নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য সদা সুন্দর চিরন্তন

অসত্যের কাছে নত নাহি হবে শির ভয়ে কাপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর। -নজরুল

ওয়েলকামজুয়েল

লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।

ওয়েলকামজুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু স্মৃতি কিছু কথা : নিহত মোমবাতির শ্বাশ্বত চরিত্র

২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:০২

২০১৩ সালে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ঢাকার অতি ব্যস্ত পয়েন্ট, শাহবাগ চত্বরে বহু মানুষের সমাবেশ ঘটে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার আবরণে এই সমাবেশ থেকে যুদ্ধ অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করা হয়। এর পরিণতিতে প্রচলিত আইন তড়িঘড়ি করে সংশোধনের পরে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলির আবেদন ক্রমে জামায়াতে ইসলামি নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এর ফলে গণজাগরণ মঞ্চ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক নয় - মৃত্যুদণ্ডের প্রতীক হয়ে ওঠে। পাচ বছরের শিশুদের মাথায় কাগজের ব্যান্ডে ফাসি চাই লেখা নিয়ে সমবেত হন তাদের পিতামাতা। টিভি ক্যামেরার সামনে ওই শিশুদের স্লোগান দেওয়ান তাদের পিতামাতা। শিশুদের আধোবুলি দর্শকরা শোনেন, “ফাতি তাই।” ওই শিশু কি বোঝে, ফাসি কি? মৃত্যু কি?মৃত্যুদণ্ডকামীরা ভুলে যান মোম ব্যবহৃত হয় মঙ্গল কামনায় (জন্মদিনে), আনন্দে (বিয়ে বার্ষিকীসহ বিভিন্ন এনিভারসারি ও খুশির ঘটনায়) উৎসবে (কৃসমাস, পূজায়), প্রেমে (স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকার ক্যানডল লাইট ডিনারে বা মোমের আলোতে পানাহারে), শান্তির দাবিতে (যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনে) শোক প্রকাশে (দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণার্থে) ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে (কবরস্থানে) ।

বিশ্বের সভ্য দেশগুলোর সম্পূর্ণ বিপরীত পথে গিয়ে শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে মঙ্গল, আনন্দ, উৎসব, প্রেম, শান্তি, শোক ও শ্রদ্ধার প্রতীকের বদলে মোমবাতি হয়ে ওঠে হিংসা ও বিদ্বেষের, প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার প্রতীক। শাহবাগে মিছিল হয় মোমবাতি হাতে . সির দাবিতে। নিহত হয় মোমবাতির শ্বাশ্বত নম্র চরিত্র।আর সেই ছবি প্রকাশিত হয় দেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে।অনেকের তখন মনে পড়ে যায় ফ্রেঞ্চ রিভলিউশনে দি রেইন অফ টেরর (The Reign of Terror, ৫ সেপ্টেম্বর ১৭৯৩ থেকে ২৮ জুলাই ১৯৭৪)-এর কথা। সেই সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী বিপ্লবী দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক লড়াইয়ে সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করেন রাজনৈতিক নেতারা। সমবেত মানুষের মুখে মৃত্যুদণ্ডের দাবি তোলানোর ব্যবস্থা করতেন কুচক্রী ও ক্ষমতালোভী নেতারা। বিপ্লবের আবরণে আয়োজিত গণদাবিতে তখন ফ্রান্সে গিলোটিনে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল ১৬,৫৯৪ জনের। এর মধ্যে শুধু প্যারিসেই মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল ২,৬৩৯ জনের। এ ছাড়া সারা ফ্রান্সে আরো প্রায় ২৫,০০০ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। এসব মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল গিলোটিনে। অবশ্য সেখানে গিলোটিনের পাশে কেউ মোমবাতি অথবা মঙ্গল প্রদীপ হাতে দাড়িয়ে ছিল না। সেখানে থাকত একটি ঠেলাগাড়ি যেখানে বোঝাই করা হতো রক্তাক্ত কাটা মুণ্ডু।ফ্রান্সে অষ্টাদশ শতাব্দির শেষ প্রান্তে সেই এগার মাসে সব দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা সর্বক্ষণ ভীত ছিলেন, বিপ্লবের চেতনা সমুন্নত রাখার আবরণে যদি কোথাও প্রতিপক্ষ আয়োজিত জনসমাবেশ তাদের গিলোটিনে মৃত্যুদণ্ডের দাবি তোলে তাহলে তাদের কি পরিণতি হবে? তাই সেই এগার মাসের শাসনকালের নাম হয়, দি রেইন অফ টেরর বা ভয়ের শাসনকাল ।তবে ফ্রেঞ্চ রিভলিউশনের ২২০ বছর পরে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে শাহবাগের গণউন্মত্ততায় অনেক সচেতন নাগরিক যোগ দেন নি। শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে অংশগ্রহণকারীদের সৌভাগ্য যে দেশের দুটি বড় হসপিটাল, বারডেম ও পিজি, দুই মাস যাবৎ রোগিদের দুর্গম স্থান হওয়ার ফলে যাদের অকাল মৃত্যু হয়েছে তাদের কোনো স্বজন বলেননি, কেন একজনের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে বহুজনের মৃত্যু ত্বরান্বিত করা হলো? শাহবাগিদের সৌভাগ্য যে ভুক্তভোগীরা শাহবাগিদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি তোলেননি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.