নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ বহিঃশত্রুর ষড়যন্ত্রের শিকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যতটুকু তার থেকে অনেক বেশী পিছিয়েছে এদেশের মীরজাফরদের উত্তরসূরীদের কারণে। এরা জেলি মাছের মত। জেলি মাছ অনেক সময় যেমন শামুক গিলে ফেলে। শামুকের শক্ত আবরণের জন্য সে না মরে বেঁচে থাকে। কিন্তু তার বাঁচার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। তাই শামুক জেলির পেটের ভিতর থেকেই জেলি মাছকে খেতে শুরু করে। জেলি মাছকে সম্পূর্ণ খেয়ে সে বৃদ্ধি পেতে থাক। এজন্য বলা হয় ঘরের শত্রু বিভিষণ। ভিতরের শত্রু সমাজকে খেয়ে শেষে ধ্বংস করে ফেলে। এ সমাজে দুই ধরনের বিশ্বাসঘাতক আছে। (ক) সক্রিয় বিশ্বাসঘাতক। (খ) নিস্ক্রিয় বিশ্বাসঘাতক। সক্রিয় বিশ্বাসঘাতকরা ব্যক্তিগত লাভের আশায় মাতৃভূমিকে বিক্রি করে দেয়। নিস্ক্রিয় বিশ্বাসঘাতক মাতৃভূমিকে বিক্রি হতে দেখে নীরব থাকে। তারা সরব হয় না। তাই ব্রিটিশরা যখন সমস্ত বাংলা দখল করার প্রয়োজন মনে করল, তখন মীরজাফর এবং নবাবের উচ্চাকাঙ্খিত মন্ত্রীরা তাদেরকে এ বিষয়ে সাহায্য করেছিল। পরবর্তী নবাব হওয়ার লোভে মীরজাফর সিরাজদ্দৌলাকে পলাশীর যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে সৈন্য পিছানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন, অথচ সৈন্যরা ব্রিটিশ বাহিনীকে পরাজিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছিল। সিরাজদ্দৌলা তাঁর বিশ্বাসী মন্ত্রীর উপদেশ গ্রহণ করে সা¤্রাজ্য এবং জীবন উভয়ই হারালেন। মীরজাফর বিশ্বাসঘাতকতা করে মাতৃভূমিকে বিদেশীদের হাতে তুলে দিলেন। লোভ বিশ্বাসঘাতকদের একমাত্র ধর্ম। একজন বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তিগত লাভের জন্য শয়তানের সাথে রাতের খাবার খেতে পারে। আর এই বিশ্বাসঘাতকতার সাথে যুগে যুগে ক্ষমতার লোভে কতিপয় রাজনীতিবিদরাই জড়িয়েছে বেশী। তরুন প্রজন্মকে নিজেদের প্রয়োজনেই এদেরকে চিন্হিত করতে হবে।
আমাদের পাল্টাতে হবে বিভেদের রাজনীতি। তরুণ প্রজন্মকে তাদের যোগ্যতা, সততা ও দক্ষতার মাধ্যমে সমাজের আমুল পরিবর্তন ঘটাতে হবে। গড়ে তুলতে হবে জাতীয় ঐক্য। চিত্রাঙ্কন করতে হবে ক্ষুদা দারিদ্র মুক্ত সুখী-সমৃদ্ধশালী একটি বাংলাদেশের। আমাদের রাজনীতি এখন কুলুষিত। জীবিত মানুষের কল্যাণের পরিবর্তে এখানে এখন মৃত ব্যক্তিদের নিয়ে গালি-গালাজ চলে অনবরত। অথচ দেশ এবং জাতি গঠনে প্রত্যেক ব্যক্তির অবদানই ইতিহাস স্বীকৃত। কোন আইন আর গালি-গালাজ করে তা পরিবর্তন করা যায় না। তাহলে কেন এতো বাড়াবাড়ি? আমাদের দেশের সংসদ এখন কারো গুণকীর্তণ আর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিষেদাগারের আড্ডা খানায় পরিণত হয়েছে। অথচ গরীবের টাকায় পরিচালিত এই সংসদ তাদের ভাগ্যে উন্নয়নে কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পারছে। কিন্তু কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। অন্ধ আবেগ আর ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি তরুণরা আর কতদিন থাকবে? আজ আমাদের জাগতেই হবে। পরিবারতন্ত্র, দূর্নীতি, অসততা আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে দূর্বার প্রতিরোধ। কারণ আমাদের বুকে আছে বল, আছে বুদ্ধি আর আছে এগিয়ে যাবার দূর্দান্ত সাহস। তরুণরা পরাজিত আর পরাভূত হতে জানেনা।
মহাকবি ইকবাল কর্তৃক রচিত নিচে ছন্দগুলো সময়োজিত সতর্কতার সংকেত দিয়েছেন এভাবে-”হে! বোকা মানুষ! নিজের দেশকে নিয়ে ভাব, বিপদ সময় দিক চক্রবাল সংকেত স্পষ্ট, মনোযোগ দিয়ে না শুনলে ধ্বংস অনিবার্য।” এ ভাবনায় তরুণদের আজ সম্পৃক্ত হতে হবে।
যাদের বিবেক সুপ্ত কিন্তু মৃত নয় তাদের প্রতি জনগণের আহবান উদ্বিগ্ন নাগরিকদেরকে মুক্ত করতে এবং জাতির ভবিষ্যত নির্ধারণে প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতিভাধর উৎসুক একদল নাগরিকই কেবল পারে ইতিহাসের গতি পথকে পরিবর্তন করতে। আজ আমাদের অঙ্কন করতে হবে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভিশন। আবিষ্কার করতে হবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার লক্ষ্য। এ জন্য বলা হয়, যে নিজের ভেতরে নিজে নেতা হতে পারে, তখনই সে নেতৃত্ব পায় অন্যদের, সমাজের এবং রাষ্ট্রের। Leaded by some Ideal and lead some one to Ideal অর্থাৎ যিনি আদর্শ অনুসরণ করেন এবং আদর্শের দিকে অন্যদের পরিচালনা করেন তিনিই নেতা। নেতা হতে হয় অনুশীলনের মাধ্যমে। ধর্মীয় নেতাদের কথা আলাদা, তারা God gifted. নেতা বা Leader শব্দটি বিশ্লেষণ করলে তাহলে দেখি-ঃ L = Loyal of his Idealogy বা আদর্শের প্রতি অনুগত। E = Educated বা বিদ্বান। A = Affectionate of Associates বা অধীনস্তদের প্রতি স্নেহশীল। D = Determind বা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। Dutiful বা কর্তব্যপরায়ণ। Dedicated বা ত্যাগী। Dear to all বা সবার প্রিয়। E = Efficient বা দক্ষ। Enthusiastic বা উদ্দীপিত। R = Responsible বা দায়িত্বশীল। Realiable বা যার ওপর নির্ভর করা যায়। তরুণদের এ সমস্ত গুন অর্জন করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, মুহাম্মদ বিন কাশিম পেরেছে ১৭ বছরে, সালাউদ্দিন আইয়ুবী পেরেছে, হাজী শরীয়তুল্লাহ, তিতুমীর, খান জাহান আলী, শাহজালাল, শাহ মাখদুম পেরেছে, আমরা তাদের অসমাপ্ত কাজ করতে পারবো না কেন? আমরাও পারবো। কবির ভাষায় ”ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে”।
দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করার মধ্যেই দেশের উন্নতি নির্ভর করে। যারা দেশের কারণে জীবন উৎস্বর্গ করেন, তারা জীবন্ত লোকের মধ্যে জীবনের স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দেয়। চার্লস মরিস কুশাসন থেকে উৎসারিত অন্যায় বিচার, কলুষিতা এবং অত্যাচরকে সহ্য না করার অস্বীকৃতি নীতিবান নাগরিকদেরকে মর্যাদা এবং উন্নতির পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। সততার সাথে যে নেতৃত্ব প্রদান করবে আমাদের সমাজ তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত। নেতৃত্ব প্রদানের জন্য তরুণদের দিকে তাকিয়ে আছে সমাজ এবং রাষ্ট্র। এই নেতৃত্ব দেয়ার অর্থ সবার আগে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলা। নিজে নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের ভার গ্রহণ করুন। একবার এক কৃষক তার আপেল বাগানে কীটনাশক ঔষধ ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন। তা দেখে একজন পথিক বললেন, “যেভাবে আপনি কীটনাশক ঔষধ ছিটাচ্ছেন, তাতে মনে হয় কীটের বিরুদ্ধে আপনার বিদ্বেষ রয়েছে।” কৃষক উত্তর দিলেন, “না, কীটের বিরুদ্ধে আমার কোন বিদ্বেষ নেই। আমি যা কিছু করছি তা সব আপেলের জন্য।” তিনি আরও বললেন, “আমি সব জায়গায় কীটনাশক ঔষধ ছিটাচ্ছি না। যে সব আপেল কীট দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমি শুধু ঐ সব আপেলে ঔষধ দিচ্ছি।”
তরুণ প্রজন্মকে সমাজের আগাছাগুলোকে পরিস্কারের দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ নৈতিক মূল্যবোধ হচ্ছে আমাদের মূল কা- এবং সফলতা আমাদের পাখা। উভয়ের সমন্বয়ে মূল্যবোধ ভিত্তিক সফলতা অর্জিত হয়। আর এভাবেই অর্জিত হয় প্রকৃত স্বাধীনতা। স্বাধীনতার আলোকবর্তিকাকে পরবর্তী প্রজন্মের নিকট পৌঁছে দিতে হবে এ কার্যসাধনের মাধ্যমে। জাতির মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০০ ভাগ আমাদের যুবকদের দ্বারা গঠিত হয় না। কিন্তু ভবিষ্যতে শতকরা ১০০ ভাগ গঠন করে যুবকরাই। তরুন প্রজন্ম আমাদের যুগের নির্মাতা। আজ যারা নির্মাণ করছে তারাও তাদের যৌবনেরই অর্জিত সম্পদ। যুবকরাই সমাজের গতিশীলতা, ক্রমিক বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের প্রতীক। আর এই পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে আমদের তরুণ প্রজন্মকেই। শিশু জিহাদকে উদ্ধারে আমাদের রাষ্ট্র তেইশ ঘন্টায় যেখানে পারেনি, আমাদের কয়েকজন তরুণ তা পেরেছে ২৩ মিনিটে। তাই এই দেশ, জাতি এবং মানবতাকে উদ্ধারে তরুণ প্রজন্মকেই ক্রান্তিকালে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম তাদের সততা, মেধা, দক্ষতা, দেশপ্রেম ও মানবপ্রেমের চাদরে আবৃত করবে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে। দল-মত, ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণী-পেশা সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে তাদের পরিচয় আমরা তরুণ। আমরা বাংলাদেশী। তারুণ্যেই আমাদের পূঁজি। তরুণ, করে নাকো ডর, মানে নাকো পরাজয়। এটাই হোক আমদের তরুণ প্রজন্মের প্রত্যয়। এটাই হোক মুক্তি আন্দোলনে আমাদের শ্লোগান।
©somewhere in net ltd.