নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
আমাদের দেশের একটি বড় শত্রু হচ্ছে আদর্শ। এই আদর্শই এদেশকে পিছনে টেনে ধরে আছে। ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালে দুই দফা বিদেশী শাসন থেকে আজাদ হবার পরও আমরা সেসব জমানা থেকে খুব একটা কি বের হতে পেরেছি? এখন দেশে যা হচ্ছে, তার সবই ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালের আদর্শের দায় এখনও টেনে নেয়ার কারণে হচ্ছে। আর এজন্যই তো নিখাদ খেলোয়াড়ি বিষয়ের মধ্যেও ভারতীয়রা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে তাদের দ্বারাই আমাদের জন্ম। এটাও কিন্তু একটা দায়ের জোয়াল। এই দায় ভাঙ্গতে হবে আমাদেরই।
এহেন দাবীর অসাড়তা নিয়ে আমরা গলা ফাটাতে পারি। অতীত থেকেই শিক্ষাদীক্ষা ও শৌর্যবীর্যে উজ্জ্বল উপমহাদেশের অনেক জাতি যেখানে পরাধীন, সেখানে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র নিয়ে দিব্যি এমন একটা জাতি বসে আছে, ১৯৪৭ সালের আগে যাদের কোন পৃথক সত্ত্বাই কেউ খুঁজে পায়নি; এই ধারণা থেকে উদ্ভূত অক্ষম ঈর্ষা থেকেই বাংলাদেশকে এতো কথা শুনতে হয়। সত্যি বলতে, পুরো ব্যাপারটাকে সত্যিই আমি উপভোগ করি। কারণ এই উপভোগে স্বাধীনতার সুবাতাস সবচেয়ে তীব্রভাবে অনুভূত হয়।
যাহোক, আমি খুব খুশি হতাম, বর্তমানে দেশজুড়ে চলমান এই গৃহদাহ যদি সেই দায়ের জোয়াল থেকে মুক্তির সংগ্রাম হতো। প্রায় ৪৫ বছর আগে স্বাধীন হলেও আজো বাংলাদেশ পাকিস্তান ও ভারতের একটি বর্ধিত যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবেই রয়ে গেছে। এর আরও প্রলম্বন আমাদের জন্য বিধ্বংসী। যে রুয়ান্ডা ও বুরুন্ডিতে বাংলাদেশের সেনারা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে, এতদিনে সেই হতভাগ্য দেশদ্বয়ের মতোই আমাদের অবস্থা হতো, যদি বাঙ্গাল হুজুগে না হয়ে উদ্দেশ্য ও কর্মের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারতো।
আমাদের সামনে বেশ কিছু গুরুতর জাতীয় নিরাপত্তা সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। পাহাড়ের শান্ত পরিবেশ তিরোহিত হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গত কয়েকবছরে বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব আইনি ভিত্তি লাভ করেছে। সেই অঞ্চলের জলরাশির তলে লুকায়িত খনিজ সম্পদ এবং ভূরাজনৈতিক কারণে বহ বিদেশী নাগরের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আছে। আমাদের কোন সীমান্তই এখন স্থিতিশীল নয়।
ব্রহ্মদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গা সংকট আমাদের জাতীয় নিরাপত্তায় দগদগে ঘা। ২৫ লাখ রোহিঙ্গাকে নিজভূমে পুনর্বাসন করতে না পারলে আমরা নিজেরা কখনোই শান্তিতে থাকতে পারবো না। সমগ্র মুসলিম জাহান থেকে ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন ছিটমহলের মতো অবস্থিত বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার ধ্রুপদী আশংকা অমুসলিম অধ্যুষিত ভারত থেকে উদ্ভূত। সেদেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক তৎপরতা বাড়ছে, যাদের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশের আশেপাশে বসবাস করে। যে পশ্চিমবঙ্গের সাথে আমাদের কার্যত কোনোরূপ যোগাযোগই ছিলোনা, সেই পশ্চিমবঙ্গের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এখন বাংলাদেশের নাম বহুল প্রচারিত, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। সবার অগোচরেই সমগ্র পূর্ব উপমহাদেশেই কিছু সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন ঘটছে, যার ছোঁয়া বাংলাদেশ এড়াতে পারেনা।
সংকট হিসেবে এসবের দৃশ্যমানতা কম। বাংলাদেশের হুজুগে মানুষও এতকিছু বুঝতে চায়না। কাউকে যদি আমি উপরের কথাগুলো বলি, তাদের বেশিরভাগই বলবে, আমি বেশি বুঝি। অথচ উপরিউক্ত জাতীয় সংকট নিরসনে যেখানে আমাদের একতাবদ্ধ থাকার কথা, সেখানে আমরা এখন স্মরণকালে সবচেয়ে বেশি বহুদাবিভক্ত। আমাদের জাতীয় শক্তি এখন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। রাষ্ট্রযন্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের দিকে নজর দেবে কি, তারা তো নির্বাচনের দাবীতে ক্রন্দনরত বিরোধীদের মোকাবিলাতেই ব্যস্ত! সমুদ্র থেকে গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম উত্তোলনে আমরা কি করছি, বা কি করতে পারি; এটা নিয়ে যখন আমাদের ব্যস্ত থাকার কথা, তখন বিদেশ থেকে আমদানি করা পেট্রোল নিয়ে গাড়িঘোড়া জ্বালাতে হচ্ছে বাঙ্গালকে। আর বিদেশী নাগররা এটাই চায়, যাদের পাহাড় ও সমুদ্র নিয়ে আলাদা কোন পরিকল্পনা আছে...!
©somewhere in net ltd.