নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য সদা সুন্দর চিরন্তন

অসত্যের কাছে নত নাহি হবে শির ভয়ে কাপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর। -নজরুল

ওয়েলকামজুয়েল

লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।

ওয়েলকামজুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুজিব হত্যা : কিছু ভ্রান্ত ধারণা

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:২৩

আগস্ট অভ্যুত্থানকে আমি আজকাল একটা আভ্যন্তরীণ অন্তর্ঘাতমূলক ঘটনা হিসেবেই দেখি। সেটা এই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশীরাই যুক্ত ছিল বলে নয়, বরং তাতে আওয়ামী লীগ ও এর দেশী বিদেশী শুভানুধ্যায়ীদের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ আশীর্বাদ ছিল বলে। এজন্যই হয়তো ১৫ আগস্টের ঘটনাবলী নিয়ে তথ্যগত বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়। প্রথমেই আমরা সবাই যে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করি, তা হচ্ছে অভ্যুত্থানের মূল নেতা সম্পর্কে। অনেকে বলেন খন্দকার মুশতাক আহমদ ছিলেন এই অভ্যুত্থানের নেতা। এই ধারণার ভিত্তি আছে। তবে তিনি অপারেশনাল কমান্ডার ছিলেন না। অপারেশনাল কমান্ডার হিসেবে ব্যাপকভাবে ঢাকা সেনানিবাসের বেঙ্গল লান্সারস রেজিমেন্টের তৎকালীন উপ অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ফারুক রহমানকে চিহ্নিত করা হয়। শুনেছি তিনি ছিলেন একজন ড্যাশিং ও স্পিরিটেড অফিসার। সাধারণ সৈন্যদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা ছিল। মুজিব হত্যাকাণ্ড নিয়ে পরবর্তীতে রচিত অনুসন্ধানী বই, নাটক, উপন্যাসেও মেজর ফারুককে অভ্যুত্থানের মূল নায়ক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু আমার মতে এটা অতি সরলীকরণকৃত ধারণা। আমরা যদি অভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহের দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাবো শেখ মুজিব, শেখ মণি ও সেরনিয়াবাতের পরিবারকে হত্যার অপারেশনে মেজর ফারুকের ভূমিকা তেমন ছিলোনা। তিনি কোন হত্যাকাণ্ডেই নেতৃত্ব দেননি। অভ্যুত্থানের প্রাক্কালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে মিলিত হয়ে অভ্যুত্থানকারী মেজররা নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে নিয়েছিলেন। মেজর ফারুক ট্যাংকগুলোর নেতৃত্ব গ্রহণ করে রক্ষীবাহিনীকে মোকাবিলার দায়িত্ব নেন। সংসদ ভবন এলাকায় রক্ষীবাহিনীর সৈন্যরা ফারুকের গোলাবিহীন ট্যাংক দেখেই হাগুমুতু করে দেয়। ফারুক কিছু ট্যাংক পাঠিয়ে দেন আমীনবাজার সেতুতে, সাভারের মূল ঘাঁটি থেকে যেন রক্ষীবাহিনী ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে। এরপর বাকিটা সময় ট্যাংক নিয়ে ঢাকার রাস্তায় ঘোরাঘুরি করেন মেজর ফারুক। বঙ্গবন্ধুর বাসা আক্রমণের দায়িত্ব দেয়া হয় মেজর মহীউদ্দীন আহমদকে। কিন্তু তিনি মুজিবকে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু সেখানে তখন হাজির হন মেজর নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেম উদ্দীন, যাদের হাতে কিছুক্ষণ আগেই শেখ মণি সপরিবারে নিহত হয়েছেন। এরা শেখ মুজিবুর রহমান ও মেজর মহীউদ্দীনকে পেয়ে যান দোতলার সিঁড়িতে। সেখানেই নূর চৌধুরীর গুলিতে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। বাকি অফিসারদের মধ্যে মেজর বজলুল হুদা সোবহানবাগ এলাকায় ও মেজর সুলতান শাহরিয়ার পিলখানা ও নিউমার্কেট এলাকায় মোতায়েন থাকেন। মেজর শরিফুল হক (মেজর ডালিম নামে সমধিক পরিচিত) রেডিও স্টেশন দখল করে বাকশালের পতন ও মুজিব হত্যার ঘোষণা দেয়ার কাজে নিযুক্ত হন। তবে কিছু বর্ণনা মতে মেজর ডালিম আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় চালিত অপারেশনেও ছিলেন। যদিও এটা আমার কাছে বিশ্বাস্য মনে হয়নি। কারণ মেজর ডালিম রেডিও দখলের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ইতোমধ্যেই নিয়োজিত ছিলেন। উপরিউক্ত অফিসাররা তাদের কাজে তেমন কোন বাঁধা পাননি। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে ছয়টার মধ্যেই তাদের অপারেশন শেষ হয়ে যায়, তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে বাকশাল প্রশাসন। কিন্তু যিনি পরবর্তী পরিস্থিতি সুচারুরূপে সামাল দেন, তিনি মেজর খন্দকার আবদুর রশিদ, ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সেকেন্ড ফিল্ড আর্টিলারির সেকেন্ড ইন কমান্ড। মেজর রশিদের দায়িত্ব ছিল বিরাট বড়- অভ্যুত্থান পরিস্থিতি সামাল দেয়া, খন্দকার মুশতাককে রেডিও স্টেশন ও বঙ্গভবনে নিয়ে যাওয়া, বিদেশী দূতাবাসগুলোর সাথে যোগাযোগ করা এবং সর্বোপরি প্রতিটি অভ্যুত্থানকারী মেজরের কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। দেখা যাচ্ছে, এখানে খন্দকার মুশতাকের ভূমিকাও সামান্য। এমনকি শোনা যায় মেজর রশিদ যখন পুরান ঢাকার আগা মসিহ লেনে মুশতাকের বাসায় যান, তখনো মুশতাক ছিলেন নার্ভাস। তিনি নাকি রশিদের সাথে যেতেও ইতস্তত বোধ করছিলেন। এরপর মেজর রশিদ প্রথমে শাহবাগে রেডিও স্টেশন ও তারপর বায়তুল মুকাররম মসজিদ হয়ে খন্দকার মুশতাক আহমদকে বঙ্গভবনে নিয়ে যান। নতুন সরকারের প্রস্তাবিত মন্ত্রীদের বঙ্গভবনে জড়ো করার কাজও তিনিই করেন। বেসামরিক প্রশাসনকেও তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। এই সম্পূর্ণ ঘটনার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ছিলেন মেজর খন্দকার আবদুর রশিদ। খন্দকার মুশতাকের পুরো শাসনামলে বঙ্গভবনে ফারুকের চেয়ে রশিদের সিদ্ধান্তের দামই বেশি ছিল। এমনকি ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী ও আবু হেনা মোহাম্মদ কামরুজ্জামানকে হত্যা করতে রিসালদার মোসলেম উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন সেনাদলকে কারাগারে ঢুকতে দিতে ডিআইজি প্রিজনকে আদেশ দিয়েছিলেন মেজর রশিদই। সেদিন নিজের আদেশকে তিনি পোক্ত করিয়েছিলেন খন্দকার মুশতাককে দিয়ে বলিয়ে। আমার মনে হয়, সম্পূর্ণ আগস্ট অভ্যুত্থান পরিচালিত হয়েছে মেজর রশিদের বুদ্ধিতেই। রশিদই ছিলেন সার্বিক অভ্যুত্থানের মূল কমান্ডার। এমনকি অভ্যুত্থানের পরও সিদ্ধান্ত গ্রহণে মেজর রশিদের কাছে মেজর ফারুক তো বটেই, খন্দকার মুশতাকও ছিলেন ব্রাত্য। কিন্তু মুজিবের খুনি হিসেবে খন্দকার মুশতাক আহমদ, মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান ও মেজর শরিফুল হক যেভাবে জনমনে পরিচিতি পান, সে তুলনায় মেজর খন্দকার আবদুর রশিদ অন্তরালেই থাকেন। এমনকি মেজর ফারুককে ফাঁসীর দড়িতে ঝুলতে হলেও বেঁচে গেছেন রশিদ। ২০০৮ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামী লীগ কিছুদিন রশিদের মেয়ে মেহজাবিন রশিদকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করলেও রশিদের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি। তার আক্ষরিক অবস্থান সম্পর্কেও কোন সূত্র বের করতে পারেনি। রশিদ খন্দকার মুশতাকের দূরসম্পর্কের আত্মীয় ছিলেন। যতদূর জানা যায়, তিনি দেশ ছেড়ে লিবিয়াতেই থিতু হন। তবে লন্ডন, রোম ও ব্যাংককে তার মালিকানাধীন তিনটি ফ্ল্যাট আছে বলে শোনা যায়। মেজর রশিদ পরবর্তীতে লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হন। লিবীয় সেনাবাহিনীর অনেক কার্যক্রমই নিয়ন্ত্রণ করতেন রশিদ। এমনকি শোনা গেছে গাদ্দাফির পতনের সময়ও গাদ্দাফির অনুগত সৈন্যদের অপারেশনাল কম্যান্ডে গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী ভূমিকা পালন করেন মেজর খন্দকার আবদুর রশিদ।



লিখা : ইমরান চৌধুরী

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:০২

কষ্টবিলাসী বলেছেন: সবাই তো জিয়াকে দোষারপ করে।

২| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:১৩

ওয়েলকামজুয়েল বলেছেন: জিয়া তখন সেনাবাহিনীর সামান্য এক মেজর ছিলেন

৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:২৫

মুদ্‌দাকির বলেছেন:

না ভাই আপনি ভুল জানেন জিয়া তখন সামান্য মেজর ছিলেন না!!!!

আর জিয়া যদি এগুলো করেই থাকে, মনে হয় ঠিকই করেছেন।

৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:২৭

কষ্টবিলাসী বলেছেন: লেখকের জ্ঞানের বহর দেখে অবাক হলাম। জিয়া সামান্য মেজর ছিলেন? এনিওয়ে, মন্তব্যের উত্তর দিতে শিখেন নাই, ব্লগার হয়ে গেছেন দেখছি।

৫| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:২৩

ওয়েলকামজুয়েল বলেছেন: তাই হয়তো সেলিব্রেটি হতে পারিনি।

৬| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:০৫

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: জিয়া তখন সামান্য মেজর কিভাবে থাকে, বুঝলাম না!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.