নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
এই প্রবন্ধটি রচনার কারন, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বুঝতে হলে পাঠককে উপমহাদেশের বাস্তবতা, ব্রাক্ষন্যবাদ মানসিকতার ঐতিহাসিকতা, ব্রাক্ষন্যবাদী রনকৌশলের ধারাবাহিকতা বুঝতে হবে।ব্রাক্ষন্যবাদ পূর্ব যুগে ভারতবর্ষ দ্রাবিড়ীয় সভ্যতার পীটস্থান ছিল। যাযাবর ব্রাক্ষনরা মধ্য এশিয়া থেকে এসে ভারতের দ্রাবিড়ীয় সভ্যতাকে এবং জাতিসমূহকে ধ্বংস করে এবং মৃতপ্রায় করে ফেলে। অতঃপর তারা ভারতের ভূমিপূত্রদের উপর নিজেদের বর্নবাদী শাসন ও ধর্ম চাপিয়ে দেয়। এভাবেই তারা সমাজের ও দেশের দন্ডমুন্ডের কর্তায় পরিনত হয়। বর্নবাদকে স্থায়ী রূপ দিতে ব্রাক্ষন্যবাদ ধর্মের আশ্রয় নেয়। কালক্রমে শাসিত ও শোষিত জনগন বর্নবাদী শাসন ও শোসনকে বিধাতার লিখন হিসাবে মেনে নেয়।ব্রাক্ষন্যবাদী রনকৌশলের ধারাহিকতা হল- তারা ভারতে আগন্তুক বিজয়ী জাতিকে প্রথমত: সর্বশক্তি দিয়ে সশস্ত্রভাবে বাধা দেয়। এতে ব্যর্থ হলে তারা প্রতিপক্ষের সাথে বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠার ভান করে। প্রতিপক্ষ শক্তির বিখ্যাত ব্যক্তিদেরকে নিজেদের মা, বোন, মেয়েকে উপহার দিয়ে পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন করে। অতঃপর প্রতিপক্ষের প্রভাবশালী পরিবারগুলির মধ্যে দ্বন্ধ-সংঘাত সৃষ্টি করে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে হীনবল হওয়া শত্র“কে এরপর নিশ্চিহ্ন করা হয়।উপরোক্ত পন্থায় প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করা অথবা গোলামে পরিনত করা সম্ভব না হলে ব্রাক্ষন্যবাদীরা প্রতিপক্ষের ধর্মে অনুপ্রবেশ করে এবং অতিভক্ত সেজে উক্ত ধর্মে ব্রাক্ষন্যবাদী সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটায়। কালক্রমে প্রতিপক্ষের ধর্মে বিভিন্ন প্রকার ফোরকা সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে সংঘাতে লিপ্ত করায়। অতঃপর আত্মঘাতী সংঘর্ষে লিপ্ত থাকা দুর্বল ধর্মসম্প্রদায় গুলিকে একে একে আত্মীকরন করে এক একটি বর্নপরিচয় প্রদান করে। এ পর্যায়ে তারা প্রতিপক্ষের ধর্মের প্রধান ব্যক্তিত্বকে অথবা প্রধান দেবতাকে নিজেদের ভগবান বিষ্ণুর অসংখ্য অবতারের মধ্যে একজন হিসাবে ঘোষনা প্রদান করে। এ পর্যায়ে তারা নতুন অবতারের পুজা করে এবং প্রতিপক্ষকে দিয়ে নিজেদের অন্যান্য প্রাচীন অবতারের পুজা করায়। এভাবে তারা প্রতিপক্ষের ধর্মীয় নেতা হিসাবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে।এভাবে তারা ভারতে বিজয়ী শক্তি হিসাবে আগত শক, হুন ও গ্রীক জাতিকে নিজেদের মধ্যে আত্মীকরন করে সক্রিয় বর্ন পরিচয় প্রদান করেছে। উক্ত জাতিসমূহের প্রধান দেবতারা বিষ্ণুর অবতারে বা হিন্দু দেবতায় পরিনত হয়েছে। এভাবেই গ্রীক হেলেন অব ট্রয় রামায়নের সীতায় পরিনত হয়েচে, গ্রীক দেবদেবী ও তাদের বাহন হিন্দু দেবদেবীতে ও দেবদেবীর বাহনে পরিনত হয়েছে। এতদসংক্রান্ত একটি উদাহরন হল-ভারতের দয়ালু দার্শনিক রাজা হিসাবে খ্যাত ড. রাধাকৃষ্ণ ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের অবলুপ্তির ইতিহাস বর্নণা করতে গিয়ে লিখেছেন- “এটা যথার্থভাবেই বলা হয়ে থাকে যে, হিন্দুরা ভ্রাতৃত্বের আলিঙ্গনের আড়ালে বৌদ্ধধর্মের কবর রচনা করেছিল। আমরা আগেই লক্ষ্য করেছি, কিভাবে ব্রাক্ষন্যবাদ বৌদ্ধ ধর্মের অনেক আচার-অনুষ্ঠানকে নিজেদের মধ্যে গ্রহন করে নিয়েছিল। জীবহত্যাকে বৌদ্ধদের মত নিন্দনীয় বলে ঘোষনা করেছিল। এভাবে তারা বৌদ্ধ ধর্মের উত্তম উপাদানগুলিকে নিজেদের ধর্ম বিশ্বাসের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করে নিয়েছিল।এর উদ্দেশ্য ছিল অত্যন্ত সুস্পষ্ট। হিন্দুরা তাদের অসংখ্য অবতারের মধ্যে বৌদ্ধকে একজন হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এছাড়া অনেক বৌদ্ধাচার তারা গ্রহন করেছিল। এ সকল আপাত উদার কর্মের উদ্দেশ্য ছিল এর দ্বারা আলাদা ও স্বত্বন্ত্র বৌদ্ধ ধর্মের উচ্ছেদ সাধন। সে লক্ষ অর্জনে তারা সম্পূর্ণ সফল হয়েছিল। [ড. রাধাকৃষ্ণ, The Vedanta, George & Union, London- 1424, P.P - 36-39]ব্রাক্ষন্যবাদের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হিসাবে দেখা দিয়েছে ভারতে বিজীয় হিসাবে আগত ইসলাম ধর্ম ও তার অনুসারী মুসলমানরা। হাজার বছরের প্রচেষ্টায়ও তারা ইসলাম ধর্মকে এবং মুসলমানদেরকে ভারত বর্ষ থেকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি, বিতাড়ন করতে পারেনি বা আত্মস্থ করতে পারেনি। এই না পারার প্রধান কারন হল মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ “আল-কুরআনের” অবিকৃত অবস্থায় টিকে থাকাতে যুগে যুগে ধারাবাহিক ভাবে এ ধর্মের অনুসারীদের মধ্য থেকে ধর্ম সংস্কারকের আবির্ভাব হওয়া, ইসলাম ধর্মের যুযোগপযোগীতা ও সার্বজনীনতা, এই না পারার ব্যর্থতা ব্রাক্ষন্যবাদীদেরকে সুচনাকাল থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করিয়েছে। ব্রাক্ষন্যবাদীদের সকল অস্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে উপমহাদেশে ইসলাম ও মুসলমান টিকে তাকায় তারা বিগত ৩৩৯ বছর যাবত সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় ও যায়নবাদী ইহুদীদের সাথে হাত মিলিয়ে মুসলিম নিধন কর্মে লিপ্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে তারা এমন নিষ্ঠুর যে তারা শুধু সাচ্চা মুসলমান নয়, নিজেদের রক্ত সম্পর্কের মুসলিম ভাগিনা বোনজামাই সহ মুসলিম নামধারী সবাইকে নিশ্চিন্ত করতে চায়, ভারত থেকে বিতাড়ন করতে চায়। এতদসংক্রান্ত ঐতিহাসিক তথ্য হল-১। ১৬৭৪ সালে ইংরেজ ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর বোম্বাই সদর দপ্তর থেকে মিষ্টার ওকসিনডেনকে এক গোপন দৌত্য কাজে পাঠানো হয় দূর্গম রাহিয়ী দুর্গের মারাঠা দস্যু (বাংলাদেশে বর্গীদস্যু হিসাবে পরিচিত) সর্দার শিবাজীর রাজ্যাভিষেক বার্ষিকীতে। সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে সেখানে স্বাক্ষরিত হয় শিবাজী-ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এর গোপন চুক্তি। যার শর্তানুসারে ভারতবর্ষে মোগল সাম্রাজ্যের অবসান ঘটানোর সংগ্রামে মারাঠা শক্তি পাবে কোম্পানীর সাহায্য, বিনিময়ে কোম্পনী পাবে ভারতে অবাধ বানিজ্যের অধিকার। (সূত্রঃ ক্রুসেডের ইতিবৃত্ত: আসকার ইবনে সাইখ, ২-৫৪)।উল্লেখ্য, এই মোগল শাসক পরিবার ছিল হিন্দুদের পারিবারিক আত্মীয়। কেউ ভগ্নিপতি কেউ ভাগিনা। শিবাজীর এরুপ মুসলিম শাসন বিনাসী চক্রান্তের কারনেই তথাকথিত সব্য ভারত ১৯০৩ সাল থেকে শিবাজীকে জাতীয় বীর হিসাবে ও শিবাজীর মূর্তিকে মুসলিম বিনাসী দেবতা হিসাবে পুজা করে। ১৭৫৭ সালের মুসলমানদের পলাশী বিপর্যয়কে স্মরনীয় করে রাখার জন্য কোলকাতার পলাশীর বেনিফিশিয়ারী হিন্দু জমিদাররা বৃটেনের তৎকালীন রানীকে দুর্গা দেবী হিসাবে (যে হিন্দুদের দূগর্তি নাগিনী ও মুসলমান অসুর বিনাশকারী এবং তার পায়ের নীচে দেয়া হয় মহিশাসুর রুপী নিহত নবাব সিরাজকে) পূজা করা শুরু করে। এজন্যই ভারতের রাজ্যসমূহের মধ্যে দূগার্ই কেবল মাত্র বাঙ্গালী হিন্দুদের প্রধান দেবী। অন্য রাজ্যে দূর্গার খবরও নেই। বর্তমানে মুসলমানরুপী অসুর নিধনে প্রতিবছর বেশ সাড়ম্বরেই পশ্চিমবঙ্গের ও বাংলাদেশে দূর্গাপূজার মাধ্যমে মুসলিম নিধনের শপথ নেয়া হয়।২। মারাঠাদস্যু শিবাজীর বীরত্বগাথা ও মোগল শাসনের পতনের আনন্দ প্রবাহে হিন্দু-কিচ কবি রবীন্দ্রনাথ লিখলেন তার বিখ্যাত “শিবাজী উৎসব” কবিতা। যার কয়েকটি লাইন হল-(ক) মারাঠীর সাথে আজি হে বাঙ্গালী এক কন্ঠে বল জয়তু শিবাজী,মারাঠীর সাথে আজি হে বাঙ্গালী একসঙ্গে চল মহোৎসবে সাজি।(খ) তারপরে একদিন মারাঠার প্রান্তর হইতে তব বজ্র শিখা ,আকিঁ দিগদিগন্তে যুগান্তরের বিদ্যুত বহিনতে মহামন্ত্র লিখা।মোগল উঞ্চীষ শীর্ষ প্রস্ফুরিল প্রলয় প্রদোষে পঙ্কপত্র কথা-তারপরে শুন্য হল ঝঞ্চাক্ষুব্দ নিবীড় নিশীথে দিল্লীরাজ শালা-একে একে কক্ষে কক্ষে অন্ধকারে লাগিল মিশিতে দীপালোক মালা।শবলুব্দ গৃধুুদের উর্ধঃস্বর বীভৎস চীৎকারে মোগল মহিমা।রচিল শ্মশানশয্যা- মুষ্টিমেয় ভষনরেখা কাধে হল তার সীমা।(গ) ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী দিল্লীর বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর যখন ইংরেজ, মারাঠা, শিখ, গুর্খা ও অন্যান্য হিন্দুদের সম্মিলিত আক্রমনে পরাজিত ও বন্দী হলেন, রাজ পরিবারের সদস্যদের যখন হত্যা করা হল তখন বঙ্কিমচন্দ্র রবীন্দ্রনাথের গুরুস্থানীয় কবি ইশ্বরগুপ্ত লিখলেন-বাদশা-বেগম দোঁহে ভোগে কারাগার।।অকারনে ক্রিয়াদোষে করে অত্যাচার।মরিল দুজন তার প্রানের কুমার।।একেবারে ঝাড়ে-বংশে হল ছারখার।(সূত্র: দিল্লীর যুদ্ধ গ্রন্থাবলী, পৃ- ৩২০)পাঠকবৃন্দ, এই হল সংক্ষেপে উপমহাদেশের বাস্তবতা এবং ব্রাক্ষন্যবাদী মানসিকতার ঐতিহাসিকতা। মোগলরা যেবাবে হিন্দুদের সাথে আত্মীয়তা করে, সাম্রাজ্যের বড় বড় পদ দিয়ে অবশেষে হিন্দু আত্মীয়দের ষড়যন্ত্রে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল ঠিক তদ্রুপ বর্তমান বাংলাদেশের শাসক পরিবার ও শাসকদল হিন্দুস্থানের প্রেমে মসগুল হয়ে এদেশের মুসলিম শাসনকে বিলুপ্ত করার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
বিষয়টি জাতির নজরে আনার জন্যই এই প্রবন্ধ রচিত হয়েছে।
চলবে....
©somewhere in net ltd.