নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
গঙ্গায় ভারতের শত শত বাঁধ ও ক্যানেলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে পদ্মা।এটি শত সহস্র বছর প্রবাহমান আন্তর্জাতিক নদীর গতিপথের সম্পূর্ণ পরিবর্তন বৈ কিছু নয়; যা আন্তর্জাতিক আইন-কানুনের পরিপন্থী। গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের জন্য আজ মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের সীমান্ত হতে ভারতের প্রায় ১৮ কিলোমিটার অভ্যন্তরে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা ব্লকের মনহরপুরে ফারাক্কা বাঁধ অবস্থিত। ভারত ফারাক্কা বাঁধ তৈরি করে কলকাতা বন্দরের পলি জমা থেকে রক্ষা করার অজুহাতে। পরে তা ভারতের লাখ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়াসহ বহুমুখী কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে ১৯৫১ সালে। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার গ্রীষ্মকালে গঙ্গা নদী হতে বিপুল পরিমাণ পানি পশ্চিমবঙ্গের ভাগরথী নদী পুনরুজ্জীবিত করার জন্য অপসারণ করার ভারতীয় পরিকল্পনার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভারত জবাব দেয় যে- তাদের এই পরিকল্পনা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে এবং এর ফলাফল সম্পর্কে পাকিস্তানী উদ্বেগ শুধুমাত্র তত্ত্বীয় ব্যাপারে। সেই থেকে গঙ্গার পানি নিয়ে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার জন্ম। কিন্তু এই আলোচনার মধ্যেই ভারত ফারাক্কা বাঁধের নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখে এবং ১৯৭০ সালে এর কাজ সমাপ্ত করে। ১৯৭২-৭৫ সালের আওয়ামী লীগ সরকার ভারতকে এই বাঁধ চালুর অনুমতি দেয়। এরপর থেকে পদ্মা নদীর বাংলাদেশ অংশে শুরু হয় মরুর হাহাকার। আজ অবধি ভারত গঙ্গায় শত শত বাঁধ, ক্যানেল ও প্রকল্প নির্মাণ করেছে- যা আজ নিঃশেষ করে দিচ্ছে বাংলাদেশের পদ্মা নদীকে। ভারতের একতরফা গঙ্গার পানি প্রত্যাহারের কারণে যে শুধু বাংলাদেশের পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, বরং এর ফলে বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, বন ও নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাপক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। নদীর বিপন্ন দশা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী এখন প্রায় পানিহীন অবস্থায় পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে পড়েছে। ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে পানি বণ্টন চুক্তি করলেও তাতে রয়েছে ফাঁকিবাজি। সূত্রগুলোর মতে, ভারত গঙ্গা নদীর বিভিন্ন স্থানে তিন শতাধিক বাঁধসহ বিভিন্ন ধরনের সেচ প্রকল্প দিয়ে গঙ্গা নদীকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। নদ-নদী বিধ্বংসী এমন ব্যাপক কার্যক্রমের দরুণ এবার শুষ্ক মওসুমের সূচনাতেই বাংলাদেশের পদ্মার বুকে পানির হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। গঙ্গা অববাহিকার পানি সঙ্কটে কৃষি, মৎস্য ও পরিবেশসহ সার্বিক অবস্থা বিপর্যস্ত। নদীকেন্দ্রিক সেচ প্রকল্পগুলো গুটিয়ে নিতে হয়েছে। গঙ্গা সেচ প্রকল্পের মতো বড় প্রকল্পে পানির হাহাকার চলছে। নতুন কোনো প্রকল্প হাতে নিতে সাহস পাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট মহল। নদীর বুকে শত শত চর মরুময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় নদীর বিস্তীর্ণ অববাহিকা জুড়ে কৃষি, সেচ, মৎস্য আহরণ ও নৌ যোগাযোগই বিপর্যস্ত হয়নি, সার্বিক প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হয়েছে। মানুষের সার্বিক জীবনযাত্রার উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।বেকার হয়ে পড়েছে নদীর উপকূলবর্তী অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। এছাড়াও পানিতে লবণাক্ততার আশঙ্কায় শত-কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হচ্ছে গড়াই নদী। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে রুগ্ন পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই জেগে উঠা এসব চরে কৃষকরা আবাদ করছেন ধানসহ অন্যান্য ফসল। এছাড়াও প্রমত্তা পদ্মার ব্যাপক অঞ্চলও একেবারেই শুকিয়ে গেছে। পদ্মা নদীর শাখা হিসেবে গড়াই, হিসনা, কালীগঙ্গা ও মাথাভাঙ্গা নদীগুলো প্রায় পুরোপুরিই শুকিয়ে গেছে। ১৯৯৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন আওয়ামী সরকারের সঙ্গে ভারতের পানিচুক্তির পরও আশানুরূপ পানি পাওয়া যায়নি- এমন দাবি করে নদীর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারী খেটে খাওয়া মানুষগুলো তুলে ধরেছেন নদীগুলোর বতর্মান কঙ্কালসার চিত্র। প্রসঙ্গত, ভারতের একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের উদ্দেশ্যে ১৯৬১ সালের ৩০ জানুয়ারি ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। আর ১৯৭০ সালে শেষ হয় বাঁধটির নির্মাণকাজ। তখন পরীক্ষামূলকভাবে ভারত কিছু কিছু পানি ছাড়ে। আর ১৯৭৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ফারাক্কা বাঁধের সবকটি গেট খুলে দেয় দেশটি, সেবারই মূলত চাহিদা অনুযায়ী পানি পেয়েছিল বাংলাদেশ, তারপর ১৯৭৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত চাহিদানুযায়ী পানির নায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেছে বাংলাদেশ।পদ্মায় পানি না থাকায় সুন্দরবন বাঁচাতে ও পানিতে লবণাক্ততা কমাতে শত কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদী খনন করা হলেও তেমন কোনো সুফল আসেনি। বর্ষা গেলেই চরের বালি আবার নদীতে নেমে গিয়ে ভরাট হচ্ছে নদী। পদ্মায় পানিশূন্যতার কারণে বোরো মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ এলাকার কৃষকরা বিপাকে পড়েছে। শ্যালো চালিত পাম্পে আর পানি প্রায় উঠছেই না। অধিকাংশ পাম্পে এখন সাবমার্সেল বসিয়ে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। জিকে প্রকল্পের আওতাধীন কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, সাতক্ষীরা ও ফরিদপুর অঞ্চলের অধিকাংশ হস্তচালিত গভীর-অগভীর নলকূপ থেকে পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। আওয়ামী লীগ সরকার ৩০ বছর মেয়াদি পানি চুক্তি করে ভারত সরকারের সঙ্গে। চুক্তির ১৮ বছর শুরু হলেও কখনোই হিস্যা অনুযায়ী পানি পায়নি বাংলাদেশ। অথচ যৌথ নদী কমিশনের ওয়েবসাইটে চলতি ২০১৪ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ১০ই এপ্রিল পর্যন্ত ১০ চক্রে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭৯ কিউসেক পানি ভারত সরকার বেশি দিয়েছে বলে দাবি করা হলেও পানি নেই পদ্মায়। পানির অভাবেই পদ্মা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি গার্ডারের মধ্যে অর্ধেকই এখন দাঁড়িয়ে আছে ধু-ধু বালুচরে।বিগত বছরগুলোতে এ নদীর ক্ষীণ স্রোতধারা থাকলেও এবার তাও নেই। একটা বিলে পরিণত হয়েছে। বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে নৌকার পরিবর্তে গরুর গাড়ি কিংবা সাইকেলে নদী পার হওয়া যাচ্ছে। ফারাক্কা ব্যারেজের সবক’টি গেট বন্ধ করে নদী শাসন করে মেরে ফেলা হয়েছে অসংখ্য নদ নদীকে। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে পরিবেশ জীবন-জীবিকায় নেমে এসেছে প্রচ- ধস। দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওযায় উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ নলকূপে পানি উঠা বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র পানির সঙ্কট। একতরফা পানি প্রত্যাহার করে ভারত তাদের বন্দর, কৃষি, সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখলেও এদেশের কৃষি, নৌযোগাযোগ, পরিবেশ, জীবন-জীবিকাকে ঠেলে দিয়েছে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে। বিভিন্ন সময়ে পদ্মার পানি বণ্টন নিয়ে অনেক আলোচনা মাপ-জোখ আর পর্যবেক্ষণ হয়েছে। চুক্তি হয়েছে, চুক্তি নিয়ে সংসদে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের ভাগ্যে কখনোই চুক্তি মোতাবেক পানি জোটেনি। তবে পানি এসেছে সংসদে, টেলিভিশন, রেডিও এবং টেলিফোনে। এর ফলে শুধু পদ্মা নয়, অভিন্ন ৫৪টি নদ-নদীর পানি ভারত একতরফা প্রত্যাহার করে চলেছে। ফলে এপারের নদ-নদীগুলো মরে যাচ্ছে। পদ্মা নদী মরে যাওয়ার সাথে সাথে শাখা নদী বড়াল, মরাবড়াল, নারোদ, মুছাখান, ইছামতি, চিকনাই, নাগর, ধলাই, গড়াই, মাথাভাঙ্গা, হিসলা, কাজলা, চিত্রা, সাগোরখালি, চন্দনা, কপোতাক্ষ মরে যাচ্ছে, কালিগঙ্গা, বেলাবত এসব নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে কিছু দিনের জন্য এসব নদীতে পানি থাকলেও প্রায় সারা বছর থাকে পানিশূন্য। তাছাড়া এসব নদী মরে যাওয়ার সাথে সাথে দু’পাশ অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে। এখন এসব নদীর নাম বইয়ের পাতায় কিংবা মানচিত্রে স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাসের কবলে পতিত হয়, সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়, দুঃখের সীমা থাকে না। অকালে ঝরে যায় লাখ লাখ মানুষ, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির প্রাণ। আবহাওয়ার উপর দেখা দেয় বিরূপ প্রভাব। এর অন্যতম প্রধান কারণ মরণবাঁধ ফারাক্কা। বাংলাদেশ ভাটির দেশ হয়ে এবং তুলনামূলকভাবে ভারতের চেয়ে অনেক ক্ষুদ্র দেশ হওয়ার কারণে কখনোই তাদের অভিযোগ স্পষ্ট করে বলতে পারেনি। ফারাক্কা ব্যারেজ উজানে পানি প্রত্যাহারের প্রকল্প নয়। এটি একটি শত সহস্র বছর প্রবাহমান আন্তর্জাতিক নদীর গতিপথের সম্পূর্ণ পরিবর্তন বৈ কিছু নয়; যা আন্তর্জাতিক আইন-কানুনের সম্পুর্ণ পরিপন্থী। গঙ্গা-পদ্মা অভিন্ন নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে, এ কথাটি আমরা স্পষ্ট করে বলতে পারি না কেন? আমাদের বলা উচিত নয় কি?
©somewhere in net ltd.