতায় থাকাকে কেন্দ্র করেই নির্বাচন পরিচালনার দিকে রয়েছে। উল্লেখ করা দরকার, জনগণের বিভক্তি স্পষ্ট হয়েই আছে। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন ছাড়া উপজেলা বা স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন সম্ভব নয় জেনেও জনগণ বিরোধী দলের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচনেও দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের অনেক চেয়ারম্যান নির্বাচনে হেরেছেন। যার অর্থ হচ্ছে, জনগণ সকল লোভ, মোহ পরিত্যাগ করেই সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। সরকার যাকে কাজ বলে মনে করছে জনগণ তাকে অকাজ বলে বিবেচনা করছে। সোজা ভাষায় বলতে গেলে, বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সব দলের অংশগ্রহণভিত্তিক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের যে প্রসঙ্গ রয়েছে জনগণ তাকেই সমর্থন করছে। আরো একটি বিষয় বোধহয় এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তা হলো, বর্তমান সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থন জনগণ সঠিকভাবে নেয়নি। সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে সরকারি দলের হেরে যাওয়া এর সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে।বসন্তে কোকিল, গণতন্ত্রে নির্বাচনের অনুরূপ। নির্বাচন ঠিক না থাকলে গণতন্ত্র ঠিক থাকে না। সুচিকিৎসার অভাব, অপচিকিৎসা অথবা কোকিল মারার অভিশাপ যে কারণেই হোক দুই সন্তানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চন্দ্রশেখরের যে সম্ভাবনার মৃত্যু হয়েছে সে জন্য মূলত সে-ই দায়ী। পিতা হিসেবে, অভিভাবক হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল তা করতে না পারার কারণেই উন্মাদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সংবিধান রক্ষার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ তার সম্ভাবনা হারাতে বসেছে। শত সতর্কতা সত্ত্বেও সরকার তার নিজস্ব পথেই এগুচ্ছে। সরকার যত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিপরীতে অবস্থান দৃঢ় করবে কার্যত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলনরত জনগণকেও তাদের দাবি আদায়ে তত বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সংবিধান জনগণের জন্য, সংবিধান রক্ষার নামে যদি জনগণের কোন কল্যাণ না হয় অথবা দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সে সংবিধান জনগণের রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। অবশ্যই ঐকমত্যকেই সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাধীনতার এই মাসে মুখে মুখে যখন স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা উচ্চারিত হবে তখন মূলত জনগণের ঐক্যের কথাই উঠে আসবে। সরকারি মহল মুখে যাই-ই বলুক, জনগণের ঐক্যের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনমূলক কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হলে স্বাধীনতা রক্ষায় তারা আন্তরিক, তার কোন প্রমাণ পাওয়া যাবে না। সব দলের অংশগ্রহণ ভিত্তিক একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের দ্রুত আয়োজন করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার যতই মনে করুক, বিরোধী দল মুখ বুঁজে সরকারি নির্যাতন সহ্য করে সরকারি কর্মকা-কে বৈধতা দিবে- এটি অলীক কল্পনা। জনগণের ভাষা বুঝে পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ নষ্ট করা তার উচিৎ হবে না।
আবদুল আউয়াল
©somewhere in net ltd.