নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
দমন পিড়ন আর গুলিতেই রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান দেখছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। মন্ত্রী থেকে পুলিশের আইজি, র্যাব আর বিজিবির ডিজি গুলি করার মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন। তাদের চোখে সরকারবিরোধী আন্দোলনে হরতাল ও অবরোধের নামে যা হচ্ছে তা সন্ত্রাস। সাধারণ মানুষের চলাচল বাধাগ্রস্ত করা। সরকারের অনেক মন্ত্রীর কথা শুনে মনে হচ্ছে দেশে এখন আইনশৃঙ্খলার সমস্যা বিরাজ করছে। পুলিশ র্যাব ও বিজিবি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু তারা হয়তো ভুলে গেছেন গত ৫ জানুয়ারি বিএনপির সমাবেশের ঘোষণা দেয়ার আগে দেশে তো এমন অবস্থা ছিল না। সমাবেশে অনুমতি না দেয়া ও খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করার পর থেকে দেশে অচলাবস্থা চলছে। মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রাজধানীসহ সারা দেশে সহিংসতা শুরু হয়েছে। তাহলে এই সমস্যা নিতান্ত আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নয়, পুরোপুরিভাবে রাজনৈতিক সমস্যা।
রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধানের চেষ্টা না করে বন্দুকের মাধ্যমে সমাধানের যে চেষ্টা হচ্ছে তাতে এখন রক্তাক্ত পরিণতির দিকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গুলি করে দমন করা হবে বলে প্রথম ঘোষণা দিয়েছিলেন জাসদের নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদল। তার কথার এখন প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, পুলিশের আইজিপি এবং র্যাবের ডিজির কথায়। আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ যে সাবেক বাম উগ্রবাদীদের হাতে চলে গেছে বাদলের কথার প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ হচ্ছে।
মঈন উদ্দিন খান বাদল হচ্ছেন সেই জাসদের নেতা যে দলের হাতে বহু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ৭২-৭৪ সালে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজন সংসদ সদস্য ছিলেন। আবার জাসদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধাসহ জাসদের ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। জাসদের সাবেক এক নেতার সম্প্রতি প্রকাশিত বইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সাথে উগ্রবাদী বামদের সম্পৃক্ততার বিবরণ উঠে এসেছে। সেই জাসদের নেতারা এখন বিরোধী নেতাকর্মীদের সরাসরি বুকে গুলি চালিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনের কৌশল নির্ধারণ করছেন। এর পর থেকে আমরা দেখছি সরকারের একাধিক মন্ত্রী গুলি করার ঘোষণা প্রকাশ্যে দিয়েছেন।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ১৮ জানুয়ারি বিবিসির সংলাপে বলেছেন অস্ত্র দিয়েই বিএনপির সন্ত্রাস দমন করা হবে। সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন, দুষ্কৃতকারীদের দেখামাত্রই গুলির সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, নাশকতাকারীদেরকে মানবতা দেখানো যায় না। এদেরকে শ্যুট অ্যান্ড সাইডের ভিত্তিতে কঠোরভাবে দমন করা হবে। ‘দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় আমরা তাদের বিচার করবো। দ্রুত বিচার আদালতের কোর্টে আর বিচারের দরকার নেই।’ এই যদি হয় সরকারের অবস্থান তাহলে দেশের পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা অনুমান করতে একটি বিভীষিকাময় চিত্র শুধু ভেসে উঠবে।
মন্ত্রী এমপিরা যখন গুলি করার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে।
বিজিবি মহাপরিচালক ১৫ জানুয়ারি সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন ব্যক্তি যদি বোমা ফাটায়, তাহলে পাঁচজন লোক নিহত হতে পারে। এ দৃশ্য কোনো বিজিবি সদস্যের নজরে এলে ওই বোমা বহনকারীকে ক্যাজুয়ালটি (হতাহত) করা তার দায়িত্ব।’ ( প্রথম আলো, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫)।
কে বোমা ফাটাচ্ছে আর সেই বোমায় মানুষ মারা যাবে কি না তা কিভাবে নিশ্চিত করবে বিজিবি? যদি কেউ বোমা ফাটায় তাহলে প্রচলিত আইনে তার বিচার হতে পারে। কিন্তু বিচারের আগে তাকে গুলি করার অধিকার বিজিবি কোনো আইনে পেতে পারে না। হ্যাঁ, বিজিবি এই অধিকার পাবে শুধু সীমান্তে। যদি বিদেশীদের হাত থেকে এ দেশের ভূখণ্ড ও মানুষকে রক্ষার জন্য হয়। এ দেশের মানুষকে হত্যার কোনো অধিকার তো বিজিবির নেই।
বিজিবির প্রধান যখন গুলির ঘোষণা দিয়েছেন তখন পুলিশের আইজি দেশের রাজনীতিতে কার কী ভূমিকা তা নির্ধারণ করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মোকাবেলার হুমকি দিয়েছেন। ১৬ জানুয়ারি রংপুরের মিঠাপুকুরে পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হকের বক্তব্যটি আমরা দেখি। তিনি বলেছেন বিএনপির ভুলের খেসরাত জনগণ দেবে না। ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে দিলে যদি হত্যা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ হতো, তখন টকশোওয়ালারা কী করতেন? এর দায় পড়ত সরকারের ওপর। বিএনপির উদ্দেশে পুলিশের আইজি বলেন, একটা দলের প্রধান তিনি যদি বেআইনি কাজ করেন তার কাছ থেকে জনগণ কী চাইবে। আপনারা ভোট প্রতিরোধ করলেন, ভোটকেন্দ্রে লোক আসতে দিলেন না। ভোটের কেন্দ্রগুলো যেখানে সেই স্কুল, কলেজ, মাদরাসাগুলো পুড়িয়ে দিলেন। মানুষ মারলেন, প্রিজাইডিং অফিসার, জনগণকে ভোটের অধিকার দিলেন না। কেন? ভুল আপনারা করছেন, জনগণ খেসারত দেবে? তা এই দেশে আমরা করতে দেবো না ইনশাআল্লাহ। তিনি আরো বলেন,সরকারের পক্ষ থেকে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও নাশকতা নির্মূলে কাজ করে যাবো। জনগণকে সাথে নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিহত করা হবে ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিগুলোর দুর্বলতার কারণে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিগুলো আজ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তবে মানবতাবিরোধী, সন্ত্রাসী, দেশ ও জনগণের শত্রুদের রুখতে হবে। অবরোধ আর হরতাল সংবিধানপরিপন্থী। হরতাল আর অবরোধের নামে যারা দেশের সম্পদ নষ্ট করছে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। শুধু মিথ্যাচার করছে। এই অপশক্তিকে নির্মূল করতে হলে পুলিশের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে একসাথে কাজ করতে হবে।
জ্বালাও-পোড়াও হরতাল ও অবরোধকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, সংবিধানের কোথাও লেখা নেই গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় করতে হরতাল ও অবরোধ দিয়ে মানুষ মারা ও জনগণের সম্পদ নষ্ট করতে হবে। হরতাল-অবরোধের মতো সংবিধানপরিপন্থী কাজ করে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। সংবিধানে রয়েছে প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সমাবেশ করার অনুমতি। (মানবজমিন, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫)
এই দীর্ঘ বক্তব্যটি পাঠক যখন পড়বেন নিশ্চয়ই মনে করবেন আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বক্তব্য রাখছেন। না, এ বক্তব্য আওয়ামী লীগের কোনো নেতার নয় বাংলাদেশের পুলিশপ্রধানের বক্তব্য। তিনি বিরোধী রাজনীতি নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছেন। বাস্তবতা হচ্ছে রংপুর ঘুরে আসার পরও সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। এখন পর্যন্ত ঢাকা-রংপুর হাইওয়ে স্বাভাবিক হয়নি। শহীদুল হকের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সমাবেশ করেছেন। তিনি আইজির মতো এত কঠোর বক্তব্য দেননি। কারণ তিনি সেখানে পা দিয়েই হয়তো পরিস্থিতি বুঝে ফেলেছেন। সমাবেশে এক হাজার লোকও হয়নি। পুলিশের আইজির পক্ষে ঢাকায় বসে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনুধাবন করা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের রাজনীতির শিকড় অনেক গভীরে। উত্তরাঞ্চলে আওয়ামী লীগের সংগঠন দুর্বল তা-ও নয়। কিন্তু মানুষ আওয়ামী লীগের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে কারণ তারা ভোট দিতে পারেনি। সেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পক্ষে সাফাই গাওয়া আইজির কাজ নয়।
এই সমাবেশে র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ দলীয় বক্তৃতা করেছেন। তিনি বলেছেন নির্ধারিত সময়ের পরই নির্বাচন হবে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এর বাইরে আমরা কোনো কিছুই চাই না। বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ করে র্যাবের ডিজি বলেন, গত দুই সপ্তাহে মিঠাপুকুরে পাঁচজনসহ সারা দেশে ২৪ জনকে খুন করা হয়েছে। ২০১৩ সালের মতো একটি গোষ্ঠী তাদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠিস্বার্থ উদ্ধার করার জন্য দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা দেশের গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করেছে। তারা উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে। তারা সন্ত্রাসী। তারা গণতন্ত্রের নামে বোমাবাজি করে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এসব খুনিকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। দেশবাসীকে সাথে নিয়ে এগুলোকে ২০১৩ সালে আমরা একবার রুখে দিয়েছি, এবারো রুখে দেবো ইনশাআল্লাহ। (মানবজমিন, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫)
র্যাবের ডিজি এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি কিভাবে বলেন কখন নির্বাচন হবে। তিনি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ইঙ্গিত করে বলেছেন একদল লোক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। কে কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তার মূল্যায়ন ভবিষ্যতে হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে যৌথবাহিনীর অভিযানে ৭১-এর শরণার্থীর মতো লোকজন পালিয়ে যাওয়ার ছবি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি সমর্থন করেন না এমন লোকদের বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে র্যাব-পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেতনের টাকা কি শুধুই আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ট্যাক্সের টাকায় আসে? র্যাব বা পুলিশের কোনো কর্মকর্তা যদি রাজনীতি করতে চান তাহলে তাদের উচিত সরকারি চাকরি ছেড়ে দেয়া।
রংপুরের মিঠাপুকুরে পুলিশের আইজি ও র্যাবের ডিজি জনগণের সাথে মতবিনিময় করতে গিয়েছিলেন। কতজন জনগণ এসেছে টেলিভিশনের পর্দায় তা দেখা গেছে। র্যাবের ডিজি বলেছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তিনি নাকি জনগণের আন্দোলন রুখে দিয়েছিলেন। যদি রুখেই দিয়ে থাকেন তাহলে মানুষ কেন ভোটকেন্দ্রে গেল না। যদি তাদের ওপর মানুষের আস্থা থাকত তাহলে ৫ শতাংশের কম ভোট কেন পড়ল?সরকারের মন্ত্রী থেকে র্যাব-পুলিশ প্রধানের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট সরকারের ক্ষমতার রশি ঢিলে হয়ে গেছে। তারা শেষ কার্ডটি খেলে ফেলেছেন। গুলির ভয় দেখানোর পর আর কিছু থাকে না। পুলিশ র্যাব গুলি করলে মানুষ মারা যাবে এটা বোঝা কঠিন কিছু নয়। আন্দোলনকারীরা যদি এই ভয় জয় করে ফেলে তাহলে গুলিতে কোনো কাজ হবে না। হ্যাঁ, কিছু নিরীহ মানুষ মারা যেতে পারে। যেমন কয়েক দিন ধরে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু তারা ভুলে গেছেন ’৭১ কিংবা ’৯০-এ এভাবে গুলি করা হয়েছিল। এভাবেই গুলির ভয় দেখানো হয়েছিল। কিন্তু মানুষ তার অধিকার আদায় করে নিয়েছিল। মনে রাখতে হবে বর্তমান আন্দোলন শুধু বিরোধী দলের ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন নয়। মানুষ ভোট দিতে পারেনি সেই ক্ষোভের আন্দোলন। ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন। এ ধরনের আন্দোলন বলপ্রয়োগের কারণে ব্যর্থ হওয়ার নজির নেই।
©somewhere in net ltd.