নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
গতকাল দুপুর ১২:১১ মিনিটে সংঘটিত বড় ভূমিকম্পটির পর আজ ভোর ৫:১১ মিনিট পর্যন্ত প্রায় ২৭টি ভূমিকম্প হয়েছে হিমালয় দুহিতা নেপালে। রিখটার স্কেলে এসবের মাত্রা ৪.১ থেকে শুরু করে ৬.৬ পর্যন্ত। এরমধ্যে শেষোক্তটি সংঘটিত হয় গতকাল পৌনে একটায়, যা এদেশেও অনুভূত হয়েছে।
মনে হচ্ছে, নেপালের ভূমি আচানক অস্থির হয়ে পড়েছে। তবে এরও ভূবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। এ ব্যাপারে আমার ইলম খুবই সীমিত, তবে বইপত্রে পড়েছি একদা হিমালয় পর্বতশ্রেণী সমুদ্রের নিচে অবস্থিত ছিলো। বহুপূর্বে ভূমিকম্পের দ্বারাই এই পর্বত জমিনের উপর উজাগর হয়। এখানে নাকি সামুদ্রিক মাছের ফসিলও পাওয়া গেছে।
ভূমিকম্প দ্বারা সৃষ্ট হিমালয়ের ভূপ্রাকৃিতক গঠন নাকি এখনো চলছে। আর তার নমুনা হচ্ছে এরকম ঘন ভূমিকম্প। কয়েক বছর আগে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামেও বেশ ঘনঘন ভূমিকম্প হতো। তখন শুনেছিলাম, ছোট থেকে মাঝারি মাপের এসব ভূমিকম্পের কারণ পার্বত্যাঞ্চলের মাটির তলে রক্ষিত পেট্রোলিয়াম, ইউরেনিয়াম বা গ্যাসের মতো খনিজ।
যাহোক, হিমালয় পার্বত্যাঞ্চলের এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া যদি চলতেই থাকে, তাহলে বাংলাদেশের সামনে মহা বিপর্যয়ের ঘনঘটা আছে। প্রথমত, ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিজনিত বিপর্যয় তো থাকছেই, যাতে রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোতে ভয়ংকর বিপর্যয় আসবে।
আরেকটি মারাত্মক বিপর্যয় হচ্ছে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন। বড় মাপের ভূমিকম্প নদীর গতিপথ বদলে দিতে সক্ষম। ১৮৯৭ সালে সংঘটিত রিখটার স্কেলে ৮.১ মাত্রার ভূমিকম্পে ময়মনসিংহ শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহমান ব্রহ্মপুত্র নদের মূল প্রবাহ পরিবর্তিত হয়ে আরো পশ্চিমে সরে যায়, যে প্রবাহটি আজ যমুনা নামে পরিচিত। করতোয়া, মহানন্দা বা তিস্তার মতো প্রমত্তা নদী শীর্ণকায় হয়ে যায়।
নদীর গতিপথ পরিবর্তনে অনেক ধরণের মানবিক বিপর্যয় হয়, যাকে সোজা বাংলায় আল্লাহর গজব বলা যায়। কোরআনে পূর্ববর্তী সীমালঙ্ঘনকারী জাতিসমূহের যেমন ভয়ংকর পরিণতির কথা পাওয়া যায়, নদীর গতিপথের আকস্মিক বিবর্তনেও অনেকটা তেমনই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। অনেক সমৃদ্ধ জনপদ হয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এমন বিলীন হওয়া জনপদের প্রকৃষ্ট উদাহরণ ফেনী, অথবা উত্তর চট্টগ্রামের উপকূলে অবস্থিত বেঙ্গালা শহর, যা মাত্র দেড়শো বছরে সমৃদ্ধি থেকে হুট করে বঙ্গোপসাগরে বিলীন হয়ে গেছিলো। তখন গঙ্গা নদী বইতো আজকের ফেনী নদীর খাতে। একবার ভাবুন তো, গঙ্গার বর্তমান খাত, তথা পদ্মা আর ফেনী নদীর মধ্যে ভৌগলিক দূরত্বের কথা!
আবার নদীর গতিপথ সরে যাবার কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক প্রভাবেও অনেক জনপদ পরিত্যাক্ত হয়ে যায়। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ গৌড়। একটা বিশ্ববিশ্রুত এই মহানগরী পঞ্চদশ শতকের শেষের দিকে বিরান হয়ে যায়, কারণ গৌড়ের পা ছুঁয়ে বহমান গঙ্গা নদী গতিপথ বদলে অনেকটা দূরে চলে গেছিলো। এরফলে সুপেয় পানির অভাব ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্গম হয়ে পড়ায় গৌড় মরে যায়।
প্রাচীন যুগের গ্রীক পরিব্রাজক টলেমি থেকে শুরু করে আঠারো শতকে বৃটিশ সেনাবাহিনীর নকশাকার মেজর জেমস রেনেল পর্যন্ত অনেকেই এদেশের মানচিত্র এঁকেছেন। সেসব মানচিত্র দেখলে পিলে চমকে উঠতে হয়। কারণ অনেক সময় মাত্র শত বছরের ব্যবধানে আঁকা মানচিত্রেও বাংলাকে আমূল পরিবর্তিত রূপে দেখা গেছে। তবে যতোটা না ভূমিকম্পের কারণে, তারচেয়েও বেশি বন্যার কারণে এদেশে নদীর গতিপথ বদলেছে।
যেহেতু বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবে অচিন্হিত একটি সীমান্তের অধিকারী, সেহেতু যদি আল্লাহ না করেন, এখানে বড় কোন নদীর গতিপথ বদল হয়, তাহলে অন্যান্য হাজারো মানবিক বিপর্যয় ছাপিয়ে বোঝার উপর আটার বস্তার মতো যোগ হতে পারে ভারতের সাথে সীমান্ত জটিলতা। এটা ভাবাও খুবই ভয়ংকর যে, কোন বড় ভূমিকম্প আঘাত হানার পর পুনর্গঠন কার্যক্রমের পাশাপাশি আমাদের বৈরি প্রতিবেশিদের সাথে সীমান্ত নিয়েও নতুন করে সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত হতে হচ্ছে!
উপরে বেশিরভাগের কাছেই দুর্বোধ্য যে প্যাচালিটি লিখলাম, তা হচ্ছে সর্বনাশের ষোলকলার একটা সম্ভাব্য রূপরেখা। এটা হূদয়ঙ্গম করতে পারলে আমরা বুঝতে পারবো, আমাদের নিচে থাকা বাঁশের আগাটির ধার ও সে থেকে পরিত্রাণে আল্লাহর তরফ থেকে অদ্যাবধি পেতে থাকা অসীম অনুগ্রহসমূহের ব্যাপারে। এতদসত্ত্বেও বাঙ্গাল যে কতো বড় নাফরমান ও সীমালঙ্ঘনকারী, সে চিন্তাটিও অনেকের মাথায় আসবে, যেমন আমার মাথায় আসছে...!
©somewhere in net ltd.