নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
ইতিহাস বিষয়ক অনুবাদ গ্রন্থটির নাম 'মুঘল শাসনব্যবস্থা'। লেখক হরি শংকর শ্রীবাস্তব। তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুর দিনদয়াল উপাধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। এই বইটির কথা আগেও কয়েকবার শুনেছি। তাছাড়া এতে মুঘল শাসনামলের রাজনৈতিক ইতিহাসের বদলে প্রশাসনিক ও শাসনতান্ত্রিক বিষয়াবলী থাকাতেই বইটি আমি অর্ডার দেই। বইটি হাতে পাবার পর এখন একটু উল্টেপাল্টে দেখছি। অল্প কিছু পড়েই আমি বিস্মিত হয়েছি এতে ইসলামের প্রতি লেখকের প্রগাঢ় শ্রদ্ধার ভাষা দেখে। এমনকি বইটির লেখকের নাম জানা না থাকলে আমি বিশ্বাসই করতাম না যে এটা কোন অমুসলিম লেখকের বই!
যেমন বইটির উপক্রমণিকার এক স্থানে তিনি লিখেছেন, "এদেশে মুসলমানরা এনেছিলেন উন্নততর ধর্ম ও শাসনব্যবস্থা। ... এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মুসলমানদের শাসন ছিলো কল্যাণকর। অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর মতো তাঁরা এদেশের সম্পদ পাচার করেননি, বরং এদেশকে নিজের মাতৃভূমির মতো দেখেছেন, শাসন করেছেন, এবং এখানেই সমাহিত হয়েছেন। রাজনৈতিক ডামাডোল, হানাহানি ছিলো 'রাজায় রাজায় যুদ্ধ'। দেশের প্রজা সাধারণ তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি।"
আবার আরেক স্থানে সম্রাট শের শাহ সুরের প্রশংসা করতে গিয়ে তাঁকে হযরত উমার (রা এর সাথে তুলনা করার চেষ্টাকালে হরি শংকর শ্রীবাস্তবের ভাষা- "প্রথমত উল্লেখ্য যে, হযরত উমরের সঙ্গে ইতিহাসের শাসককুলের কারোরই কোন তুলনা করা যায়না। মানবজাতির ধারাবাহিক ইতিহাস সম্পর্কে যাদের অন্তরঙ্গ পরিচিতি আছে, এ সত্য তারা কেউ অস্বীকার করতে পারেন না।... আমরা অত্যন্ত বেদনাভারাক্রান্ত চিত্তে হযরত উমরকে আবারো স্মরণ করি। সেই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ খেলাফত লাভের অল্প কয়েক বছর পর অাততায়ীর হস্তে অপঘাতে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। আমরা অত্যন্ত বেদনাভারাক্রান্ত চিত্তে আবারও বলছি, হযরত উমরের এ অকাল মৃত্যুতে মুসলিমবিশ্ব যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো, সে ক্ষতি আজো অপূরণীয় রয়ে গেছে।"
আমি হরি শংকর শ্রীবাস্তব সম্পর্কে বলতে গেলে কিছুই জানিনা। তবে ওনার লেখা পড়ে আমার মনে ভাবান্তর হলো। তিনি সেই দেশেরই মানুষ, সেই ধর্মগোষ্ঠীরই অন্তর্গত, যাদের একাংশ আজ গরুর মুত্র পান করে, অথবা চিড়িয়াখানার মাংশাসী প্রাণীদেরও মাছ, পাখির গোশত খেতে দিয়ে নিজেদের হাস্যস্পদ বস্তুতে রূপান্তর করেও তাদের মুসলিমবিদ্বেষের কথা বিশ্বকে জানান দিতে ব্যাকুল। আমাদের দেশেও কতিপয় ইসলামবিদ্বেষী লেখকের অপঘাতে মৃত্যুতে শোকের ভান করা কতিপয় ব্যক্তি প্রকাশ্যে, অথবা ইনিয়েবিনিয়ে ওই ইসলামেরই পিণ্ডি চটকাচ্ছে। বলা বাহুল্য, এতে করে এদেশেও ছাইচাপা আগুনের মতো জাতিগত বিদ্বেষ ঘণীভূত হচ্ছে। যার নমুনা ফেবুতে এলে প্রতিদিনই দেখতে পাই।
এমতাবস্থায় শ্রীবাস্তব পদবীধারী একজন লেখকের বইয়ে ইসলামের এমন প্রশস্তিগাঁথা পড়ে ভাবছি, বহুত্ববাদী সমাজের আসলে দুটি দিক থাকে। মানুষ যদি দুটি দিক সম্পর্কেই সম্মক অবগত থাকে, তাহলে তার মনোজগত উদার হয়। পাশাপাশি পৃথিবীও অধিকতর শান্তির স্থান হয়। একই সমাজে ভালো, খারাপ, গাড়ল, বুদ্ধিমান সবধরণের আত্মারই একটা সহাবস্থান থাকে। এভাবে সকল বিষয়কে পর্যবেক্ষণ করতে শিখলে ক্রোধের পাগলা ঘোড়ায় লাগাম দেয়া যায়। মনের প্রতিক্রিয়াশীলতা কমে আসে। জাতিগত বিদ্বেষ ও প্রতিক্রিয়াশীলতা মুখ্যত একটি ছোঁয়াচে মহামারীর মতো বিষয়। এটা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। মনোজগত উদার এবং মস্তিষ্কজগত বুদ্ধিদীপ্ত ও কৌশলী হলে এই মহামারী ছড়ানোর সময়ই বাঁধাপ্রাপ্ত হয়...।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৫১
জাহিদ হাসান মিঠু বলেছেন: ভাল বলেছেন ।