নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
সাভারের কাঠগড়ায় বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক কমার্স ব্যাংকে প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্ধর্ষ ডাকাতির মাধ্যমে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সহ যেভাবে দশ জনের মৃত্যু হলো, সে ঘটনাকে অনেকে ১৯৭৫ সালের পর এদেশে সংঘটিত প্রথম ব্যাংক ডাকাতি বলে উল্লেখ করেছেন। এহেন পরিসংখ্যান সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। তবে কোন ব্যাংকে এর আগে এতো লোক নিহত হয়েছে কিনা, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।
ডাকাতদের হামলায় প্রথম প্রাণ হারায় ব্যাংকের দরজায় নিযুক্ত গানম্যান। এরা পেশাদার বন্দুকবাজ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেনাবাহিনী ও বিজিবি থেকে অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকেরাই ব্যাংকে গানম্যানের চাকরি নেয়। ফলে তাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। তবে গানম্যানদের হাতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। কারণ আমি আজ পর্যন্ত যতো ব্যাংকে গেছি, প্রায় প্রত্যেকটিতেই গানম্যানদের হাতে দেখেছি আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যবহূত রাইফেলের মতো দেখতে প্রায় চার ফুট লম্বা ও কয়েক কেজি ওজনের ভারী একনলা বন্দুক ব্যবহার করতে।
এসব বন্দুক দিয়ে ছররা গুলি ফায়ার করা যায়। ছররা গুলি পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ বা মানবদেহের স্পর্শকাতর কোন স্থানে না লাগলে ততোটা প্রাণঘাতী নয়। তাছাড়া আকারে বড় ও ওজনে ভারী হওয়ায় হঠাৎ প্রয়োজনে এসব হাতিয়ার দ্রুত সঞ্চালন, এমনকি এসবে কার্তুজ লোড করতেও অনেকটা সময় লেগে যায়। এতে গানম্যানের রিফ্লেক্স মারাত্মকভাবে হূাস পায়। ফলে এমনকি লি এনফিল্ড থ্রি নট থ্রি রাইফেলধারী ডাকাতের সামনেও একজন সুপ্রশিক্ষিত গানম্যান অসহায় শিকারে পরিণত হতে পারেন।
ডাকাতরা খুব বেশি টাকা নিতে পারেনি। ব্যাংকের ভল্টও ভাঙ্গতে পারেনি। তাদের সবাইকেই ধরা হয়েছে, একজন এলাকাবাসীর গণধোলাইয়ে মরেছে। কিন্তু দশটা অমূল্য প্রাণ তো ঠিকই চলে গেলো। ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা দরকার।
মানবিকভাবে কিছু অন্ধ লোক সমাজে অাছে। এরা শিক্ষিত। এরা প্রায়ই নিজেদের পেশার লোকদের ব্যাপারে একদেশদর্শী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। গোষ্ঠীগত রেশারেশি ও মেরুকরণের কারণেই আজকাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডাক্তার, প্রকৌশলী পেশাজীবীদের ধর্মঘট দেখা যায়, যা অত্যন্ত গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ।ডাকাতদের গুলিতে ব্যাংকার মারা যাওয়ায় ব্যাংক ধর্মঘট আশা করবো, এমন মানুষ আল্লাহ আমাকে বানাননি। কারণ আমি জানি, ব্যাংক সচল থাকলে দেশ সচল থাকে। এদেশে একবারই বড়সড় ব্যাংক ধর্মঘট হয়েছিলো, ১৯৮২ সালে। তাছাড়া ব্যাংকারদের প্রতিবাদী হবার সুযোগও অন্যান্য পেশাজীবীদের চেয়ে কম।
কাঠগড়ার দুর্ঘটনাটা নেহায়েত একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিলো বলেই আমি বিশ্বাস করি। কাঠগড়া স্থানটা আমার পরিচিত। জানবিবির কাছেই এই স্থান। সাভার উপজেলাধীন এসব এলাকা আগে থেকেই সমাজবিরোধী কার্যকলাপের আখড়া। এখানকার কিছু এলাকার মানুষ খুব বাজেভাবে ডাকাত চক্রের হাতে জিম্মি।
তবে পুরো ঘটনাটি দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর প্রশ্ন সবার সামনে এনে হাজির করেছে। আমার মনে হয়, সিকিউরিটি ফার্মগুলো গানম্যানদের শটগান বা পিস্তলের মতো হালকা, কিন্তু কার্যকর হাতিয়ার সরবরাহ করার ব্যাপারটা খতিয়ে দেখতে পারে।
সর্বোপরি, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিই ব্যাংকের নিরাপত্তার প্রধান নিয়ামক। যদি দেশের পরিস্থিতি ভালো থাকে তাহলে ব্যাংক ডাকাতির কথাও আসে না। কারণ ব্যাংক ডাকাতি করা, এবং তা হজম করা দুটিই অত্যধিক কঠিন কাজ। এধরণের অপরাধ খুব সচরাচর ঘটে না। যদি দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে, তাহলে ব্যাংক কেন, কারোরই কোন দুশ্চিন্তার কিছু থাকেনা। আমরা আবার অন্ধকার যুগে ফেরত যেতে চাইনা...।
©somewhere in net ltd.