নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
মেজর ডালিমের স্ত্রী নিম্মিকে শেখ কামাল অপহরণ করেছিলেন মর্মে একটি কথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। এটা একটা বিকৃত তথ্য। বেশ কয়েক বছর আগে প্রকাশিত ফেরার মেজর ডালিমের আত্মজীবনীতেও সেই অপহরণের ঘটনার পূর্ণ বিবরণ ছিল। মেজর রফিকুল ইসলামের লেখা 'লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে' বইতেও ব্যাপারটি খোলাসা করা হয়েছে।বস্তুত, সেই অপহরণের ঘটনার সাথে জড়িত ছিল তৎকালীন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কুখ্যাত নেতা গাজী গোলাম মোস্তফা। বস্তুত ইস্কাটন লেডীস ক্লাবে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে (সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধকালীন বিখ্যাত ক্র্যাক প্লাটুন সদস্য লিটুর বিয়ে ছিল) ডালিমের ছোট ভাইয়ের সাথে গাজীর এক ছেলের বচসাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার সূত্রপাত। বিয়ের অনুষ্ঠানেই ডালিম ওই ছেলেকে সজোরে চপেটাঘাত করলে ছেলে গিয়ে বাপের কাছে নালিশ করে। এরপর অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়েই গাজী সদলবলে এসে ডালিম, নিম্মি ও নিম্মির মাকে তুলে নিয়ে শেরে বাংলা নগরের নির্জন স্থানের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু পরে মাঝপথে গাড়ি ঘুরিয়ে তাদের নিয়ে যায় খোদ ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে। সেখানে বঙ্গবন্ধু ডালিমদের এভাবে অপদস্থ করায় গাজীকে বকাঝকা করেন।বস্তুত, ডালিমদের পরিবারের সাথে শেখ পরিবারের ছিল গভীর সম্পর্ক। একেবারে যাকে বলে হরিহর আত্মা। ডালিমের খালা আজকের সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। ডালিমের ওয়ালিমাতেও বঙ্গবন্ধু গিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে দেশে ফেরার পর সেটিই ছিল যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে তাঁর প্রথম যোগদান। শেখ কামাল থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর সন্তানদের সাথেও ডালিমের হৃদ্যতার সম্পর্ক ছিল। নিজের বইতে ডালিম কামালের সম্পর্কে খুব খারাপ কিছু লিখেন নি।যাহোক, ডালিমকে অপহরণের জের ধরে ঢাকা সেনানিবাসে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকজন অফিসার বেরিয়ে গিয়ে গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলেদের অপহরণ করে মারধর শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহর মধ্যস্থতায় ঘটনার আগুনে ছাই চাপা দেয়া হয়।বঙ্গবন্ধুর বাড়ীতে যখন মধ্যস্থতা চলছিলো, তখন নাকি মেজর ডালিম শার্ট খুলে যুদ্ধের সময় তার কাঁধে লাগা গুলির দাগ দেখিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, "চাচা এখন আপনাকে বঙ্গবন্ধু হিসেবে বলছি। এই দেখুন সেই গুলির দাগ। যখন আমরা আপনার ডাকে দেশের জন্য যুদ্ধ করছি, তখন এই গাজী কলকাতায় বসে ফুর্তি করেছে। আজ এই স্বাধীন দেশে আমার স্ত্রী, আমার শাশুড়ির উপর হওয়া অপমানের আপনি বিচার করুন।" বঙ্গবন্ধু এই কথার পর খুবই লজ্জিত হয়েছিলেন বলে বর্ণনায় প্রকাশ।কিন্তু সম্ভবত সেই চোরের খনির জন্যই বঙ্গবন্ধুর বিচার ব্যাক ফায়ার করলো। তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ডালিমকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করলেন। তার সাথে সেদিন গাজীর বাসায় হামলা করা ক্ষুব্ধ আরও কয়েকজন অফিসারকেও বরখাস্ত করা হয়, যারা পরবর্তীতে আগস্ট অভ্যুত্থানে অংশ নেয়।কেউ আওয়ামী লীগকে অপছন্দ করতেই পারে। কিন্তু তাই বলে ইতিহাস বিকৃতির কোন মানে হয়না। এমনটা করলে আওয়ামী লীগের ইতিহাস বিকৃতির সমালোচনা করার কোন অধিকার থাকেনা। আলোচিত এই অপহরণের ঘটনা ডালিমের স্ত্রী নিম্মিকে ঘিরে হয়নি, তাদের শেখ কামাল অপহরণও করেননি। উল্টো ডালিমের বইয়ে লেখা আছে, যখন তাদের ৩২ নম্বরে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন নাকি শেখ জামাল ও রেহানা সিদ্দিক হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এসে ডালিমের স্ত্রী ও শাশুড়িকে ভেতরে নিয়ে যান এবং সেবাযত্ন করেন।আমি আগেই বলেছি, ডালিমের পরিবার ও শেখ পরিবারের মধ্যে গভীর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অভ্যুত্থানকারীদের নেতা মেজর খন্দকার আবদুর রশিদ ডালিমকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে অপারেশন চালনা করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু ডালিম পূর্ব সম্পর্কের অজুহাত দেখিয়ে স্বেচ্ছায় রেডিও দখল ও সরকার পতনের ঘোষণা দেয়ার দায়িত্ব নেন...।
লিখা: ইমরান চৌধুরী
©somewhere in net ltd.