নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
ইংরেজিতে 'State of the Art' বলে একটা কথা আছে যার মানে হচ্ছে, কোন প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সর্বোচ্চ পর্যায়। এধরণের প্রযুক্তি অনেক ক্ষেত্রেই বেশ ব্যযবহুল হলেও কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল আর গরীব দেশগুলোকেও স্টেট অভ দ্য আর্ট প্রযুক্তিতে বলীয়ান হতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার প্রযুক্তিও তেমনই। সন্ধ্যায় আরেকটি মাঝারি ভূমিকম্প হয়েছে। এবার এর কেন্দ্রস্থল আগেরগুলোর তুলনায় এদেশের আরো কিছুটা কাছে, ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের মিরিক নামক স্থানে।
এই স্থানটি নোয়াখালী থেকে প্রায় ৩২২ মাইল দূরে। আল্লাহ যদি আমাদের প্রতি রহম না করেন, তবে ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেট ও উপমহাদেশীয় টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে চলমান নিরন্তর সংঘর্ষের রেশ ধরে তা আসাম অথবা মিজোরামে অবস্থিত চ্যূতিসমূহেও ভূমিকম্পের জন্ম দিতে পারে। তেমন কিছু যদি হয়েই যায়, তাহলে তার মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি কতোখানি?
যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মূল প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিন্হিত হয়েছে বন্যা আর সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়। ১৯৭০, ১৯৮৭ ও ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে কম করে হলেও বিশ লাখ মানুষ মারা গেছে। এরপর বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ভালো সক্ষমতা অর্জন করে। যার প্রমাণ ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডর। অত্যন্ত ভয়ংকর সেই ঘূর্ণিঝড়ে সম্পদের প্রভূত ক্ষতি সাধিত হলেও প্রাণহানি ঘটেছে তুলনামূলক অনেক কম, প্রায় পাঁচ হাজারের মতো।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বাংলাদেশের সামর্থকে পশ্চিমও স্টেট অভ দ্য আর্ট বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা সম্ভবত নেই বললেই চলে। ভূমিকম্প হলে ভবন ধ্বসের পাশাপাশি আরো কিছু মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন, অগ্নিকাণ্ড। এক রানা প্লাজা ধ্বস ও নীমতলীর অগ্নিকাণ্ড দেখিয়েছে এক্ষেত্রে আমাদের কোন প্রযুক্তিগত সামর্থ নেই। প্রতিবারই অন্য কোথাও এধরণের দুর্যোগ হলে সরকারী কর্তাব্যক্তিরা তোড়জোড় শুরু করেন বিদেশ থেকে আধুনিক যন্ত্রাংশ ক্রয়ের। শত শত কোটি টাকার বাজেটও পাশ হয়।
কিন্তু কিছুদিন পরই তা মিলিয়ে যায়। যথারীতি এবারও ভূমিকম্প মোকাবিলায় 'একমাসের মধ্যে' বিদেশ থেকে হেনতেন ক্রয় করার ঘোষণা হয়েছে। যদি এসব ক্রয় বাস্তবায়িতও হয়, তারপরও ঘোর সন্দেহ থাকে এসব যন্ত্র দুর্যোগের সময় দেশের কতোটা এলাকায় সেবা দিতে পারবে। আমার সন্দেহ, বড়জোড় এসব যন্ত্র দিয়ে সচিবালয়, মন্ত্রীপাড়া, শেরে বাংলা নগর এলাকাই কভার করা যাবে। দেশের বাকি অংশ ভূমিকম্পের সময় কিছুটা বিদেশের দয়া ও বহুলাংশে আল্লাহর ফজলের উপরই নির্ভরশীল থাকবে।
অথচ, এক্ষেত্রে বাজেটে বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করা উচিত। ফায়ার সার্ভিস বা চাইকি সেনাবাহিনীর অধীন ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত লোকবলের সুপ্রশিক্ষিত ও অত্যাধুনিক একটি বাহিনী গড়া উচিত। জাপান বা চীনের মতো দেশ, যারা ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় অভ্যস্থ ও স্টেট অভ দ্য আর্ট প্রযুক্তির অধিকারী, তাদের সাথে দীর্ঘমেয়াদে কারিগরী অংশীদারিত্বে যাওয়া যায়।
এখন পরিস্থিতি এমন যে, আগামী এক ঘন্টার মধ্যেও কোন প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে, এহেন আশংকায় মানুষ তীব্রভাবে আতংকিত। কথায় আছে, বনের বাঘের চেয়ে মনের বাঘ বেশি মানুষ খায়। ভূমিকম্প হচ্ছে যুগপৎ বন ও মনের বাঘ, যা মানুষকে হয় ধ্বংসস্তূপে চাপা দিয়ে, নাহয় তীব্র আতংকে তিলে তিলে মারতে পারে। দেখা যাক, সামনের বাজেটে ভূমিকম্প মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা অর্জনে কতো বরাদ্দ দেয়া হয়!
ভালো কথা, ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচনী প্রহসনে মেয়র চরিত্রে অংশ নেয়া হেভিওয়েট কুশীলবেরা ভূমিকম্প মোকাবিলায় গৃহীতব্য পদক্ষেপসমূহের কোন ফিরিস্তি দিয়েছেন কি?
©somewhere in net ltd.